ঢাকা , বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন আজ: হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস Logo নেপালে জেনজিদের বিক্ষোভে গুলি : নিহত ১৯ Logo ইভন হত্যার মূলহোতা সাইফুল গ্রেফতার Logo আড়াইহাজারে গণপিটুনিতে ডাকাত নিহত Logo ওসমান পরিবার পালিয়ে গেলেও লুটপাট এখনো বন্ধ হয় নাই : রফিউর রাব্বি Logo ফতুল্লার শেহাচরে বিদ্যুৎপৃষ্টে নিহত মা-মেয়ের পরিবারকে আর্থিক অনুদান প্রদান Logo হজরত খিজির (আ.) স্মরণে নদিতে ভেলা ভাসানো Logo বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের আহ্বান জানালেন মামুন মাহমুদ Logo বিএনপি’র ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মাজহারুল ইসলাম ভূইয়া হিরন ও হারুন রশীদ লিটনের নেতৃত্বে গাড়িবহর নিয়ে বর্ণাঢ্য র‍্যালী অনুষ্ঠিত Logo শহরের যানজট নিরসনে টিআই এম. এ করিমের অক্লান্ত পরিশ্রম ও বিশেষ ভূমিকা পালন করায় সকলের নিকট প্রশংসিত

নেপালে জেনজিদের বিক্ষোভে গুলি : নিহত ১৯

সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির প্রতিবাদে নেপালে জেনজিদের (তরুণ প্রজন্ম) বিক্ষোভে পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার রাজধানী কাঠমান্ডুতে বিক্ষুব্ধ তরুণরা পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়লে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এর প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক পদত্যাগ করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঠমান্ডুর বিভিন্ন স্থানে কারফিউ জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। খবর কাঠমান্ডু পোস্ট, আলজাজিরার।

স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৯টার সময় রাজধানী কাঠমান্ডুর বানেশ্বর এলাকায় প্রথম সরকারবিরোধী স্লোগান তোলেন তরুণরা এবং অল্প সময়ের মধ্যে তা রাজধানীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ‘হামি নেপাল’ সংগঠন এই বিক্ষোভের আয়োজন করে। তারা এর আগে প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতিও নিয়েছিল। সংগঠনের চেয়ারম্যান সুধান গুরুঙ বলেন, সরকারের পদক্ষেপ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই আন্দোলন শুরু হয়েছে। আয়োজকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিক্ষোভের রুট ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করছেন।

নেপালের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানায়, নিবন্ধনের নির্দেশনা না মানায় নেপাল সরকার সম্প্রতি ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, এক্সসহ ২৬টি সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে। মূলত এর পরই তরুণরা বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভের নেতৃত্বে রয়েছে শিক্ষার্থী ও তরুণ (জেনজি) প্রজন্ম। বিক্ষোভ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপকভাবে জলকামান, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ব্যবহার করছে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরা লাঠি, গাছের ডাল, পানির বোতল নিয়ে প্রতিরোধে নেমেছেন। তারা সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন। বিক্ষোভের একপর্যায়ে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী পার্লামেন্ট ভবনেও ঢুকে পড়েন। তারা নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে পার্লামেন্ট ভবনের ভেতরে প্রবেশ করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেখানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে খবরে জানা গেছে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জলকামান, টিয়ার গ্যাস ও গুলি চালায়।

এদিকে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনেও ঢুকে পড়ায় সোমবার বিকালে নির্ধারিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বুধবার পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। কারফিউ ঘোষণার পর কাঠমান্ডুর রাস্তায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নেপাল সেনাবাহিনীর মুখপাত্র সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজারাম বাসনেত বলেছেন, স্থানীয় প্রশাসন আইন-২০২৮ এর বিধান অনুসারে জেলা নিরাপত্তা কমিটির সুপারিশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

কাঠমান্ডু পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত কাঠমান্ডু, পোখরা, বুটওয়াল, ভৈরহাওয়া, ভরতপুর, ইটাহারি এবং দামকসহ বিভিন্ন শহরে জেনজিদের প্রতিবাদ কর্মসূচির সময় পুলিশের গুলিতে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন।

প্রথমে রাজধানীর নয়া বানেশ্বরকে কেন্দ করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে কারফিউ জারি করার পর সেটা আরও তীব্র আকার ধারণ করে। হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হাসপাতালে কমপক্ষে ১৭ জন মারা গেছেন। জাতীয় ট্রমা সেন্টারে ৮ জন, এভারেস্ট হাসপাতালে ৩ জন, সিভিল হাসপাতালে ৩ জন, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে ২ জন এবং ত্রিভুবন টিচিং হাসপাতালে ১ জন মারা গেছেন।

সুনসারিতে, ইটাহারিতে বিক্ষোভের সময় গুলিবিদ্ধ ২ জন বিক্ষোভকারীও মারা গেছেন। এর ফলে দেশব্যাপী মৃতের সংখ্যা ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে।

সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে কমপক্ষে ৩৪৭ জন আহত বিক্ষোভকারীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সিভিল হাসপাতালে ১০০ জন, ট্রমা সেন্টারে ৫৯ জন, এভারেস্টে ১০২ জন, কেএমসিতে ৩৭ জন, বীর হাসপাতালে ৬ জন, পাটন হাসপাতালে ৪ জন, ত্রিভুবন টিচিংয়ে ১৮ জন, নরভিকে ৩ জন, বিপি কৈরালা ইনস্টিটিউট অফ হেলথ সায়েন্সেসে ২ জন, গ্লকি মেডিকেল কলেজে ১ জন, বিরাট মেডিকেল কলেজে ৪ জন এবং দামক হাসপাতালে ৭ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

একাধিক হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন, এখনো অনেকে গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন। এভারেস্ট হাসপাতালের অনিল অধিকারী জানিয়েছেন, ৪ জনের অবস্থা গুরুতর, অন্যদিকে ট্রমা সেন্টারের ডা. দীপেন্দ্র পান্ডে জানিয়েছেন, ১০ জনের অবস্থা গুরুতর, এদের মাথায় এবং বুকে গুলি লেগেছে। এ ঘটনায় ৩৪৭ জন আহত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

১৯ জন নিহত হওয়ার দায় স্বীকার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক মন্ত্রিসভায় নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন। তিনি বলেন, ‘এত মানুষের প্রাণহানি অচিন্তনীয়। নৈতিকভাবে আমার আর দায়িত্বে থাকা উচিত নয়।’

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কাঠমান্ডুর ২৭ বছর বয়সি মাস্টার্সের ছাত্র আয়ুশ বাসিয়াল বলেন, উপস্থিতির সংখ্যার দিক বিবেচনায় এই বিক্ষোভ একেবারেই নজিরবিহীন। স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা এতে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেছে। এদের অনেকেই তাদের স্কুল-কলেজের পোশাক পরেই বিক্ষোভ করেছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কিত কাউকে দেখতে পাইনি।

আয়ুশ বলেন, শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশের বিক্ষোভ আমাদের অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে। ফিলিপাইনে, জনসাধারণের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের ছবিও সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়টিও হিমালয়ের এই দেশের বিক্ষোভকে অনুপ্রাণিত করেছে, কারণ টিকটকে ভিডিওতে দেখা গেছে নেপালি রাজনীতিবিদদের সন্তানরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে, যেখানে আমাদের মাথাপিছু আয় মাত্র ১,৩০০ ডলার।

বিক্ষোভ এখন পর্যন্ত কাঠমান্ডুতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে নেপালি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন এরই মধ্যে কারফিউ জারি করেছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে কারফিউ বাড়ানো হয়েছে।

নেপালের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ‘শীতল নিবাস’, ভাইস প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন, রাজপরিবারের প্রধান প্রাসাদ সিংহ দরবার, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কাঠমান্ডু পোস্ট।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন আজ: হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস

নেপালে জেনজিদের বিক্ষোভে গুলি : নিহত ১৯

আপডেট সময় ০৭:২৩:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা ও দুর্নীতির প্রতিবাদে নেপালে জেনজিদের (তরুণ প্রজন্ম) বিক্ষোভে পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার রাজধানী কাঠমান্ডুতে বিক্ষুব্ধ তরুণরা পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়লে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এর প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক পদত্যাগ করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঠমান্ডুর বিভিন্ন স্থানে কারফিউ জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। খবর কাঠমান্ডু পোস্ট, আলজাজিরার।

স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৯টার সময় রাজধানী কাঠমান্ডুর বানেশ্বর এলাকায় প্রথম সরকারবিরোধী স্লোগান তোলেন তরুণরা এবং অল্প সময়ের মধ্যে তা রাজধানীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ‘হামি নেপাল’ সংগঠন এই বিক্ষোভের আয়োজন করে। তারা এর আগে প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতিও নিয়েছিল। সংগঠনের চেয়ারম্যান সুধান গুরুঙ বলেন, সরকারের পদক্ষেপ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই আন্দোলন শুরু হয়েছে। আয়োজকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিক্ষোভের রুট ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত তথ্য শেয়ার করছেন।

নেপালের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানায়, নিবন্ধনের নির্দেশনা না মানায় নেপাল সরকার সম্প্রতি ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, এক্সসহ ২৬টি সামাজিক মাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে। মূলত এর পরই তরুণরা বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভের নেতৃত্বে রয়েছে শিক্ষার্থী ও তরুণ (জেনজি) প্রজন্ম। বিক্ষোভ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপকভাবে জলকামান, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ব্যবহার করছে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরা লাঠি, গাছের ডাল, পানির বোতল নিয়ে প্রতিরোধে নেমেছেন। তারা সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন। বিক্ষোভের একপর্যায়ে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী পার্লামেন্ট ভবনেও ঢুকে পড়েন। তারা নিষিদ্ধ এলাকায় ঢুকে পার্লামেন্ট ভবনের ভেতরে প্রবেশ করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেখানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে খবরে জানা গেছে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জলকামান, টিয়ার গ্যাস ও গুলি চালায়।

এদিকে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনেও ঢুকে পড়ায় সোমবার বিকালে নির্ধারিত জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বুধবার পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। কারফিউ ঘোষণার পর কাঠমান্ডুর রাস্তায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নেপাল সেনাবাহিনীর মুখপাত্র সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজারাম বাসনেত বলেছেন, স্থানীয় প্রশাসন আইন-২০২৮ এর বিধান অনুসারে জেলা নিরাপত্তা কমিটির সুপারিশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

কাঠমান্ডু পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত কাঠমান্ডু, পোখরা, বুটওয়াল, ভৈরহাওয়া, ভরতপুর, ইটাহারি এবং দামকসহ বিভিন্ন শহরে জেনজিদের প্রতিবাদ কর্মসূচির সময় পুলিশের গুলিতে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন।

প্রথমে রাজধানীর নয়া বানেশ্বরকে কেন্দ করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে কারফিউ জারি করার পর সেটা আরও তীব্র আকার ধারণ করে। হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হাসপাতালে কমপক্ষে ১৭ জন মারা গেছেন। জাতীয় ট্রমা সেন্টারে ৮ জন, এভারেস্ট হাসপাতালে ৩ জন, সিভিল হাসপাতালে ৩ জন, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে ২ জন এবং ত্রিভুবন টিচিং হাসপাতালে ১ জন মারা গেছেন।

সুনসারিতে, ইটাহারিতে বিক্ষোভের সময় গুলিবিদ্ধ ২ জন বিক্ষোভকারীও মারা গেছেন। এর ফলে দেশব্যাপী মৃতের সংখ্যা ১৯ জনে দাঁড়িয়েছে।

সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে কমপক্ষে ৩৪৭ জন আহত বিক্ষোভকারীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সিভিল হাসপাতালে ১০০ জন, ট্রমা সেন্টারে ৫৯ জন, এভারেস্টে ১০২ জন, কেএমসিতে ৩৭ জন, বীর হাসপাতালে ৬ জন, পাটন হাসপাতালে ৪ জন, ত্রিভুবন টিচিংয়ে ১৮ জন, নরভিকে ৩ জন, বিপি কৈরালা ইনস্টিটিউট অফ হেলথ সায়েন্সেসে ২ জন, গ্লকি মেডিকেল কলেজে ১ জন, বিরাট মেডিকেল কলেজে ৪ জন এবং দামক হাসপাতালে ৭ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

একাধিক হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছেন, এখনো অনেকে গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন। এভারেস্ট হাসপাতালের অনিল অধিকারী জানিয়েছেন, ৪ জনের অবস্থা গুরুতর, অন্যদিকে ট্রমা সেন্টারের ডা. দীপেন্দ্র পান্ডে জানিয়েছেন, ১০ জনের অবস্থা গুরুতর, এদের মাথায় এবং বুকে গুলি লেগেছে। এ ঘটনায় ৩৪৭ জন আহত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

১৯ জন নিহত হওয়ার দায় স্বীকার করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক মন্ত্রিসভায় নিজের পদত্যাগপত্র জমা দেন। তিনি বলেন, ‘এত মানুষের প্রাণহানি অচিন্তনীয়। নৈতিকভাবে আমার আর দায়িত্বে থাকা উচিত নয়।’

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কাঠমান্ডুর ২৭ বছর বয়সি মাস্টার্সের ছাত্র আয়ুশ বাসিয়াল বলেন, উপস্থিতির সংখ্যার দিক বিবেচনায় এই বিক্ষোভ একেবারেই নজিরবিহীন। স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা এতে ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করেছে। এদের অনেকেই তাদের স্কুল-কলেজের পোশাক পরেই বিক্ষোভ করেছেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্কিত কাউকে দেখতে পাইনি।

আয়ুশ বলেন, শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশের বিক্ষোভ আমাদের অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে। ফিলিপাইনে, জনসাধারণের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনযাপনের ছবিও সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ বিষয়টিও হিমালয়ের এই দেশের বিক্ষোভকে অনুপ্রাণিত করেছে, কারণ টিকটকে ভিডিওতে দেখা গেছে নেপালি রাজনীতিবিদদের সন্তানরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে, যেখানে আমাদের মাথাপিছু আয় মাত্র ১,৩০০ ডলার।

বিক্ষোভ এখন পর্যন্ত কাঠমান্ডুতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে নেপালি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন এরই মধ্যে কারফিউ জারি করেছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে কারফিউ বাড়ানো হয়েছে।

নেপালের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ‘শীতল নিবাস’, ভাইস প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন, রাজপরিবারের প্রধান প্রাসাদ সিংহ দরবার, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কাঠমান্ডু পোস্ট।