ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উপন্যাস পড়ে ইতিহাসের সন্ধানে ত্রিপুরায়

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রাজর্ষি’ উপন্যাস পড়েছিলাম বেশ কয়েক বছর আগে। তখন থেকেই ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দমাণিক্যের নামের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। রাজা গোবিন্দমাণিক্যের উপর ভিত্তি করে আর গোমতী নদীপাড়ের ভুবনেশ্বরী মন্দিরকে প্রেক্ষাপট করেই ‘রাজর্ষি’ রচিত হয়েছিল। এই উপন্যাসে দেখা যায়, রাজা গোবিন্দমাণিক্য একদা সকালে এ নদীতে স্নান করতে গিয়ে হাসি ও তাতা নামে দুই ভাইবোনের দেখা পান। তার সঙ্গে এই দুই ভাইবোনের ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একদিন মহিষ বলির পরদিন রাজা নদীতে স্নান করতে যখন আসেন তখন হাসি ও তাতা নদীর ঘাটে খেলছিল। সে সময় নদীর ঘাটে রক্তের দাগ দেখে হাসি জিজ্ঞেস করে, ও রক্তের দাগ কিসের? রাজা উত্তর দিতে না পারায় হাসি আঁচল দিয়ে নদীর ঘাট মুছতে থাকে। এরপর হাসি জ্বরে মারা যায়। জ্বরের বিকারে সে বলতে থাকে ‘ও রক্তের দাগ কিসের?’

এরপরই রাজা ঘোষণা দেন- রাজ্যে বলি দেওয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু বাদ সাধে রঘুপতি পুরোহিত এবং রাজার বড় ভাই। তারা বলতে থাকেন, রাজার বলিদান প্রথা বিলোপের জন্য রাজ্যের অবনতি অবশ্যাম্ভাবী। শেষ পর্যন্ত রাজ্য ছাড়া হন রাজা, তার নতুন পুরোহিত বিল্বন। রাজ্যে নতুন রাজা হন রাজার বড় ভাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভুল বুঝতে পারেন রঘুপতি। ছুঁড়ে ফেলে দেন কালীর মূর্তি। বুঝতে পারেন নরবলি ও বলিদান ভিত্তিহীন। শেষ পর্যন্ত জয় হয় মানবতার। সবাইকে হার মানতে হয় রাজা গোবিন্দমাণিক্য ও বিল্বনের কাছে। রবীন্দ্রনাথ জয় ঘটান মানবতার।

‘রাজর্ষি’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐতিহাসিক উপন্যাস। উপন্যাসটি মানবতার পক্ষে ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলে। পরবর্তীতে এ উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে রচিত হয় তাঁর বিখ্যাত নাটক ‘বিসর্জন’। এই উপন্যাসের গল্প সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, ‘কলিকাতায় ফিরিবার সময় রাত্রের গাড়িতে ভিড় ছিল। ভালো করিয়া ঘুম হৈতেছিল না। ঠিক চোখের উপরে আলো জ্বলিতেছিল। মনে করিলাম ঘুম যখন হইবে না তখন এই সুযোগে বালকের জন্য একটা গল্প ভাবিয়া রাখি। গল্প ভাবিবার ব্যর্থ চেষ্টার টানে গল্প আসিল না, ঘুম আসিয়া পড়িল । স্বপ্ন দেখিলাম, কোন এক মন্দিরের সিঁড়ির রক্তচিহ্ন দেখিয়া একটি বালিকা অত্যন্ত করুণ ব্যাকুলতায় তাহার বাপকে জিজ্ঞাসা করিতেছে- বাবা, একি! এ যে রক্ত! বালিকার এই কাতরতায় বাপ অত্যন্ত ব্যথিত হইল অথচ বাহিরে রাগের ভান করিয়া কোনমতে তার প্রশ্নটাকে চাপা দিতে চেষ্টা করিতেছে। জাগিয়া উঠিয়ায় মনে হইল এটি আমার স্বপ্নলব্ধ গল্প। এই স্বপ্নটির সঙ্গে ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দমাণিক্যর পুরাবৃত্ত মিশায়ে রাজর্ষি গল্প মাসে মাসে লিখিতে লিখিতে বালকে বাহির করিতে লাগিলাম।’

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

উপন্যাস পড়ে ইতিহাসের সন্ধানে ত্রিপুরায়

আপডেট সময় ০৪:৪১:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রাজর্ষি’ উপন্যাস পড়েছিলাম বেশ কয়েক বছর আগে। তখন থেকেই ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দমাণিক্যের নামের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। রাজা গোবিন্দমাণিক্যের উপর ভিত্তি করে আর গোমতী নদীপাড়ের ভুবনেশ্বরী মন্দিরকে প্রেক্ষাপট করেই ‘রাজর্ষি’ রচিত হয়েছিল। এই উপন্যাসে দেখা যায়, রাজা গোবিন্দমাণিক্য একদা সকালে এ নদীতে স্নান করতে গিয়ে হাসি ও তাতা নামে দুই ভাইবোনের দেখা পান। তার সঙ্গে এই দুই ভাইবোনের ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একদিন মহিষ বলির পরদিন রাজা নদীতে স্নান করতে যখন আসেন তখন হাসি ও তাতা নদীর ঘাটে খেলছিল। সে সময় নদীর ঘাটে রক্তের দাগ দেখে হাসি জিজ্ঞেস করে, ও রক্তের দাগ কিসের? রাজা উত্তর দিতে না পারায় হাসি আঁচল দিয়ে নদীর ঘাট মুছতে থাকে। এরপর হাসি জ্বরে মারা যায়। জ্বরের বিকারে সে বলতে থাকে ‘ও রক্তের দাগ কিসের?’

এরপরই রাজা ঘোষণা দেন- রাজ্যে বলি দেওয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু বাদ সাধে রঘুপতি পুরোহিত এবং রাজার বড় ভাই। তারা বলতে থাকেন, রাজার বলিদান প্রথা বিলোপের জন্য রাজ্যের অবনতি অবশ্যাম্ভাবী। শেষ পর্যন্ত রাজ্য ছাড়া হন রাজা, তার নতুন পুরোহিত বিল্বন। রাজ্যে নতুন রাজা হন রাজার বড় ভাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভুল বুঝতে পারেন রঘুপতি। ছুঁড়ে ফেলে দেন কালীর মূর্তি। বুঝতে পারেন নরবলি ও বলিদান ভিত্তিহীন। শেষ পর্যন্ত জয় হয় মানবতার। সবাইকে হার মানতে হয় রাজা গোবিন্দমাণিক্য ও বিল্বনের কাছে। রবীন্দ্রনাথ জয় ঘটান মানবতার।

‘রাজর্ষি’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐতিহাসিক উপন্যাস। উপন্যাসটি মানবতার পক্ষে ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলে। পরবর্তীতে এ উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে রচিত হয় তাঁর বিখ্যাত নাটক ‘বিসর্জন’। এই উপন্যাসের গল্প সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, ‘কলিকাতায় ফিরিবার সময় রাত্রের গাড়িতে ভিড় ছিল। ভালো করিয়া ঘুম হৈতেছিল না। ঠিক চোখের উপরে আলো জ্বলিতেছিল। মনে করিলাম ঘুম যখন হইবে না তখন এই সুযোগে বালকের জন্য একটা গল্প ভাবিয়া রাখি। গল্প ভাবিবার ব্যর্থ চেষ্টার টানে গল্প আসিল না, ঘুম আসিয়া পড়িল । স্বপ্ন দেখিলাম, কোন এক মন্দিরের সিঁড়ির রক্তচিহ্ন দেখিয়া একটি বালিকা অত্যন্ত করুণ ব্যাকুলতায় তাহার বাপকে জিজ্ঞাসা করিতেছে- বাবা, একি! এ যে রক্ত! বালিকার এই কাতরতায় বাপ অত্যন্ত ব্যথিত হইল অথচ বাহিরে রাগের ভান করিয়া কোনমতে তার প্রশ্নটাকে চাপা দিতে চেষ্টা করিতেছে। জাগিয়া উঠিয়ায় মনে হইল এটি আমার স্বপ্নলব্ধ গল্প। এই স্বপ্নটির সঙ্গে ত্রিপুরার রাজা গোবিন্দমাণিক্যর পুরাবৃত্ত মিশায়ে রাজর্ষি গল্প মাসে মাসে লিখিতে লিখিতে বালকে বাহির করিতে লাগিলাম।’