ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শরতে ঘুরে আসুন সারিঘাট

ঢাকার ভেতরেই অসাধারণ সুন্দর সব স্থান রয়েছে। যেখানে পরিবার ও বন্ধুসহ গিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন এক দিনেই। এর মধ্যে একটি হলো কেরানীগঞ্জের সারিঘাট। কিছুদিন আগেও একটি পরিত্যক্ত জায়গা হিসেবে পরিচিতি পেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে ঢাকা শহরের একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে সারিঘাট।

ঢাকা শহরের যান্ত্রিকতা থেকে সরে কিছুটা প্রাকৃতিক ছোঁয়ার জন্য জায়গাটি মন্দ নয়। ছোট্ট একটি খাল। তাতে কাচের মতো স্বচ্ছ টলটলে পানি। পানিতে দাপাদাপি করছে একঝাঁক তরুণ। দেখে বোঝা গেল এরা শহর থেকে এসেছে। তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে গ্রামের কয়েক শিশু-কিশোর। কেউবা আবার মাছ ধরছে। নৌকায় চড়ে খালে ঘুরে বেড়াতেও দেখা গেল। একদল তরুণ কাশফুলের বনে খেলছে ফুটবল। এমন দৃশ্য দেখে যে কেউ হারিয়ে যাবেন গ্রামবাংলার চিরচেনা প্রকৃতির মাঝে।

সারিঘাটে ভ্রমণের অন্যতম আরেকটা আকর্ষণ কাশবন। কাশফুলের টানেও এখানে অনেকে আসেন। কোলাহলমুক্ত পরিবেশে নানা রকমের পাখি আর তাদের উচ্চকণ্ঠের ডাক আপনার মনকে ভরিয়ে দেবে। কেউ চাইলে কায়াকিং এবং নৌকা ভ্রমণও করতে পারেন। চাইলে গোসলও করতে পারেন, পানি খুবই পরিষ্কার। কায়াকিং হচ্ছে ভ্রমণ করার জন্য এক ধরনের ছোট নৌকা, যা বৈঠা বা লগি ব্যবহার করে চালানো যায়। হালকা কিন্তু ব্যাল্যান্সড নৌকায় কায়াক ক্লাবের নিজস্ব লাইফ জ্যাকেট পরে উঠলে আপনার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে বৈঠা। ব্যস, এবার আপনি নিজেই মাঝি! ইচ্ছামতো ঘুরতে পারবেন পানি দেখতে দেখতে। অনেকে মাছ ধরার জন্য ছিপ, বড়শি টোপ নিয়ে সেখানে যান।

নিরাপত্তারক্ষী আছে
সারিঘাটে পরিবার ও বাচ্চাদের নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। নিরাপত্তার দিক থেকে অনেক নিরাপত্তারক্ষী আছে। তারা সারাক্ষণ লোকালয়ে ভরপুর থাকে। তাই নির্ভয়ে পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।

যেভাবে যাবেন
ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে প্রথমে যাত্রাবাড়ী যাবেন। সেখান থেকে জুরাইন রেলগেট বাস বা লেগুনায়। জুরাইন পোস্তগোলা ব্রিজের নিচে সিএনজি অটোরিকশা আছে, সেখানে সিএনজি ড্রাইভারকে বললেই হবে যে সারিঘাটে যাব। যদি চার-পাঁচজনের টিম হয়, তাহলে সরাসরি সিএনজি ভাড়া নিতে পারেন সারিঘাট পর্যন্ত। মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল কিংবা প্রাইভেট কারে যেতে পারেন। পার্কিংয়ের কোনো ঝামেলা নেই। দিতে হবে না পার্কিং ফি।

যা খাবেন
এখানে বেশ কয়েকটি টঙঘর রয়েছে, যেখানে আপনি গোল গোল্লা, চাপটি, পেঁয়াজু আলুর চপ, ঝালমুড়ি, ফুচকা খেতে পারেন। নতুন কিছু রেস্টুরেন্ট হয়েছে, সেগুলোতে আপনি বারবিকিউসহ অন্য খাবারগুলো চেখে দেখতে পারেন। এ ছাড়া এখানে পাবেন গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী চাপটি পিঠা ১০-১২ রকমের সুস্বাদু ভর্তাÑযেমন শুঁটকি ভর্তা ২-৩ প্রকার, মরিচ ভর্তা, কাঁচা আম ভর্তা, সরষে ভর্তা, কালিজিরা ভর্তা, পুদিনা ভর্তা, শুকনো মরিচের সঙ্গে রসুনের ভর্তা, আরও অনেক রকম ভর্তা। আরও একটি মজার জিনিস পেয়ে যাবেন সেখানে। ঢাকাইয়া রসালো মজাদার পান। নানা রঙের সাজানো ৫০ রকমের ঢাকাইয়া মিষ্টি পান। কোনোদিন পান খেয়ে না থাকলে অন্তত একটি বার ঢাকাইয়া পানটি খেয়ে দেখতে পারেন।

সতর্কতা
কায়াকিং শুরুর আগে এবং শেষে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করে নেবেন। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে অতিরিক্ত লোকসমাগম এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। শুক্রবার বিকাল ছাড়া অন্য যেকোনো দিন আসার চেষ্টা করতে পারেন।এ ছাড়া মনে রাখবেন চিপস, বিরিয়ানির প্যাকেট কিংবা খাবারের উচ্ছিষ্ট যেখানে-সেখানে ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না। শুধু ভ্রমণে গিয়ে নয়, প্রাত্যহিক জীবনেও যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকুন।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

শরতে ঘুরে আসুন সারিঘাট

আপডেট সময় ০৮:২৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঢাকার ভেতরেই অসাধারণ সুন্দর সব স্থান রয়েছে। যেখানে পরিবার ও বন্ধুসহ গিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন এক দিনেই। এর মধ্যে একটি হলো কেরানীগঞ্জের সারিঘাট। কিছুদিন আগেও একটি পরিত্যক্ত জায়গা হিসেবে পরিচিতি পেলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে ঢাকা শহরের একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে সারিঘাট।

ঢাকা শহরের যান্ত্রিকতা থেকে সরে কিছুটা প্রাকৃতিক ছোঁয়ার জন্য জায়গাটি মন্দ নয়। ছোট্ট একটি খাল। তাতে কাচের মতো স্বচ্ছ টলটলে পানি। পানিতে দাপাদাপি করছে একঝাঁক তরুণ। দেখে বোঝা গেল এরা শহর থেকে এসেছে। তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে গ্রামের কয়েক শিশু-কিশোর। কেউবা আবার মাছ ধরছে। নৌকায় চড়ে খালে ঘুরে বেড়াতেও দেখা গেল। একদল তরুণ কাশফুলের বনে খেলছে ফুটবল। এমন দৃশ্য দেখে যে কেউ হারিয়ে যাবেন গ্রামবাংলার চিরচেনা প্রকৃতির মাঝে।

সারিঘাটে ভ্রমণের অন্যতম আরেকটা আকর্ষণ কাশবন। কাশফুলের টানেও এখানে অনেকে আসেন। কোলাহলমুক্ত পরিবেশে নানা রকমের পাখি আর তাদের উচ্চকণ্ঠের ডাক আপনার মনকে ভরিয়ে দেবে। কেউ চাইলে কায়াকিং এবং নৌকা ভ্রমণও করতে পারেন। চাইলে গোসলও করতে পারেন, পানি খুবই পরিষ্কার। কায়াকিং হচ্ছে ভ্রমণ করার জন্য এক ধরনের ছোট নৌকা, যা বৈঠা বা লগি ব্যবহার করে চালানো যায়। হালকা কিন্তু ব্যাল্যান্সড নৌকায় কায়াক ক্লাবের নিজস্ব লাইফ জ্যাকেট পরে উঠলে আপনার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে বৈঠা। ব্যস, এবার আপনি নিজেই মাঝি! ইচ্ছামতো ঘুরতে পারবেন পানি দেখতে দেখতে। অনেকে মাছ ধরার জন্য ছিপ, বড়শি টোপ নিয়ে সেখানে যান।

নিরাপত্তারক্ষী আছে
সারিঘাটে পরিবার ও বাচ্চাদের নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। নিরাপত্তার দিক থেকে অনেক নিরাপত্তারক্ষী আছে। তারা সারাক্ষণ লোকালয়ে ভরপুর থাকে। তাই নির্ভয়ে পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারবেন।

যেভাবে যাবেন
ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে প্রথমে যাত্রাবাড়ী যাবেন। সেখান থেকে জুরাইন রেলগেট বাস বা লেগুনায়। জুরাইন পোস্তগোলা ব্রিজের নিচে সিএনজি অটোরিকশা আছে, সেখানে সিএনজি ড্রাইভারকে বললেই হবে যে সারিঘাটে যাব। যদি চার-পাঁচজনের টিম হয়, তাহলে সরাসরি সিএনজি ভাড়া নিতে পারেন সারিঘাট পর্যন্ত। মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল কিংবা প্রাইভেট কারে যেতে পারেন। পার্কিংয়ের কোনো ঝামেলা নেই। দিতে হবে না পার্কিং ফি।

যা খাবেন
এখানে বেশ কয়েকটি টঙঘর রয়েছে, যেখানে আপনি গোল গোল্লা, চাপটি, পেঁয়াজু আলুর চপ, ঝালমুড়ি, ফুচকা খেতে পারেন। নতুন কিছু রেস্টুরেন্ট হয়েছে, সেগুলোতে আপনি বারবিকিউসহ অন্য খাবারগুলো চেখে দেখতে পারেন। এ ছাড়া এখানে পাবেন গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী চাপটি পিঠা ১০-১২ রকমের সুস্বাদু ভর্তাÑযেমন শুঁটকি ভর্তা ২-৩ প্রকার, মরিচ ভর্তা, কাঁচা আম ভর্তা, সরষে ভর্তা, কালিজিরা ভর্তা, পুদিনা ভর্তা, শুকনো মরিচের সঙ্গে রসুনের ভর্তা, আরও অনেক রকম ভর্তা। আরও একটি মজার জিনিস পেয়ে যাবেন সেখানে। ঢাকাইয়া রসালো মজাদার পান। নানা রঙের সাজানো ৫০ রকমের ঢাকাইয়া মিষ্টি পান। কোনোদিন পান খেয়ে না থাকলে অন্তত একটি বার ঢাকাইয়া পানটি খেয়ে দেখতে পারেন।

সতর্কতা
কায়াকিং শুরুর আগে এবং শেষে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করে নেবেন। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে অতিরিক্ত লোকসমাগম এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। শুক্রবার বিকাল ছাড়া অন্য যেকোনো দিন আসার চেষ্টা করতে পারেন।এ ছাড়া মনে রাখবেন চিপস, বিরিয়ানির প্যাকেট কিংবা খাবারের উচ্ছিষ্ট যেখানে-সেখানে ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না। শুধু ভ্রমণে গিয়ে নয়, প্রাত্যহিক জীবনেও যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা থেকে বিরত থাকুন।