ঢাকা , শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংগঠন শক্তিশালী করে জনগণের আস্থা অর্জন করুন

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আওয়ামী লীগের শক্তি জানিয়ে তা অর্জনে মনোনিবেশ করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

রোববার (২৩ জুন) ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ‘প্লাটিনাম জুবিলি’র আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।

দলের ৭৫ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের জনগণকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় যারা নেতৃত্ব দি‌য়ে‌ছেন তা‌দের‌ স্মরণ ক‌রেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। যা আমরা প্রমাণ করেছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারুক, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদের একটি সুখী-সমৃদ্ধ জীবন উপহার দেওয়ার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

এ সময় দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে হবে। একজন রাজনীতিবিদের জীবনে সংগঠন হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী। যদি সংগঠন শক্তিশালী হয় এবং দেশের গণমানুষের সমর্থন পাওয়া যায়, তাহলে যতোই ষড়যন্ত্র হোক…হ্যাঁ মৃত্যু যে কোনও সময়ই হতে পারে। সেজন্য আমি কখনোই ভীত না। কখনো ভয় পাই না, পাব না। কারণ, যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আঁশ। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমার বাবার যে চিন্তা-চেতনা, তা বাস্তবায়ন করে এদেশের মানুষদের একটা উন্নত জীবন দেব। এটাই আমাদের লক্ষ্য।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। পরিবারগুলো কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু তারা এই সংগঠন ধরে রেখেছে। কাজেই যেভাবে সংগঠন করতে হবে, সেভাবে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস, যেটা আমাদের মূল শক্তি, সেটা অর্জন করতে হবে। কারণ, এই আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি বলেই বারবার জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে।

‘২০০৮ থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। আর গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আজকে আর্থ-সামাজিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই এটা ধরে রেখেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ৩টা ৪২ মিনিটে সভামঞ্চে আসেন। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সভা শুরু হয়। এরপর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।

পরে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে সাংস্কৃতিক আয়োজন। এতে গান, নৃত্য ও নানা পরিবেশনায় উঠে আসে আওয়ামী লীগের পথ পরিক্রমা আর ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা। আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির আয়োজনে দলটির সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলের সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন দেশবরেণ্য শিল্পীরা। দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা সভা শুরু হওয়ার আগে পবিত্র কোরআনসহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়।

স্বাধীনতার স্থপতিকে হত্যার পর পরবর্তী সময়ের বাংলাদেশ শুধু পিছিয়েছে উল্লেখ করে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, পনেরো আগস্টের পর বারবার ক্ষমতা বদল হয়েছে। ক্ষমতা বদল হয়েছে হয় অস্ত্রের মাধ্যমে, না হয় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না। জনগণের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা; কোনও ভাগ্যই তারা পরিবর্তন করতে পারেনি।

‘নিজেদের বিলাসিতা, অর্থ সম্পাদক বানানো, অর্থপাচার, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, খুনখারাবি, অস্ত্রের ঝনঝনানি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি- এটা ছিল তাদের কাজ। ওই অস্ত্র দিয়ে, অর্থ দিয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিপথে নিয়ে ওখানেই তারা ক্ষমতার ভিত্তি তৈরি করতে চেয়েছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে তারা। তারা ভুলে গেছে জনগণের শক্তি অপরিসীম শক্তি।’

আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, তাই ’৯৬ সালে সরকারের এসে আমরা অনেক কিছু করেছিলাম। ওই সময়ে বাংলাদেশের মানুষ প্রথম উপলব্ধি করতে পেরেছিল, একটি দলের কাজ হচ্ছে জনগণের সেবা করা।

মাত্র ৩ বছরের মধ্যে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে কীভাবে জাতির পিতা তার নেতৃত্বগুণে স্বল্পোন্নত দেশে রূপান্তর করেছিলেন, সেই বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর যখন জাতির পিতা ফিরে আসেন পাকিস্তানি কারাগার থেকে, তখন এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই তিনি দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য রেখেছিলেন, কীভাবে দেশ চলবে। সেই মোতাবেক সময় পেয়েছিলেন মাত্র তিন বছর ৭ মাস। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, শোষিত বঞ্চিত দরিদ্র মানুষের হাহাকার, ওই অবস্থায় দেশকে গড়ে তুলে তিনি মাত্র ৩ বছরে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন।

‘এতো কম সময়ে এতো উন্নতি পৃথিবীর কোনও দেশ করতে পেরেছিল কি না, আমি জানি না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেটি করতে পেরেছিলেন। কারণ, এই সংগঠন তার পাশে সব সময় ছিল। যুদ্ধের পর বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছানো, রিলিফ পৌঁছানো, পায়ে হেঁটে, নৌকায় করে এই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই করেছে। তারা গণমানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এরপর ২১ বছরের ইতিহাস পেছনে চলে যাওয়ার ইতিহাস, বঞ্চনার ইতিহাস। ক্ষুধার্ত নরনারীর হাহাকার আর দুর্ভিক্ষের ইতিহাস। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের ইতিহাস।’

এ সময় দেশের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং দারিদ্রতা হ্রাস, শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সূচকে তার সরকারের সফলতাগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসন পেয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ আস্থা রেখেছিল আওয়ামী লীগের ওপর। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। এরপর শুধু বাঙালির এগিয়ে যাওয়ার পালা। আমরা যে ঘোষণা দিয়েছিলাম, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো, তা করেছি। দারিদ্রের হার কমিয়েছি। আমরা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যে কাজ করেছি, তাতে দেশ মর্যাদা পেয়েছে।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর এই দেশের প্রতি তার ত্যাগ আর ভালোবাসার কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, কিন্তু তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। আর আমি বড় সন্তান হিসেবে পাশে থেকে জেনেছি তার স্বপ্ন। কীভাবে তিনি বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চান। সব ফেলে ফিরে এসেছিলাম এমন এক দেশে, যেখানে যুদ্ধপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন আমার বাবা, তা বন্ধ করে দিয়ে তাদের মুক্ত করে দিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ দেয় জিয়াউর রহমান। ১৫ আগস্টের আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচারে ইনডেমনিটি দিয়ে তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করা হয়।

সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আসা সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান তিনি।

সভায় জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের, ১৪ দলের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, ইতালি, সৌদি আরব, ডেনমার্ক, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, স্পেন, মিয়ানমার, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, ভিয়েতনাম, সুইডেন, ওমান তুরস্কসহ ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।

সভামঞ্চে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ঢাকা সিটি মেয়র, ঢাকার দলীয় ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

সংগঠন শক্তিশালী করে জনগণের আস্থা অর্জন করুন

আপডেট সময় ০৪:০৩:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আওয়ামী লীগের শক্তি জানিয়ে তা অর্জনে মনোনিবেশ করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

রোববার (২৩ জুন) ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ‘প্লাটিনাম জুবিলি’র আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।

দলের ৭৫ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের জনগণকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় যারা নেতৃত্ব দি‌য়ে‌ছেন তা‌দের‌ স্মরণ ক‌রেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। যা আমরা প্রমাণ করেছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারুক, সেটিই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে তাদের একটি সুখী-সমৃদ্ধ জীবন উপহার দেওয়ার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

এ সময় দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে হবে। একজন রাজনীতিবিদের জীবনে সংগঠন হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী। যদি সংগঠন শক্তিশালী হয় এবং দেশের গণমানুষের সমর্থন পাওয়া যায়, তাহলে যতোই ষড়যন্ত্র হোক…হ্যাঁ মৃত্যু যে কোনও সময়ই হতে পারে। সেজন্য আমি কখনোই ভীত না। কখনো ভয় পাই না, পাব না। কারণ, যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আঁশ। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমার বাবার যে চিন্তা-চেতনা, তা বাস্তবায়ন করে এদেশের মানুষদের একটা উন্নত জীবন দেব। এটাই আমাদের লক্ষ্য।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। পরিবারগুলো কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু তারা এই সংগঠন ধরে রেখেছে। কাজেই যেভাবে সংগঠন করতে হবে, সেভাবে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস, যেটা আমাদের মূল শক্তি, সেটা অর্জন করতে হবে। কারণ, এই আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি বলেই বারবার জনগণ আমাদের ভোট দিয়েছে।

‘২০০৮ থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। আর গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আজকে আর্থ-সামাজিকভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই এটা ধরে রেখেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ৩টা ৪২ মিনিটে সভামঞ্চে আসেন। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সভা শুরু হয়। এরপর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।

পরে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে সাংস্কৃতিক আয়োজন। এতে গান, নৃত্য ও নানা পরিবেশনায় উঠে আসে আওয়ামী লীগের পথ পরিক্রমা আর ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা। আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির আয়োজনে দলটির সাংস্কৃতিকবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলের সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন দেশবরেণ্য শিল্পীরা। দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা সভা শুরু হওয়ার আগে পবিত্র কোরআনসহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়।

স্বাধীনতার স্থপতিকে হত্যার পর পরবর্তী সময়ের বাংলাদেশ শুধু পিছিয়েছে উল্লেখ করে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, পনেরো আগস্টের পর বারবার ক্ষমতা বদল হয়েছে। ক্ষমতা বদল হয়েছে হয় অস্ত্রের মাধ্যমে, না হয় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল না। জনগণের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা; কোনও ভাগ্যই তারা পরিবর্তন করতে পারেনি।

‘নিজেদের বিলাসিতা, অর্থ সম্পাদক বানানো, অর্থপাচার, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, খুনখারাবি, অস্ত্রের ঝনঝনানি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি- এটা ছিল তাদের কাজ। ওই অস্ত্র দিয়ে, অর্থ দিয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিপথে নিয়ে ওখানেই তারা ক্ষমতার ভিত্তি তৈরি করতে চেয়েছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে তারা। তারা ভুলে গেছে জনগণের শক্তি অপরিসীম শক্তি।’

আওয়ামী লীগ জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, তাই ’৯৬ সালে সরকারের এসে আমরা অনেক কিছু করেছিলাম। ওই সময়ে বাংলাদেশের মানুষ প্রথম উপলব্ধি করতে পেরেছিল, একটি দলের কাজ হচ্ছে জনগণের সেবা করা।

মাত্র ৩ বছরের মধ্যে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে কীভাবে জাতির পিতা তার নেতৃত্বগুণে স্বল্পোন্নত দেশে রূপান্তর করেছিলেন, সেই বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর যখন জাতির পিতা ফিরে আসেন পাকিস্তানি কারাগার থেকে, তখন এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই তিনি দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য রেখেছিলেন, কীভাবে দেশ চলবে। সেই মোতাবেক সময় পেয়েছিলেন মাত্র তিন বছর ৭ মাস। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, শোষিত বঞ্চিত দরিদ্র মানুষের হাহাকার, ওই অবস্থায় দেশকে গড়ে তুলে তিনি মাত্র ৩ বছরে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন।

‘এতো কম সময়ে এতো উন্নতি পৃথিবীর কোনও দেশ করতে পেরেছিল কি না, আমি জানি না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেটি করতে পেরেছিলেন। কারণ, এই সংগঠন তার পাশে সব সময় ছিল। যুদ্ধের পর বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছানো, রিলিফ পৌঁছানো, পায়ে হেঁটে, নৌকায় করে এই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই করেছে। তারা গণমানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এরপর ২১ বছরের ইতিহাস পেছনে চলে যাওয়ার ইতিহাস, বঞ্চনার ইতিহাস। ক্ষুধার্ত নরনারীর হাহাকার আর দুর্ভিক্ষের ইতিহাস। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের ইতিহাস।’

এ সময় দেশের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং দারিদ্রতা হ্রাস, শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সূচকে তার সরকারের সফলতাগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসন পেয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ আস্থা রেখেছিল আওয়ামী লীগের ওপর। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। এরপর শুধু বাঙালির এগিয়ে যাওয়ার পালা। আমরা যে ঘোষণা দিয়েছিলাম, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো, তা করেছি। দারিদ্রের হার কমিয়েছি। আমরা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যে কাজ করেছি, তাতে দেশ মর্যাদা পেয়েছে।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর এই দেশের প্রতি তার ত্যাগ আর ভালোবাসার কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আজকে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে, কিন্তু তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। আর আমি বড় সন্তান হিসেবে পাশে থেকে জেনেছি তার স্বপ্ন। কীভাবে তিনি বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চান। সব ফেলে ফিরে এসেছিলাম এমন এক দেশে, যেখানে যুদ্ধপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন আমার বাবা, তা বন্ধ করে দিয়ে তাদের মুক্ত করে দিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ দেয় জিয়াউর রহমান। ১৫ আগস্টের আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচারে ইনডেমনিটি দিয়ে তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে তাদের পুরস্কৃত করা হয়।

সভায় সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আসা সবাইকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান তিনি।

সভায় জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের, ১৪ দলের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, ইতালি, সৌদি আরব, ডেনমার্ক, আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়া, স্পেন, মিয়ানমার, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, ভিয়েতনাম, সুইডেন, ওমান তুরস্কসহ ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।

সভামঞ্চে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ঢাকা সিটি মেয়র, ঢাকার দলীয় ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা পর্ব সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম।