ঢাকা , বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo ‘আবর্জনা আপলোড করা কারও কাজ হতে পারে না’ Logo জাকের নয়, ওয়ানডে সিরিজে সোহানেই ভরসা মিরাজের Logo পাঁচ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩৩ হাজার, বেশি স্কুল-অফিসের সময় Logo আওয়ামী লীগের ভোটাররা নির্বাচনে কীভাবে থাকবে Logo যুদ্ধ অবসানের নিশ্চয়তা চায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন, নেতানিয়াহুর কণ্ঠে ভিন্ন সুর Logo বন্দরে ওসি-দারোগার বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরে ইউপি সদস্যের অভিযোগ Logo রূপগঞ্জে ডহরগাওয়ে আলেম-ওলামাদের উদ্যোগে গান-বাজনা বন্ধ Logo বন্দর ইউনিয়ন বিএনপি’র কর্মী সভা ও তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নে লিফলেট বিতরণ Logo স্বৈরাচারের দোসর নূর জাহানকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন ছাত্র-জনতা Logo টঙ্গীবাড়ি থানায় চুরির ঘটনা

আওয়ামী লীগের ভোটাররা নির্বাচনে কীভাবে থাকবে

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত অংশ নিতে না পারলে দলটির সমর্থকগোষ্ঠী বা ভোটাররা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে কি-না কিংবা পেলে কীভাবে পাবে- তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌতূহল বাড়ছে।

বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন, কোনো একটি মতাদর্শের সবাইকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখলে সেই নির্বাচন ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ হবে না এবং এ ধরনের নির্বাচন ভবিষ্যতের জন্য দেশে নতুন সমস্যার সূচনা করবে।

আন্দোলনের মুখে গত বছর আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত করে রেখেছে। পাশাপাশি দলটির নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক নৌকা স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।

একই সাথে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগের আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

তিনি জানিয়েছেন, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দিক থেকে এ ধরনের উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত দল হিসেবে নির্বাচনের অযোগ্য থেকে গেলে দলটির সমর্থক বা ভোটাররা কীভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে সেই প্রশ্ন এসেছে নির্বাচন কমিশনের এক মত বিনিময় সভাতেও।

সোমবার ওই সভাতে কমিশন এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু না বললেও গত জুলাইতে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন অবশ্য এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন যে, তিনি আশা করেন দলটির সমর্থকগোষ্ঠী ভোটে অংশ নেবে।

অন্যদিকে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দল হিসেবে তারা অন্যায় করলে তার বিচার হবে ও দেশের আইন সিদ্ধান্ত নেবে। অন্যদিকে বিএনপির নেতারা এ বিষয়ে জনগণই সিদ্ধান্ত নিবে- এমন মন্তব্য করে এসেছেন বিভিন্ন সময়ে।

প্রশ্নটি উঠছে কেন?

আন্দোলনের মুখে ২০২৫ সালের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশের নির্বাচনি বিতর্কে কিংবা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে দেশের ভোটের রাজনীতিকে ‘আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোট’ হিসেবে বর্ণনা করতেন অনেকে।

এর কারণ হলো সংসদের আসন সংখ্যা যাই হোক মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনগুলোতে দলটির ভোটের হার ছিলো কমপক্ষে ৩০ শতাংশ থেকে ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত।

নির্বাচনের ফলের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৮৮টি আসন পেয়েছিলো এবং তাদের ভোট ছিলো প্রদত্ত ভোটের ৩০ দশমিক ১ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়ে তারা ১৪৬টি আসন পেয়েছিলো।

২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ফলাফল বিপর্যয় হয়েছিলো। কিন্তু সেই নির্বাচনেও দলটি ৬২টি আসন পেলেও তাদের ভোট ছিলো ৪০ দশমিক ২ শতাংশ।

২০০৮ সালের নির্বাচনে দলটি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিলো। সেবারের নির্বাচনে তাদের ভোট প্রাপ্তির হার ছিলো ৪৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।

কিন্তু এবার যখন দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলো এবং নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন ও প্রতীক স্থগিত করায় আগামী নির্বাচনে দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলেই মনে করছেন অনেকে।

সে কারণেই কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, তাহলে দলটির যে সমর্থকগোষ্ঠীর ধারণা অতীতের নির্বাচনের ফলগুলোতেও পাওয়া গেছে তারা কীভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে?

সোমবার নির্বাচন কমিশনে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে এক মত বিনিময় সভায় অংশ নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ কমিশনের উদ্দেশ্যে বলেছেন, …. আওয়ামী লীগের ভোটারদের তো আপনি বাদ দিতে পারবেন না। তারা তো দেশের নাগরিক। তারা যদিও অনুশোচনা করেনি, এখনো পর্যন্ত প্রায়শ্চিত্ত করেনি, অনুতপ্ত হয়নি। কিন্তু এরপরও তাদের বাদ দিয়ে তো নির্বাচনটা হতে পারে না।

ওই সভাতেই কেউ কেউ বলেছেন, সবাই ভোটে অংশ নিতে পারলে সংঘাতের আশঙ্কা কমবে এবং উৎসবমুখর নির্বাচন করতে হলে সেটি সবাইকে নিয়েই করতে হবে।

কমিশন থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য আসেনি।

তবে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে না পারলে নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে, সিইসি তার সাক্ষাৎকারে বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, সে প্রশ্ন তো উঠতেই পারে, স্বাভাবিক। আমাদের চিন্তা হলো, যারা ভোটার আছে, পার্টিসিপেন্টস অব ভোটার, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে চাই। এখন ইনক্লুসিভের ডেফিনিশন তো একেকজনের কাছে একেক রকম।

তবে তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে আশা প্রকাশ করেছেন যে, তাদের সমর্থকগোষ্ঠী ভোটে আসবে।

তারা যে একেবারেই আসবে না, এটা আমরা মনে করি না। লার্জ নম্বর অব দেম পার্টিসিপেট ইন দ্য ইলেকশন, নট অ্যাজ আ ক্যান্ডিডেট, বাট অ্যাজ আ ভোটার।

এখন শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরুর পর নির্বাচনে দলটির অংশ নেয়ার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা আরও কমেছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কীভাবে হবে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এর কথা বললে একটা মতাদর্শের লোকজনকে বাইরে রেখে তো সেটা হবে না।

তার মতে, শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে বাইরে রাখলে তিনটি বিষয়ের দিকে নজর থাকবে সবার।

এগুলো হলো: যাদের বাইরে রাখা হবে তারা সক্ষমতা থাকলে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, যারা সবসময় নৌকায় ভোট দিয়ে আসছেন তারা কৌশলে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে ভাগ হয়ে কাজ করতে পারে, যা ফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে কিংবা সংঘবদ্ধভাবে তারা হয়তো ভোটকেন্দ্রে যাবেন না ভোটের হার কম দেখানোর জন্য।

তখন আওয়ামী লীগের হাতে অস্ত্র আসবে এটা বলার যে তাদের নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখায় মানুষ তাতে অংশ নেয়নি,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মহিউদ্দিন আহমদ।

আরেকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলছেন, দেশের আজকের সংকটের মূলেই হলো ঠিকমতো সবাইকে নিয়ে নির্বাচন না হওয়া।

এখন আবার কোনো একটি মতাদর্শের মানুষকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হলে সেটি ভবিষ্যতের জন্য নতুন সমস্যার সূচনা করবে। এ ধরনের নির্বাচন আসলে শেষ পর্যন্ত দেশ বিদেশে গ্রহণযোগ্যও হয়না যা গত তিনটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঘটেছে, বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি।

তার মতে, যারা অপরাধ বা দোষ করেনি বা আদালত কর্তৃক দোষী হয়নি একটি দলের এমন সমর্থকদেরও নিজ দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে না দেওয়া বা অন্য দলের কাউকে ভোট দিতে বাধ্য করা অন্যায়।

বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের দুজন নেতা বিবিসিকে জানিয়েছেন, দলটি নির্বাচন করা বা না করা নিয়ে দলের পরিমণ্ডলে এখনো কোথাও কোনো আলোচনা হয়েছে বলে তাদের জানা নেই।

একজন নেতা অবশ্য ধারণা দিয়েছেন যে, সরকার বিষয়টি নিয়ে কোন দিকে অগ্রসর হয় সেটিই পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।

যদিও দলটির অনেক কর্মী সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন যে ‘আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হবে না’। যদিও কিসের ভিত্তিতে তারা এমন প্রচারণা চালাচ্ছেন তা পরিষ্কার নয়।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

‘আবর্জনা আপলোড করা কারও কাজ হতে পারে না’

আওয়ামী লীগের ভোটাররা নির্বাচনে কীভাবে থাকবে

আপডেট সময় ১০:২৮:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত অংশ নিতে না পারলে দলটির সমর্থকগোষ্ঠী বা ভোটাররা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে কি-না কিংবা পেলে কীভাবে পাবে- তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌতূহল বাড়ছে।

বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন, কোনো একটি মতাদর্শের সবাইকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখলে সেই নির্বাচন ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ হবে না এবং এ ধরনের নির্বাচন ভবিষ্যতের জন্য দেশে নতুন সমস্যার সূচনা করবে।

আন্দোলনের মুখে গত বছর আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিত করে রেখেছে। পাশাপাশি দলটির নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক নৌকা স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।

একই সাথে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগের আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

তিনি জানিয়েছেন, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সরকার ও নির্বাচন কমিশনের দিক থেকে এ ধরনের উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত দল হিসেবে নির্বাচনের অযোগ্য থেকে গেলে দলটির সমর্থক বা ভোটাররা কীভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে সেই প্রশ্ন এসেছে নির্বাচন কমিশনের এক মত বিনিময় সভাতেও।

সোমবার ওই সভাতে কমিশন এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু না বললেও গত জুলাইতে বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন অবশ্য এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন যে, তিনি আশা করেন দলটির সমর্থকগোষ্ঠী ভোটে অংশ নেবে।

অন্যদিকে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দল হিসেবে তারা অন্যায় করলে তার বিচার হবে ও দেশের আইন সিদ্ধান্ত নেবে। অন্যদিকে বিএনপির নেতারা এ বিষয়ে জনগণই সিদ্ধান্ত নিবে- এমন মন্তব্য করে এসেছেন বিভিন্ন সময়ে।

প্রশ্নটি উঠছে কেন?

আন্দোলনের মুখে ২০২৫ সালের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশের নির্বাচনি বিতর্কে কিংবা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে দেশের ভোটের রাজনীতিকে ‘আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোট’ হিসেবে বর্ণনা করতেন অনেকে।

এর কারণ হলো সংসদের আসন সংখ্যা যাই হোক মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনগুলোতে দলটির ভোটের হার ছিলো কমপক্ষে ৩০ শতাংশ থেকে ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত।

নির্বাচনের ফলের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৮৮টি আসন পেয়েছিলো এবং তাদের ভোট ছিলো প্রদত্ত ভোটের ৩০ দশমিক ১ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে ৩৭ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়ে তারা ১৪৬টি আসন পেয়েছিলো।

২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ফলাফল বিপর্যয় হয়েছিলো। কিন্তু সেই নির্বাচনেও দলটি ৬২টি আসন পেলেও তাদের ভোট ছিলো ৪০ দশমিক ২ শতাংশ।

২০০৮ সালের নির্বাচনে দলটি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিলো। সেবারের নির্বাচনে তাদের ভোট প্রাপ্তির হার ছিলো ৪৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।

কিন্তু এবার যখন দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলো এবং নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন ও প্রতীক স্থগিত করায় আগামী নির্বাচনে দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না বলেই মনে করছেন অনেকে।

সে কারণেই কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, তাহলে দলটির যে সমর্থকগোষ্ঠীর ধারণা অতীতের নির্বাচনের ফলগুলোতেও পাওয়া গেছে তারা কীভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে?

সোমবার নির্বাচন কমিশনে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে এক মত বিনিময় সভায় অংশ নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ কমিশনের উদ্দেশ্যে বলেছেন, …. আওয়ামী লীগের ভোটারদের তো আপনি বাদ দিতে পারবেন না। তারা তো দেশের নাগরিক। তারা যদিও অনুশোচনা করেনি, এখনো পর্যন্ত প্রায়শ্চিত্ত করেনি, অনুতপ্ত হয়নি। কিন্তু এরপরও তাদের বাদ দিয়ে তো নির্বাচনটা হতে পারে না।

ওই সভাতেই কেউ কেউ বলেছেন, সবাই ভোটে অংশ নিতে পারলে সংঘাতের আশঙ্কা কমবে এবং উৎসবমুখর নির্বাচন করতে হলে সেটি সবাইকে নিয়েই করতে হবে।

কমিশন থেকে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য আসেনি।

তবে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে না পারলে নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে, সিইসি তার সাক্ষাৎকারে বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, সে প্রশ্ন তো উঠতেই পারে, স্বাভাবিক। আমাদের চিন্তা হলো, যারা ভোটার আছে, পার্টিসিপেন্টস অব ভোটার, নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে চাই। এখন ইনক্লুসিভের ডেফিনিশন তো একেকজনের কাছে একেক রকম।

তবে তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে আশা প্রকাশ করেছেন যে, তাদের সমর্থকগোষ্ঠী ভোটে আসবে।

তারা যে একেবারেই আসবে না, এটা আমরা মনে করি না। লার্জ নম্বর অব দেম পার্টিসিপেট ইন দ্য ইলেকশন, নট অ্যাজ আ ক্যান্ডিডেট, বাট অ্যাজ আ ভোটার।

এখন শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরুর পর নির্বাচনে দলটির অংশ নেয়ার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা আরও কমেছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কীভাবে হবে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এর কথা বললে একটা মতাদর্শের লোকজনকে বাইরে রেখে তো সেটা হবে না।

তার মতে, শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে বাইরে রাখলে তিনটি বিষয়ের দিকে নজর থাকবে সবার।

এগুলো হলো: যাদের বাইরে রাখা হবে তারা সক্ষমতা থাকলে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, যারা সবসময় নৌকায় ভোট দিয়ে আসছেন তারা কৌশলে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে ভাগ হয়ে কাজ করতে পারে, যা ফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখবে কিংবা সংঘবদ্ধভাবে তারা হয়তো ভোটকেন্দ্রে যাবেন না ভোটের হার কম দেখানোর জন্য।

তখন আওয়ামী লীগের হাতে অস্ত্র আসবে এটা বলার যে তাদের নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখায় মানুষ তাতে অংশ নেয়নি,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মহিউদ্দিন আহমদ।

আরেকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলছেন, দেশের আজকের সংকটের মূলেই হলো ঠিকমতো সবাইকে নিয়ে নির্বাচন না হওয়া।

এখন আবার কোনো একটি মতাদর্শের মানুষকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হলে সেটি ভবিষ্যতের জন্য নতুন সমস্যার সূচনা করবে। এ ধরনের নির্বাচন আসলে শেষ পর্যন্ত দেশ বিদেশে গ্রহণযোগ্যও হয়না যা গত তিনটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঘটেছে, বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি।

তার মতে, যারা অপরাধ বা দোষ করেনি বা আদালত কর্তৃক দোষী হয়নি একটি দলের এমন সমর্থকদেরও নিজ দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে না দেওয়া বা অন্য দলের কাউকে ভোট দিতে বাধ্য করা অন্যায়।

বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের দুজন নেতা বিবিসিকে জানিয়েছেন, দলটি নির্বাচন করা বা না করা নিয়ে দলের পরিমণ্ডলে এখনো কোথাও কোনো আলোচনা হয়েছে বলে তাদের জানা নেই।

একজন নেতা অবশ্য ধারণা দিয়েছেন যে, সরকার বিষয়টি নিয়ে কোন দিকে অগ্রসর হয় সেটিই পর্যবেক্ষণ করছেন তারা।

যদিও দলটির অনেক কর্মী সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন যে ‘আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন হবে না’। যদিও কিসের ভিত্তিতে তারা এমন প্রচারণা চালাচ্ছেন তা পরিষ্কার নয়।