ঢাকা , বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সার আমদানির আওয়ামী সিন্ডিকেট বহাল, অসাধু চক্র ভেঙে দিতে হবে

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের দুই মাস অতিক্রম করেছে। মানুষের প্রত্যাশা ছিল এ সরকার আগের সব ব্যবসায়ী ‘সিন্ডিকেট’ ভেঙে দেবে এবং পণ্যমূল্য কিছুটা হলেও সহনীয় পর্যায়ে আসবে। কিন্তু পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের যে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য ছিল, সে পথে হাঁটেনি সরকারের দায়িত্বশীল উপদেষ্টারা।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার বার্তা দিয়ে বলেছিলেন, ‘জনগণের জীবনযাপন সহজ করতে দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।’ কিন্তু দুই মাসে দ্রব্যমূল্য কমেনি বরং আরও বেড়েছে। অনুসন্ধান করে এবং খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, ব্যবসায়ী ও বহুমুখী ব্যবসার করপোরেট হাউসগুলো পণ্যের বাজারে যে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল, সেটা এখনও কার্যকর রয়ে গেছে।

মঙ্গলবার সময়ের আলোতে এসেছে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পরও এখনও বহাল-তবিয়তে রয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনে (বিসিআইসি) উচ্চমূল্যে সার আমদানির আওয়ামী সিন্ডিকেট। বিদায়ি শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন গ্রেফতার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। এ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যে সার আমদানি করে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। বিসিআইসি উৎপাদনকারী সরকারি সংস্থা হলেও একের পর এক কারখানা বন্ধ করে উৎপাদনের পরিবর্তে কৃষকের ভর্তুকির টাকায় সার আমদানিতেই উৎসাহ বেশি ছিল কর্মকর্তাদের।

কৃষি এবং কৃষকরাই বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধির জন্য কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূল দায়িত্ব পালন করছেন আমাদের কৃষকরা। তাদের সহায়তা করছেন কৃষিবিদরা। আর এই কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে কৃষকের সার ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। সিন্ডিকেটের কারণে সারের সরবরাহ ব্যাহত হলে সরবরাহ ব্যবস্থায় বিপর্যয় ঘটবে, যা দেশের কৃষিপণ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। খাদ্য নিরাপত্তাকে নিশ্চিতভাবে হুমকির মুখে ফেলবে।

গণঅভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলেও বাজার সিন্ডিকেটকারী ও চাঁদাবাজদের পতন হয়নি। তারা বহাল আছে। এই চক্রের কারণে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এই অসাধু চক্র ভেঙে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, নীতিনির্ধারকরা অবিলম্বে সারের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজার সংস্কার করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন-যেখানে কৃষি, কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষিত হবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে আরও গতিশীল করে তুলতে সাহায্য করবে।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

সার আমদানির আওয়ামী সিন্ডিকেট বহাল, অসাধু চক্র ভেঙে দিতে হবে

আপডেট সময় ০৮:৫৫:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের দুই মাস অতিক্রম করেছে। মানুষের প্রত্যাশা ছিল এ সরকার আগের সব ব্যবসায়ী ‘সিন্ডিকেট’ ভেঙে দেবে এবং পণ্যমূল্য কিছুটা হলেও সহনীয় পর্যায়ে আসবে। কিন্তু পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের যে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য ছিল, সে পথে হাঁটেনি সরকারের দায়িত্বশীল উপদেষ্টারা।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার বার্তা দিয়ে বলেছিলেন, ‘জনগণের জীবনযাপন সহজ করতে দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।’ কিন্তু দুই মাসে দ্রব্যমূল্য কমেনি বরং আরও বেড়েছে। অনুসন্ধান করে এবং খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, ব্যবসায়ী ও বহুমুখী ব্যবসার করপোরেট হাউসগুলো পণ্যের বাজারে যে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল, সেটা এখনও কার্যকর রয়ে গেছে।

মঙ্গলবার সময়ের আলোতে এসেছে, ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পরও এখনও বহাল-তবিয়তে রয়েছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনে (বিসিআইসি) উচ্চমূল্যে সার আমদানির আওয়ামী সিন্ডিকেট। বিদায়ি শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন গ্রেফতার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। এ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যে সার আমদানি করে কমিশন বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। বিসিআইসি উৎপাদনকারী সরকারি সংস্থা হলেও একের পর এক কারখানা বন্ধ করে উৎপাদনের পরিবর্তে কৃষকের ভর্তুকির টাকায় সার আমদানিতেই উৎসাহ বেশি ছিল কর্মকর্তাদের।

কৃষি এবং কৃষকরাই বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বিশাল জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধির জন্য কৃষির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূল দায়িত্ব পালন করছেন আমাদের কৃষকরা। তাদের সহায়তা করছেন কৃষিবিদরা। আর এই কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে নীতিনির্ধারকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে কৃষকের সার ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়টি নীতিনির্ধারকদের খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। সিন্ডিকেটের কারণে সারের সরবরাহ ব্যাহত হলে সরবরাহ ব্যবস্থায় বিপর্যয় ঘটবে, যা দেশের কৃষিপণ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। খাদ্য নিরাপত্তাকে নিশ্চিতভাবে হুমকির মুখে ফেলবে।

গণঅভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলেও বাজার সিন্ডিকেটকারী ও চাঁদাবাজদের পতন হয়নি। তারা বহাল আছে। এই চক্রের কারণে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এই অসাধু চক্র ভেঙে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, নীতিনির্ধারকরা অবিলম্বে সারের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজার সংস্কার করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন-যেখানে কৃষি, কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষিত হবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে আরও গতিশীল করে তুলতে সাহায্য করবে।