বিগত ১৬ বছর ধরে গোপন কারাগারে নির্যাতন ও গুম-খুনের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। মঙ্গলবার তিনি এসব কথা বলেন।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, আজ (মঙ্গলবার) দুটি মামলার নির্ধারিত তারিখ ছিল। একটি মামলা ছিল শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের এবং অন্যটি তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা এবং উপদেষ্টাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের। আমরা আজ ট্রাইব্যুনালে অপরাধের নিউক্লিয়াস শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করেছি। গত ১৬ বছর ধরে কৌশলগতভাবে বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষকে গোপন কারাগারে নিষ্ঠুরতম পন্থায় বছরের পর বছর আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছে। তাদের মরদেহ সিমেন্টের বস্তার সঙ্গে বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। আর এসবের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী এবং অপরাধের নিউক্লিয়াস শেখ হাসিনার। তিনি বলেন, তদানীন্তন সময়ের কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের গুম খুনে মিলেছে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা
স্বীকারোক্তিতেও বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এসব অপরাধের অংশগুলো তদন্ত কমিশনের রিপোর্টের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে দেওয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ অপরাধগুলোকে আমলে নিয়েছে। এ ব্যাপারগুলো নিয়ে আমরা আরও বিস্তারিত প্রতিবেদন দেব। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং গুম-সংক্রান্ত যেসব অপরাধ-সেগুলো সব মিলিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দাখিল করতে সময়ের দরকার। আমরা সময় চেয়েছি। আদালত আমাদের ২ মাস সময় দিয়েছেন। আগামী বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই মামলায় সাবেক মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আর বাকি অভিযুক্তদের ব্যাপারেও তদন্ত চলমান।
তাজুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের মধ্যে অনেকেই গুমের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। তাদের সঙ্গে গুম কমিশন সাক্ষাৎ করেছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই গুম করা হতো। তার ইচ্ছা বা অনিচ্ছাতেই কাউকে আটক রাখা বা ছাড়া হতো। সেগুলো গুম কমিশনের তদন্তে আমরা পেয়েছি। বিষয়গুলো নিয়ে আমরাও তদন্ত করছি।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও বাংলাদেশে তিন মাস ছিলেন। তিনি কোথায়-কীভাবে ছিলেন এবং কেন তাকে গ্রেফতার করা হয়নি বা তিনি কীভাবে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করেছেন এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে একটি ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই ব্যাখ্যা যেন দেওয়া হয় সে ব্যাপারে আদালত নির্দেশ দিয়েছেন।
এর সঙ্গে অপরাধের নিউক্লিয়াস শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি এবং ইন্টারপোলের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার ব্যাপারে আদালত জানতে চেয়েছেন। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে যেসব দেশবিরোধী চুক্তি করা হয়েছে সেসবের ব্যাপারে কতদূর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেটি জানার জন্য আদালত পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে একটা প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন।
তিনি বলেন, এই মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া পৃথিবীর অন্য মামলার চেয়ে ব্যতিক্রম। তদন্ত শেষ হতে কতদিন সময় লাগবে সেটি সুনির্দিষ্ট করে বলা অসম্ভব। এটার গভীরতা ও মাত্রা অনেক বেশি। কত দিনের মধ্যে এর তদন্ত শেষ হবে সেটি সুনির্দিষ্ট করে বলার মতো অবস্থা এখনও আসেনি। আমরা চেষ্টা করব দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার শেষ করার অথবা বিচার প্রক্রিয়ার জন্য মামলা প্রস্তুত করার। তবে আমরা যত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আছে সেগুলো ব্যবহার করছি। মামলাগুলো কেমন করে বিচারের জন্য প্রস্তুত করা যায় সে ব্যাপারে চেষ্টা করছি।