সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি বলেছেন, যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে মানুষ রাজপথে নেমেছিল তাদের সে আকাক্সক্ষা বাস্তবায়িত হয় নাই। মানুষে মানুষে বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এক শ্রেণির লোক প্রতিনিয়ত মব তৈরি করে ভিন্ন মতের মানুষকে হত্যা করছে।
গত এক বছরে শতাধিক মাজার-খানকায় হামলা হয়েছে, মন্দির-মসজিদে হামলা হয়েছে, বাউলদের মেলা-আশ্রমে হামলা হয়েছে, নারীর উপরে হামলা হয়েছে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হামলা হয়েছে। ধর্ম রক্ষার নামে এ হেন বর্বরতা নিয়ন্ত্রণে সরকার নির্লজ্জভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
সরকারের কোন কোন উপদেষ্টার কথায় একদিকে মানুষ হতাশ হচ্ছে, অন্যদিকে মব তৈরিতে এক শ্রেণির জনতা উৎসাহিত হচ্ছে। এ সরকারের এক বছর অতিবাহিত হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তাদের কার্যক্রমে পূর্বের শাসকগোষ্ঠীর ধারাবাহিকতার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।
তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৫০ মাস উপলক্ষে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।
সংগঠনের সভাপতি মনি সুপান্থর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক দীনা তাজরীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আরও নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এড. এবি সিদ্দিক, কবি সাংবাদিক হালিম আজাদ, শিশু সংগঠক রথীন চক্রবর্তী, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়, সিপিবির জেলা সভাপতি শীবনাথ চক্রবর্তী, বাসদের জেলা সদস্য সচিব আবু নাইম খান বিপ্লব, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, ন্যাপ জেলা সভাপতি এড. আওলাদ হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি হাফিজুর রহমান, সামাজিক সংগঠন সমমনার উপদেষ্টা দুলাল সাহা, কবি রইস মুকুল প্রমুখ।
রফিউর রাব্বি আরও বলেন, শেখ হাসিনা দেশে বিচার-ব্যবস্থাকে যে ভাবে ধ্বংস করে রেখে গেছে এখনো তার উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন হয় নাই। দেড়-দুই হাজার ছাত্র-জনতার প্রাণদান, অন্ধত্ব, পঙ্গুত্ব নিয়ে আজকের বাংলাদেশ বিচার হীনতার বাংলাদেশ হতে পারো না।
শেখ হাসিনা দেশে দুর্বৃত্ত, মাফিয়া, গডফাদারদের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তার নির্দেশে সাড়ে এগার বছর ত্বকী হত্যার বিচারটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের এক বছর অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত এ হত্যার অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করা হয় নাই।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে ওসমান পরিবার পালিয়ে গেলেও লুটপাট এখনো বন্ধ হয় নাই। লুটপাটের জায়গাগুলো বিএনপির নতুন সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে। মাফিয়া ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জের মানুষের রক্ত শুষে বিদেশে পালিয়ে গিয়ে লুটের টাকায় সেখানে জমিদারী হালে বিলাসী জীবনযাপন করছে। আমরা এই খুনী পরিবারের সকল সহযোগীদের বিচার চাই।
তিনি বলেন, আজকে আমরা ত্বকী সহ সাগর-রুনি, তনু এবং নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবার দ্বারা নিহত সকল হত্যার বিজার চাই।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চারসেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে।
অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজো পেশ করা হয় নাই। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।