ঢাকা , রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে

রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেট সকলের কাছে সুপরিচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একেবারে গা ঘেঁষে বঙ্গবাজারের মার্কেটটি অবস্থিত হওয়ায় ছাত্রাবস্থায় বহুবার গিয়েছি ওই মার্কেটে। শার্ট, পাঞ্জাবি, শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, স্যালোয়ার, জিন্স, গ্যাবারটিন, কম্বল, লেপ, বালিশ, মশারি থেকে শুরু করে ছোট বড় সকলের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পাওয়া যেত ওই মার্কেটে। সেইসাথে খুচরা ও পাইকারি সকল ধরনের কেনাবেচা চলত। গেল ৪ এপ্রিলের ভয়াবহ অগ্নিকা-ে বঙ্গবাজারের সেই সুপরিচিত মার্কেটটি মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে। পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে মানুষের কোটি কোটি টাকার স্বপ্ন। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে যেখানে ব্যবসায়ীমহল আশার সঞ্চার করেছিল। সারা বছরের ব্যবসায়িক ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য অনেক ব্যবসায়ী যেখানে ধার-দেনা করে দোকানে মালামাল তুলেছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন মুহূর্তের মধ্যে হতাশায় পরিণত হলো। যে ব্যবসাকে পুঁজি করে তাদের সাংসরিক যাবতীয় ভরণপোষণ চলত সেখানে এই অপূরণীয় ক্ষতি কতটা দুঃসহ, সেটা কেবলমাত্র ভুক্তভোগিরাই উপলব্ধি করতে পারবে।

গেল মাসে লাগাতারভাবে ঘটে যাওয়া কিছু বিস্ফোরণের পর বঙ্গবাজারের এই ভয়াবহ অগ্নিকা-। তাও মন্দের ভালো যে এই অগ্নিকা-ে কারও প্রাণহানি ঘটেনি। মার্কেট বন্ধ থাকায় এবং তুলনামূলক ভোরের দিকে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হওয়ায় মার্কেটের ভিতরে ব্যবসায়ী বা ক্রেতাদের সমাগম ঘটেনি। কিন্তু যদি মার্কেট চালু থাকা অবস্থায় এই অগ্নিকা-ের সূত্রপাত ঘটত তাহলে নিঃসন্দেহে বহু তরতাজা প্রাণ চলে যেত। ঠিক যেমনটি গিয়েছিল গেল মাসের সিদ্দিক বাজারের বিস্ফোরণে। সিদ্দিক বাজার থেকে বঙ্গবাজারের এই মার্কেটটি ১ কি. মি. দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত। এক মাসের ব্যবধানে ঘটে যাওয়া এধরনের হৃদয়বিদারক ঘটনা কারও প্রত্যাশায় ছিল না। বরাবরই অগ্নিকা-, বিস্ফোরণ, লঞ্চডুবি, সড়ক দুর্ঘটনাসহ যেকোন দুর্ঘটনা ঘটার পরে অনেক ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। যেখানে প্রকাশ করা হয় নানা ধরনের অসঙ্গতি। বলা হয়, এখানে ঘাটতি ছিল, দুর্ঘটনা ঘটার বহু আগে সেই ভবন বা লঞ্চ বা কারখানা পরিত্যাক্ত ঘোষণা হয়েছিল, এক দপ্তর অন্য দপ্তরকে অবহিত করেছিল কিন্তু কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এরকম নানান ধরনের অসঙ্গতি। বঙ্গবাজারের অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটার পরেও এমনটা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবাজারের ওই মার্কেটটিতে টিন-কাঠের অবকাঠামোতে তৈরি ২ হাজার ৯৬১টি দোকান থাকার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে দোকানের সংখ্যা ছিল প্রায় দ্বিগুণ। সিটি করপোরেশনের কাগজপত্রে এই বিপণিবিতান দোতলা থাকলেও মার্কেটটির কিছু অংশ তিনতলা ছিল। এই বিপণিবিতানের মালিক সমিতির নেতারা যে যার সুবিধামতো দোকান বাড়িয়ে নিয়েছিল বলেও তাঁরা মতামত দিয়েছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির দাবি, ওই অগ্নিকা-ে ৫ হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

এখানে আমার ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরলাম। কেনাকাটার উদ্দেশ্যে বহুবার বঙ্গবাজারের মার্কেটে গিয়েছি। মার্কেটটির ভিতর এত বেশি দোকান ছিল যেটি কোন আদর্শ মার্কেটের নিয়মবহির্ভূত। মার্কেটের ভিতর ফাঁকা জায়গার খুব অভাব ছিল। অতিরিক্ত ঘিঞ্জির জন্য সেন্ট্রালভাবে এয়ার কন্ডিশনের ব্যবস্থা ছিল। বিদ্যুৎ চলে গেলে যেখানে ক্রেতা বিক্রেতা সকলের গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা হতো। পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের জন্য যেটুকু ফাঁকা জায়গা থাকা দরকার সেটুকু ছিল না। অধিকাংশ দোকানের উপরে কাঠের সিঁড়ি যুক্ত নড়বড়ে দোতালা মার্কেট ছিল। মার্কেটটির ভিতরে এবং আশেপাশে যত্রতত্র বিদ্যুতের তার, বিদ্যুতের মিটার দেখা যেত। মার্কেটটিতে যেকেউ প্রবেশ করলে সহজেই এর অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আঁচ করতে পারত।

মার্কেটটি ঢাকার একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বলা যায়। মার্কেটটির ঠিক উল্টো দিকেই ফায়ার সার্ভিসের প্রধান ঘাঁটি। সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণের সব আধুনিক ব্যবস্থা মজুত করা। কিন্তু মার্কেটটিতে আগুন লাগার সাথে সাথে তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি বিধায় আগুনের ব্যাপ্তি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছায়। তাছাড়া মার্কেটটিতে জামা কাপড় ও বিভিন্ন ফেব্রিক্সের আধিক্য ছিল সেকারণে আগুনের অতি দ্রুত বিস্তার হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। যেখানে ঢাকা ও আশপাশের তিন জেলার ২২টি স্টেশনের ৫০টি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার সদস্যদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে অংশ নেয়। সম্মিলিত সকলের প্রচেষ্টার পরও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সাড়ে ৬ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। আশপাশের ভবনেও আগুনের বিস্তার ঘটে। বঙ্গবাজার মার্কেটের পাশেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মোঃ শহীদুল্লাহ হলের পুকুর থেকে ফায়ার সার্ভিস পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করে। এছাড়াও আগুন নিয়ন্ত্রণে হাতিরঝিলের লেক থেকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে পানি আনার ব্যবস্থা করা হয়। তারপরেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ সময়ের দরকার হয়েছে। এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস বলেছে, উৎসুক জনতা, পর্যাপ্ত পানির অভাব ও বাতাসের উচ্চ বেগÑ এই তিন কারণে আগুন এত দেরিতে নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

হেলিকপ্টারে হাতিরঝিল লেক থেকে পানি নিয়ে বঙ্গবাজারের আগুন নেভানো বা শহীদুল্লাহ হলের পুকুর থেকে পানি যোগান দিয়ে বঙ্গবাজারের আগুন নেভানোর বিষয়ে অনেকেই অনেক ধরনের মতামত দিয়েছে। আমার মনে বার বার প্রশ্ন জাগে, এই শহীদুল্লাহ হলের পুকুরের পানি না পাওয়া গেলে কী করা হতো? তখন কি গোটা পঞ্চাশেক হেলিকপ্টার এনে হাতিরঝিল থেকে পানি নেওয়ার ব্যবস্থা করা হতো? হেলিকপ্টারে পানি এনে আগুন নেভানো আমাদের দেশের চলমান অর্থনীতির সাথে সামঞ্জস্য কিনা সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। তাছাড়া ঢাকা শহরের কয়টি জায়গায় এরকম অগ্নিকা-ের সময় এভাবে পানি যোগানের জন্য শহীদুল্লাহ হলের মতো পুকুরের ব্যবস্থা আছে সেটিও ভাববার বিষয়। যেসব নদী ঢাকা শহরের আশপাশে আছে সেগুলো দখলদারদের দৌরাত্ম্যে আজ মৃত প্রায়। ময়লা, আবর্জনা ও দূষিত পদার্থে পরিপূর্ণ এসব নদীতে এখন শুস্ক মৌসুমে পানি পাওয়া দুস্কর। তাই পানি দ্বারা আগুন নেভানোর ব্যবস্থা আধুনিক বিশ্বে অনেকটা বেমানান। আগুন নেভানোর কাজে পানির পরিবর্তে আধুনিক অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নিশ্চিত অতীব জরুরি। বিশেষ করে মার্কেট ও কারখানাগুলোতে যথাযথ অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়।

কোন স্থানে অগ্নিকা- ঘটলে সেখানে যত বেশি অক্সিজেনের যোগান থাকবে আগুনের তীব্রতা তত বেশি হবে। কেননা আগুন জ্বলতে অক্সিজেনের প্রয়োজন। সেজন্য অগ্নিকা- সংঘটিত এলাকার আশপাশের এলাকা থেকে দ্রুত বেগে অক্সিজেন আসে। প্রবল বেগে বাতাস বইতে শুরু করে। ঠিক যেমনটি ফায়ার সার্ভিস বলছে। অগ্নিকা- সংঘটিত এলাকায় অক্সিজেনের ঘাটতি পোষাতে পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে অক্সিজেন এসে আগুনের লেলিহান শিখাকে আরও বেশি শক্তিশালী করে। তাই আগুনের তীব্রতা কমাতে সর্বোত্তম ব্যবস্থা হলো অক্সিজেন যোগানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা। পানির পরিবর্তে কিছু অ্যাডভ্যান্সড টেকনোলোজি ব্যবহার করা। কেননা, পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন অগ্নি নির্বাপণের চেয়ে কোন কোন সময়ে অগ্নি সহায়কের ভূমিকা পালন করে। আমার ধারণা, এই বিষয়ে আমাদের ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট প্রশিক্ষণ এবং বিস্তর জ্ঞান রয়েছে। বাইরের দেশে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর ফায়ার হাইড্র্যান্ট স্থাপন করা আছে। নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর পানির লাইনের ব্যবস্থা করা আছে। যেখানে ফায়ার সার্ভিস এসে সাথে সাথে পানির লাইন যুক্ত করতে পারে। ফাঁকা মাঠেও এই ব্যবস্থাপনা আমি খেয়াল করেছি। যেখানে মুহূর্তের মধ্যে অগ্নিকা-ের মতো ঘটনা ঘটলে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া যায়। দুর্ঘটনার মুহূর্তে হেলিকপ্টার এসে দূরবর্তী কোনো জলাধার থেকে পানি নিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত এলাকায় তা সরবরাহের চেয়ে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা করা অধিক সাশ্রয়ী এবং কার্যকর।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, বঙ্গবাজার মার্কেটকে চার বছর আগেই অগ্নিনিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন ফায়ার সার্ভিস থেকে বঙ্গবাজার মার্কেটে বেশ কিছু ব্যানারও টাঙানো হয়েছিল। সবাই জানত, এই মার্কেট বড় ধরনের অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু এরপর সরকারের পক্ষ থেকে কিংবা বঙ্গবাজার মার্কেটের দোকানমালিকদের পক্ষ থেকে অগ্নিঝুঁকি প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভয়াবহ অগ্নিকা-ে বঙ্গবাজার মার্কেটের সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পর সরকারের কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে এর দায় নিতে চাইছে না। সিটি করপোরেশনের একাধিক সূত্র বলছে, বঙ্গবাজারের মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করত রাজনৈতিকভাবে প্রভাশালী কিছু ব্যবসায়ী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সব দলের নেতারা মিলেমিশে এই কমপ্লেক্স নিয়ন্ত্রণ করত। নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে ব্যবসায়ী নেতাদের আধিপত্য কমে যাবে, তাই তাঁরা সেখানে নতুন করে ভবন নির্মাণ করতে দেননি। এসব বিষয় সত্যিই খুবই হতাশাজনক।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, রাজধানীর এক হাজার ৩০৫টি শপিংমল ও মার্কেট আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ৬২২টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৬৭৮টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু এসব শপিংমলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মালিক বা কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ফায়ার সার্ভিস ঝুঁকিপূর্ণ এসব শপিংমল বা মার্কেট কর্তৃপক্ষকে একাধিবার নোটিশ দিয়ে সতর্ক করলেও তারা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের অতি পরিচিত ঢাকার নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, চন্দ্রিমা মার্কেটসহ এমন অনেক মার্কেট আছে, যেগুলো অগ্নিকা-ের ঝুঁকিতে রয়েছে। মার্কেটগুলোর অবস্থা বঙ্গবাজারের চেয়ে কোন অংশে উন্নত নয়। এসব মার্কেটের প্রতি তলায় বৈদ্যুতিক তার এবং বৈদ্যুতিক মিটারগুলো এতটা ঝুঁকিপূর্ণভাবে আছে যেকোন মুহূর্তে এখানে অগ্নিকা- ঘটলে বঙ্গবাজারের মতো খারাপ পরিস্থিতির উদ্ভব হবে। বঙ্গবাজারের ঠিক উল্টো দিকেই ফায়ার সার্ভিসের প্রধান ঘাঁটি হওয়ার সত্ত্বেও যেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বিত উদ্যোগে সাড়ে ৬ ঘণ্টা সময় লেগেছে, সেখানে দূরবর্তী মার্কেটগুলো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ সেটা সহজেই অনুমেয়। ঢাকা শহর বা এর আশপাশে এত বড় বড় ভবন, মার্কেট বা কারখানা নির্মিত হয়েছে তার পেছনে কতভাগ পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা আছে সেটা খতিয়ে দেখা উচিত। কতগুলোতে সঠিক বিল্ডিং কোড মেনে করা হচ্ছে বা কোথায় অগ্নি নির্বাপণের যথাযথ ব্যবস্থা মেনে ভবন তৈরি হচ্ছে, এগুলো এখন দেখার সময় এসেছে। তা না হলে ভবিষ্যতে এমন বহু ট্র্যাজেডি উদাহরণ হিসেবে দেখা দেবে।

কারখানা বা মার্কেট থাকলে সেখানে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু সেই দুর্ঘটনা যদি কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে হয় তাহলে খুবই দুঃখজনক। একের পর এক বিস্ফোরণ, অগ্নিকা-, লঞ্চডুবি, সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির বিষয়গুলো যখন আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত হয় তখন দেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট হয়। তখন বাইরের দেশগুলো ভাবতে বাধ্য হয় যে, জনসংখ্যার ভারে নুইয়ে পড়া এই দেশের মানুষের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়গুলো সেখানে বারবার উপেক্ষা করা হয়। সেখানে ক্ষুদ্র স্বার্থের প্রাধান্য দিতে গিয়ে বৃহৎ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এই বিষয়ে সকল দপ্তরের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করে পরবর্তীতে যাতে ঘটনার পুনরাবৃতি না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দেয়া একান্ত কাম্য। কেননা দুর্ঘটনা পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য নানান কর্মতৎপরতার চেয়ে দুর্ঘটনা প্রতিরোধের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করাটাই বুদ্ধির কাজ।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে

আপডেট সময় ০৪:৪৯:২০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৩

রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেট সকলের কাছে সুপরিচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একেবারে গা ঘেঁষে বঙ্গবাজারের মার্কেটটি অবস্থিত হওয়ায় ছাত্রাবস্থায় বহুবার গিয়েছি ওই মার্কেটে। শার্ট, পাঞ্জাবি, শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, স্যালোয়ার, জিন্স, গ্যাবারটিন, কম্বল, লেপ, বালিশ, মশারি থেকে শুরু করে ছোট বড় সকলের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পাওয়া যেত ওই মার্কেটে। সেইসাথে খুচরা ও পাইকারি সকল ধরনের কেনাবেচা চলত। গেল ৪ এপ্রিলের ভয়াবহ অগ্নিকা-ে বঙ্গবাজারের সেই সুপরিচিত মার্কেটটি মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে। পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে মানুষের কোটি কোটি টাকার স্বপ্ন। আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে যেখানে ব্যবসায়ীমহল আশার সঞ্চার করেছিল। সারা বছরের ব্যবসায়িক ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য অনেক ব্যবসায়ী যেখানে ধার-দেনা করে দোকানে মালামাল তুলেছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন মুহূর্তের মধ্যে হতাশায় পরিণত হলো। যে ব্যবসাকে পুঁজি করে তাদের সাংসরিক যাবতীয় ভরণপোষণ চলত সেখানে এই অপূরণীয় ক্ষতি কতটা দুঃসহ, সেটা কেবলমাত্র ভুক্তভোগিরাই উপলব্ধি করতে পারবে।

গেল মাসে লাগাতারভাবে ঘটে যাওয়া কিছু বিস্ফোরণের পর বঙ্গবাজারের এই ভয়াবহ অগ্নিকা-। তাও মন্দের ভালো যে এই অগ্নিকা-ে কারও প্রাণহানি ঘটেনি। মার্কেট বন্ধ থাকায় এবং তুলনামূলক ভোরের দিকে অগ্নিকা-ের সূত্রপাত হওয়ায় মার্কেটের ভিতরে ব্যবসায়ী বা ক্রেতাদের সমাগম ঘটেনি। কিন্তু যদি মার্কেট চালু থাকা অবস্থায় এই অগ্নিকা-ের সূত্রপাত ঘটত তাহলে নিঃসন্দেহে বহু তরতাজা প্রাণ চলে যেত। ঠিক যেমনটি গিয়েছিল গেল মাসের সিদ্দিক বাজারের বিস্ফোরণে। সিদ্দিক বাজার থেকে বঙ্গবাজারের এই মার্কেটটি ১ কি. মি. দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত। এক মাসের ব্যবধানে ঘটে যাওয়া এধরনের হৃদয়বিদারক ঘটনা কারও প্রত্যাশায় ছিল না। বরাবরই অগ্নিকা-, বিস্ফোরণ, লঞ্চডুবি, সড়ক দুর্ঘটনাসহ যেকোন দুর্ঘটনা ঘটার পরে অনেক ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। যেখানে প্রকাশ করা হয় নানা ধরনের অসঙ্গতি। বলা হয়, এখানে ঘাটতি ছিল, দুর্ঘটনা ঘটার বহু আগে সেই ভবন বা লঞ্চ বা কারখানা পরিত্যাক্ত ঘোষণা হয়েছিল, এক দপ্তর অন্য দপ্তরকে অবহিত করেছিল কিন্তু কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এরকম নানান ধরনের অসঙ্গতি। বঙ্গবাজারের অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটার পরেও এমনটা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবাজারের ওই মার্কেটটিতে টিন-কাঠের অবকাঠামোতে তৈরি ২ হাজার ৯৬১টি দোকান থাকার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে দোকানের সংখ্যা ছিল প্রায় দ্বিগুণ। সিটি করপোরেশনের কাগজপত্রে এই বিপণিবিতান দোতলা থাকলেও মার্কেটটির কিছু অংশ তিনতলা ছিল। এই বিপণিবিতানের মালিক সমিতির নেতারা যে যার সুবিধামতো দোকান বাড়িয়ে নিয়েছিল বলেও তাঁরা মতামত দিয়েছে। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির দাবি, ওই অগ্নিকা-ে ৫ হাজার দোকান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

এখানে আমার ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরলাম। কেনাকাটার উদ্দেশ্যে বহুবার বঙ্গবাজারের মার্কেটে গিয়েছি। মার্কেটটির ভিতর এত বেশি দোকান ছিল যেটি কোন আদর্শ মার্কেটের নিয়মবহির্ভূত। মার্কেটের ভিতর ফাঁকা জায়গার খুব অভাব ছিল। অতিরিক্ত ঘিঞ্জির জন্য সেন্ট্রালভাবে এয়ার কন্ডিশনের ব্যবস্থা ছিল। বিদ্যুৎ চলে গেলে যেখানে ক্রেতা বিক্রেতা সকলের গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা হতো। পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহের জন্য যেটুকু ফাঁকা জায়গা থাকা দরকার সেটুকু ছিল না। অধিকাংশ দোকানের উপরে কাঠের সিঁড়ি যুক্ত নড়বড়ে দোতালা মার্কেট ছিল। মার্কেটটির ভিতরে এবং আশেপাশে যত্রতত্র বিদ্যুতের তার, বিদ্যুতের মিটার দেখা যেত। মার্কেটটিতে যেকেউ প্রবেশ করলে সহজেই এর অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আঁচ করতে পারত।

মার্কেটটি ঢাকার একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বলা যায়। মার্কেটটির ঠিক উল্টো দিকেই ফায়ার সার্ভিসের প্রধান ঘাঁটি। সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণের সব আধুনিক ব্যবস্থা মজুত করা। কিন্তু মার্কেটটিতে আগুন লাগার সাথে সাথে তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি বিধায় আগুনের ব্যাপ্তি ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছায়। তাছাড়া মার্কেটটিতে জামা কাপড় ও বিভিন্ন ফেব্রিক্সের আধিক্য ছিল সেকারণে আগুনের অতি দ্রুত বিস্তার হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। যেখানে ঢাকা ও আশপাশের তিন জেলার ২২টি স্টেশনের ৫০টি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার সদস্যদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে অংশ নেয়। সম্মিলিত সকলের প্রচেষ্টার পরও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সাড়ে ৬ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। আশপাশের ভবনেও আগুনের বিস্তার ঘটে। বঙ্গবাজার মার্কেটের পাশেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মোঃ শহীদুল্লাহ হলের পুকুর থেকে ফায়ার সার্ভিস পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করে। এছাড়াও আগুন নিয়ন্ত্রণে হাতিরঝিলের লেক থেকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে পানি আনার ব্যবস্থা করা হয়। তারপরেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ সময়ের দরকার হয়েছে। এ ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিস বলেছে, উৎসুক জনতা, পর্যাপ্ত পানির অভাব ও বাতাসের উচ্চ বেগÑ এই তিন কারণে আগুন এত দেরিতে নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

হেলিকপ্টারে হাতিরঝিল লেক থেকে পানি নিয়ে বঙ্গবাজারের আগুন নেভানো বা শহীদুল্লাহ হলের পুকুর থেকে পানি যোগান দিয়ে বঙ্গবাজারের আগুন নেভানোর বিষয়ে অনেকেই অনেক ধরনের মতামত দিয়েছে। আমার মনে বার বার প্রশ্ন জাগে, এই শহীদুল্লাহ হলের পুকুরের পানি না পাওয়া গেলে কী করা হতো? তখন কি গোটা পঞ্চাশেক হেলিকপ্টার এনে হাতিরঝিল থেকে পানি নেওয়ার ব্যবস্থা করা হতো? হেলিকপ্টারে পানি এনে আগুন নেভানো আমাদের দেশের চলমান অর্থনীতির সাথে সামঞ্জস্য কিনা সেটাও ভেবে দেখার বিষয়। তাছাড়া ঢাকা শহরের কয়টি জায়গায় এরকম অগ্নিকা-ের সময় এভাবে পানি যোগানের জন্য শহীদুল্লাহ হলের মতো পুকুরের ব্যবস্থা আছে সেটিও ভাববার বিষয়। যেসব নদী ঢাকা শহরের আশপাশে আছে সেগুলো দখলদারদের দৌরাত্ম্যে আজ মৃত প্রায়। ময়লা, আবর্জনা ও দূষিত পদার্থে পরিপূর্ণ এসব নদীতে এখন শুস্ক মৌসুমে পানি পাওয়া দুস্কর। তাই পানি দ্বারা আগুন নেভানোর ব্যবস্থা আধুনিক বিশ্বে অনেকটা বেমানান। আগুন নেভানোর কাজে পানির পরিবর্তে আধুনিক অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নিশ্চিত অতীব জরুরি। বিশেষ করে মার্কেট ও কারখানাগুলোতে যথাযথ অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়।

কোন স্থানে অগ্নিকা- ঘটলে সেখানে যত বেশি অক্সিজেনের যোগান থাকবে আগুনের তীব্রতা তত বেশি হবে। কেননা আগুন জ্বলতে অক্সিজেনের প্রয়োজন। সেজন্য অগ্নিকা- সংঘটিত এলাকার আশপাশের এলাকা থেকে দ্রুত বেগে অক্সিজেন আসে। প্রবল বেগে বাতাস বইতে শুরু করে। ঠিক যেমনটি ফায়ার সার্ভিস বলছে। অগ্নিকা- সংঘটিত এলাকায় অক্সিজেনের ঘাটতি পোষাতে পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে অক্সিজেন এসে আগুনের লেলিহান শিখাকে আরও বেশি শক্তিশালী করে। তাই আগুনের তীব্রতা কমাতে সর্বোত্তম ব্যবস্থা হলো অক্সিজেন যোগানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা। পানির পরিবর্তে কিছু অ্যাডভ্যান্সড টেকনোলোজি ব্যবহার করা। কেননা, পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন অগ্নি নির্বাপণের চেয়ে কোন কোন সময়ে অগ্নি সহায়কের ভূমিকা পালন করে। আমার ধারণা, এই বিষয়ে আমাদের ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট প্রশিক্ষণ এবং বিস্তর জ্ঞান রয়েছে। বাইরের দেশে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর ফায়ার হাইড্র্যান্ট স্থাপন করা আছে। নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর পানির লাইনের ব্যবস্থা করা আছে। যেখানে ফায়ার সার্ভিস এসে সাথে সাথে পানির লাইন যুক্ত করতে পারে। ফাঁকা মাঠেও এই ব্যবস্থাপনা আমি খেয়াল করেছি। যেখানে মুহূর্তের মধ্যে অগ্নিকা-ের মতো ঘটনা ঘটলে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া যায়। দুর্ঘটনার মুহূর্তে হেলিকপ্টার এসে দূরবর্তী কোনো জলাধার থেকে পানি নিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত এলাকায় তা সরবরাহের চেয়ে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা করা অধিক সাশ্রয়ী এবং কার্যকর।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, বঙ্গবাজার মার্কেটকে চার বছর আগেই অগ্নিনিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন ফায়ার সার্ভিস থেকে বঙ্গবাজার মার্কেটে বেশ কিছু ব্যানারও টাঙানো হয়েছিল। সবাই জানত, এই মার্কেট বড় ধরনের অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু এরপর সরকারের পক্ষ থেকে কিংবা বঙ্গবাজার মার্কেটের দোকানমালিকদের পক্ষ থেকে অগ্নিঝুঁকি প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভয়াবহ অগ্নিকা-ে বঙ্গবাজার মার্কেটের সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ার পর সরকারের কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে এর দায় নিতে চাইছে না। সিটি করপোরেশনের একাধিক সূত্র বলছে, বঙ্গবাজারের মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করত রাজনৈতিকভাবে প্রভাশালী কিছু ব্যবসায়ী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ সব দলের নেতারা মিলেমিশে এই কমপ্লেক্স নিয়ন্ত্রণ করত। নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে ব্যবসায়ী নেতাদের আধিপত্য কমে যাবে, তাই তাঁরা সেখানে নতুন করে ভবন নির্মাণ করতে দেননি। এসব বিষয় সত্যিই খুবই হতাশাজনক।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, রাজধানীর এক হাজার ৩০৫টি শপিংমল ও মার্কেট আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ৬২২টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৬৭৮টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু এসব শপিংমলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মালিক বা কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ফায়ার সার্ভিস ঝুঁকিপূর্ণ এসব শপিংমল বা মার্কেট কর্তৃপক্ষকে একাধিবার নোটিশ দিয়ে সতর্ক করলেও তারা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের অতি পরিচিত ঢাকার নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, চন্দ্রিমা মার্কেটসহ এমন অনেক মার্কেট আছে, যেগুলো অগ্নিকা-ের ঝুঁকিতে রয়েছে। মার্কেটগুলোর অবস্থা বঙ্গবাজারের চেয়ে কোন অংশে উন্নত নয়। এসব মার্কেটের প্রতি তলায় বৈদ্যুতিক তার এবং বৈদ্যুতিক মিটারগুলো এতটা ঝুঁকিপূর্ণভাবে আছে যেকোন মুহূর্তে এখানে অগ্নিকা- ঘটলে বঙ্গবাজারের মতো খারাপ পরিস্থিতির উদ্ভব হবে। বঙ্গবাজারের ঠিক উল্টো দিকেই ফায়ার সার্ভিসের প্রধান ঘাঁটি হওয়ার সত্ত্বেও যেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বিত উদ্যোগে সাড়ে ৬ ঘণ্টা সময় লেগেছে, সেখানে দূরবর্তী মার্কেটগুলো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ সেটা সহজেই অনুমেয়। ঢাকা শহর বা এর আশপাশে এত বড় বড় ভবন, মার্কেট বা কারখানা নির্মিত হয়েছে তার পেছনে কতভাগ পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা আছে সেটা খতিয়ে দেখা উচিত। কতগুলোতে সঠিক বিল্ডিং কোড মেনে করা হচ্ছে বা কোথায় অগ্নি নির্বাপণের যথাযথ ব্যবস্থা মেনে ভবন তৈরি হচ্ছে, এগুলো এখন দেখার সময় এসেছে। তা না হলে ভবিষ্যতে এমন বহু ট্র্যাজেডি উদাহরণ হিসেবে দেখা দেবে।

কারখানা বা মার্কেট থাকলে সেখানে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু সেই দুর্ঘটনা যদি কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে হয় তাহলে খুবই দুঃখজনক। একের পর এক বিস্ফোরণ, অগ্নিকা-, লঞ্চডুবি, সড়ক দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানির বিষয়গুলো যখন আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত হয় তখন দেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট হয়। তখন বাইরের দেশগুলো ভাবতে বাধ্য হয় যে, জনসংখ্যার ভারে নুইয়ে পড়া এই দেশের মানুষের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়গুলো সেখানে বারবার উপেক্ষা করা হয়। সেখানে ক্ষুদ্র স্বার্থের প্রাধান্য দিতে গিয়ে বৃহৎ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এই বিষয়ে সকল দপ্তরের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করে পরবর্তীতে যাতে ঘটনার পুনরাবৃতি না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দেয়া একান্ত কাম্য। কেননা দুর্ঘটনা পরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য নানান কর্মতৎপরতার চেয়ে দুর্ঘটনা প্রতিরোধের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করাটাই বুদ্ধির কাজ।