ভাঙ্গা, ফরিদপুর: ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার খাটরা মুন্সি বাড়ি বাইতুন নূর জামে মসজিদ কমিটির বিরুদ্ধে কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম এবং জমি জবর দখলের ঘটনা এখন টক অব দ্যা টাউন । বিষয়টি নিয়ে শুধু স্থানীয়ভাবেই নয় দেশব্যাপী বিশাল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।বিষয়টি মাননীয় উপদেষ্টা জনাব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়ার দৃষ্টিতে নিয়ে আসার জোর চেষ্টা চলছে।ভূক্তভোগীর পরিবার স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছেন।
দুই যুগ ধরে ‘নাল’ জমি নিয়ে নাটক-কেন?
প্রায় ২৫ বছর ধরে একটি ‘নাল’ জমিকে কবরস্থান বানানোর চেষ্টার কারিকর সামনে না থাকলেও আহমদ মিয়ারা তাদের একত্রিত করা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে অসংগতি ও অনিয়ম থাকায় এখন পর্যন্ত জমির নামজারি করাতে সক্ষম হয়নি। তাদের এই ব্যর্থতার পেছনে অসাধু উদ্দেশ্যের ইঙ্গিত পেয়েছেন এলাকাবাসী।
সভাপতি কে এই আহমেদ মিয়া!
এক সময় মানবেতর জীবনযাপন করা আহমদ মিয়া কাজ করতেন নারায়ণগঞ্জের সেন্চুরী গার্মেন্টস।তারপর গার্মেন্টস এর কাজ ভালো না লাগায় চলে আসেন গ্রামে।গ্রামে ফিরেই শুরু হয় নতুন জীবন।আমেরিকা প্রবাসী ও এলজিআরডি কর্মকর্তার ফুট ফরমায়েশ ও হুকুম তামিল করা আহমেদ মিয়ার এখন জমিজমা টাকা পয়সা কোন কিছুর অভাব নেই।আছে গরুর ফার্মও।অনেকেই তাকে মুন্সিদের চৌকিদার বলেন।
টেন্ডার ছাড়াই কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন!
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক আমেরিকা প্রবাসী ও এলজিআরডি’র সরকারি কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় সরকারি কোটি টাকায় মাটি ভরাট ও বাউন্ডারি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়।কিন্তু কেন এই লুন্ঠন !
প্রশ্ন উঠেছে, মালিকানাধীন জমিতে কিভাবে এলজিআরডি টাকা বরাদ্দ করলো? মসজিদ কমিটির নামে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পেছনে কাদের ইন্ধন রয়েছে—তা স্পষ্ট তদন্তের দাবি রাখে।
সভাপতির মন্তব্য !
মসজিদ কমিটির সভাপতি আহমদ মিয়া বলেন,“আমি টেন্ডার-ফেন্ডার বুঝি না।টাকা পাইছি কাম করছি।খাটি বাংলায় হারাম -হালাল বুঝি না।আর হারাম টাকায় কাজ করলে সম্যসা কি?উন্নয়ন তো হইছে!
আমাদের প্রশ্ন – কালো টাকা দিয়ে ধর্মীয় স্হাপনার উন্নয়ন কি সম্ভব ? ইসলামে এর ব্যাখ্যা কি? কোরআন ও হাদিস কি ব্যাখ্যা দেয়? আমাদের প্রশ্ন গ্রামবাসীর কাছে উন্নয়নের নামে জবর দখল করা জমি কবরস্থানের মতো একটা শান্তির জায়গায় কালো টাকা দিয়ে মাটি ভরাট ও প্রাচীর নির্মাণ সমাজে কি ভালো কিছু দিতে পারবে বা পারছে ? এর থেকে ভবিষ্যত প্রজন্ম যা শিখবে তা হলো,দূর্নীতি করে ধর্মীয় কাজে টাকা দান করা যায় ।যা নৈতিক অবক্ষয় বাড়িয়ে দিবে।নৈতিক ভিত্তি না থাকলে সমাজিক সংকট তৈরি হবে।খাটরা মুন্সি বাড়ি বাইতুন নূর জামে মসজিদ কমিটি আজ থেকে ইতিহাসের পাতায় এক কলংকের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে,যে তারা কবরস্থানের নামে উন্নয়ন করেছেন কালো টাকায় ।এই টাকার বৈধতা কেউ কি দিতে পারবে ? এই উন্নয়নের নামে কালো টাকার কোন নৈতিক বৈধতা নেই ।পত্রিকায় প্রকাশিত এই অপকর্মের ইতিহাস বা অভিযোগ কেউ আর কোনদিনই ঘুচাতে পারবে না।কারন অনেক বড় বড় রুই,কাতল,মৃগেলের অপকর্ম উদঘাটন হয়ে যাবে।তাই ওরা চায় বিষয়টি ধামাচাপা দিতে।আপনাদের কমিটির কাছেই প্রশ্ন এই দূর্নীতির দায় ঘুচানো কি আপনাদের দ্বারা সম্ভব ?
ভূক্তভোগীর দাবী: আমাদের ৮.৮ শতাংশ জমি ফেরত চাই-
ভূক্তভোগী পরিবারের প্রতিনিধি ফয়সাল রাজু জানান,আমাদের ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া ৮.৮ শতাংশ জমি অবৈধভাবে দখল করে সরকারি অর্থে মাটি ফেলা ও প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ আমরা শুধু আমাদের অংশটাই ফেরত চাইছি।মসজিদ কমিটির নৈতিক কোন ভিত্তি নেই ।তারা কালো টাকার ব্যবহার ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে যুক্ত করার চেষ্টা করেছেন ।যা ইসলামের মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক ।তাদের এই অপকর্ম অবশ্যই গ্রামে কালো অধ্যায়ের সাক্ষী হয়ে থাকবে যা তাদের খারাপ কাজের জ্বলন্ত প্রমান হয়ে শত বছর থাকবে।ঐ নির্মিত প্রাচীর,ইট,বালুকনা তাদের অপকর্মের সাক্ষি।
ভূক্তভোগীদের দাবি, আহমদ মিয়া সভাপতি মসজিদ কমিটি ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রামবাসীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করছে।জমি আমাদের, কাগজ আমাদের আর গ্রামের আবেগকে ব্যবহার করে অবৈধ কাজকে জায়েজ করার চেষ্টা কখনোই সফল হবে না।ওদের বিবেক কাজ করে না।
এলজিআরডি’র ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে-
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো— সরকারি বরাদ্দ কিভাবে পেয়েছে ? কে বরাদ্দ করলো?কেন করলো? আর এভাবে টাকা বরাদ্দ সরকার করে না বা করতে পারেনা। কোন ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে কালো টাকার ব্যবহার কেন?
এই বরাদ্দে ভূমিকা যারা রেখেছে এবং প্রকল্পের মূল উপকারভোগী কারা—তা প্রকাশ হওয়া প্রয়োজন।
মূল কথা-
আহমেদ মিয়াদের তত্ত্বাবধানে খাটরা গ্রাম এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছে।যে বিষয় কেউ জানতো না,তা আজ কালের সাক্ষি হয়ে থাকবে কয়েক যুগ।মানুষ জানবে কবরস্থানের নামেও লুটপাট হয়।এই ভরাট মাটি আর প্রাচীরই তাদের নির্লজ্জ অপকর্মের সাক্ষি হয়ে থাকবে।ভবিষ্যৎ প্রজন্মও জানবে ফরিদপুরের ভাংগা উপজেলার খাটরা গ্রামের কিছু স্বার্থান্বেষী মহল,দূর্নীতিগ্রস্ত লোক,তাদের দুরভিসন্ধিমূলক লোভের থাবা পরেছিল এই ভূমিতে। আজকে হয়ত তোমরা উদাসীন কিন্তু এই ভূমির মাটি তোমাদের সকল অপকর্মের তাজা সাক্ষি।ধর্মীয় আবেগের ভ্রান্ত ব্যাখ্যায় তোমরা হয়ত তৃপ্ত ,অন্ধকার কখনোই যেমন আলো স্পর্শ করতে পারে না,তেমনিও অন্ধকার দিয়ে আলোকে ঢেকে দেওয়া যায় না।
পত্রিকা প্রকাশিত প্রতিটি রিপোর্ট তাদের নামের সাথে দূর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়ে থাকবে।এই কলংকের তড়ানা তাদের একদিন তাড়িয়ে বেড়াবে।আজ যাদের বিবেক ও আত্মসম্মান আছে তারাই শুধু বুঝতে পারবে কত বড় অভিযোগ তাদের কাধে,তারা আজ যা হারিয়েছে তা আর ফিরবার নয়।
অভিযোগ ,জায়গা ও প্রাচীর তাদের অপকর্মের সাক্ষি হয়ে ঐ খাটরা গ্রামেই থাকবে।খাটরায় কবরস্থানের নামে নির্মিত কালো টাকার প্রাচীর দূর্নীতি,লোভী,ভূমি জবর দখলকারী, পথভ্রষ্টদের অপকর্মের সাক্ষি ও স্মৃতি হয়ে দাড়িয়ে থাকবে।
সত্য আজ সমাগত, মিথ্যা বিতাড়িত, মিথ্যা বিনাশ, সত্যই অবসম্ভাবি।
সাংবাদিকদের আবারও অনুরোধ-
ফয়সাল রাজু বলেন,এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম উদঘাটিত মসজিদ কমিটি-নির্ভর দুর্নীতির ঘটনা হতে পারে। সাংবাদিক ভাইদের বলবো, আপনারা দয়া করে এই ঘটনাটি বেশি করে তুলে ধরুন। সাধারণ মানুষের স্বার্থে প্রকৃত সত্য যেন সামনে আসে।