ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শরীয়তপুরে সাবেক ওসি-এসআইসহ ৪ জনের নামে মামলা

শরীয়তপুরে চার বছর আগে এক বিএনপি নেতাকে নির্যাতন ও চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে সাবেক নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নড়িয়া আমলি আদালতের বিচারক মো. সাকিব হোসেনের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান সাগর।

মামলাটি আমলে নিয়ে গোপালগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলার আসামিরা হলেন নড়িয়া থানার সাবেক ওসির অবনী শংকর কর (৫৫), থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) হায়দার আলী (৪০), উপজেলার সুরেশ্বর গ্রামের মৃত হেলার খানের ছেলে যুবলীগ নেতা সুজন খান (৪৫), একই গ্রামের মৃত জাফর খানের ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক খান (৬০)।

মামলার এজাহার ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২১ সালে ঘড়িসার ইউনিয়ন পরিষদ (ওসি) নির্বাচনে বাদী বিএনপির একজন সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। এর আগের ইউপি নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। আসামিরা বিগত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান আব্দুর রব খানের একই বংশীয় লোক হওয়ায় বাদীকে নির্বাচন না করার জন্য নানান সময় বিভিন্ন ভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখাতো। বাদী ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে নগদ টাকার প্রয়োজন হওয়ায় তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে জাহিদ তার আত্মীয়ের কাছ থেকে (তিন লাখ) টাকা নিয়ে সুরেশ্বর হয়ে নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে যুবলীগ নেতা সুজন ও ফারুক খানসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন মিলে টাকাসহ তাকে একটি ঘরে জোর করে আটকিয়ে রাখে। পরবর্তীতে বাদী খবর পেয়ে জরুরি পরিষেবা ৯৯৯ -এর সহযোগিতা চাইলে নড়িয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাদীর ছেলে মিজানুর রহমান জাহিদকে উদ্ধার করে অভিযুক্তদের নড়িয়া থানায় নিয়ে আসেন। কিন্তু পরবর্তী অভিযুক্তরা ক্ষমতাসীন হওয়ায় তাদের ছেড়ে দিয়ে কথিত মানবপাচারের মামলা জাহিদ ও তার বাবা মতিউর রহমান সাগরের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়। এসময়ে জাহিদের কাছে তিন লাখ টাকা উদ্ধার হলেও মামলায় এক লাখ টাকা জব্দ দেখায় পুলিশ। পরে বিভিন্ন দফায় বাদীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা হাতিয়ে নেন আসামিরা। এ ঘটনায় আসামি পরস্পর যোগসাজশে নতুন একটি ঘটনা সাজিয়ে ২০১৩ সালের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসন আইনে চার্জশিট দেন। পরে বাদী অসহায় হয়ে আসামিদের নিয়ে নগদ দুই লাখ টাকায় আপোষ করতে বাধ্য হন।

ঘটনার চার বছর পর মামলা দায়েরের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মামলার বাদী মতিউর রহমান সাগর বলেন, গত ১৭ বছর দেশে আইনের শাসন ছিল না। অবৈধভাবে সরকারের দায়িত্বে ছিল খুনি হাসিনার দল আওয়ামী লীগ। ওই সময় আওয়ামী লীগ ওসির বিরুদ্ধে মামলা তো দূরের কথা তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই তারা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলতেন। তাই সেই সময় মামলা করতে পারিনি। এখন দেশ স্বাধীন হয়েছে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ জন্য আমি মামলা দায়ের করেছি। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হলে আমি ন্যায়বিচার পাবো।

নড়িয়া থানার সাবেক ওসি অবনী শংকর কর বলেন, এক ভুক্তভোগী ২০২১ সালে মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে একটি মানবপাচার মামলা করেছিল। ওই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছি। মতিউর রহমান তখন ওই অভিযোগপত্র না দেওয়ার জন্য আমাদের নানাভাবে প্রভাবিত করে ব্যর্থ হয়েছিল। তাই তিনি এখন ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছেন।

এ ব্যাপারে অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরকে পাওয়া যায়নি।

শরীয়তপুর আদালতের পরিদর্শক শিমুল বলেন, দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক ব্যক্তি মামলা করেছেন। আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা পিবিআই গোপালগঞ্জ কার্যালয়ে ওই আদেশের কপি পাঠিয়ে দেবো। এখন মামলা কীভাবে চলবে, তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর আদালত সিদ্ধান্ত নেবে।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

শরীয়তপুরে সাবেক ওসি-এসআইসহ ৪ জনের নামে মামলা

আপডেট সময় ০৭:০১:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

শরীয়তপুরে চার বছর আগে এক বিএনপি নেতাকে নির্যাতন ও চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে সাবেক নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নড়িয়া আমলি আদালতের বিচারক মো. সাকিব হোসেনের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান সাগর।

মামলাটি আমলে নিয়ে গোপালগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলার আসামিরা হলেন নড়িয়া থানার সাবেক ওসির অবনী শংকর কর (৫৫), থানার সাবেক উপ-পরিদর্শক (এসআই) হায়দার আলী (৪০), উপজেলার সুরেশ্বর গ্রামের মৃত হেলার খানের ছেলে যুবলীগ নেতা সুজন খান (৪৫), একই গ্রামের মৃত জাফর খানের ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক খান (৬০)।

মামলার এজাহার ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২১ সালে ঘড়িসার ইউনিয়ন পরিষদ (ওসি) নির্বাচনে বাদী বিএনপির একজন সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। এর আগের ইউপি নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। আসামিরা বিগত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান আব্দুর রব খানের একই বংশীয় লোক হওয়ায় বাদীকে নির্বাচন না করার জন্য নানান সময় বিভিন্ন ভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখাতো। বাদী ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে নগদ টাকার প্রয়োজন হওয়ায় তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে জাহিদ তার আত্মীয়ের কাছ থেকে (তিন লাখ) টাকা নিয়ে সুরেশ্বর হয়ে নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে যুবলীগ নেতা সুজন ও ফারুক খানসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন মিলে টাকাসহ তাকে একটি ঘরে জোর করে আটকিয়ে রাখে। পরবর্তীতে বাদী খবর পেয়ে জরুরি পরিষেবা ৯৯৯ -এর সহযোগিতা চাইলে নড়িয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাদীর ছেলে মিজানুর রহমান জাহিদকে উদ্ধার করে অভিযুক্তদের নড়িয়া থানায় নিয়ে আসেন। কিন্তু পরবর্তী অভিযুক্তরা ক্ষমতাসীন হওয়ায় তাদের ছেড়ে দিয়ে কথিত মানবপাচারের মামলা জাহিদ ও তার বাবা মতিউর রহমান সাগরের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়। এসময়ে জাহিদের কাছে তিন লাখ টাকা উদ্ধার হলেও মামলায় এক লাখ টাকা জব্দ দেখায় পুলিশ। পরে বিভিন্ন দফায় বাদীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা হাতিয়ে নেন আসামিরা। এ ঘটনায় আসামি পরস্পর যোগসাজশে নতুন একটি ঘটনা সাজিয়ে ২০১৩ সালের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসন আইনে চার্জশিট দেন। পরে বাদী অসহায় হয়ে আসামিদের নিয়ে নগদ দুই লাখ টাকায় আপোষ করতে বাধ্য হন।

ঘটনার চার বছর পর মামলা দায়েরের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মামলার বাদী মতিউর রহমান সাগর বলেন, গত ১৭ বছর দেশে আইনের শাসন ছিল না। অবৈধভাবে সরকারের দায়িত্বে ছিল খুনি হাসিনার দল আওয়ামী লীগ। ওই সময় আওয়ামী লীগ ওসির বিরুদ্ধে মামলা তো দূরের কথা তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই তারা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলতেন। তাই সেই সময় মামলা করতে পারিনি। এখন দেশ স্বাধীন হয়েছে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ জন্য আমি মামলা দায়ের করেছি। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হলে আমি ন্যায়বিচার পাবো।

নড়িয়া থানার সাবেক ওসি অবনী শংকর কর বলেন, এক ভুক্তভোগী ২০২১ সালে মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে একটি মানবপাচার মামলা করেছিল। ওই মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছি। মতিউর রহমান তখন ওই অভিযোগপত্র না দেওয়ার জন্য আমাদের নানাভাবে প্রভাবিত করে ব্যর্থ হয়েছিল। তাই তিনি এখন ক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করেছেন।

এ ব্যাপারে অন্য অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরকে পাওয়া যায়নি।

শরীয়তপুর আদালতের পরিদর্শক শিমুল বলেন, দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক ব্যক্তি মামলা করেছেন। আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা পিবিআই গোপালগঞ্জ কার্যালয়ে ওই আদেশের কপি পাঠিয়ে দেবো। এখন মামলা কীভাবে চলবে, তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর আদালত সিদ্ধান্ত নেবে।