ঢাকা , শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে পেটানোর অভিযোগ

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে গিয়ে এক কাপড় ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে। স্থানীয় জামায়াত নেতাকর্মীদের সামনেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সোলাইমান ফরাজী। এ নিয়ে গতকাল সোমবার (৪ নভেম্বর) শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ী।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দেওয়া অভিযোগ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার ধানকাঠি ইউনিয়নের মডেরহাট বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করেন সোলাইমান ফরাজী। গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডামুড্যা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিক মঠেরহাট বাজারে যান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় আবু বকর সিদ্দিক তার সহকারীর মাধ্যমে সোলাইমানের কাছে তার দোকানের ট্রেড লাইসেন্স দেখতে চান। এ সময় সোলাইমান আবু বকর সিদ্দিককে ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি দিলে তিনি মূল কপি দেখতে চান।

মূল কপি দেখাতে দেরি হওয়ায় আবু বকর সিদ্দিক রাগান্বিত হয়ে সোলায়মানকে এক হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করেন। সোলাইমান জরিমানার কারণ জানতে চাইলে আবু বকর সিদ্দিক তার কাছে টিন ও আয়কর সার্টিফিকেট চান। মফস্বল বাজারের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হওয়ায় সোলাইমানের টিন ও আয়কর সার্টিফিকেট সম্পর্কে ধারণা নেই জানালে ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিক সোলাইমানকে গাড়িতে তুলে উপজেলা ভূমি অফিসে নিয়ে আসেন।

এরপর অফিসে সোলাইমানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, কান ধরে ওঠবস করিয়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দাবি করেন আবু বকর সিদ্দিক। এছাড়াও আবু বকর সিদ্দিকের টেবিলে থাকা পেপার ওয়েট দিয়ে সোলাইমানকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। সোলাইমান ভয় পাওয়ার পরও আবু বকর সিদ্দিক প্রথমে আনসার সদস্য দিয়ে তাকে মারপিট করান। আনসার সদস্যের মারপিট আবু বকর সিদ্দিকের পছন্দ না হওয়ায় নিজেই আনসারের হাত থেকে লাঠি নিয়ে সোলাইমানকে মারধর করেন।

সোলাইমানকে ভূমি অফিসে মারধর করা হচ্ছে- এমন খবর পেয়ে ডামুড্যা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির সাইফুল ইসলাম, ডামুড্যা পৌর জামায়াতের আমির আতিকুর রহমান কবির ও স্থানীয় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান। ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই সোলাইমানকে পেটাচ্ছেন এমন ঘটনা দেখে তারা সকলেই কিংকর্তব্যবিমূর হয়ে পড়েন। মারপিটের পর আবু বকর সিদ্দিক ১০ হাজার টাকা জরিমানা দাবি করেন সোলাইমানের কাছে। বিষয়টি নিয়ে জামায়াত নেতারা হস্তক্ষেপ করলে ২ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে মুক্ত হন সোলাইমান।

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ডামুড্যা উপজেলা জামায়াতের আমির সাইফুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খবর পেয়ে ভূমি অফিসে গিয়ে দেখি ম্যাজিস্ট্রেট সোলাইমানকে গালাগালি করেতেছেন। আনসার সদস্য ম্যাজিস্ট্রেটের হুকুমে সোলাইমানকে পেটাতে থাকলেও একপর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিক নিজেই পেটানো শুরু করেন। কেউ কোনো অপরাধ করলে ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই এভাবে কাউকে মারতে পারেন, তা আমার জানা ছিল না। আমরা চাই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে উচিত বিচার করা হোক।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সোলাইমান ফরাজী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি গ্রামের ক্ষুদ্র একজন ব্যবসায়ী। যখন আমাকে জরিমানা করা হয়, আমি শুধু বলেছিলাম আমরা গ্রামের দোকানদার, টিন ও আয়কর বুঝি না, তাই আমাদের এসব নেই। প্রয়োজন হলে আমাকে সময় দেওয়া হলে আমি করে নেব। এতেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে তার অফিস কক্ষে নিয়ে কানে ধরে ওঠবস করায়। আনসার সদস্য দিয়ে আমাকে লাঠি দিয়ে পেটায়। এক পর্যায়ে তিনি নিজেও আমাকে জামায়াত নেতাদের সামনেই পিটিয়েছেন। একজন ম্যাজিস্ট্রেট যদি আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের সঙ্গে এমন আচরণ করেন, তবে আমরা কই যাব? আমাকে কান ধরে উঠবস করিয়ে, পিটিয়ে আমার সম্মানহানিসহ আমাকে জখম করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

বিষয়টি নিয়ে ডামুড্যা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ধানকাঠি বাজারে সোলাইমান ফরাজীকে প্রথমে এক হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি টাকা না দিয়ে দুর্ব্যবহার করেছেন। বিধান রয়েছে জরিমানার টাকা না দিলে তার কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। যেহেতু তিনি জরিমানার টাকা দেননি, তাই কারাদণ্ড দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাকে আমার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে একটি নির্দিষ্ট দলের নেতাদের অনুরোধে তাকে ২ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়েই হয়ত ওই দলটির নেতাদের মাইন্ডে লেগেছে। এরপর থেকেই মারধরসহ অন্যান্য অভিযোগ উঠেছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়েছেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন। তিনি বলেন, বিষয়টি আমি আপনাদের মাধ্যমেই জানতে পেরেছি। অভিযোগের কপি এখনো আমার কাছে আসেনি। দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে পেটানোর অভিযোগ

আপডেট সময় ০৯:৫০:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে গিয়ে এক কাপড় ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে। স্থানীয় জামায়াত নেতাকর্মীদের সামনেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সোলাইমান ফরাজী। এ নিয়ে গতকাল সোমবার (৪ নভেম্বর) শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ী।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দেওয়া অভিযোগ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার ধানকাঠি ইউনিয়নের মডেরহাট বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করেন সোলাইমান ফরাজী। গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডামুড্যা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিক মঠেরহাট বাজারে যান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় আবু বকর সিদ্দিক তার সহকারীর মাধ্যমে সোলাইমানের কাছে তার দোকানের ট্রেড লাইসেন্স দেখতে চান। এ সময় সোলাইমান আবু বকর সিদ্দিককে ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি দিলে তিনি মূল কপি দেখতে চান।

মূল কপি দেখাতে দেরি হওয়ায় আবু বকর সিদ্দিক রাগান্বিত হয়ে সোলায়মানকে এক হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করেন। সোলাইমান জরিমানার কারণ জানতে চাইলে আবু বকর সিদ্দিক তার কাছে টিন ও আয়কর সার্টিফিকেট চান। মফস্বল বাজারের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হওয়ায় সোলাইমানের টিন ও আয়কর সার্টিফিকেট সম্পর্কে ধারণা নেই জানালে ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিক সোলাইমানকে গাড়িতে তুলে উপজেলা ভূমি অফিসে নিয়ে আসেন।

এরপর অফিসে সোলাইমানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, কান ধরে ওঠবস করিয়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানা দাবি করেন আবু বকর সিদ্দিক। এছাড়াও আবু বকর সিদ্দিকের টেবিলে থাকা পেপার ওয়েট দিয়ে সোলাইমানকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। সোলাইমান ভয় পাওয়ার পরও আবু বকর সিদ্দিক প্রথমে আনসার সদস্য দিয়ে তাকে মারপিট করান। আনসার সদস্যের মারপিট আবু বকর সিদ্দিকের পছন্দ না হওয়ায় নিজেই আনসারের হাত থেকে লাঠি নিয়ে সোলাইমানকে মারধর করেন।

সোলাইমানকে ভূমি অফিসে মারধর করা হচ্ছে- এমন খবর পেয়ে ডামুড্যা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির সাইফুল ইসলাম, ডামুড্যা পৌর জামায়াতের আমির আতিকুর রহমান কবির ও স্থানীয় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান। ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই সোলাইমানকে পেটাচ্ছেন এমন ঘটনা দেখে তারা সকলেই কিংকর্তব্যবিমূর হয়ে পড়েন। মারপিটের পর আবু বকর সিদ্দিক ১০ হাজার টাকা জরিমানা দাবি করেন সোলাইমানের কাছে। বিষয়টি নিয়ে জামায়াত নেতারা হস্তক্ষেপ করলে ২ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে মুক্ত হন সোলাইমান।

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ডামুড্যা উপজেলা জামায়াতের আমির সাইফুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খবর পেয়ে ভূমি অফিসে গিয়ে দেখি ম্যাজিস্ট্রেট সোলাইমানকে গালাগালি করেতেছেন। আনসার সদস্য ম্যাজিস্ট্রেটের হুকুমে সোলাইমানকে পেটাতে থাকলেও একপর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিক নিজেই পেটানো শুরু করেন। কেউ কোনো অপরাধ করলে ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই এভাবে কাউকে মারতে পারেন, তা আমার জানা ছিল না। আমরা চাই এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে উচিত বিচার করা হোক।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সোলাইমান ফরাজী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি গ্রামের ক্ষুদ্র একজন ব্যবসায়ী। যখন আমাকে জরিমানা করা হয়, আমি শুধু বলেছিলাম আমরা গ্রামের দোকানদার, টিন ও আয়কর বুঝি না, তাই আমাদের এসব নেই। প্রয়োজন হলে আমাকে সময় দেওয়া হলে আমি করে নেব। এতেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে তার অফিস কক্ষে নিয়ে কানে ধরে ওঠবস করায়। আনসার সদস্য দিয়ে আমাকে লাঠি দিয়ে পেটায়। এক পর্যায়ে তিনি নিজেও আমাকে জামায়াত নেতাদের সামনেই পিটিয়েছেন। একজন ম্যাজিস্ট্রেট যদি আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের সঙ্গে এমন আচরণ করেন, তবে আমরা কই যাব? আমাকে কান ধরে উঠবস করিয়ে, পিটিয়ে আমার সম্মানহানিসহ আমাকে জখম করা হয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

বিষয়টি নিয়ে ডামুড্যা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ম্যাজিস্ট্রেট আবু বকর সিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ধানকাঠি বাজারে সোলাইমান ফরাজীকে প্রথমে এক হাজার ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি টাকা না দিয়ে দুর্ব্যবহার করেছেন। বিধান রয়েছে জরিমানার টাকা না দিলে তার কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। যেহেতু তিনি জরিমানার টাকা দেননি, তাই কারাদণ্ড দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাকে আমার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে একটি নির্দিষ্ট দলের নেতাদের অনুরোধে তাকে ২ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়েই হয়ত ওই দলটির নেতাদের মাইন্ডে লেগেছে। এরপর থেকেই মারধরসহ অন্যান্য অভিযোগ উঠেছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়েছেন শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন। তিনি বলেন, বিষয়টি আমি আপনাদের মাধ্যমেই জানতে পেরেছি। অভিযোগের কপি এখনো আমার কাছে আসেনি। দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।