ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভল্টের টাকায় গোপন ব্যবসা

ব্যাংকের ভল্ট অর্থ-সম্পদের সবচেয়ে সুরক্ষিত স্থান হিসাবে বিবেচিত হলেও দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউজ শাখার ভল্ট এর ব্যতিক্রম। অবৈধভাবে সুদের ব্যবসায় গোপনে ভল্টের সংরক্ষিত অর্থ খাটিয়ে আসছে ব্যাংকটির একটি চক্র। জানা যায়, অনেক সময় বিমানবন্দরে মালামাল আসার পর তা ছাড় করাতে জরুরি নির্দেশ দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। নির্ধারিত সময়ে মাল ছাড় করাতে না পারলে বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হয় সিএন্ডএফ এজেন্টদের। প্রতিদিনই বাড়তে থাকে জরিমানার অঙ্ক। ফলে তারা ওই চক্রের কাছ থেকে দ্বিগুণ হারে লাখ লাখ টাকা সুদে অর্থ সংগ্রহ করেন। অভিযোগ আছে, সোনালী ব্যাংকের বিমানবন্দর কাস্টম হাউজ শাখার ব্যবস্থাপকের নেতৃত্বে পাঁচ কর্মকর্তার একটি সিন্ডিকেট এ অনৈতিক বাণিজ্যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ চক্রের হাতে অর্ধশতাধিক গ্রাহক আছে, যাদের বেশিরভাগই সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী। তারা কাস্টমস থেকে মালামাল ছাড়াতে টাকার সংকটে পড়লে এ চক্রের সদস্যদের দ্বারস্থ হন। তখন ৩ থেকে ৫ দিনের চুক্তিতে দ্বিগুণ হারে সুদ দেওয়ার শর্তে ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা বের করে দেন চক্রের সদস্যরা।

ভল্টের রক্ষিত টাকায় এ ধরনের অনৈতিক ব্যবসার কোনো সুযোগ নেই, যা বলাই বাহুল্য। জনগণের আমানতের একটি অংশ নগদ লেনদেনের জন্য ভল্টে সুরক্ষিত থাকে। ভল্ট থেকে টাকা বের করে কেবল গ্রাহকের সঙ্গে লেনদেন করতে হয়, প্রয়োজনে এক শাখা থেকে অন্য শাখায় স্থানান্তর করা যায়। কিন্তু ভল্টের টাকা কোনোভাবেই অন্য কাউকে দেওয়ার সুযোগ নেই। ভল্টে টাকা জমা কিংবা বের করতে গেলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনজনকে একত্রিত হয়ে তা করতে হয়। দেখা যাচ্ছে, তারাই কিনা সুরক্ষিত ভল্টের টাকা দিয়ে করছেন এ অবৈধ ব্যবসা।

ব্যাংকে কর্মরত থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে যারা ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ কিংবা গোপন ব্যবসা করছেন, অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় আমানতের খেয়ানত তো হচ্ছেই, ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থাও হ্রাস পাবে। এর আগে ব্যাংকের ভল্ট চুরির নানা ঘটনা গণমাধ্যমের কল্যাণে সামনে এলেও সেসবের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আমরা দেখিনি। বরং রক্ষকরাই ভক্ষকের ভূমিকায় রয়েছেন বলে ইতঃপূর্বে গণমাধ্যমে নানা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ভালো হতো, যদি এসব প্রতিবেদনের আলোকে কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তদন্তের মাধ্যমে সত্য অনুসন্ধানে আন্তরিকতার পরিচয় দিত। তাহলে এমন ঘটনা আমাদের আর দেখতে হতো না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র বলছে, গত ১৬ বছর ব্যাংকগুলোর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। যে যার ইচ্ছামতো চলেছে। নিয়মিত ব্যাংকের ভল্ট পরিদর্শনও করা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কয়েকজন গভর্নরও নাকি লুটপাটে মত্ত ছিলেন। ফলে কোনো কিছুই কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল না। কাজেই বিভিন্ন ব্যাংকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, ভল্টে তছরুপের ঘটনা ঘটলেও তা প্রকাশিত হতে দেখা যায়নি। আশার কথা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাংক খাতের সংস্কারে জোর দিয়েছে। এর অংশ হিসাবে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের সব শাখায় একযোগে ভল্টের টাকা মিলিয়ে দেখতে এবং সব অনিয়ম দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

ভল্টের টাকায় গোপন ব্যবসা

আপডেট সময় ০৮:৪৭:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ব্যাংকের ভল্ট অর্থ-সম্পদের সবচেয়ে সুরক্ষিত স্থান হিসাবে বিবেচিত হলেও দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউজ শাখার ভল্ট এর ব্যতিক্রম। অবৈধভাবে সুদের ব্যবসায় গোপনে ভল্টের সংরক্ষিত অর্থ খাটিয়ে আসছে ব্যাংকটির একটি চক্র। জানা যায়, অনেক সময় বিমানবন্দরে মালামাল আসার পর তা ছাড় করাতে জরুরি নির্দেশ দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। নির্ধারিত সময়ে মাল ছাড় করাতে না পারলে বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হয় সিএন্ডএফ এজেন্টদের। প্রতিদিনই বাড়তে থাকে জরিমানার অঙ্ক। ফলে তারা ওই চক্রের কাছ থেকে দ্বিগুণ হারে লাখ লাখ টাকা সুদে অর্থ সংগ্রহ করেন। অভিযোগ আছে, সোনালী ব্যাংকের বিমানবন্দর কাস্টম হাউজ শাখার ব্যবস্থাপকের নেতৃত্বে পাঁচ কর্মকর্তার একটি সিন্ডিকেট এ অনৈতিক বাণিজ্যে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এ চক্রের হাতে অর্ধশতাধিক গ্রাহক আছে, যাদের বেশিরভাগই সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী। তারা কাস্টমস থেকে মালামাল ছাড়াতে টাকার সংকটে পড়লে এ চক্রের সদস্যদের দ্বারস্থ হন। তখন ৩ থেকে ৫ দিনের চুক্তিতে দ্বিগুণ হারে সুদ দেওয়ার শর্তে ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা বের করে দেন চক্রের সদস্যরা।

ভল্টের রক্ষিত টাকায় এ ধরনের অনৈতিক ব্যবসার কোনো সুযোগ নেই, যা বলাই বাহুল্য। জনগণের আমানতের একটি অংশ নগদ লেনদেনের জন্য ভল্টে সুরক্ষিত থাকে। ভল্ট থেকে টাকা বের করে কেবল গ্রাহকের সঙ্গে লেনদেন করতে হয়, প্রয়োজনে এক শাখা থেকে অন্য শাখায় স্থানান্তর করা যায়। কিন্তু ভল্টের টাকা কোনোভাবেই অন্য কাউকে দেওয়ার সুযোগ নেই। ভল্টে টাকা জমা কিংবা বের করতে গেলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনজনকে একত্রিত হয়ে তা করতে হয়। দেখা যাচ্ছে, তারাই কিনা সুরক্ষিত ভল্টের টাকা দিয়ে করছেন এ অবৈধ ব্যবসা।

ব্যাংকে কর্মরত থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে যারা ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ কিংবা গোপন ব্যবসা করছেন, অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় আমানতের খেয়ানত তো হচ্ছেই, ব্যাংকের ওপর মানুষের আস্থাও হ্রাস পাবে। এর আগে ব্যাংকের ভল্ট চুরির নানা ঘটনা গণমাধ্যমের কল্যাণে সামনে এলেও সেসবের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আমরা দেখিনি। বরং রক্ষকরাই ভক্ষকের ভূমিকায় রয়েছেন বলে ইতঃপূর্বে গণমাধ্যমে নানা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ভালো হতো, যদি এসব প্রতিবেদনের আলোকে কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তদন্তের মাধ্যমে সত্য অনুসন্ধানে আন্তরিকতার পরিচয় দিত। তাহলে এমন ঘটনা আমাদের আর দেখতে হতো না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র বলছে, গত ১৬ বছর ব্যাংকগুলোর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। যে যার ইচ্ছামতো চলেছে। নিয়মিত ব্যাংকের ভল্ট পরিদর্শনও করা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কয়েকজন গভর্নরও নাকি লুটপাটে মত্ত ছিলেন। ফলে কোনো কিছুই কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল না। কাজেই বিভিন্ন ব্যাংকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, ভল্টে তছরুপের ঘটনা ঘটলেও তা প্রকাশিত হতে দেখা যায়নি। আশার কথা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যাংক খাতের সংস্কারে জোর দিয়েছে। এর অংশ হিসাবে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের সব শাখায় একযোগে ভল্টের টাকা মিলিয়ে দেখতে এবং সব অনিয়ম দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।