এক যুগ আগে ২০১২ সাল থেকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর করার দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ নামে একটি সংগঠন আন্দোলন শুরু করে। তারা বিভিন্ন সময়ে সরকারের কাছে এ নিয়ে তাদের দাবি জানিয়ে আসছিল।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের সময় একবার ক্যাডার সার্ভিসের জন্য আবেদনের বয়স ৫০ বছর পর্যন্ত করা হয়েছিল। ৮২ ব্যাচের ওই কর্মকর্তারা ‘৬৫০ ক্যাডার’ হিসেবে প্রশাসনে পরিচিত। এসব কর্মকর্তার মধ্যে তখন ৪৫ বছরের বেশি বয়সে চাকরি পেয়েছিলেন ২০ জনের মতো। মূলত উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তনের কারণে প্রতিটি উপজেলায় ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করতে হবে- এমন চাহিদা থেকে তখন একটি বিসিএসের জন্য বয়সসীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ এবং কোনো কোনো দেশে বয়সসীমাই নির্ধারণ করা নেই। বাংলাদেশে গত এক যুগের বেশি সময় ধরে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমা বৃদ্ধির আলাপ থাকলেও বয়সসীমা বাড়ানোর যৌক্তিকতা কতটা, সেটি নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। সেই সঙ্গে চাকরির বয়সসীমা বাড়ানো হলে সেটি কি রাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের সঙ্গে মিলে দেশের জন্য বোঝা তৈরি করতে পারে-তেমন প্রশ্নও রয়েছে অনেকের মধ্যে।
সবশেষ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর ‘চাকরিতে বয়সের আবেদনসীমা ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদ’ আন্দোলন শুরু করলে সরকার একটি কমিটি করে দেয়।
শুক্রবার সময়ের আলোতে এসেছে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নির্ধারণ করে একটি অধ্যাদেশের খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এতে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ বছর। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যানসিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়েছে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে চাকরিপ্রার্থী ও বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে। অনেকে এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। আবার চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলনকারীরা সরকারি এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশের তরুণদের সরকারি চাকরির প্রতি ঝোঁক এখন বেশি। চাকরিতে প্রবেশের বয়স আরও বাড়ানো হলে এই বিশাল কর্মক্ষম তরুণদের অনেকে ‘একদিন না একদিন সরকারি চাকরি হবে’ আশায় শেষ পর্যন্ত চাকরির প্রস্তুতি নেবেন। ফলে একটা দীর্ঘসময় পর্যন্ত এই তরুণদের কাজে লাগানো যাবে না বিধায় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আমরা মনে করি, চাকরিপ্রত্যাশীদের সরকারি চাকরির বাইরে আরও অন্য কর্মসংস্থানও খুঁজতে হবে। তাতেই সমাজের ও দেশের উপকার হবে।