ঢাকা , সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতারক আলম প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি টাকা

এমডি বাবুল ভূঁইয়া: বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে অভিনব কায়দায় প্রতারনা করে মোঃ সামসুদ্দোহা আলম নামে এক ব্যাক্তি প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে ।

ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষীপুর জেলার মটুবি গ্রামের আবদুল জলিল হাফেজের ভাগিনীর সাথে। প্রতারক আলম আবদুল জলিলের মেয়ে সাথি আক্তারের স্বামী। সে বিভিন্ন জায়গায় তেল ও মবিল সাপ্লাইয়ের ব্যবসা করতো।

প্রতারক সামসুদ্দোহা আলম নোয়াখালীর সেনবাগ ভুঁইয়া বাড়ির আটিয়া গ্রামের শাহজাহান মাষ্টারের ছেলে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী জানান, প্রতারক আলম তার মামতো বোন জামাই। পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে গ্রামের বাড়িতে গেলে আলমের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় তার মামাতো বোন সাথি ও তার পরিবার। সেই সূত্র ধরে সামসুদ্দোহা আলম প্রায়ই ভুক্তভোগীর ঢাকার বাসায় (পূর্ব বাসাবো) ভিন্ন অজুহাতে আসতো। স্বাভাবিকভাবে কোন আত্মীয় বাসায় আসলে তাকে অবশ্যই নিষেধ করা যায় না। এমনি করে আলমের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে।

একদিন আলম ভুক্তভোগীকে জানায় তার ব্যবসাটা টাকার জন্য ভালোভাবে গোছাতে পারছেনা। তাই ভালোভাবে ব্যবসা পরিচালনার জন্য পঁচিশ লক্ষ টাকা তাদের কাছে ধার চায়। তার বিনিময়ে আলম তাদেরকে ব্যবসায়িক লভ্যাংশ থেকে মুনাফা দেওয়ার শর্ত রাখে। প্রাথমিক ভাবে টাকা না দিলেও পরবর্তিকালে মামতো বোন সাথির সুখের কথা চিন্তা করে টাকা দিতে রাজি হন। এবং উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে একটি স্ট্যাম্পে টাকার পরিমান উল্লেখ সহ লভ্যাংশের কথা চুক্তিকারে লিপিবদ্ধ হয়ে উভয়েই স্বাক্ষর করেন।

প্রাথমিকভাবে কয়েকমাস ঠিকভাবে মুনাফা দিলেও হঠাৎ করে ব্যবসায়ীক লছ দেখিয়ে লভ্যাংশ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এমন করে কয়েকমাস চলে যায়। কিন্তু প্রতারক আলম ভূক্তভোগীর সাথে কোনরকম যোগাযোগ না করায় বাধ্য হয়ে তিনি নিজেই যোগাযোগ করেন এবং লভ্যাংশ দিতে হবেনা জানিয়ে মুল টাকা ২৫ লক্ষ ফেরত দিতে বললে প্রতারক আলম জানায় সাক্ষাতে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন।

কিছুদিনপর প্রতারক আলম ভূক্তভোগীর বাসায় এসে নতুন করে ছলনার আশ্রয় নেন। সে জানায় তার কয়েকটি ব্যাবসায়ীক প্রজেক্ট রয়েছে যার বাজার মুল্য কয়েক কোটি টাকা। এখন বিক্রি করতে গেলে অনেক সস্তায় বিক্রি করতে হবে। তাই সে প্রজেক্ট দেখিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা লোন নিয়েছিল। যাতে করে পুণরায় ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে। কিন্তু ব্যাংক এখন তাদের টাকা ফেরত চাচ্ছে। ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে না পারলে তারা প্রজেক্ট গুলো নিয়ে নিবে। আলমের কথার বাচনভঙ্গি এতাটাই নম্র এবং ভদ্র ছিল যে কেউ তার কথা শোনলে বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে।

ভুক্তভোগী তখন তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে আলোচনা করে পূনরায় তাকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। যেহেতু আলম তার আপন মামাতো বোন জামাই, তাই তিনি আত্মীয়তাকে প্রাধান্য দিতেই আলমের সমস্যা সমাধান করার জন্য সরল মনে ভূক্তভোগীর নিজ মা-ভাই, বোনদের সাথে আলোচনা করে আরো কিছু টাকার ব্যবস্থা করে দেন।

সুচতুর প্রতারক আলম আবারও এক দু’মাস লভ্যাংশ দিয়ে বিশ্বাস অর্জন করেন। এমনকি ভুক্তভোগীর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন । আলম এতোটাই দুরদর্শি চালাক প্রকৃতির লোক ছিলেন, সে ভুক্তভোগীর ছেলে, মা-ছোট বোন এবং ভাইকে লোভে ফেলে প্রতারনার মাধ্যমে বিভিন্ন কৌশলে তাদের কাছ থেকেও হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা। যা তিনি পরে জানতে পারেন।

ভুক্তভোগী আমাদের প্রতিবেদককে জানান, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের বন্যা শুরু হওয়ার মাঝা মাঝি হইতে আলম নিখোঁজ রয়েছে। তার ফোন বন্ধ রয়েছে।

আমার মামাতো বোন সাথিসহ সকল আত্মীয়স্বজন এমন কি আলমের বাড়ির লোকজনের সাথে আমরা যোগাযোগ করেও তার সন্ধান পাইনি।

গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে আমাদের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পারি আলম গাজীপুরে আছে। তখন তার মুঠো ফোনে কল করিলে একজন মহিলা ফোন রিসিভ করেন। উনার পরিচয় জানতে চাইলে নিজেকে আলমের বউ পরিচয় দিলে আমরা অবাক হয়ে যাই। তখন সমস্ত ঘটনা তাকে জানাইলে তিনি বলেন, আমরা যেন দ্রুত গাজিপুর চলে আসি। আমাদের কথা সত্যি হলে উনি (মহিলা) আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আমরা কাল বিলম্ব না করে মহিলার দেওয়া ঠিকানানুযায়ী গেলে তিনি জানান আলম কিছুক্ষণ আগে বাহিরে চলে গেছে। মহিলার সাথে আলাপচারিতার একপর্যায়ে জানতে পারি আলম আগেও কয়েকটি বিবাহ করেছে। সে এভাবে বিবাহ করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর আলম না আশায় আমরা ঢাকায় ফিরে আসি।

আমাদের প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তরে ভুক্তভোগীরা জানান, এ ব্যাপা‌রে আপাদত তারা কোন আইনের আশ্রয় নেননি। তাছাড়া সম্প্রতিকালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারনে থানা গুলোর কার্যক্রম ভালো করে চালু না হওয়ার জন্য আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারেননি। তবে শীঘ্রই আইনআনুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

প্রতারক আলম প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি টাকা

আপডেট সময় ১০:১০:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪

এমডি বাবুল ভূঁইয়া: বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে অভিনব কায়দায় প্রতারনা করে মোঃ সামসুদ্দোহা আলম নামে এক ব্যাক্তি প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে ।

ঘটনাটি ঘটেছে লক্ষীপুর জেলার মটুবি গ্রামের আবদুল জলিল হাফেজের ভাগিনীর সাথে। প্রতারক আলম আবদুল জলিলের মেয়ে সাথি আক্তারের স্বামী। সে বিভিন্ন জায়গায় তেল ও মবিল সাপ্লাইয়ের ব্যবসা করতো।

প্রতারক সামসুদ্দোহা আলম নোয়াখালীর সেনবাগ ভুঁইয়া বাড়ির আটিয়া গ্রামের শাহজাহান মাষ্টারের ছেলে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী জানান, প্রতারক আলম তার মামতো বোন জামাই। পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে গ্রামের বাড়িতে গেলে আলমের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় তার মামাতো বোন সাথি ও তার পরিবার। সেই সূত্র ধরে সামসুদ্দোহা আলম প্রায়ই ভুক্তভোগীর ঢাকার বাসায় (পূর্ব বাসাবো) ভিন্ন অজুহাতে আসতো। স্বাভাবিকভাবে কোন আত্মীয় বাসায় আসলে তাকে অবশ্যই নিষেধ করা যায় না। এমনি করে আলমের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে।

একদিন আলম ভুক্তভোগীকে জানায় তার ব্যবসাটা টাকার জন্য ভালোভাবে গোছাতে পারছেনা। তাই ভালোভাবে ব্যবসা পরিচালনার জন্য পঁচিশ লক্ষ টাকা তাদের কাছে ধার চায়। তার বিনিময়ে আলম তাদেরকে ব্যবসায়িক লভ্যাংশ থেকে মুনাফা দেওয়ার শর্ত রাখে। প্রাথমিক ভাবে টাকা না দিলেও পরবর্তিকালে মামতো বোন সাথির সুখের কথা চিন্তা করে টাকা দিতে রাজি হন। এবং উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে একটি স্ট্যাম্পে টাকার পরিমান উল্লেখ সহ লভ্যাংশের কথা চুক্তিকারে লিপিবদ্ধ হয়ে উভয়েই স্বাক্ষর করেন।

প্রাথমিকভাবে কয়েকমাস ঠিকভাবে মুনাফা দিলেও হঠাৎ করে ব্যবসায়ীক লছ দেখিয়ে লভ্যাংশ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এমন করে কয়েকমাস চলে যায়। কিন্তু প্রতারক আলম ভূক্তভোগীর সাথে কোনরকম যোগাযোগ না করায় বাধ্য হয়ে তিনি নিজেই যোগাযোগ করেন এবং লভ্যাংশ দিতে হবেনা জানিয়ে মুল টাকা ২৫ লক্ষ ফেরত দিতে বললে প্রতারক আলম জানায় সাক্ষাতে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে ফোন রেখে দেন।

কিছুদিনপর প্রতারক আলম ভূক্তভোগীর বাসায় এসে নতুন করে ছলনার আশ্রয় নেন। সে জানায় তার কয়েকটি ব্যাবসায়ীক প্রজেক্ট রয়েছে যার বাজার মুল্য কয়েক কোটি টাকা। এখন বিক্রি করতে গেলে অনেক সস্তায় বিক্রি করতে হবে। তাই সে প্রজেক্ট দেখিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা লোন নিয়েছিল। যাতে করে পুণরায় ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে। কিন্তু ব্যাংক এখন তাদের টাকা ফেরত চাচ্ছে। ব্যাংকের টাকা ফেরত দিতে না পারলে তারা প্রজেক্ট গুলো নিয়ে নিবে। আলমের কথার বাচনভঙ্গি এতাটাই নম্র এবং ভদ্র ছিল যে কেউ তার কথা শোনলে বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে।

ভুক্তভোগী তখন তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে আলোচনা করে পূনরায় তাকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। যেহেতু আলম তার আপন মামাতো বোন জামাই, তাই তিনি আত্মীয়তাকে প্রাধান্য দিতেই আলমের সমস্যা সমাধান করার জন্য সরল মনে ভূক্তভোগীর নিজ মা-ভাই, বোনদের সাথে আলোচনা করে আরো কিছু টাকার ব্যবস্থা করে দেন।

সুচতুর প্রতারক আলম আবারও এক দু’মাস লভ্যাংশ দিয়ে বিশ্বাস অর্জন করেন। এমনকি ভুক্তভোগীর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন । আলম এতোটাই দুরদর্শি চালাক প্রকৃতির লোক ছিলেন, সে ভুক্তভোগীর ছেলে, মা-ছোট বোন এবং ভাইকে লোভে ফেলে প্রতারনার মাধ্যমে বিভিন্ন কৌশলে তাদের কাছ থেকেও হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা। যা তিনি পরে জানতে পারেন।

ভুক্তভোগী আমাদের প্রতিবেদককে জানান, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের বন্যা শুরু হওয়ার মাঝা মাঝি হইতে আলম নিখোঁজ রয়েছে। তার ফোন বন্ধ রয়েছে।

আমার মামাতো বোন সাথিসহ সকল আত্মীয়স্বজন এমন কি আলমের বাড়ির লোকজনের সাথে আমরা যোগাযোগ করেও তার সন্ধান পাইনি।

গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে আমাদের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পারি আলম গাজীপুরে আছে। তখন তার মুঠো ফোনে কল করিলে একজন মহিলা ফোন রিসিভ করেন। উনার পরিচয় জানতে চাইলে নিজেকে আলমের বউ পরিচয় দিলে আমরা অবাক হয়ে যাই। তখন সমস্ত ঘটনা তাকে জানাইলে তিনি বলেন, আমরা যেন দ্রুত গাজিপুর চলে আসি। আমাদের কথা সত্যি হলে উনি (মহিলা) আমাদের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আমরা কাল বিলম্ব না করে মহিলার দেওয়া ঠিকানানুযায়ী গেলে তিনি জানান আলম কিছুক্ষণ আগে বাহিরে চলে গেছে। মহিলার সাথে আলাপচারিতার একপর্যায়ে জানতে পারি আলম আগেও কয়েকটি বিবাহ করেছে। সে এভাবে বিবাহ করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেন। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর আলম না আশায় আমরা ঢাকায় ফিরে আসি।

আমাদের প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তরে ভুক্তভোগীরা জানান, এ ব্যাপা‌রে আপাদত তারা কোন আইনের আশ্রয় নেননি। তাছাড়া সম্প্রতিকালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারনে থানা গুলোর কার্যক্রম ভালো করে চালু না হওয়ার জন্য আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারেননি। তবে শীঘ্রই আইনআনুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।