ছাত্র-জনতার কাক্সিক্ষত নিরপেক্ষ সরকারের আবরণের নিচে অনেক প্রশাসনিক, পুলিশসহ অনেক কর্মকর্তা স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিবাদের দোসর বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ক’দিন পরেই পাসিং আউট (ট্রেনিং শেষে কর্মস্থলে যোগদান) হবে পুলিশের ৮০৩ জন সাব ইন্সপেক্টর। এই ৮০৩ জনসহ ক্যাডার সার্ভিসের আছেন ৬৩/৬৪ জন, তারা সবাই শেখ হাসিনার আমলের নিয়োগ। ৮০৩ জন সাব ইন্সপেক্টরের মধ্যে ২০০ জনই হচ্ছে শুধু গোপালগঞ্জের লোক। তাহলে এখানে কোন নিরপেক্ষভাবে যাচাই-বাছাই হয়েছে? এখানে নিরপেক্ষভাবে কোন কম্পিটিশন হয়েছে? হয়নি। আরো অনেক ঘটনা আছে যেটা বললাম না। এসপির ৬২/৬৩ জন আর ৮০৩ জন সাব ইন্সপেক্টর এরা কারা? কি করে এক জেলার গোপালগঞ্জের ২০০ জন লোক সাব ইন্সপেক্টরে ঢুকতে পারে। আর বাদবাকি লোক কারা? এরা সব ছাত্রলীগ-যুবলীগ। রিজভী অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এর পুনঃতদন্ত দাবি করেন। তিনি বলেন, এই ৮০৩ জন সাব ইন্সপেক্টর এবং এতোগুলো এএসপি তারা ফ্যাসিবাদের বিষাক্ত সাপ হয়ে গোটা বাংলাদেশকে নীল বিষে ভরিয়ে দিবে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরার আজমপুরের আমির কমপ্লেক্সের সামনে ডেঙ্গু চিকিৎসা এবং প্রতিরোধে সচেতনতার লক্ষ্যে এক কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ছাত্র-জনতার রক্তের উপর দিয়ে এই সরকার। সে সময়ে এক জেলার যদি ২০০ জন সাব ইন্সপেক্টর হয়, তাহলে বুঝতে হবে শেখ হাসিনা কি পরিমাণ জালিয়াতি করেছে। তা খতিয়ে দেখতে হবে।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ছাত্ররা আত্মাহতি দিল, শার্টের বোতাম খুলে শেখ হাসিনার র্যাবের সামনে দাঁড়িয়ে বুলেট বরণ করেছে। একজন মারা গেছে তার পাশে আরেকজন দাঁড়িয়েছে আমাকে মারো। এই যে আত্মদান, নিজের জীবন দিয়ে গণতন্ত্রের শুভ সূচনার যে বার্তা, সেই রক্তের সঙ্গে যারা বেইমানি করবে, মানুষ মেনে নেবে না। সেটা সরকারকে দেখতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদকে বিস্তার করার জন্য যাতে আর কেউ টু› শব্দ করতে না পারে সেজন্য তারা পুলিশ প্রশাসন তৈরি করেছে। শেখ হাসিনা গোটা বাংলাদেশকে গণ কবরে পরিণত করেছিল। সেই গণকবরে আর এ দেশের জনগণ যেতে চায় না। সে সময় না ছিল ন্যায়বিচার, না ছিল আইনের শাসন, কথা বলার স্বাধীনতা। কথ বললেই জায়গা হতো কারাগারে। সাইবার নিরাপত্তা আইনের নামে কত সাংবাদিক, মুক্ত চিন্তার মানুষ, যারা শেখ হাসিনা বা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কোন বিষয়ে কমেন্ট করেছে তাকে ধরে নিয়ে গেছে রাতের অন্ধকারে। সেখান থেকে মা-বোন কেউ বাদ যায়নি। আয়নাঘরের কথা বাদই দিলাম।
সিন্ডিকেটে জড়িতদের গ্রেফতার করে জনগণকে স্বস্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদেরকে গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে হবে। মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলছি, এখনো মার্কেট সিন্ডিকেট যারা করে তাদেরকে কেন ধরছেন না? কেন পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, সয়াবিন তেলসহ সব কিছুর দাম বাড়বে?
রুহুল কবির রিজভী বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শেখ হাসিনা যে গণহত্যা চালিয়েছে, সেখানে রিক্সাচালক মারা গেছে না? তার পরিবার খাবে কি? কত শ্রমিক মারা গেছেন। তাদের উপার্জনের কেউ নেই। সে তেল, পেঁয়াজ, কাঁচাবাজার কিনবে কিভাবে? এগুলো আপনাদেরকে মাথায় রেখেই কাজ করতে হবে। শুধু নিরপেক্ষতার কথা বলে চুপচাপ থাকলে মানুষের ক্ষোভ কিন্তু প্রশমিত থাকবে না।
ডেঙ্গুর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজকে ঢাকায় ডেঙ্গু ভয়ঙ্কর মহামারি আকার ধারণ করেছে। এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রয়োজনে আরো কিছু ব্যবস্থার জন্য ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি কাজ করছে। ডেঙ্গু রোগাক্রান্ত রোগীর জন্য রক্তের প্রয়োজন হয়, প্রয়োজনীয় ওষুধ লাগে তা নাহলে কাজ শুরু করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। কারন আমাদের দেশে হাসপাতালে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। একটা মহামারী হলে সেজন্য প্রয়োজনীয় বিছানা দেওয়া, বেড দেওয়া এগুলো নেই। এগুলোর সচেতনতা অত্যন্ত দরকার।
তিনি বলেন, এখন তো শেখ হাসিনা নেই, স্বৈরাচার নেই, ফ্যাসিস্ট নেই। জনগণের জন্য বিএনপি অনেক ধরনের কাজ করেছে, অনেক সচেতনতামূলক কর্মসূচি দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ-র্যাব করতে দিতো না, যুবলীগ-ছাত্রলীগ আক্রমণ করতো। সে জায়গা থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া গেছে।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার, হরিলুট করেছে, টাকা পাচার করেছে, জনগণের টাকা ডাকাতি করেছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছে নিজেদের লোকদের দিয়েছে। সামিট গ্রুপ, অরিয়ন গ্রুপ, না হলে শেখ হেলালের বন্ধু, শেখ রেহানার আপনজন তাদেরকে দিয়ে এগুলো করেছেন। তারা কিভাবে ডেঙ্গু নিধন করবে?
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন- ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আমিনুল হক, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল। উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, মহানগর বিএনপি নেতা আক্তার হোসেন, আনুয়ারুজ্জামান আনোয়ার, মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, মোস্তফা জামান, আনোয়ার হোসেন, এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ, এস এম জাহাঙ্গীর, জাসাসের সভাপতি হেলাল খান, সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদল সহ-সভাপতি ডা. আউয়াল প্রমুখ।