ঢাকা , শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুন্সীগঞ্জে ক্ষেতে জমেছে পানি, অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ভারি বৃষ্টিপাতে মুন্সীগঞ্জের বিস্তীর্ণ জমি প্লাবিত হয়েছে। এতে কৃষকের সবজিক্ষেত তলিয়ে গেছে। সবজির জমিতে এখনো পানি থই থই করছে। ওই সমস্ত জমির অপরিপক্ক সবজি তুলে বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেছেন কৃষকরা। এতে সবজির দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী, মহাকালী ও রামপাল ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ কৃষিজমি এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এই তিন ইউনিয়নে এই মৌসুমে করলা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, লাউ, শসা, কুমড়া, ঝিঙা, বেগুনসহ অন্যান্য সবজি চাষ হয়েছে। আলু উত্তোলনের পর একই জমিতে কৃষকরা এ ধরনের সবজির চাষ করে থাকেন। এই সবজিগুলো চাষের পর গাছগুলো একেকটা অনেক বড় হওয়ায় কৃষক জমির ওপরে মাচা তৈরি করেন। মাচার মধ্যেই এই সমস্ত সবজির গাছগুলো লতাপাতায় ভড়ে তার মধ্যে ফসল উৎপাদন হয়। তাই স্থানীয় ভাষায় এই চাষাবাদকে লতা চাষও বলা হয়ে থাকে।

এ সমস্ত সবজির দানা কৃষক সাধারণত জমিতে রোপণ করে থাকেন। তাদের রোপণ করা সবজি গাছগুলো সবেমাত্র বড় হয়েছে। কৃষকরা মাচা তৈরি করে সবজি উত্তোলন শুরু করেছেন। এর মধ্যে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে অধিকাংশ জমি। মাচা তৈরি করতে অনেক টাকার প্রয়োজন হওয়ায় ব্যয়বহুল এই চাষে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা। কৃষকরা অপরিপক্ক সবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে তুলে বিক্রি করতে শুরু করেছেন। এতে মুন্সীগঞ্জে ও তার আশপাশের এলাকায় ব্যাপক সবজির সমরাহ ঘটায় দাম কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী বটতলা ও বজ্রযোগিনী বাজার সবজির আড়তে গিয়ে দেখা যায়, ১৫ টাকা কেজি দরে করলা, জালি কুমড়া ও লাউ ১০-১২ টাকা এবং চিচিঙ্গা, বেগুন ও ধুন্দুল ৮-১০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে যা ঘূর্ণিঝড়ের আগে এর থেকে দ্বিগুণ দরে এসব সবজি বিক্রি হচ্ছিল।

সদর উপজেলার কৃষক আতাউর রহমান মোল্লা, দুলাল মীর ও বজ্রযোগিনী পুকুরপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী ইব্রাহিমের সঙ্গে কথা বলে সবজির দাম সম্পর্কে জানা গেছে।

 

কৃষক সাইফুল ইসলাম পান্না বলেন, ৮০ শতাংশ জমিতে সবজি চাষ করেছিলাম। এতে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জমি থেকে তুলে মাত্র ১০০ কেজি সবজি ১৫০০ টাকা বিক্রি করছি। এখন সব পানির নিচে, সব নষ্ট হয়ে যাবে।

জুল হোসেন শেখ বলেন, ৫০ শতাংশ জমিতে করলা, লাউ, ধুন্দুল ও শসা আবাদ করছিলাম এখন তা পানির নিচে । আমার মোট ৫০ হাজার টাকা খরচ সবেমাত্র ফসল তোলতে শুরু করছি এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে সব তলিয়ে সেগুলো নষ্ট হয়ে গেল। আমার তো সব শেষ, আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।

উত্তর মহাকালির ৪নং ওয়ার্ডের মজিবুর রহমান বলেন, ৩৫ শতাংশ জমিতে জালি, করলা আবাদ করছিলাম। সবেমাত্র ওই জমিগুলোতে ফলন আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যেই আকস্মিক বৃষ্টিতে সব কিছু তলিয়ে গেছে।

সরস্বতী এলাকায় কৃষক মো. আব্দুল কাদির দেওয়ান বলেন, ৭৫ শতাংশ জমিতে জালি লাউ, করলা ও বেগুন আবাদ করছিলাম। এখন তা সব পানির নিচে। এক লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা বিক্রি করছি। এ বছর খরা গেছে, বৃষ্টিপাত হয়নি। মেশিন দিয়ে পানি সেচে খুব কষ্ট করে ফসল ফলাইলাম। কিন্তু এমন সময় বৃষ্টি হইলো সব পানির নিয়ে গেল। এখন আমাদের আর বাঁচার উপায় নেই।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ বছর সদর উপজেলায় ৭৮০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে রেমালের প্রভাবে ১২০ হেক্টর জমতে পানি জমেছে। এই জমিগুলো থেকে যদি দ্রুত পানি নেমে যায় তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে। আর যদি পানি থেকে যায় তাহলে এই জমিগুলোর ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। উপজেলার সাধারণত বজ্রযোগিনী মহাকালি ও রামপাল ইউনিয়নে বেশি সবজি চাষ হয়ে থাকে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

মুন্সীগঞ্জে ক্ষেতে জমেছে পানি, অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি

আপডেট সময় ০৮:৫০:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ জুন ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ভারি বৃষ্টিপাতে মুন্সীগঞ্জের বিস্তীর্ণ জমি প্লাবিত হয়েছে। এতে কৃষকের সবজিক্ষেত তলিয়ে গেছে। সবজির জমিতে এখনো পানি থই থই করছে। ওই সমস্ত জমির অপরিপক্ক সবজি তুলে বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেছেন কৃষকরা। এতে সবজির দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী, মহাকালী ও রামপাল ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ কৃষিজমি এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এই তিন ইউনিয়নে এই মৌসুমে করলা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, লাউ, শসা, কুমড়া, ঝিঙা, বেগুনসহ অন্যান্য সবজি চাষ হয়েছে। আলু উত্তোলনের পর একই জমিতে কৃষকরা এ ধরনের সবজির চাষ করে থাকেন। এই সবজিগুলো চাষের পর গাছগুলো একেকটা অনেক বড় হওয়ায় কৃষক জমির ওপরে মাচা তৈরি করেন। মাচার মধ্যেই এই সমস্ত সবজির গাছগুলো লতাপাতায় ভড়ে তার মধ্যে ফসল উৎপাদন হয়। তাই স্থানীয় ভাষায় এই চাষাবাদকে লতা চাষও বলা হয়ে থাকে।

এ সমস্ত সবজির দানা কৃষক সাধারণত জমিতে রোপণ করে থাকেন। তাদের রোপণ করা সবজি গাছগুলো সবেমাত্র বড় হয়েছে। কৃষকরা মাচা তৈরি করে সবজি উত্তোলন শুরু করেছেন। এর মধ্যে বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে অধিকাংশ জমি। মাচা তৈরি করতে অনেক টাকার প্রয়োজন হওয়ায় ব্যয়বহুল এই চাষে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা। কৃষকরা অপরিপক্ক সবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে তুলে বিক্রি করতে শুরু করেছেন। এতে মুন্সীগঞ্জে ও তার আশপাশের এলাকায় ব্যাপক সবজির সমরাহ ঘটায় দাম কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে।
মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী বটতলা ও বজ্রযোগিনী বাজার সবজির আড়তে গিয়ে দেখা যায়, ১৫ টাকা কেজি দরে করলা, জালি কুমড়া ও লাউ ১০-১২ টাকা এবং চিচিঙ্গা, বেগুন ও ধুন্দুল ৮-১০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে যা ঘূর্ণিঝড়ের আগে এর থেকে দ্বিগুণ দরে এসব সবজি বিক্রি হচ্ছিল।

সদর উপজেলার কৃষক আতাউর রহমান মোল্লা, দুলাল মীর ও বজ্রযোগিনী পুকুরপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী ইব্রাহিমের সঙ্গে কথা বলে সবজির দাম সম্পর্কে জানা গেছে।

 

কৃষক সাইফুল ইসলাম পান্না বলেন, ৮০ শতাংশ জমিতে সবজি চাষ করেছিলাম। এতে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জমি থেকে তুলে মাত্র ১০০ কেজি সবজি ১৫০০ টাকা বিক্রি করছি। এখন সব পানির নিচে, সব নষ্ট হয়ে যাবে।

জুল হোসেন শেখ বলেন, ৫০ শতাংশ জমিতে করলা, লাউ, ধুন্দুল ও শসা আবাদ করছিলাম এখন তা পানির নিচে । আমার মোট ৫০ হাজার টাকা খরচ সবেমাত্র ফসল তোলতে শুরু করছি এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে সব তলিয়ে সেগুলো নষ্ট হয়ে গেল। আমার তো সব শেষ, আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।

উত্তর মহাকালির ৪নং ওয়ার্ডের মজিবুর রহমান বলেন, ৩৫ শতাংশ জমিতে জালি, করলা আবাদ করছিলাম। সবেমাত্র ওই জমিগুলোতে ফলন আসতে শুরু করেছে। এর মধ্যেই আকস্মিক বৃষ্টিতে সব কিছু তলিয়ে গেছে।

সরস্বতী এলাকায় কৃষক মো. আব্দুল কাদির দেওয়ান বলেন, ৭৫ শতাংশ জমিতে জালি লাউ, করলা ও বেগুন আবাদ করছিলাম। এখন তা সব পানির নিচে। এক লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা বিক্রি করছি। এ বছর খরা গেছে, বৃষ্টিপাত হয়নি। মেশিন দিয়ে পানি সেচে খুব কষ্ট করে ফসল ফলাইলাম। কিন্তু এমন সময় বৃষ্টি হইলো সব পানির নিয়ে গেল। এখন আমাদের আর বাঁচার উপায় নেই।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ বছর সদর উপজেলায় ৭৮০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে রেমালের প্রভাবে ১২০ হেক্টর জমতে পানি জমেছে। এই জমিগুলো থেকে যদি দ্রুত পানি নেমে যায় তাহলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে। আর যদি পানি থেকে যায় তাহলে এই জমিগুলোর ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে। উপজেলার সাধারণত বজ্রযোগিনী মহাকালি ও রামপাল ইউনিয়নে বেশি সবজি চাষ হয়ে থাকে।