ঢাকা , শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিন্ডিকেটের কব্জায় কাঁচামরিচ

পেঁয়াজের পর এবার কাঁচামরিচ নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজি চলছে। কুরবানির ঈদের আগ থেকেই বাড়ানো হচ্ছে দাম। পরিস্থিতি এমন, রাজধানীতে প্রতিকেজি ৬০০-৮০০ টাকা বিক্রি হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খুচরা পর্যায়ে ৭০০-৮০০ টাকা এমনকি কোথাও কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ১২০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়তে বাড়তে কোরবানির ঈদের আগের দিন থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা কেজিতেও কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে। ফলে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে কাঁচা মরিচ কিনতেও ক্রেতারা নাজেহাল হচ্ছেন। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য জানা গেছে। এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, টানা বৃষ্টিতে খেতের মরিচ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ঈদের ছুটিতে সরবরাহ ঘাটতির কারণে মরিচের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে সেটি এভাবে অস্বাভাবিক হওয়ার কারণ নেই। যুক্তি হিসেবে তারা বলেছেন, প্রতিবছরই এই সময়ে বন্যা-বর্ষার কারণে মরিচের কিছুটা ঘাটতি হয়। তবে দাম দু’এক দিনের জন্য বাড়লেও সাধ্যের মধ্যেও থাকে। কিন্তু এ বছরই ব্যতিক্রম। এক্ষেত্রে কাজ করেছে বড় একটি সিন্ডকেট। রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা এই সিন্ডিকেট চাচ্ছে কিছু দিন সিন্ডিকেট করে বড় অঙ্কের মুনাফা করে আবার আমদানি করে দাম কমানো। মাঝে হয়ে যাচ্ছে বড় অঙ্কের বাণিজ্য। দাম বাড়িয়ে আমদানিই ওই সিন্ডিকেটের লক্ষ্য বলে সূত্র জানিয়েছে। এরপরও দাম কমছে না। আর আকাশ ছোঁয়া দাম বৃদ্ধির রহস্য খুঁজে পাচ্ছে না সরকারের সংশ্লিষ্টরা। সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, ঈদ ঘিরে এটি সিন্ডিকেটের কারসাজি। চিনিসহ অন্যান্য পণ্যের পর এবার কাঁচামরিচের বাজারেও সিন্ডিকেট থাবা বাসিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি বলেছেন, কাঁচামরিচ কৃষিজাত পণ্য। এর দাম কেন বাড়ল তা কৃষি মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। এটা আমাদের ব্যাপার নয়। অবশ্য মরিচের ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ২৫ জুন থেকে মরিচ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এর মধ্যে দুদিন আমদানির পর ঈদের কারণে আপাতত বন্ধ ছিল মরিচ আমদানি। ছুটি শেষে বন্দরগুলো চালু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে আবারও দেশে আসতে শুরু করেছে আমদানিকৃত কাঁচা মরিচ। যদিও ঈদের টানা ৫দিন ছুটির পর সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে শুরু হয়েছে আমদানি রফতানি কার্যক্রম। কৃষি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম গতকাল অমদানির সর্বশেষ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, দেশে এ পর্যন্ত মোট ৯৩ টন মরিচ আমদানি করা হয়েছে। কেবল গতকাল রোববারই (বিকেল ৫টা পর্যন্ত) ৫৫ টন মরিচ দেশে এসেছে। এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৮৩০ টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে।

বিভিন্ন জেলার মরিচচাষি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এপ্রিল ও মে মাসে খরার পর হঠাৎ অতিবৃষ্টিতে বেশির ভাগ মরিচগাছ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে কারণে অধিকাংশ গাছে ফলন নেই বললেই চলে। এর ওপর টানা বৃষ্টিতে মরিচ সংগ্রহের কাজটি কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে সরবরাহ ঘাটতিতে অধিকাংশ জায়গায় কাঁচা মরিচের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। তকে কোন অজুহাতেই দাম এতোটা বাড়ার সুযোগ নেই বলে মনে তরছে ক্যাব। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের মনে করেন, এত কিছু সত্ত্বেও কাঁচা মরিচের কেজি ৭০০-৮০০ টাকা হওয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। এখানে অবশ্যই সিন্ডিকেটের কারসাজি আছে। এর আগে পেঁয়াজসহ অন্য নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রেও আমরা এমনটা দেখেছি।

সূত্র মতে, ঈদের আগে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকা কাঁচা মরিচের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে আমদানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। এতে দ্রুত কাঁচা মরিচের দাম কমে আসবে বলে ধারণা করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সরকারের সেই উদ্যোগের সুফল এখনো মেলেনি। কারণ কয়েক ট্রাক কাঁচা মরিচ আমদানি করে একটি জেলাও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তাই আগে অসাধু সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিজেদের মুনাফালোভী মনোভাব পরিহার করতে হবে। ঈদের চতুর্থ দিন গতকাল দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতি কেজি কাঁচামরিচ সর্বোচ্চ ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ ঈদের আগের দিনও এর দাম ছিল সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা। পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলা কাঁচা মরিচ উৎপাদনের এলাকা হিসেবে পরিচিত। সেখানেও গতকাল পাইকারিতে প্রতি কেজি মরিচের দাম ৬০০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে দাম ছিল ৭০০ টাকার বেশি।

গতকাল রাজধানীর পাশ্ববর্তী কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, আগানগর ও কালীগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লাগামহীন কাঁচা মরিচের বাজারে দাম কমেছে নামমাত্র। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। দাম প্রত্যাশিতভাবে না কমায় অস্বস্তিতে ক্রেতারা। যদিও আমদানির খবরে বেশ কিছুদিন ধরেই লাগামহীন থাকা দেশের কাঁচা মরিচের বাজারে দাম কিছুটা হলেও কমতে শুরু করছে। কেজিতে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে মরিচের দাম। একদিন আগেও ৬৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ, গতকাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজিতে।

তবে বাজারে এ দাম কতক্ষণ থাকবে; তা নিয়ে শঙ্কায় ভোক্তরা। তারা জানান, দাম কমলেও কাঁচা মরিচ এখনও বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকার ওপরে। কিন্তু বাজার সিন্ডিকেটের কারণেও আবারও বাড়তে পারে দাম। এ দাম আয় অনুযায়ী সাধ্যের বাইরে থাকায় অস্বস্তিতে ক্রেতারা।

প্রত্যয় সরকার নামে এক ক্রেতা জানান, মূলত আগামীকাল থেকে বর্ডার খোলায় মরিচ আমদানি শুরু হওয়ার খবরে দাম কিছুটা কমেছে। তবে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজার কতক্ষণ স্বস্তিতে থাকবে বলা মুশকিল।

মিলন খান নামে আরেক ক্রেতা বলেন, দাম কমলে কী হবে? এখনও কেজি ৫০০ টাকা। এভাবে চললে মরিচ খাওয়া বাদ দিতে হবে। বাজারে মরিচ কিনতে এসে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। আধা কেজির নিচে মরিচ বিক্রি করছে না বিক্রেতারা।

তবে বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের ছুটির পর বিভিন্ন জেলা থেকে মরিচ আসতে শুরু করেছে। এতে কমছে দাম। এ ছাড়া ভারত থেকে মরিচ এলে দাম আরও কমবে। শিশির নামে এক বিক্রেতা বলেন, বাজারে এখন প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। কেজিতে কমেছে ১০০ টাকা। ভারতের মরিচ আসলে দাম আরও কমবে।
আর সিরাজুল ইসলাম নামে আরেক বিক্রেতা জানান, বিভিন্ন জেলা থেকে মরিচ আসলেও পরিমাণ খুবই কম। মূলত বর্ষার কারণে মরিচের সরবরাহ কম। এতে দাম বেড়েছিল কিছুটা। সরকার মরিচ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। মরিচ পুরোদমে এলে দাম অবশ্যই কমবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. সুরজিত সাহা রায় বলেন, বর্ষায় মরিচের জমি ডুবে গেছে। চরাঞ্চলের জমিও ডুবে গেছে। ঈদের মধ্যে চাহিদা বেড়েছে। তবে এত দাম বৃদ্ধির রহস্য খুঁজে পাচ্ছি না। তবে সরকারের সিদ্ধান্তে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি হচ্ছে। আশা করি দ্রুত কাঁচা মরিচের দাম কমবে।

 

দেশের ৩ বন্দর দিয়ে এলো ভারতীয় কাচামরিচ
দেশে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়ার পর, সরকার ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি প্রদান করেন। এর পরই গতকাল বিকেলে থেকে বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হয়েছে। আমদানি অব্যাহত থাকলে কাঁচামরিচের ঝাঁজ কমবে বলে সাধারণ মানুষ আশা করছেন। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের প্রতিবেদনে-

বেনাপোল অফিস জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে এই প্রথম গতকাল রোববার বিকেলে ভারত থেকে ৫টি ট্রাকে করে ৩৪ মে. টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে বাংলাদেশে। দেশে প্রতিকেজি মরিচ ১হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়ার পর, সরকার ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি প্রদান করেন।
এর পরই গতকাল বিকেলে থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হয়েছে। বিকাল ৫টার মধ্যে ৫ ট্রাকে করে প্রায় ৩৪ মেট্রিক টন ভারতীয় কাঁচা মরিচ বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে।
কাঁচা মরিচের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো বেনাপোলের “মেসার্স উষা ট্রেডিং, এন এস এন্টারপ্রাইজ ও এস এম করপোরেশনসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাঁচামরিচ আমদানির জন্য অনুমতিপত্র (আইপি) পেয়েছে। শুধুমাত্র এসব অনুমতি প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি করবে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স উষা ট্রেডিং এর স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম রয়েল বলেন, “দেশে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার ভারত থেকে আমদানি কাঁচা মরিচ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। ২৫ জুন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে (খামারবাড়ী) কাঁচা মরিচ আমদানির জন্য আইপি প্রদান করেন।
বেনাপোল স্থলবন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারি কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার বলেন, দেশের বাজারে ঈদের আগে থেকে হঠাৎ করে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার ভারত থেকে আমদানির অনুমতি দেয়ায় আমদানি শুরু হয়েছে।

বেনাপোল কাস্টমস এর ডেপুটি কমিশনার তানভীর আহমেদ বলেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ০.৫০ মার্কিন ডলারে শুল্কায়ন করে খালাশ প্রদান করছেন। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রতি কেজির মূল্য ৩২.২০ টাকা পড়ে। মোট শুল্ক হার ৫৮.৬০%। কাঁচা মরিচ বন্দর থেকে দ্রুত খালাশ দেয়ার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা জানান, ভারত থেকে ৬ ট্রাক কাঁচা মরিচ এসেছে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে। গতকাল রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচ বোঝাই ট্রাকগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ট্রাকগুলোতে ৭২ টনের মতো কাঁচা মরিচ রয়েছে বলে জানা গেছে।

ভোমরা বন্দরের আমদানি-রফতানি কারক আশরাফুল রহমান জানান, ৬ ট্রাক ভর্তি কাঁচা মরিচ ভারত থেকে ভোমরা স্থলবন্দরে পৌঁছালেও নানান জটিলতায় তা বাংলাদেশি ট্রাকে আনলোড করতে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটি শেষে প্রথম অফিস দিনে কাস্টমসের অনেক কর্মকর্তা না আসায় এই জটিলতায় পড়েছেন কাঁচা মরিচ আমদানি কারকরা। বিল অব এন্ট্রি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কার্যক্রমে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তিনি বলেন, তার আমদানিকৃত কয়েকটির মধ্যে একটি ট্রাক আনলোড হচ্ছে। বাকিগুলো অফিস সঙ্কটে আটকে রয়েছে। পচনশীল পণ্য এই কাঁচা মরিচ দ্রুত আনলোড করে বাজারে সরবরাহ করা জরুরি।

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ৬ ট্রাক এসেছে। ভারতীয় পারে আরো বেশকিছু কাঁচা মরিচ বোঝাই ট্রাক অবস্থান করছে। সন্ধ্যার আগে সেগুলো বন্দরে পৌঁছাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে জানার জন্য ভোমরা স্থলবন্দরের একজন দায়িত্বশীল কাস্টমস কর্মকর্তার ফোনে একাধিকবার ফোন দেয়ার পরও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

হিলি সংবাদদাতা জানান, আমদানির খবরে এক দিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলিতে দেশীয় কাঁচা মরিচ কেজিতে কমেছে ৩০০ টাকা। যা গত শনিবার দেশীয় কাঁচা মরিচ ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানির খবরে পাইকারী ও খুচরা বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। দাম কমায় স্বস্তি ফিরেছে ক্রেতা সাধারণের মাঝে।

গতকাল রোববার বিকেলে হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচ সরববাহ কম থাকলেও দেশীয় কাঁচা মরিচ কেজিতে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা বিক্রয় হয়েছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে।
হিলি বাজারে কাঁচামরিচ ক্রেতা রুবেল ইসলাম জানান, আমার হোটেল আছে। প্রতিদিন কাঁচামরিচের প্রয়োজন হয়। হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধির কারণে আমরা হোটেল মালিকরা বিপাকে পড়েছি। হোটেলে রান্নার কাজে কাঁচামরিচ ব্যবহার করতে অনেক খরচ পোহাতে হচ্ছে।

হিলি বাজারের কাঁচামরিচ বিক্রেতা বিপ্লব শেখ বলেন, কাঁচামরিচের দাম অনেকটা কমে এসেছে। বর্তমানে ৩০০ টাকা কেজি প্রতি কমে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরও জানান, জয়পুরহাট, বগুড়া, বিরামপুর, পাঁচবিবির মোকামগুলো থেকে কাঁচামরিচ সরবরাহ করে থাকে। মোকামগুলোতে কৃষকেরা বেশি দামে বিক্রি করছে। আমরা বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছি।

এদিকে আমদানিকারকরা জানান, ঈদের ছুটি শেষে আজ থেকে আমদানি শুরু হবে। আর আমদানি শুরু হলে কাঁচা মরিচের দাম আরও কমে আসবে। দুই একদিনের মধ্য দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারী মো. ইউসুফ আলী জানান, হিলি স্থলবন্দরের ৬ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এই পর্যন্ত ২৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি পেয়েছেন।

পানামা পোর্ট এর জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন প্রতাব মল্লিক জানান, গেলো বছরের ২৪ আগস্ট থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি বন্ধ ছিল। গত রোববার সরকার আবারও কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয়। এর ফলে সোমবার (২৬জুন) থেকেই হিলিবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি শুরু হয়েছে। গত ২৬ জুন ২৭ মেট্রিক টন কাঁচামরিচ আমদানি হয়েছে এই বন্দর দিয়ে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

সিন্ডিকেটের কব্জায় কাঁচামরিচ

আপডেট সময় ১২:১৯:২০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ জুলাই ২০২৩

পেঁয়াজের পর এবার কাঁচামরিচ নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজি চলছে। কুরবানির ঈদের আগ থেকেই বাড়ানো হচ্ছে দাম। পরিস্থিতি এমন, রাজধানীতে প্রতিকেজি ৬০০-৮০০ টাকা বিক্রি হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খুচরা পর্যায়ে ৭০০-৮০০ টাকা এমনকি কোথাও কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ১২০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়তে বাড়তে কোরবানির ঈদের আগের দিন থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা কেজিতেও কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে। ফলে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে কাঁচা মরিচ কিনতেও ক্রেতারা নাজেহাল হচ্ছেন। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য জানা গেছে। এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, টানা বৃষ্টিতে খেতের মরিচ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ঈদের ছুটিতে সরবরাহ ঘাটতির কারণে মরিচের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে সেটি এভাবে অস্বাভাবিক হওয়ার কারণ নেই। যুক্তি হিসেবে তারা বলেছেন, প্রতিবছরই এই সময়ে বন্যা-বর্ষার কারণে মরিচের কিছুটা ঘাটতি হয়। তবে দাম দু’এক দিনের জন্য বাড়লেও সাধ্যের মধ্যেও থাকে। কিন্তু এ বছরই ব্যতিক্রম। এক্ষেত্রে কাজ করেছে বড় একটি সিন্ডকেট। রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা এই সিন্ডিকেট চাচ্ছে কিছু দিন সিন্ডিকেট করে বড় অঙ্কের মুনাফা করে আবার আমদানি করে দাম কমানো। মাঝে হয়ে যাচ্ছে বড় অঙ্কের বাণিজ্য। দাম বাড়িয়ে আমদানিই ওই সিন্ডিকেটের লক্ষ্য বলে সূত্র জানিয়েছে। এরপরও দাম কমছে না। আর আকাশ ছোঁয়া দাম বৃদ্ধির রহস্য খুঁজে পাচ্ছে না সরকারের সংশ্লিষ্টরা। সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, ঈদ ঘিরে এটি সিন্ডিকেটের কারসাজি। চিনিসহ অন্যান্য পণ্যের পর এবার কাঁচামরিচের বাজারেও সিন্ডিকেট থাবা বাসিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি বলেছেন, কাঁচামরিচ কৃষিজাত পণ্য। এর দাম কেন বাড়ল তা কৃষি মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। এটা আমাদের ব্যাপার নয়। অবশ্য মরিচের ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ২৫ জুন থেকে মরিচ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এর মধ্যে দুদিন আমদানির পর ঈদের কারণে আপাতত বন্ধ ছিল মরিচ আমদানি। ছুটি শেষে বন্দরগুলো চালু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে আবারও দেশে আসতে শুরু করেছে আমদানিকৃত কাঁচা মরিচ। যদিও ঈদের টানা ৫দিন ছুটির পর সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে শুরু হয়েছে আমদানি রফতানি কার্যক্রম। কৃষি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম গতকাল অমদানির সর্বশেষ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, দেশে এ পর্যন্ত মোট ৯৩ টন মরিচ আমদানি করা হয়েছে। কেবল গতকাল রোববারই (বিকেল ৫টা পর্যন্ত) ৫৫ টন মরিচ দেশে এসেছে। এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৮৩০ টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে।

বিভিন্ন জেলার মরিচচাষি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এপ্রিল ও মে মাসে খরার পর হঠাৎ অতিবৃষ্টিতে বেশির ভাগ মরিচগাছ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে কারণে অধিকাংশ গাছে ফলন নেই বললেই চলে। এর ওপর টানা বৃষ্টিতে মরিচ সংগ্রহের কাজটি কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে সরবরাহ ঘাটতিতে অধিকাংশ জায়গায় কাঁচা মরিচের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। তকে কোন অজুহাতেই দাম এতোটা বাড়ার সুযোগ নেই বলে মনে তরছে ক্যাব। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এস এম নাজের মনে করেন, এত কিছু সত্ত্বেও কাঁচা মরিচের কেজি ৭০০-৮০০ টাকা হওয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। এখানে অবশ্যই সিন্ডিকেটের কারসাজি আছে। এর আগে পেঁয়াজসহ অন্য নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রেও আমরা এমনটা দেখেছি।

সূত্র মতে, ঈদের আগে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকা কাঁচা মরিচের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে আমদানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। এতে দ্রুত কাঁচা মরিচের দাম কমে আসবে বলে ধারণা করেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সরকারের সেই উদ্যোগের সুফল এখনো মেলেনি। কারণ কয়েক ট্রাক কাঁচা মরিচ আমদানি করে একটি জেলাও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তাই আগে অসাধু সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিজেদের মুনাফালোভী মনোভাব পরিহার করতে হবে। ঈদের চতুর্থ দিন গতকাল দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতি কেজি কাঁচামরিচ সর্বোচ্চ ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ ঈদের আগের দিনও এর দাম ছিল সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা। পাবনার সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলা কাঁচা মরিচ উৎপাদনের এলাকা হিসেবে পরিচিত। সেখানেও গতকাল পাইকারিতে প্রতি কেজি মরিচের দাম ৬০০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে দাম ছিল ৭০০ টাকার বেশি।

গতকাল রাজধানীর পাশ্ববর্তী কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, আগানগর ও কালীগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লাগামহীন কাঁচা মরিচের বাজারে দাম কমেছে নামমাত্র। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। দাম প্রত্যাশিতভাবে না কমায় অস্বস্তিতে ক্রেতারা। যদিও আমদানির খবরে বেশ কিছুদিন ধরেই লাগামহীন থাকা দেশের কাঁচা মরিচের বাজারে দাম কিছুটা হলেও কমতে শুরু করছে। কেজিতে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে মরিচের দাম। একদিন আগেও ৬৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া কাঁচা মরিচ, গতকাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজিতে।

তবে বাজারে এ দাম কতক্ষণ থাকবে; তা নিয়ে শঙ্কায় ভোক্তরা। তারা জানান, দাম কমলেও কাঁচা মরিচ এখনও বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকার ওপরে। কিন্তু বাজার সিন্ডিকেটের কারণেও আবারও বাড়তে পারে দাম। এ দাম আয় অনুযায়ী সাধ্যের বাইরে থাকায় অস্বস্তিতে ক্রেতারা।

প্রত্যয় সরকার নামে এক ক্রেতা জানান, মূলত আগামীকাল থেকে বর্ডার খোলায় মরিচ আমদানি শুরু হওয়ার খবরে দাম কিছুটা কমেছে। তবে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজার কতক্ষণ স্বস্তিতে থাকবে বলা মুশকিল।

মিলন খান নামে আরেক ক্রেতা বলেন, দাম কমলে কী হবে? এখনও কেজি ৫০০ টাকা। এভাবে চললে মরিচ খাওয়া বাদ দিতে হবে। বাজারে মরিচ কিনতে এসে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। আধা কেজির নিচে মরিচ বিক্রি করছে না বিক্রেতারা।

তবে বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের ছুটির পর বিভিন্ন জেলা থেকে মরিচ আসতে শুরু করেছে। এতে কমছে দাম। এ ছাড়া ভারত থেকে মরিচ এলে দাম আরও কমবে। শিশির নামে এক বিক্রেতা বলেন, বাজারে এখন প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। কেজিতে কমেছে ১০০ টাকা। ভারতের মরিচ আসলে দাম আরও কমবে।
আর সিরাজুল ইসলাম নামে আরেক বিক্রেতা জানান, বিভিন্ন জেলা থেকে মরিচ আসলেও পরিমাণ খুবই কম। মূলত বর্ষার কারণে মরিচের সরবরাহ কম। এতে দাম বেড়েছিল কিছুটা। সরকার মরিচ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। মরিচ পুরোদমে এলে দাম অবশ্যই কমবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. সুরজিত সাহা রায় বলেন, বর্ষায় মরিচের জমি ডুবে গেছে। চরাঞ্চলের জমিও ডুবে গেছে। ঈদের মধ্যে চাহিদা বেড়েছে। তবে এত দাম বৃদ্ধির রহস্য খুঁজে পাচ্ছি না। তবে সরকারের সিদ্ধান্তে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি হচ্ছে। আশা করি দ্রুত কাঁচা মরিচের দাম কমবে।

 

দেশের ৩ বন্দর দিয়ে এলো ভারতীয় কাচামরিচ
দেশে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়ার পর, সরকার ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি প্রদান করেন। এর পরই গতকাল বিকেলে থেকে বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হয়েছে। আমদানি অব্যাহত থাকলে কাঁচামরিচের ঝাঁজ কমবে বলে সাধারণ মানুষ আশা করছেন। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের প্রতিবেদনে-

বেনাপোল অফিস জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে এই প্রথম গতকাল রোববার বিকেলে ভারত থেকে ৫টি ট্রাকে করে ৩৪ মে. টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে বাংলাদেশে। দেশে প্রতিকেজি মরিচ ১হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়ার পর, সরকার ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি প্রদান করেন।
এর পরই গতকাল বিকেলে থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হয়েছে। বিকাল ৫টার মধ্যে ৫ ট্রাকে করে প্রায় ৩৪ মেট্রিক টন ভারতীয় কাঁচা মরিচ বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে।
কাঁচা মরিচের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো বেনাপোলের “মেসার্স উষা ট্রেডিং, এন এস এন্টারপ্রাইজ ও এস এম করপোরেশনসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাঁচামরিচ আমদানির জন্য অনুমতিপত্র (আইপি) পেয়েছে। শুধুমাত্র এসব অনুমতি প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি করবে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স উষা ট্রেডিং এর স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম রয়েল বলেন, “দেশে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার ভারত থেকে আমদানি কাঁচা মরিচ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। ২৫ জুন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে (খামারবাড়ী) কাঁচা মরিচ আমদানির জন্য আইপি প্রদান করেন।
বেনাপোল স্থলবন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারি কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার বলেন, দেশের বাজারে ঈদের আগে থেকে হঠাৎ করে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার ভারত থেকে আমদানির অনুমতি দেয়ায় আমদানি শুরু হয়েছে।

বেনাপোল কাস্টমস এর ডেপুটি কমিশনার তানভীর আহমেদ বলেন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ০.৫০ মার্কিন ডলারে শুল্কায়ন করে খালাশ প্রদান করছেন। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রতি কেজির মূল্য ৩২.২০ টাকা পড়ে। মোট শুল্ক হার ৫৮.৬০%। কাঁচা মরিচ বন্দর থেকে দ্রুত খালাশ দেয়ার জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা জানান, ভারত থেকে ৬ ট্রাক কাঁচা মরিচ এসেছে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে। গতকাল রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচ বোঝাই ট্রাকগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ট্রাকগুলোতে ৭২ টনের মতো কাঁচা মরিচ রয়েছে বলে জানা গেছে।

ভোমরা বন্দরের আমদানি-রফতানি কারক আশরাফুল রহমান জানান, ৬ ট্রাক ভর্তি কাঁচা মরিচ ভারত থেকে ভোমরা স্থলবন্দরে পৌঁছালেও নানান জটিলতায় তা বাংলাদেশি ট্রাকে আনলোড করতে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটি শেষে প্রথম অফিস দিনে কাস্টমসের অনেক কর্মকর্তা না আসায় এই জটিলতায় পড়েছেন কাঁচা মরিচ আমদানি কারকরা। বিল অব এন্ট্রি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কার্যক্রমে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তিনি বলেন, তার আমদানিকৃত কয়েকটির মধ্যে একটি ট্রাক আনলোড হচ্ছে। বাকিগুলো অফিস সঙ্কটে আটকে রয়েছে। পচনশীল পণ্য এই কাঁচা মরিচ দ্রুত আনলোড করে বাজারে সরবরাহ করা জরুরি।

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ৬ ট্রাক এসেছে। ভারতীয় পারে আরো বেশকিছু কাঁচা মরিচ বোঝাই ট্রাক অবস্থান করছে। সন্ধ্যার আগে সেগুলো বন্দরে পৌঁছাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

এ বিষয়ে জানার জন্য ভোমরা স্থলবন্দরের একজন দায়িত্বশীল কাস্টমস কর্মকর্তার ফোনে একাধিকবার ফোন দেয়ার পরও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

হিলি সংবাদদাতা জানান, আমদানির খবরে এক দিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলিতে দেশীয় কাঁচা মরিচ কেজিতে কমেছে ৩০০ টাকা। যা গত শনিবার দেশীয় কাঁচা মরিচ ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানির খবরে পাইকারী ও খুচরা বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। দাম কমায় স্বস্তি ফিরেছে ক্রেতা সাধারণের মাঝে।

গতকাল রোববার বিকেলে হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচ সরববাহ কম থাকলেও দেশীয় কাঁচা মরিচ কেজিতে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা বিক্রয় হয়েছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে।
হিলি বাজারে কাঁচামরিচ ক্রেতা রুবেল ইসলাম জানান, আমার হোটেল আছে। প্রতিদিন কাঁচামরিচের প্রয়োজন হয়। হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধির কারণে আমরা হোটেল মালিকরা বিপাকে পড়েছি। হোটেলে রান্নার কাজে কাঁচামরিচ ব্যবহার করতে অনেক খরচ পোহাতে হচ্ছে।

হিলি বাজারের কাঁচামরিচ বিক্রেতা বিপ্লব শেখ বলেন, কাঁচামরিচের দাম অনেকটা কমে এসেছে। বর্তমানে ৩০০ টাকা কেজি প্রতি কমে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরও জানান, জয়পুরহাট, বগুড়া, বিরামপুর, পাঁচবিবির মোকামগুলো থেকে কাঁচামরিচ সরবরাহ করে থাকে। মোকামগুলোতে কৃষকেরা বেশি দামে বিক্রি করছে। আমরা বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছি।

এদিকে আমদানিকারকরা জানান, ঈদের ছুটি শেষে আজ থেকে আমদানি শুরু হবে। আর আমদানি শুরু হলে কাঁচা মরিচের দাম আরও কমে আসবে। দুই একদিনের মধ্য দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারী মো. ইউসুফ আলী জানান, হিলি স্থলবন্দরের ৬ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এই পর্যন্ত ২৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি পেয়েছেন।

পানামা পোর্ট এর জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন প্রতাব মল্লিক জানান, গেলো বছরের ২৪ আগস্ট থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি বন্ধ ছিল। গত রোববার সরকার আবারও কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয়। এর ফলে সোমবার (২৬জুন) থেকেই হিলিবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচামরিচ আমদানি শুরু হয়েছে। গত ২৬ জুন ২৭ মেট্রিক টন কাঁচামরিচ আমদানি হয়েছে এই বন্দর দিয়ে।