ঢাকা , শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক থেকে উৎপাদিত হচ্ছে রশি

মুন্সীগঞ্জে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক থেকে রশিসহ প্লাস্টিকের বিভিন্ন সামগ্রী উৎপাদন করা হচ্ছে। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। সদর উপজেলার দুর্গাবাড়ি ও মুক্তারপুর এলাকায় প্লাস্টিক রিসাইকেলের জন্য বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, বর্জ্য থেকে কুড়িয়ে আনা ময়লাযুক্ত প্লাস্টিক থেকে তৈরি করা হচ্ছে কৃষিজমিতে ব্যবহারের জন্য প্লাস্টিকের রশি। এছাড়াও তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিকের বোল, বালতি, জগ, বদনাসহ বিভিন্ন সামগ্রী। মূলত ব্যবহারের পর যে সমস্ত প্লাস্টিক পণ্য ফেলে দেওয়া হয় ওই সমস্ত পণ্য কুড়িয়ে আনে এক শ্রেণির মানুষ তারপর তারা সেগুলো ভাঙারির দোকানে বিক্রি করেন। ভাঙারি দোকান থেকে ফেলে দেওয়া পণ্যগুলো সংগ্রহ করে রিসাইকেল প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়াও মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে ফেলে দেওয়া ময়লা আবর্জনাযুক্ত প্লাস্টিক কিনে এনে তারা এসব রশিসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরি করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রিসাইকেল প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা প্রথমে প্লাস্টিক থেকে ময়লা পরিষ্কার করেন। পরে মেশিনে দিয়ে প্লাস্টিকগুলো গলিয়ে এক প্রকার গুড়ি তৈরি করা হয়। গুড়ি থেকে তৈরি হয় চাকতি। এই চাকতি থেকে একটি মেশিনের মাধ্যমে চিকন সূতা তৈরি করেন। পরে চিকন সুতাগুলো একটি বিশেষ কলের মাধ্যমে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তৈরি করেন প্লাস্টিকের রশি। এ সমস্ত রশি কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এসব রশি বিভিন্ন জেলাসহ দেশের বাহিরেও রপ্তানি হয়। রশির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এগুলো ভারত ও চীনে রপ্তানি হচ্ছে বলে জানান এই ব্যবসায় সংশ্লিষ্টরা।

মুক্তারপুর এলাকার চাপটি তৈরির ফ্যাক্টরির মেশিন অপারেটর ওমর ফারুক বলেন, মাসিক ২০ হাজার টাকা বেতনে তিনি চাকরি করেন। এতে ভালোভাবেই তার সংসার চলছে।

রামেরগাঁও এলাকার সোহেল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সোহেল মাতবর বলেন, ৯ বছর আগে সাউথ কোরিয়া থেকে এসে তিনি বর্জ্য থেকে চাপটি বানানোর ব্যবসা শুরু করেছিলেন। প্রথম দিকে লাভ বেশি ছিল। ঘনঘন লোডশেডিংয়ে উৎপাদন কমে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম বেশি হওয়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে। এতে লাভের পরিমাণ কমে গেছে।

মুক্তারপুর এলাকার সুতা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান খাদিজা আলী আকবর এন্টারপ্রাইজের মালিক হালিম হোসেন বলেন, ফেলে দেওয়া বর্জ্য থেকে উৎপাদিত সুতা মুন্সীগঞ্জসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হয়। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং চীনেও রপ্তানি করা হয়। দুই মাস আগেও প্রতি কেজি সুতা বিক্রি করে ৩০-৩৫ টাকা লাভ হতো। বিদ্যুৎ স্বল্পতায় উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জ্বালানি তেলের মূল্যের প্রভাব পড়েছে পরিবহন খাতে। এতে লাভের পরিমাণ কমে গেছে।

শেফালি এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুর রসিদ বলেন, পরিবেশ বিনষ্টকারী বর্জ্য থেকে সুতা বানানোর ব্যবসাটি লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব। ১০ বছর আগে মাত্র ৩-৪ লাখ টাকার মেশিন ও মালামাল নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। সে সময় মাত্র ৫ জন শ্রমিক আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো। বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানে ১৮ জন শ্রমিক আছে। এখনো ব্যবসায়ে ৫০ লাখ টাকার মূলধন রয়েছে। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।

দুর্ঘাবাড়ি এলাকার ইবাদ ফাইবারের স্বত্বাধিকারী মো. রুবেল বলেন, বর্জ্য থেকে তৈরি চাপটি তার থেকে সুতা তৈরি করা হয়। এছাড়াও চাপটি থেকে প্লাস্টিকের বোল, বালতি, জগ এবং অন্যান্য সামগ্রী তৈরি করা যায়। এই ব্যবসাটির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ঠিকঠাকভাবে করতে পারলে লাভের পরিমাণ বেশি হয়।
পঞ্চসার এলাকার প্লাস্টিকের চাপটি ব্যবসায়ী শ্যামল বলেন, ব্যবসাটির ভবিষ্যৎ ভালো ছিল। মূলধনের অভাবে ব্যবসা এখন টিকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে গেছে। গত দুই মাসে ৮-১০টি ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি সহজ শর্তে আমাদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা হয়, সে ক্ষেত্রে এ ব্যবসা চালিয়ে রাখা যাবে।

মুন্সীগঞ্জ বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, যে প্লাস্টিকের বর্জ্যগুলো পরিবেশ দূষণ করতো সেগুলো থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্লাস্টিক পণ্য ও সুতা হচ্ছে। উৎপাদিত সুতা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। শুনেছি পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। বিষয়টি খুব ইতিবাচক।

তিনি বলেন, শিল্পটি আমাদের আওতায় নয়। তারপরও প্লাস্টিকের চাপটি তৈরির কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ইতোমধ্যে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের কাছে ঋণ চাইবে আমরা তাদেরকে ঋণ সরবরাহ করব।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

নিতাইগঞ্জে দুই প্রতিষ্ঠানকে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা

ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক থেকে উৎপাদিত হচ্ছে রশি

আপডেট সময় ০৪:১৭:২১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৩

মুন্সীগঞ্জে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক থেকে রশিসহ প্লাস্টিকের বিভিন্ন সামগ্রী উৎপাদন করা হচ্ছে। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। সদর উপজেলার দুর্গাবাড়ি ও মুক্তারপুর এলাকায় প্লাস্টিক রিসাইকেলের জন্য বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, বর্জ্য থেকে কুড়িয়ে আনা ময়লাযুক্ত প্লাস্টিক থেকে তৈরি করা হচ্ছে কৃষিজমিতে ব্যবহারের জন্য প্লাস্টিকের রশি। এছাড়াও তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিকের বোল, বালতি, জগ, বদনাসহ বিভিন্ন সামগ্রী। মূলত ব্যবহারের পর যে সমস্ত প্লাস্টিক পণ্য ফেলে দেওয়া হয় ওই সমস্ত পণ্য কুড়িয়ে আনে এক শ্রেণির মানুষ তারপর তারা সেগুলো ভাঙারির দোকানে বিক্রি করেন। ভাঙারি দোকান থেকে ফেলে দেওয়া পণ্যগুলো সংগ্রহ করে রিসাইকেল প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়াও মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন গার্মেন্টস থেকে ফেলে দেওয়া ময়লা আবর্জনাযুক্ত প্লাস্টিক কিনে এনে তারা এসব রশিসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরি করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রিসাইকেল প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা প্রথমে প্লাস্টিক থেকে ময়লা পরিষ্কার করেন। পরে মেশিনে দিয়ে প্লাস্টিকগুলো গলিয়ে এক প্রকার গুড়ি তৈরি করা হয়। গুড়ি থেকে তৈরি হয় চাকতি। এই চাকতি থেকে একটি মেশিনের মাধ্যমে চিকন সূতা তৈরি করেন। পরে চিকন সুতাগুলো একটি বিশেষ কলের মাধ্যমে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তৈরি করেন প্লাস্টিকের রশি। এ সমস্ত রশি কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এসব রশি বিভিন্ন জেলাসহ দেশের বাহিরেও রপ্তানি হয়। রশির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এগুলো ভারত ও চীনে রপ্তানি হচ্ছে বলে জানান এই ব্যবসায় সংশ্লিষ্টরা।

মুক্তারপুর এলাকার চাপটি তৈরির ফ্যাক্টরির মেশিন অপারেটর ওমর ফারুক বলেন, মাসিক ২০ হাজার টাকা বেতনে তিনি চাকরি করেন। এতে ভালোভাবেই তার সংসার চলছে।

রামেরগাঁও এলাকার সোহেল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সোহেল মাতবর বলেন, ৯ বছর আগে সাউথ কোরিয়া থেকে এসে তিনি বর্জ্য থেকে চাপটি বানানোর ব্যবসা শুরু করেছিলেন। প্রথম দিকে লাভ বেশি ছিল। ঘনঘন লোডশেডিংয়ে উৎপাদন কমে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম বেশি হওয়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে। এতে লাভের পরিমাণ কমে গেছে।

মুক্তারপুর এলাকার সুতা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান খাদিজা আলী আকবর এন্টারপ্রাইজের মালিক হালিম হোসেন বলেন, ফেলে দেওয়া বর্জ্য থেকে উৎপাদিত সুতা মুন্সীগঞ্জসহ সারাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হয়। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং চীনেও রপ্তানি করা হয়। দুই মাস আগেও প্রতি কেজি সুতা বিক্রি করে ৩০-৩৫ টাকা লাভ হতো। বিদ্যুৎ স্বল্পতায় উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জ্বালানি তেলের মূল্যের প্রভাব পড়েছে পরিবহন খাতে। এতে লাভের পরিমাণ কমে গেছে।

শেফালি এন্টারপ্রাইজের মালিক আব্দুর রসিদ বলেন, পরিবেশ বিনষ্টকারী বর্জ্য থেকে সুতা বানানোর ব্যবসাটি লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব। ১০ বছর আগে মাত্র ৩-৪ লাখ টাকার মেশিন ও মালামাল নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। সে সময় মাত্র ৫ জন শ্রমিক আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করতো। বর্তমানে আমার প্রতিষ্ঠানে ১৮ জন শ্রমিক আছে। এখনো ব্যবসায়ে ৫০ লাখ টাকার মূলধন রয়েছে। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।

দুর্ঘাবাড়ি এলাকার ইবাদ ফাইবারের স্বত্বাধিকারী মো. রুবেল বলেন, বর্জ্য থেকে তৈরি চাপটি তার থেকে সুতা তৈরি করা হয়। এছাড়াও চাপটি থেকে প্লাস্টিকের বোল, বালতি, জগ এবং অন্যান্য সামগ্রী তৈরি করা যায়। এই ব্যবসাটির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ঠিকঠাকভাবে করতে পারলে লাভের পরিমাণ বেশি হয়।
পঞ্চসার এলাকার প্লাস্টিকের চাপটি ব্যবসায়ী শ্যামল বলেন, ব্যবসাটির ভবিষ্যৎ ভালো ছিল। মূলধনের অভাবে ব্যবসা এখন টিকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে গেছে। গত দুই মাসে ৮-১০টি ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি সহজ শর্তে আমাদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা হয়, সে ক্ষেত্রে এ ব্যবসা চালিয়ে রাখা যাবে।

মুন্সীগঞ্জ বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, যে প্লাস্টিকের বর্জ্যগুলো পরিবেশ দূষণ করতো সেগুলো থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্লাস্টিক পণ্য ও সুতা হচ্ছে। উৎপাদিত সুতা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। শুনেছি পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। বিষয়টি খুব ইতিবাচক।

তিনি বলেন, শিল্পটি আমাদের আওতায় নয়। তারপরও প্লাস্টিকের চাপটি তৈরির কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ইতোমধ্যে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের কাছে ঋণ চাইবে আমরা তাদেরকে ঋণ সরবরাহ করব।