ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফের শ্রীলঙ্কার ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা স্বৈরাচারী রাজাপাকসে পরিবারের

জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে দুই বছর আগে ক্ষমতা ছেড়ে শ্রীলঙ্কা থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। তখন লঙ্কানরা ভেবেছিলেন, দেশটির রাজনীতিতে রাজাপাকসে পরিবারের অবসান হয়েছে। বলা হচ্ছিল দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক আধিপত্য এবং দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজাপাকসে পরিবারের পতন ঘটেছে। সেই রাজাপাকসে পরিবারই ফের দেশটির ক্ষমতায় ফিরতে ফন্দি আঁটছে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানায়, শ্রীলঙ্কায় আগামী ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এতে অন্তত ৩৯ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে গোতাবায়ার ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসের ছেলে নামাল রাজাপাকসে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। অন্য তিন হেভিওয়েট প্রার্থী হলেন- সজিথ প্রেমাদাসা, অনুরা কুমারা দাসানায়েকে এবং রানিল বিক্রমাসিংহে।
নামাল নিজেকে পরিবর্তনের দূত হিসেবে উপস্থাপন করছেন। নামালের নির্বাচনি প্রচারণায়ও তার বাবা-চাচাদের উত্তরাধিকারকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। দলীয়ভাবে তারা মাহিন্দা এবং গোতাবায়া রাজাপাকসেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক চরিত্রে উপস্থাপন করছেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বরাতে সংবাদমাধ্যম বলছেÑএই নির্বাচনে প্রার্থী হলেও মূলত আগামী ২০২৯ সালের নির্বাচনই তাদের লক্ষ্য। ৫ বছর পরের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতির জন্যই এবার ভোটে দাঁড়িয়েছেন নামাল।

তবে সাধারণ জনগণ এখনও মনে করে- রাজাপাকসে পরিবার আবার শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে অতীতের মতো দুর্ভোগ ফিরে আসতে পারে। স্থানীয় বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লক্ষণ সান্দারুয়ান বিবিসি সিংহলীকে বলেছেন, নামাল রাজাপাকসেকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে আমরা আগ্রহী নই। রাজাপাকসে পরিবারের জন্য যে কষ্ট আমরা ভোগ করেছি, তা ভুলে যাওয়ার নয়।

২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার আলোচিত ওই বিক্ষোভ স্থানীয়ভাবে ‘আরাগালয়’ নামে পরিচিত। সিংহলী ভাষায় এর অর্থ-সংগ্রাম। সরকারবিরোধী এই আন্দোলনে রাজপথে নেমে টিয়ারশেল এবং জলকামানের মুখে প্রতিবাদ জানায় লাখ লাখ মানুষ। আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। তখনই অনুমান করা হচ্ছিল-পরিবারটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পতনের মুখে। আর এর অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই তার ভাই গোতাবায়াকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে ক্ষোভ প্রশমিত হওয়ার আগেই পরিবারটি যখন আবার নির্বাচনে আসছে, তাতে মনে হচ্ছে-শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার চেষ্টা করছে তারা।

এদিকে এরই মধ্যে গোতাবায়া রাজাপাকসেও দেশে ফিরে এসেছেন এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। রাজাপাকসে পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও অনেকটা নির্বিঘ্নেই দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আবারও প্রবেশের চেষ্টা করছে তারা। বছরের পর বছর ধরে রাজাপাকসে পরিবার মাহিন্দা রাজাপাকসের নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কার ক্ষমতা দখল করে ছিল। পরে তিনি ও তার পরিবার ক্ষমতাবান হতে লাগলেন, সেই সঙ্গে স্বৈরাচারও।

শ্রীলঙ্কার বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাজাপাকসে পরিবারের প্রত্যাবর্তন সম্ভব কি না, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। জনগণের প্রতিরোধ, রাজনৈতিক সংকট এবং জাতীয় স্বার্থের চাপে ভবিষ্যতে দেশটির রাজনৈতিক গতিপথ কী হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

ফের শ্রীলঙ্কার ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা স্বৈরাচারী রাজাপাকসে পরিবারের

আপডেট সময় ০৮:০৭:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখে দুই বছর আগে ক্ষমতা ছেড়ে শ্রীলঙ্কা থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। তখন লঙ্কানরা ভেবেছিলেন, দেশটির রাজনীতিতে রাজাপাকসে পরিবারের অবসান হয়েছে। বলা হচ্ছিল দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক আধিপত্য এবং দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজাপাকসে পরিবারের পতন ঘটেছে। সেই রাজাপাকসে পরিবারই ফের দেশটির ক্ষমতায় ফিরতে ফন্দি আঁটছে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানায়, শ্রীলঙ্কায় আগামী ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এতে অন্তত ৩৯ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে গোতাবায়ার ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসের ছেলে নামাল রাজাপাকসে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। অন্য তিন হেভিওয়েট প্রার্থী হলেন- সজিথ প্রেমাদাসা, অনুরা কুমারা দাসানায়েকে এবং রানিল বিক্রমাসিংহে।
নামাল নিজেকে পরিবর্তনের দূত হিসেবে উপস্থাপন করছেন। নামালের নির্বাচনি প্রচারণায়ও তার বাবা-চাচাদের উত্তরাধিকারকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। দলীয়ভাবে তারা মাহিন্দা এবং গোতাবায়া রাজাপাকসেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক চরিত্রে উপস্থাপন করছেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বরাতে সংবাদমাধ্যম বলছেÑএই নির্বাচনে প্রার্থী হলেও মূলত আগামী ২০২৯ সালের নির্বাচনই তাদের লক্ষ্য। ৫ বছর পরের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতির জন্যই এবার ভোটে দাঁড়িয়েছেন নামাল।

তবে সাধারণ জনগণ এখনও মনে করে- রাজাপাকসে পরিবার আবার শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে অতীতের মতো দুর্ভোগ ফিরে আসতে পারে। স্থানীয় বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লক্ষণ সান্দারুয়ান বিবিসি সিংহলীকে বলেছেন, নামাল রাজাপাকসেকে ভোট দেওয়ার ব্যাপারে আমরা আগ্রহী নই। রাজাপাকসে পরিবারের জন্য যে কষ্ট আমরা ভোগ করেছি, তা ভুলে যাওয়ার নয়।

২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার আলোচিত ওই বিক্ষোভ স্থানীয়ভাবে ‘আরাগালয়’ নামে পরিচিত। সিংহলী ভাষায় এর অর্থ-সংগ্রাম। সরকারবিরোধী এই আন্দোলনে রাজপথে নেমে টিয়ারশেল এবং জলকামানের মুখে প্রতিবাদ জানায় লাখ লাখ মানুষ। আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। তখনই অনুমান করা হচ্ছিল-পরিবারটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পতনের মুখে। আর এর অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই তার ভাই গোতাবায়াকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে ক্ষোভ প্রশমিত হওয়ার আগেই পরিবারটি যখন আবার নির্বাচনে আসছে, তাতে মনে হচ্ছে-শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার চেষ্টা করছে তারা।

এদিকে এরই মধ্যে গোতাবায়া রাজাপাকসেও দেশে ফিরে এসেছেন এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। রাজাপাকসে পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও অনেকটা নির্বিঘ্নেই দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আবারও প্রবেশের চেষ্টা করছে তারা। বছরের পর বছর ধরে রাজাপাকসে পরিবার মাহিন্দা রাজাপাকসের নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কার ক্ষমতা দখল করে ছিল। পরে তিনি ও তার পরিবার ক্ষমতাবান হতে লাগলেন, সেই সঙ্গে স্বৈরাচারও।

শ্রীলঙ্কার বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে রাজাপাকসে পরিবারের প্রত্যাবর্তন সম্ভব কি না, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। জনগণের প্রতিরোধ, রাজনৈতিক সংকট এবং জাতীয় স্বার্থের চাপে ভবিষ্যতে দেশটির রাজনৈতিক গতিপথ কী হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।