নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ব্যবসায়ী আক্তার হোসেনের বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে পালিয়েছে তার বাড়ির কর্মচারী আলমগীর শেখ ওরফে সালমান ও তার স্ত্রী। তবে এ ঘটনায় চুরির বিষয়টি স্বীকার করেও কৌশলে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে উল্টো অপহরণের নাটক সাজিয়েছে অভিযুক্ত আলমগীর শেখ ও তার বোন নুরুন্নাহার বেগম।
সম্প্রতি ফতুল্লার কুতুবাইল এলকায় ব্যবসায়ী আক্তার হোসেনের বাড়িতে এ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড ঘটেছে। এ চুরি ও অপহরণের নাটক সাজানো নিয়ে মুখ খুলেছে চুরির ঘটনার থানায় লিখিত অভিযোগকারী ও আক্তার হোসেনের বাড়ির কর্মচারী সুজন দাস।
এ বিষয়ে সুজন দাস বলেন, হাজী সাহেবের ছেলে আক্তার ভাইয়ের বাড়িতে গত ২ জুলাই চুরির ঘটনা ঘটেছে। ওই বাড়ির কর্মচারী আলমগীর শেখ ওরফে সালমান নামে এক কর্মচারী এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সে তার প্রকৃত নাম আলমগীর শেখ গোপণ করে সালমান পরিচয়ে এখানে কাজ করতো। এই আলমগীর শেখ আক্তার ভাইয়ের ৭ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। সেই সাথে দামি ঘড়ি ও স্বর্ণালংকার সহ নানা জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। পরে আলমগীর শেখের বোন নুরুন্নাহার বেগমের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারি সে গ্রামের বাড়িতে আত্মগোপনে রয়েছে। এ খবর পেয়ে সেখানে গেলে তার স্ত্রী পালিয়ে যায়। আর আলমগীর শেখ ওরফে সালমানকে এখানে নিয়ে আসি। কিন্তু তাকে কোন প্রকার নির্যাতন করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত সালমান ৭ লাখ ২১ হাজার টাকা চুরির কথা স্বীকার করে তার বিরুদ্ধে মামলা না করার অনুরোধ করে। সালমান জানায়, সে এই টাকার মধ্যে কিছু টাকা খরচ করে জুয়া খেলেছে এবং বাকি ৪ লাখ টাকা তার বাড়িতে আছে। এই টাকার মধ্যে আড়াই লাখ টাকা তার বোনের কাছে এবং দেড় লক্ষ টাকা সমন্ধির কাছে আছে বলে সে জানায়। এসব কথা বলে ওর বোনের সাথে কথা বলে টাকা নিয়ে আসার কথা জানায়। এদিকে সালমানের বোন নুরুন্নাহার বেগম কৌশলে পুলিশ নিয়ে এসে অপহরণের অভিযোগ তোলে। প্রকৃতপক্ষে সে একজন চোর হয়ে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ তুলেছে। এমনকি এই চোর প্রশাসনের লোকজনের সামনে চুরির কথা স্বীকার করেছে। এই ঘটনার সব ধরনের প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। এ ঘটনায় গত ২৩ জুলাই ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
চুরির ঘটনা স্বীকার করে অভিযুক্ত আলমগীর শেখ ওরফে সালমান বলেন, ‘প্রায় সাত লাখ টাকার মত উঠিয়েছি। সেই টাকা ফেরত দিয়ে আমাকে চলে যেতে বলেছে। এ ঘটনায় আমরা তাকে থানা-পুলিশ করতে নিষেধ করেছি। আমাকে কেউ মারধর করেনি। বাকি টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আমার বোনকে বলেছি। সে এসে বাকি টাকা দিয়ে আমাকে নিয়ে যাবে।
তবে এই ঘটনায় অভিযুক্ত আলমগীর শেখ ওরফে সালমানের বোন টাকা নিয়ে আসার কথা বলে কৌশলে পুলিশ নিয়ে এসে অপহরণের অভিযোগ তোলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চুরির ঘটনায় আসামি আলমগীর শেখকে আটক করলে চুরির বিষয়টি স্বেচ্ছায় স্বীকার করেছেন। চুরি করা টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে থানা-পুলিশ না করতে অনুরোধ করে এই আসামি। এমনকি চুরিকৃত টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আলমগীর শেখের আত্মীয় স্বজনদের জানানো হলে তারা উল্টো পুলিশকে জানায় আলমগীর শেখকে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম বলেন, ভুক্তভোগীর বোনের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা অভিযান চালিয়ে সালমানকে উদ্ধার করি এবং হাসপাতালে চিকিৎসা দেই। সুমনের পক্ষ থেকে অভিযোগ এসেছে, সালমান ৭ লাখ টাকা ও দামি কিছু সামগ্রী আত্মসাৎ করেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। ভুক্তভোগী মামলা করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, এই চুরির ঘটনায় গত ২৩ জুলাই ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আলমগীর শেখ ও তার স্ত্রী মিলি আক্তার ব্যবসায়ী আক্তার হোসেনের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতো। সেকারণে তাদের নিকট আক্তার হোসেনের বাড়ির চাবি, ব্যাংকিং কাগজপত্র ও কার্ডের পিনকোড সংরক্ষিত ছিল। এ ঘটনার সময়ে আক্তার হোসেন স্ব-পরিবারে প্রবাসে থাকার সুবাদে গত ২ জুলাই বিকেলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বাড়ির তালা খুলে ৭০ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোবাইল ফোন, নগদ ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ৫ লাখ টাকা মূল্যের জামা-কাপড়, ২০ ভরি স্বর্ণ, ১২ লাখ টাকার মূল্যের ১৫টি মূল্যবান ঘড়ি, জায়গার দলিল ও ব্যাংকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রাদী চুরি করে পালিয়ে যায়।