নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্ব বিরোধের জেরে সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা হারুন অর রশিদকে মারধর করে তার লাইসেন্স করা অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছে মাদরাসার ছাত্ররা। এ ঘটনায় আইনের দারস্থ হয়েও কোন সুফল পাননি তিনি।
এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর মেজর (অবঃ) হারুন অর রশিদ বলেন, ঘটনার দিন আমি ফজরের নামাজ পড়ে বের হলে সড়কের আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা মাদ্রাসার ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী আমার পথ অবরোধ করে আমাকে মসজিদে যেতে নিষেধ করে। তারা আরও জানায়, তাদের (তাহুদুল উলুম বাবুস সালাম মাদ্রসার) প্রিন্সিপাল ফয়জুল্লাহকে আমি নাকি গালি দিয়েছি। এ বিষয়ে প্রমাণ চাইলে তারা উল্টো খেপে দিয়ে আমার উপর হামলা করে। পরে আমি দৌড়ে বাড়িতে চলে আসলে তারা ফের আমার উপর হামলার চেষ্টা করে। এতে আত্মরক্ষার্থে আমার লাইসেন্স করার পিস্তল প্রদর্শন করলে তারা উল্টো আমাকে মারধর করে জামা ছিড়ে ফেলে ও আমাকে আহত করে। এ সময় তারা আমার পিস্তল কেড়ে নেয়। পরে আশেপাশের লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে। এরপর বাধ্য হয়ে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করি ও সেনাবাহিনীকে জানাই। পরে সেনাবাহিনী পিস্তলটি উদ্ধার করে লাইসেন্সের কাগজপত্র যাচাইয়ের জন্য পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। তবে আমার লাইসেন্স করা পিস্তলটি এখনো ফেরত দেয়নি পুলিশ। উল্টো আমার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিয়েছে। এমনকি প্রতিবেদনে পুলিশ বলছে, তারা পরিত্যক্ত অবস্থায় পিস্তলটি পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মসজিদের প্রথম কাতারে দাঁড়ানো নিয়ে মাদ্রসার প্রিন্সিপালের সাথে আমার কোন বিরোধ হয়নি। এটা নেহাত মিথ্যা কথা। মূলত কুরআন ও হাদিসের আলোকে তাদের বিভিন্ন ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে তা শুধরানোর কথা বলাতে তার সাথে বিরোধের সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে মাদ্রাসার বেশ কিছু শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। কারণ মাদ্রাসার বিভিন্ন অনুদানের খাবার ছাত্রদের না দিয়ে অধিকাংশ খাবার প্রিন্সিপাল তার বাড়িতে নিয়ে যায়।
মাদ্রসার প্রিন্সিপাল ফয়জুল্লাহ হুজুরের নির্দেশে মূলত মাদ্রাসা ছাত্ররা আমার উপর হামলা করেছে। কারণ ছাত্রদের সাথে আমার কোন পূর্ব বিরোধ ছিলনা এবং তারা এটা করার সাহসও পেতনা। তাছাড়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের চেয়ে বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন কোন শিক্ষক বা আলেমকে তিনি সহ্য করতে পারতেন না। একারণে কিছুদিন আগে তিনি মাওলানা মফিজ সাহেবকে খুব বাজেভাবে মাদ্রাসা থেকে বিদায় করে দিয়েছেন।অথচ তিনি এখানে সবচেয়ে ভালো বক্তা ও ভালো মুফতি ছিলেন। বিভিন্ন লোকমারফর জানতে পেরেছি, তিনি নানাভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়ে একাধিক স্থানে জমি কিনেছেন।
এলাকাবাসী ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জাহানারা বেগম বলেন, ওই দিন নামাজ পড়ে বের হওয়ার পরে ছাত্ররা মেজর হারুন ভাইকে ঘিরে ধরে মারধর করে ও নানা কটু কথা বলে। এ সময় তাকে অনেক মারধর করে ও তার পিস্তল ছিনিয়ে নেয়। এছাড়া তাকে মসজিদে প্রবেশ করতে নিষেধ করে তারা।
তিনি আরও বলেন, সিরাজ মিয়ার ছেলে জায়গা জমি নিয়ে কিছুদিন আগেও মেজর হারুন সাহেবের সাথে ঝামেলা করেছিল। সেই বিরোধের জের ধরে মাদরাসার ছাত্র ও হুজুরের (প্রিন্সিপাল) সাথে যোগাযোগ করে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।
এলাকাবাসী মো. বসিরউদ্দিন মিয়া বলেন, হারুন ভাইকে মাদরাসার ছাত্ররা ঘেরাও করে ধরে হামলা করে ও মারধর করে। একটা মাদরাসার প্রিন্সিপালের অনুমতি ছাড়া ছাত্ররা এভাবে হামলা ও মারধর করার সাহস পেতনা। মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল একাধিক স্থানে জমি কিনেছে। তবে তার এতো আয়ের উৎস কি তা আমার জানা নেই।
এলাকাবাসী আব্দুর রউফ বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মাদরাসার ছাত্ররা সাবেক মেজরকে মারধর করেছে। মূলত নামাজের সময় কোন সূরা ভুল হলে সেসব ভুল ধরিয়ে দিতেন সাবেক মেজর হারুন। এ নিয়ে অনেকের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। তাছাড়া মেজরকে কখনো কারও সাথে খারাপ ব্যবহার করতে দেখিনি।