ঢাকা , রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাতের ঢাকায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

দেশের প্রধান মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কগুলোতে আন্ত:জেলা ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের তৎপরতা দীর্ঘদিনের। সাম্প্রতিক সময়ে খোদ রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে পেশাদার অপরাধীচক্রের বেপরোয়া তৎপরতা জননিরাপত্তায় বড় ধরণের ঝুঁকি ও হুমকি সৃষ্টি করেছে। গত কিছুদিন ধরে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রাতের পথচারি, বাসস্ট্যান্ড থেকে আসা যাত্রী ও বিমানবন্দর হয়ে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের ছিনতাইকারী ও ডাকাতের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারানোসহ খুনের শিকার হতে হচ্ছে। শুধু যাত্রী ও নগরবাসী নয়, রিকসা চালক এবং অটোরিকসা চালকরাও ছিনতাইকারীদের নির্মমতার শিকার হচ্ছে। রমজান মাসে ডেমরার আমুলিয়া মডেল টাউন এলাকায় অল্পদিনের ব্যবধানে দু’জন অটোরিকসা চালক ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, ২৯ এপ্রিল রাতে ঢাকার ওয়ারীতে এক রিকসাচালককে পিটিয়ে হত্যা করে রিকসা ও মোবাইলফোন নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। নিহত রিকসাচালক সিজার হোসেন গত ৩০ এপ্রিল কদমতলি চিটাগাং রোড এলাকায় রাস্তার পাশে অজ্ঞাতনামা লাশ হিসেবে শনাক্ত করে পুলিশ। লাশের নাম পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর রিকসাচালক সিজারের বাবার দায়ের করা মামলার তদন্ত ও অভিযানে এই হত্যাকা-ের সাথে জড়িত ও পেশাদার ছিনতাইকারি চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় ডিবি পুলিশ। এছাড়া গত সোমবার ধানমন্ডি লেকে এক প্রকৌশলীরও লাশ পাওয়া যায়।

প্রায় দুইকোটি মানুষের শহর ঢাকায় প্রতিদিন বিশাল অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ চলে। ব্যবসা, চাকরি, চিকিৎসা, বিদেশগমনসহ নানা প্রয়োজনে দেশের সব প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন ঢাকায় যাতায়াত করে। যেকোনো মেগা সিটিতেই বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও রাজপথ মধ্যরাত কিংবা সারারাত মানুষের চলাফেরা থাকে। ঢাকার রাত দিনের মতোই এখন ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। বেসরকারি অফিস থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলো গভীর রাত পর্যন্ত কর্মব্যস্ত থাকে। লোকজন যাতায়াত করে। ঢাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে ছিনতাইয়ের ঘটনা নতুন কিছু নয়। সেই সাথে প্রতিদিনই প্রতারক, পকেটমার, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টিসহ নানা ধরনের অপরাধিচক্রের খপ্পরে পড়ে। এ থেকে রাজধানীবাসীর যেন নিস্তার নেই। এখন রাতের চলাফেরাও অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। সন্ধ্যার পর থেকে সারারাতই নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। একই স্পটে মাসের পর মাস ধরে একই ধরণের অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধ নির্মূলে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাতের ঢাকায় পথচারি ও অটোচালকরা ছিনতাইকারীদের সহজ টার্গেটে পরিনত হয়েছে। কদমতলি চিটাগাং রোডে রিকসা চালক হত্যার ঘটনা ছাড়াও আরও অনেক ঘটনা ঘটে, যা অজ্ঞাতেই থেকে যায়।
রিকশাচালককে হত্যা করে তার ব্যাটারিচালিত রিকসা ছিনিয়ে নিয়ে তা মাত্র ১৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। সামান্য কিছু টাকার জন্য খেটে খাওয়া মানুষকে হত্যা করতেও কুণ্ঠিত হচ্ছে না দুর্বৃত্তরা। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এর আগেও বহুবার তারা অটোরিকসা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিস্ক্রিয়তার কারণেই এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ও বিস্তার ঘটে চলেছে। একটি সভ্য সমাজে এ ধরণের অপরাধিচক্রের অবাধ বিচরণ চলতে পারেনা। গত এক দশকে দেশের মানুষ অনেক উন্নয়নের গল্প শুনেছে। অবকাঠামো উন্নয়নের সাথে সাথে সরকারি আমলা ও পুলিশ বাহিনীকে নানা ধরণের সুযোগ সুবিধা দেয়া হলেও অর্থনৈতিক কর্মকা- ও জননিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা সন্তোষজনক নয়। অথচ পুলিশের উন্নয়নে সরকার ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের চাহিদা পূরণ করে চলেছে। সে অনুযায়ী, জননিরাপত্তার বিষয়ে তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালনের ঘাটতি রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মানুষের নিরাপত্তা না থাকলে যতই উন্নয়ন করা হোক না কেন, তা কোনো কাজে আসে না। রাজধানীসহ সারাদেশে অপরাধচক্রের দৌরাত্ম্য নির্মূল এবং রাতের শহরে মানুষের অবাধ ও নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবী। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে যতটা তৎপর, অপরাধ নির্মূলে ততটাই শৈথিল্য প্রদর্শন করছে। তার এ ভূমিকা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। রাতের ঢাকায় দুর্বৃত্তরা একের পর এক অপরাধ ও খুনখারাবি করে যাবে, তা দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে না, তা কাম্য হতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাতের ঢাকাকে নিরাপদ করতে হবে। মানুষ যাতে নির্বিঘেœ চলাফেরা করতে পারে, এজন্য নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

রাতের ঢাকায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

আপডেট সময় ০৩:৪৮:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১০ মে ২০২৩

দেশের প্রধান মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কগুলোতে আন্ত:জেলা ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের তৎপরতা দীর্ঘদিনের। সাম্প্রতিক সময়ে খোদ রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে পেশাদার অপরাধীচক্রের বেপরোয়া তৎপরতা জননিরাপত্তায় বড় ধরণের ঝুঁকি ও হুমকি সৃষ্টি করেছে। গত কিছুদিন ধরে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় রাতের পথচারি, বাসস্ট্যান্ড থেকে আসা যাত্রী ও বিমানবন্দর হয়ে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের ছিনতাইকারী ও ডাকাতের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারানোসহ খুনের শিকার হতে হচ্ছে। শুধু যাত্রী ও নগরবাসী নয়, রিকসা চালক এবং অটোরিকসা চালকরাও ছিনতাইকারীদের নির্মমতার শিকার হচ্ছে। রমজান মাসে ডেমরার আমুলিয়া মডেল টাউন এলাকায় অল্পদিনের ব্যবধানে দু’জন অটোরিকসা চালক ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, ২৯ এপ্রিল রাতে ঢাকার ওয়ারীতে এক রিকসাচালককে পিটিয়ে হত্যা করে রিকসা ও মোবাইলফোন নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। নিহত রিকসাচালক সিজার হোসেন গত ৩০ এপ্রিল কদমতলি চিটাগাং রোড এলাকায় রাস্তার পাশে অজ্ঞাতনামা লাশ হিসেবে শনাক্ত করে পুলিশ। লাশের নাম পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর রিকসাচালক সিজারের বাবার দায়ের করা মামলার তদন্ত ও অভিযানে এই হত্যাকা-ের সাথে জড়িত ও পেশাদার ছিনতাইকারি চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় ডিবি পুলিশ। এছাড়া গত সোমবার ধানমন্ডি লেকে এক প্রকৌশলীরও লাশ পাওয়া যায়।

প্রায় দুইকোটি মানুষের শহর ঢাকায় প্রতিদিন বিশাল অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞ চলে। ব্যবসা, চাকরি, চিকিৎসা, বিদেশগমনসহ নানা প্রয়োজনে দেশের সব প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন ঢাকায় যাতায়াত করে। যেকোনো মেগা সিটিতেই বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও রাজপথ মধ্যরাত কিংবা সারারাত মানুষের চলাফেরা থাকে। ঢাকার রাত দিনের মতোই এখন ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। বেসরকারি অফিস থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলো গভীর রাত পর্যন্ত কর্মব্যস্ত থাকে। লোকজন যাতায়াত করে। ঢাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে ছিনতাইয়ের ঘটনা নতুন কিছু নয়। সেই সাথে প্রতিদিনই প্রতারক, পকেটমার, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টিসহ নানা ধরনের অপরাধিচক্রের খপ্পরে পড়ে। এ থেকে রাজধানীবাসীর যেন নিস্তার নেই। এখন রাতের চলাফেরাও অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। সন্ধ্যার পর থেকে সারারাতই নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। একই স্পটে মাসের পর মাস ধরে একই ধরণের অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধ নির্মূলে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাতের ঢাকায় পথচারি ও অটোচালকরা ছিনতাইকারীদের সহজ টার্গেটে পরিনত হয়েছে। কদমতলি চিটাগাং রোডে রিকসা চালক হত্যার ঘটনা ছাড়াও আরও অনেক ঘটনা ঘটে, যা অজ্ঞাতেই থেকে যায়।
রিকশাচালককে হত্যা করে তার ব্যাটারিচালিত রিকসা ছিনিয়ে নিয়ে তা মাত্র ১৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। সামান্য কিছু টাকার জন্য খেটে খাওয়া মানুষকে হত্যা করতেও কুণ্ঠিত হচ্ছে না দুর্বৃত্তরা। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এর আগেও বহুবার তারা অটোরিকসা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিস্ক্রিয়তার কারণেই এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ও বিস্তার ঘটে চলেছে। একটি সভ্য সমাজে এ ধরণের অপরাধিচক্রের অবাধ বিচরণ চলতে পারেনা। গত এক দশকে দেশের মানুষ অনেক উন্নয়নের গল্প শুনেছে। অবকাঠামো উন্নয়নের সাথে সাথে সরকারি আমলা ও পুলিশ বাহিনীকে নানা ধরণের সুযোগ সুবিধা দেয়া হলেও অর্থনৈতিক কর্মকা- ও জননিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা সন্তোষজনক নয়। অথচ পুলিশের উন্নয়নে সরকার ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের চাহিদা পূরণ করে চলেছে। সে অনুযায়ী, জননিরাপত্তার বিষয়ে তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালনের ঘাটতি রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মানুষের নিরাপত্তা না থাকলে যতই উন্নয়ন করা হোক না কেন, তা কোনো কাজে আসে না। রাজধানীসহ সারাদেশে অপরাধচক্রের দৌরাত্ম্য নির্মূল এবং রাতের শহরে মানুষের অবাধ ও নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবী। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে যতটা তৎপর, অপরাধ নির্মূলে ততটাই শৈথিল্য প্রদর্শন করছে। তার এ ভূমিকা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। রাতের ঢাকায় দুর্বৃত্তরা একের পর এক অপরাধ ও খুনখারাবি করে যাবে, তা দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে না, তা কাম্য হতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাতের ঢাকাকে নিরাপদ করতে হবে। মানুষ যাতে নির্বিঘেœ চলাফেরা করতে পারে, এজন্য নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।