ঢাকা , রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশৃংখলা দূর ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন জরুরি

ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সবচেয়ে ধীরগতির ২০টি শহরের তালিকায় ঢাকার পরে রয়েছে নাইজেরিয়ার দুই শহর লাগোস ও ইকোরোদু। এরপর ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা। ধীরগতির শহরের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের আরো দুই শহর; ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম। কলকাতা, মুম্বাইসহ ভারতের ৮টি শহর রয়েছে এই তালিকায়। পক্ষান্তরে সবচেয়ে বেশি গতির শহর হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মেশিগান অঙ্গরাজ্যের ফ্লিন্ট শহর। শুধু তাই নয়, বিশ্বের ১০০টি দ্রুতগতির শহরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেরই রয়েছে ৮৬টি শহর। ঢাকার মতো ধীরগতির শহরগুলোর প্রধান সমস্যা রাস্তার তুলনায় যানবাহনের অধিক্য ও যানজট। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোর শহরে রাস্তাঘাট যেমন পর্যাপ্ত তেমনি প্রশস্ত। সড়ক ব্যবস্থাপনা পরিবহনও উন্নত ও সর্বাধুনিক। ফলে কোনো কারণেই যানবাহন আটকে থাকে না, গতিও তেমন শ্লথ হয় না। বলার অপেক্ষা রাখে না, ঢাকা অনেকদিন ধরেই যানজটের শহর হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছে। স্বাধীনতার পর অপরিকল্পিত শহর সাম্প্রসারণের পাশাপাশি রাস্তাঘাট ঠিকমত না হওয়ার কারণে যানজটের সূত্রপাত হয়, যা বাড়তে বাড়তে এখন অনেকটাই অচলাবস্থায় রূপ নিয়েছে। যানজটে কর্মজীবীদের শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, জ্বালানি পুড়ছে, আর্থিক অন্যান্য ক্ষতি হচ্ছে এবং মানসিক বিপর্যয় ঘটছে। এই সমূহ ক্ষতি কমানোর জন্য মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) মতো মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। আরো কিছু কাজও হয়েছে। ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে; আংশিক চালুও হয়েছে। আরো দুটি মেট্রোরেলের কাজ চলছে ৯৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে। প্রথম এলিডেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে; আংশিক চালু হয়েছে। ৪ হাজার কোটি টাকার বিআরটি’র কাজও চলছে; আংশিক চালু হয়েছে। কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছে ৮টি ফ্লাইওভার। ফুটওভারব্রিজ, ওভারপাস, আন্ডারপাস নির্মাণসহ ফুটপাত উন্নত করা হয়েছে। সিগনাল বাতির জন্য ব্যয় হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। এত কিছুর পরও ঢাকার গতি বাড়েনি উল্টো সবচেয়ে ধীরগতির শহরের অখ্যাতি জুটেছে।

এক সময় মনে করা হয়েছিল, ফ্লাইওভার নির্মাণ করলে যানজট কমবে। অথচ একের পর এক ফ্লাইওভার বানানোর পরও যানজট কমেনি। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও বিআরটি’র আংশিক চালু হওয়ার পরও যানজট এতটুকু কমেনি। বরং আরো যেন বাড়ছে। সিপিডি’র এক জরিপ মতে, ঢাকার যানজট দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। যানজটে যাত্রীর দুই ঘণ্টার পথে গড়ে ৪৬ মিনিট নষ্ট হচ্ছে। বছরে নষ্ট হচ্ছে গড়ে ২৭৬ ঘণ্টা বা প্রায় ১১ দিন। এই ১১ দিনের আর্থিক মূল্যসহ সময়ের অপচয়, জ্বালানি পোড়ার ক্ষতি স্বীকার করতে হচ্ছে। কয়েক বছর আগে বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়েছিল, ঢাকার যানজটে স্বাস্থ্যগত যে সমস্যা তৈরি হয়, তার দৈনিক ক্ষতি গড়ে ৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। যানজটে ঢাকার গতি কোন পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে, এক গবেষণায় তা উল্লিখিত হয়েছে। বলা হয়েছে, বিভিন্ন বয়সী মানুষের গড় হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার, যা পিক টাইমে ঢাকার সড়কে যানবাহনের গতির চেয়ে বেশি। ঢাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে হেঁটে চলার মতো অবস্থা বা পরিবেশ নেই। রাস্তা-ফুটপাত যানবাহন ও ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাওয়ায় অধিকাংশ এলাকায় হাঁটাচলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অন্য এক গবেষণা মতে, রাস্তায় চলাচলের গতি ১ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানো গেলে মোট দেশজ উৎপাদন ১০ শতাংশ বাড়ে। ধীরগতির ঢাকা আমাদের জিডিপির কতটা ক্ষতি করছে, এ থেকে তা সহজেই অনুমেয়। ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে যানজটের সাকল্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দৈনিক শত কোটি টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ক্ষতি জাতীয় ক্ষতি। এত হাজার হাজার কোটি টাকা রাজধানীর অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় করা সত্ত্বেও যানজট বা তার ক্ষতি কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অনেকের মতে, যেসব মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে, সেগুলো সমাপ্ত হলে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্ধারিত সময়ের পরও যেভাবে বছরের পর বছর পার হয়ে যাচ্ছে, তাতে প্রকল্পগুলো কবে নাগাদ শেষ হবে এবং তাদের সুফল মানুষ ভোগ করবে, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, যতই অবকাঠামো উন্নয়ন করা হোক, যতই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হোক, তা কার্যকর সুফল দেবে না, যতক্ষণ পরিবহন ও সড়ক ব্যবস্থাপনার কাক্সিক্ষত উন্নয়ন না হবে। পরিবহন ও সড়ক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগ ও তার অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান এবং পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। পর্যবেক্ষকদের মতে, ঢাকার দুর্বিষহ যানজটের জন্য মূলত সড়ক বিভাগ ও পুলিশই দায়ী। এটা সর্বজনবিদিত, ঢাকার পরিধি ও লোকসংখ্যা অনুপাতে যে পরিমাণ রাস্তাঘাট থাকার কথা, তা নেই। আবার রাস্তাঘাটের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি। সীমিত সংখ্যক রাস্তাঘাটে বিপুল সংখ্যক যানবাহন চলাচল করলে যানজট অবধারিত এবং সেটাই লক্ষণীয়। এর সমাধানে রাস্তাঘাট বাড়াতে হবে এবং যান নিয়ন্ত্রণ ও সীমিত করতে হবে। রাস্তাঘাট বাড়ানোর সুযোগ খুব বেশি না থাকায় যানবাহনের সংখ্যা কমাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অনেকের মতে, ব্যক্তি পর্যায়ের গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে গণপরিবহনের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হবে। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আমাদের সড়কের ওপর সড়ক বিভাগের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পরিবহনের ওপরও নেই যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের কর্র্তৃত্ব। উভয় ক্ষেত্রে চলছে অনিয়ম ও বিশৃংখলা। নাগরিকদের মধ্যেও সতর্কতা ও সচেতনতার অভাব বিদ্যমান। পরিবহন ও সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও শৃংখলা প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে ঢাকাকে গতিশীল করে তোলা সম্ভব। তখন অবকাঠামোগুলোও ভালোভাবে ব্যবহার করা সম্ভবপর হতে পারে। যানজট নিরসনে সমন্বিত কার্যব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

বিশৃংখলা দূর ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন জরুরি

আপডেট সময় ০৯:৩৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ অক্টোবর ২০২৩

ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহর। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সবচেয়ে ধীরগতির ২০টি শহরের তালিকায় ঢাকার পরে রয়েছে নাইজেরিয়ার দুই শহর লাগোস ও ইকোরোদু। এরপর ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা। ধীরগতির শহরের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের আরো দুই শহর; ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম। কলকাতা, মুম্বাইসহ ভারতের ৮টি শহর রয়েছে এই তালিকায়। পক্ষান্তরে সবচেয়ে বেশি গতির শহর হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মেশিগান অঙ্গরাজ্যের ফ্লিন্ট শহর। শুধু তাই নয়, বিশ্বের ১০০টি দ্রুতগতির শহরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেরই রয়েছে ৮৬টি শহর। ঢাকার মতো ধীরগতির শহরগুলোর প্রধান সমস্যা রাস্তার তুলনায় যানবাহনের অধিক্য ও যানজট। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোর শহরে রাস্তাঘাট যেমন পর্যাপ্ত তেমনি প্রশস্ত। সড়ক ব্যবস্থাপনা পরিবহনও উন্নত ও সর্বাধুনিক। ফলে কোনো কারণেই যানবাহন আটকে থাকে না, গতিও তেমন শ্লথ হয় না। বলার অপেক্ষা রাখে না, ঢাকা অনেকদিন ধরেই যানজটের শহর হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছে। স্বাধীনতার পর অপরিকল্পিত শহর সাম্প্রসারণের পাশাপাশি রাস্তাঘাট ঠিকমত না হওয়ার কারণে যানজটের সূত্রপাত হয়, যা বাড়তে বাড়তে এখন অনেকটাই অচলাবস্থায় রূপ নিয়েছে। যানজটে কর্মজীবীদের শ্রমঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে, জ্বালানি পুড়ছে, আর্থিক অন্যান্য ক্ষতি হচ্ছে এবং মানসিক বিপর্যয় ঘটছে। এই সমূহ ক্ষতি কমানোর জন্য মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) মতো মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। আরো কিছু কাজও হয়েছে। ঢাকার প্রথম মেট্রোরেলে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে; আংশিক চালুও হয়েছে। আরো দুটি মেট্রোরেলের কাজ চলছে ৯৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে। প্রথম এলিডেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে; আংশিক চালু হয়েছে। ৪ হাজার কোটি টাকার বিআরটি’র কাজও চলছে; আংশিক চালু হয়েছে। কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছে ৮টি ফ্লাইওভার। ফুটওভারব্রিজ, ওভারপাস, আন্ডারপাস নির্মাণসহ ফুটপাত উন্নত করা হয়েছে। সিগনাল বাতির জন্য ব্যয় হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। এত কিছুর পরও ঢাকার গতি বাড়েনি উল্টো সবচেয়ে ধীরগতির শহরের অখ্যাতি জুটেছে।

এক সময় মনে করা হয়েছিল, ফ্লাইওভার নির্মাণ করলে যানজট কমবে। অথচ একের পর এক ফ্লাইওভার বানানোর পরও যানজট কমেনি। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও বিআরটি’র আংশিক চালু হওয়ার পরও যানজট এতটুকু কমেনি। বরং আরো যেন বাড়ছে। সিপিডি’র এক জরিপ মতে, ঢাকার যানজট দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। যানজটে যাত্রীর দুই ঘণ্টার পথে গড়ে ৪৬ মিনিট নষ্ট হচ্ছে। বছরে নষ্ট হচ্ছে গড়ে ২৭৬ ঘণ্টা বা প্রায় ১১ দিন। এই ১১ দিনের আর্থিক মূল্যসহ সময়ের অপচয়, জ্বালানি পোড়ার ক্ষতি স্বীকার করতে হচ্ছে। কয়েক বছর আগে বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়েছিল, ঢাকার যানজটে স্বাস্থ্যগত যে সমস্যা তৈরি হয়, তার দৈনিক ক্ষতি গড়ে ৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। যানজটে ঢাকার গতি কোন পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে, এক গবেষণায় তা উল্লিখিত হয়েছে। বলা হয়েছে, বিভিন্ন বয়সী মানুষের গড় হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার, যা পিক টাইমে ঢাকার সড়কে যানবাহনের গতির চেয়ে বেশি। ঢাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে হেঁটে চলার মতো অবস্থা বা পরিবেশ নেই। রাস্তা-ফুটপাত যানবাহন ও ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাওয়ায় অধিকাংশ এলাকায় হাঁটাচলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অন্য এক গবেষণা মতে, রাস্তায় চলাচলের গতি ১ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানো গেলে মোট দেশজ উৎপাদন ১০ শতাংশ বাড়ে। ধীরগতির ঢাকা আমাদের জিডিপির কতটা ক্ষতি করছে, এ থেকে তা সহজেই অনুমেয়। ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে যানজটের সাকল্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দৈনিক শত কোটি টাকা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ক্ষতি জাতীয় ক্ষতি। এত হাজার হাজার কোটি টাকা রাজধানীর অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় করা সত্ত্বেও যানজট বা তার ক্ষতি কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অনেকের মতে, যেসব মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে, সেগুলো সমাপ্ত হলে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্ধারিত সময়ের পরও যেভাবে বছরের পর বছর পার হয়ে যাচ্ছে, তাতে প্রকল্পগুলো কবে নাগাদ শেষ হবে এবং তাদের সুফল মানুষ ভোগ করবে, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, যতই অবকাঠামো উন্নয়ন করা হোক, যতই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হোক, তা কার্যকর সুফল দেবে না, যতক্ষণ পরিবহন ও সড়ক ব্যবস্থাপনার কাক্সিক্ষত উন্নয়ন না হবে। পরিবহন ও সড়ক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগ ও তার অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান এবং পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। পর্যবেক্ষকদের মতে, ঢাকার দুর্বিষহ যানজটের জন্য মূলত সড়ক বিভাগ ও পুলিশই দায়ী। এটা সর্বজনবিদিত, ঢাকার পরিধি ও লোকসংখ্যা অনুপাতে যে পরিমাণ রাস্তাঘাট থাকার কথা, তা নেই। আবার রাস্তাঘাটের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি। সীমিত সংখ্যক রাস্তাঘাটে বিপুল সংখ্যক যানবাহন চলাচল করলে যানজট অবধারিত এবং সেটাই লক্ষণীয়। এর সমাধানে রাস্তাঘাট বাড়াতে হবে এবং যান নিয়ন্ত্রণ ও সীমিত করতে হবে। রাস্তাঘাট বাড়ানোর সুযোগ খুব বেশি না থাকায় যানবাহনের সংখ্যা কমাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অনেকের মতে, ব্যক্তি পর্যায়ের গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে গণপরিবহনের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হবে। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আমাদের সড়কের ওপর সড়ক বিভাগের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পরিবহনের ওপরও নেই যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের কর্র্তৃত্ব। উভয় ক্ষেত্রে চলছে অনিয়ম ও বিশৃংখলা। নাগরিকদের মধ্যেও সতর্কতা ও সচেতনতার অভাব বিদ্যমান। পরিবহন ও সড়ক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও শৃংখলা প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে ঢাকাকে গতিশীল করে তোলা সম্ভব। তখন অবকাঠামোগুলোও ভালোভাবে ব্যবহার করা সম্ভবপর হতে পারে। যানজট নিরসনে সমন্বিত কার্যব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।