ঢাকা , শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গার্মেন্ট শিল্পে অস্থিরতা, ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে

১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা। পোশাক আমাদের দেশের অন্যতম রফতানিযোগ্য পণ্য। দেশের শ্রমবাজারের একটি বিরাট অংশের চাহিদা পূরণ করে পোশাক শিল্প। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির অগ্রযাত্রারা সঙ্গে আশির দশকে যে শিল্প যাত্রা শুরু করে সেই পোশাক শিল্পই আজ আমাদের অর্থনীতির প্রধান নিয়ামক। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আমরা পেছনে ফেলেছি পোশাক রফতানির বড় বড় দেশকে। আজ বাংলাদেশ তৈরি পোশাকের এক অন্যতম দেশ।

তবে গত কয়েক দিন ধরে দেশের গার্মেন্ট শিল্প ঘিরে যে ধরনের অসন্তোষ চলছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আন্দোলনরত গার্মেন্ট শ্রমিকরা ১৮টি দাবি জানিয়েছিল সরকারের কাছে। তার সবই মেনে নেওয়া হয়েছিল গত মঙ্গলবারের সরকার-মালিক-শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে। দাবি মানার পর বৈঠকে উপস্থিত থাকা ৪০ শ্রমিক নেতা স্বাক্ষর করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন- শ্রমিকরা আর আন্দোলনে নামবে না, তারা শ্রমিকদের বোঝাবেন। শ্রমিক নেতারা সে প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি।

আবারও আন্দোলনে নেমেছে শ্রমিক, কারখানায় হামলা চালানো হয়েছে এবং সহিংসতায় গতকাল সোমবার আশুলিয়ায় এক শ্রমিক নিহতও হয়েছে। ১৮ দাবির সব মানার পর কেন শিল্পে সহিংসতা তার কারণ খোঁজা হয় সময়ের আলোর পক্ষ থেকে। এতে শিল্পে অস্থিরতার পেছনে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণের কথা বলেছে সব পক্ষই। কয়েকজন শ্রমিক নেতা জানিয়েছেন, চলমান শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে বিদায়ি শেখ হাসিনা সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি বা আওয়ামী লীগ সমর্থক কয়েকজন গার্মেন্ট মালিকের ইন্ধন রয়েছে। যাদের মধ্যে কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন আবার কেউ আত্মগোপনে আছেন। আড়ালে থেকেই তারা শিল্পে অস্থিরতায় ইন্ধন দিচ্ছেন। কারণ গার্মেন্টস খাতে অস্থিরতা জিইয়ে রাখলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সংকটে ফেলা যাবে।

কোটা সংস্কার এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় দেশে ব্যাপক নাশকতা হয়েছে। সে সময়ও গার্মেন্ট শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তখন দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলো বন্ধ থাকার কারণে প্রতিদিনই বিপুল অঙ্কের অর্থের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া আন্দোলন চলাকালে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার কারণেও এ খাতে প্রতিদিন বিপুল অঙ্কের অর্থের ক্ষতি হয়েছে। ওইসব ক্ষতি কাটিয়ে উঠে গার্মেন্ট শিল্প যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল, তখনই আবার এ শিল্পে অসন্তোষ শুরু হয়।

দেশের গার্মেন্ট শিল্পে অসন্তোষের নেপথ্যে বারবার ষড়যন্ত্রের অভিযোগও ওঠে। আমাদের অভ্যন্তরীণ কারণে যদি পোশাক শিল্প বন্ধ থাকে বা বিশৃঙ্খলা বিরাজ করে তা হলে আমরা আমাদের অবস্থান হারাতে পারি। ক্রেতারা আস্থা হারাবে এবং তারা বিকল্প বাজার খুঁজবে। যেহেতু শ্রমিক অসন্তোষের নেপথ্যে বহিরাগতদের ইন্ধনের অভিযোগ উঠেছে, সেহেতু এ বিষয়ে ইন্ধনদাতাদের দ্রুত খুঁজে বের করে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, রিজার্ভ সংকটের এ সময়ে রফতানিমুখী শিল্প কারখানার স্বাভাবিক পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

গার্মেন্ট শিল্পে অস্থিরতা, ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে

আপডেট সময় ০১:২৭:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪

১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা। পোশাক আমাদের দেশের অন্যতম রফতানিযোগ্য পণ্য। দেশের শ্রমবাজারের একটি বিরাট অংশের চাহিদা পূরণ করে পোশাক শিল্প। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির অগ্রযাত্রারা সঙ্গে আশির দশকে যে শিল্প যাত্রা শুরু করে সেই পোশাক শিল্পই আজ আমাদের অর্থনীতির প্রধান নিয়ামক। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আমরা পেছনে ফেলেছি পোশাক রফতানির বড় বড় দেশকে। আজ বাংলাদেশ তৈরি পোশাকের এক অন্যতম দেশ।

তবে গত কয়েক দিন ধরে দেশের গার্মেন্ট শিল্প ঘিরে যে ধরনের অসন্তোষ চলছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আন্দোলনরত গার্মেন্ট শ্রমিকরা ১৮টি দাবি জানিয়েছিল সরকারের কাছে। তার সবই মেনে নেওয়া হয়েছিল গত মঙ্গলবারের সরকার-মালিক-শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে। দাবি মানার পর বৈঠকে উপস্থিত থাকা ৪০ শ্রমিক নেতা স্বাক্ষর করে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন- শ্রমিকরা আর আন্দোলনে নামবে না, তারা শ্রমিকদের বোঝাবেন। শ্রমিক নেতারা সে প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেননি।

আবারও আন্দোলনে নেমেছে শ্রমিক, কারখানায় হামলা চালানো হয়েছে এবং সহিংসতায় গতকাল সোমবার আশুলিয়ায় এক শ্রমিক নিহতও হয়েছে। ১৮ দাবির সব মানার পর কেন শিল্পে সহিংসতা তার কারণ খোঁজা হয় সময়ের আলোর পক্ষ থেকে। এতে শিল্পে অস্থিরতার পেছনে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণের কথা বলেছে সব পক্ষই। কয়েকজন শ্রমিক নেতা জানিয়েছেন, চলমান শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে বিদায়ি শেখ হাসিনা সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি বা আওয়ামী লীগ সমর্থক কয়েকজন গার্মেন্ট মালিকের ইন্ধন রয়েছে। যাদের মধ্যে কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন আবার কেউ আত্মগোপনে আছেন। আড়ালে থেকেই তারা শিল্পে অস্থিরতায় ইন্ধন দিচ্ছেন। কারণ গার্মেন্টস খাতে অস্থিরতা জিইয়ে রাখলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে সংকটে ফেলা যাবে।

কোটা সংস্কার এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় দেশে ব্যাপক নাশকতা হয়েছে। সে সময়ও গার্মেন্ট শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তখন দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলো বন্ধ থাকার কারণে প্রতিদিনই বিপুল অঙ্কের অর্থের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া আন্দোলন চলাকালে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার কারণেও এ খাতে প্রতিদিন বিপুল অঙ্কের অর্থের ক্ষতি হয়েছে। ওইসব ক্ষতি কাটিয়ে উঠে গার্মেন্ট শিল্প যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিল, তখনই আবার এ শিল্পে অসন্তোষ শুরু হয়।

দেশের গার্মেন্ট শিল্পে অসন্তোষের নেপথ্যে বারবার ষড়যন্ত্রের অভিযোগও ওঠে। আমাদের অভ্যন্তরীণ কারণে যদি পোশাক শিল্প বন্ধ থাকে বা বিশৃঙ্খলা বিরাজ করে তা হলে আমরা আমাদের অবস্থান হারাতে পারি। ক্রেতারা আস্থা হারাবে এবং তারা বিকল্প বাজার খুঁজবে। যেহেতু শ্রমিক অসন্তোষের নেপথ্যে বহিরাগতদের ইন্ধনের অভিযোগ উঠেছে, সেহেতু এ বিষয়ে ইন্ধনদাতাদের দ্রুত খুঁজে বের করে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, রিজার্ভ সংকটের এ সময়ে রফতানিমুখী শিল্প কারখানার স্বাভাবিক পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।