ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo বিগত তিন নির্বাচন বৈধ বলা পর্যবেক্ষকদের সুযোগ দেওয়া হবে না : সিইসি Logo শরীয়তপুরের রুদ্রকর মঠ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে Logo নারায়ণগঞ্জের সকল গ্লানি ও দূর্নাম মুছে ফেলতে হবে : গিয়াসউদ্দিন Logo নাঃগঞ্জ বন্দর রেলগেইটে এনআরবি ইসলামিক লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেড এর ২য় শাখা অফিস উদ্বোধন Logo গোদনাইল পদ্মা অয়েলের নতুন কমিটিতে আওয়ামী লীগের দোসরদের হাতে Logo শামীম ওসমানদের মত গুন্ডাবাহিনীর হুংকারে বিএনপি কখনো রাজপথ ছাড়েনি-রাসেল Logo ‘নারীদের প্রতি সমাজ-রাষ্ট্রের এক ধরণের অবহেলা আছে’ Logo ৭ জুলাই : বাংলা ব্লকেডে স্থবির ঢাকা, কোটা বাতিলে এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা Logo মধ্যরাতে নারী ফুটবলারদের জমকালো সংবর্ধনা Logo গাজাজুড়ে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত আরও ৮১ ফিলিস্তিনি

শরীয়তপুরের রুদ্রকর মঠ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে

শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দূরে ১৫০ ফুট উঁচু এক ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রুদ্রকর মঠ। ৩৫৪ বছরের পুরোনো স্থাপত্যশৈলীর এই মঠ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পর্যটকরা মঠটি দেখতে আসেন। কিন্তু শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়কের পাশে শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর এলাকায় অবস্থিত মঠটির কাছে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। সংস্কারের অভাবে মঠের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী মঠে যাওয়ার রাস্তা নির্মাণ এবং মঠটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সদর উপজেলার রুদ্রকর এলাকায় নবাব আলীবর্দী খানের আমলে বাস করতেন নীলমনি চক্রবর্তী নামের এক জমিদার। তার মৃত্যুর পর ১৬৭০ সালের দিকে তার তিন সন্তান বানিলাল চক্রবর্তী, ক্ষিতিলাল চক্রবর্তী ও বসন্তলাল চক্রবর্তী বাবার স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে সমাধির ওপর একটি মঠ নির্মাণ করেন। মঠটি ইট ও পাথর দিয়ে নির্মাণ করা হয়। সে সময়ে পালং এলাকার রাজমিস্ত্রি তিলক ভূঁইয়া ও গুরুচরণ ভূঁইয়া দীর্ঘদিন ধরে এটি নির্মাণ করেন।

প্রাচীন ওই মঠের কিছু অংশ নষ্ট হয়ে গেলে ১৮৮৯ সালে চক্রবর্তী পরিবারের সন্তান গুরুচরণ চক্রবর্তী, চন্দ্রচরণ চক্রবর্তী এটি পুনর্র্নির্মাণ করেন। পরে মঠটিতে কালীমন্দির স্থাপন করে সাড়ম্বরে পূজা ও কীর্তনসহ পূজা-অর্চনা করা হতো। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মঠটির কালীমন্দিরে জাঁকজমকপূর্ণভাবে কালীপূজা হতো। ওই মঠের পাশের ৩ একর ৭৩ শতাংশ জমির ওপর চক্রবর্তী পরিবারের পক্ষ থেকে ১৯১৫ সালে জমিদার নীলমনির নামে একটি উচ্চবিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মঠটি ধ্বংস করার জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরা মর্টার শেল নিক্ষেপ করে। এতে এর কিছু অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। ১৯৭৫ সালে নীলমনি চক্রবর্তীর বংশের বাংলাদেশে বসবাসকারী সর্বশেষ সদস্য প্রমথ লাল চক্রবর্তী ভারতে চলে যান। এরপর থেকে সেখানে পূজা হয় না। সংরক্ষণের অভাবে মঠটি এখন ধ্বংস হতে চলেছে।

সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শরীয়তপুর জেলার একমাত্র মঠ রুদ্রকর মূলত একটি মন্দির। সড়কের উত্তরদিকে গ্রামের ভেতরে মঠটির অবস্থান। মঠে একটি বড় শ্মশান মন্দির রয়েছে, যার মূল উপাসনালয় কক্ষের সঙ্গে বারান্দার চার কোণে ৪টি ছোট মন্দির লক্ষণীয়। রুদ্রকর মঠের গায়ে ৪টি দেবী মূর্তির অলংকরণ রয়েছে। সামনে রয়েছে একটি প্রাচীন পুকুর। ধারণা করা হয়, মঠ ও পুকুর একই সঙ্গে তৈরি। পরিচর্যা না করায় মঠটি এখন জীর্ণশীর্ণ। তবে মঠের উপরিভাগে গর্তের মধ্যে টিয়া, চড়ইসহ বিভিন্ন পাখির বসবাস রয়েছে। যাদের কিচিরমিচির শব্দে নিস্তব্ধ এ জায়গাটির প্রাণ আছে বলে মনে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা সুমন দে বলেন, রুদ্রকর মঠ শরীয়তপুর জেলার একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী স্থান। এটি মূলত একটি মন্দির, যা রুদ্রকর জমিদারবাড়ি মঠ নামেও পরিচিত। একদিকে রাস্তা নেই, অন্যদিকে সংস্কারের অভাবে মঠটি নষ্ট হচ্ছে।

শরীয়তপুরের কবি শ্যাম সুন্দর দেবনাথ বলেন, আমাদের দাবি, মঠটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হোক। বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক আবদুল জলিলও মঠটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান।

রুদ্রকর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, রুদ্রকর মঠটি একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। সংরক্ষণের অভাবে এটি ধ্বংস হওয়ার পথে। এটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি।

রুদ্রকর নীলমনি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, এ অঞ্চলের জমিদার নীলমনি চক্রবর্তীর পরিবার তার নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। তার স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখাতে নির্মাণ করা মঠটি অযত্নে-অবহেলায় নষ্ট হতে বসেছে। আমাদের সবার উচিত মঠটি সংস্কার করে তা টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ নেওয়া।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ওয়াহিদ হোসেন বলেন, রুদ্রকর মঠটি জেলার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলব যাতে মঠের কাছে যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

বিগত তিন নির্বাচন বৈধ বলা পর্যবেক্ষকদের সুযোগ দেওয়া হবে না : সিইসি

শরীয়তপুরের রুদ্রকর মঠ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে

আপডেট সময় ০২:০৩:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার দূরে ১৫০ ফুট উঁচু এক ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রুদ্রকর মঠ। ৩৫৪ বছরের পুরোনো স্থাপত্যশৈলীর এই মঠ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পর্যটকরা মঠটি দেখতে আসেন। কিন্তু শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়কের পাশে শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর এলাকায় অবস্থিত মঠটির কাছে যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই। সংস্কারের অভাবে মঠের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী মঠে যাওয়ার রাস্তা নির্মাণ এবং মঠটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সদর উপজেলার রুদ্রকর এলাকায় নবাব আলীবর্দী খানের আমলে বাস করতেন নীলমনি চক্রবর্তী নামের এক জমিদার। তার মৃত্যুর পর ১৬৭০ সালের দিকে তার তিন সন্তান বানিলাল চক্রবর্তী, ক্ষিতিলাল চক্রবর্তী ও বসন্তলাল চক্রবর্তী বাবার স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখিয়ে সমাধির ওপর একটি মঠ নির্মাণ করেন। মঠটি ইট ও পাথর দিয়ে নির্মাণ করা হয়। সে সময়ে পালং এলাকার রাজমিস্ত্রি তিলক ভূঁইয়া ও গুরুচরণ ভূঁইয়া দীর্ঘদিন ধরে এটি নির্মাণ করেন।

প্রাচীন ওই মঠের কিছু অংশ নষ্ট হয়ে গেলে ১৮৮৯ সালে চক্রবর্তী পরিবারের সন্তান গুরুচরণ চক্রবর্তী, চন্দ্রচরণ চক্রবর্তী এটি পুনর্র্নির্মাণ করেন। পরে মঠটিতে কালীমন্দির স্থাপন করে সাড়ম্বরে পূজা ও কীর্তনসহ পূজা-অর্চনা করা হতো। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মঠটির কালীমন্দিরে জাঁকজমকপূর্ণভাবে কালীপূজা হতো। ওই মঠের পাশের ৩ একর ৭৩ শতাংশ জমির ওপর চক্রবর্তী পরিবারের পক্ষ থেকে ১৯১৫ সালে জমিদার নীলমনির নামে একটি উচ্চবিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মঠটি ধ্বংস করার জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্যরা মর্টার শেল নিক্ষেপ করে। এতে এর কিছু অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। ১৯৭৫ সালে নীলমনি চক্রবর্তীর বংশের বাংলাদেশে বসবাসকারী সর্বশেষ সদস্য প্রমথ লাল চক্রবর্তী ভারতে চলে যান। এরপর থেকে সেখানে পূজা হয় না। সংরক্ষণের অভাবে মঠটি এখন ধ্বংস হতে চলেছে।

সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শরীয়তপুর জেলার একমাত্র মঠ রুদ্রকর মূলত একটি মন্দির। সড়কের উত্তরদিকে গ্রামের ভেতরে মঠটির অবস্থান। মঠে একটি বড় শ্মশান মন্দির রয়েছে, যার মূল উপাসনালয় কক্ষের সঙ্গে বারান্দার চার কোণে ৪টি ছোট মন্দির লক্ষণীয়। রুদ্রকর মঠের গায়ে ৪টি দেবী মূর্তির অলংকরণ রয়েছে। সামনে রয়েছে একটি প্রাচীন পুকুর। ধারণা করা হয়, মঠ ও পুকুর একই সঙ্গে তৈরি। পরিচর্যা না করায় মঠটি এখন জীর্ণশীর্ণ। তবে মঠের উপরিভাগে গর্তের মধ্যে টিয়া, চড়ইসহ বিভিন্ন পাখির বসবাস রয়েছে। যাদের কিচিরমিচির শব্দে নিস্তব্ধ এ জায়গাটির প্রাণ আছে বলে মনে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা সুমন দে বলেন, রুদ্রকর মঠ শরীয়তপুর জেলার একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী স্থান। এটি মূলত একটি মন্দির, যা রুদ্রকর জমিদারবাড়ি মঠ নামেও পরিচিত। একদিকে রাস্তা নেই, অন্যদিকে সংস্কারের অভাবে মঠটি নষ্ট হচ্ছে।

শরীয়তপুরের কবি শ্যাম সুন্দর দেবনাথ বলেন, আমাদের দাবি, মঠটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হোক। বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক আবদুল জলিলও মঠটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান।

রুদ্রকর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, রুদ্রকর মঠটি একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। সংরক্ষণের অভাবে এটি ধ্বংস হওয়ার পথে। এটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি।

রুদ্রকর নীলমনি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, এ অঞ্চলের জমিদার নীলমনি চক্রবর্তীর পরিবার তার নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। তার স্মৃতির প্রতি সম্মান দেখাতে নির্মাণ করা মঠটি অযত্নে-অবহেলায় নষ্ট হতে বসেছে। আমাদের সবার উচিত মঠটি সংস্কার করে তা টিকিয়ে রাখার উদ্যোগ নেওয়া।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ওয়াহিদ হোসেন বলেন, রুদ্রকর মঠটি জেলার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান ও শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলব যাতে মঠের কাছে যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।