ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেধাবীদের সম্পর্কে কোরআনে যা বলা হয়েছে

জ্ঞান-মেধা, জ্ঞানী-মেধাবীদের কদর সব জায়গাতেই। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক যুগের মানুষদের হিদায়েতের জন্য নবী হিসেবে নির্বাচন করেছেন তাদের জ্ঞানী-মেধাবী শ্রেণীকে। নবী-রাসূলগণ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান ও মেধার মাধ্যমে মানুষকে ভালো-মন্দ বুঝিয়েছেন, সফলতা ও ব্যর্থতার বাণী শুনিয়েছেন।

নবী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা যে সেই যুগের মেধাবী শ্রেণীকে প্রাধান্য দিয়ে বাছাই করেছেন তা সহজেই বুঝা যায় হজরত ইবরাহিম আ.-এর জীবনীর প্রতি খেয়াল করলেই।

ইবরাহিম আ.-এর যুগের সব মানুষ গৎবাধা জীবনের অভ্যস্ত ছিল। মূর্তি নিমার্ণ, মূর্তির পূজা, সূর্যের সামনে ঝুঁকে সিজদা দেওয়া, প্রভাবশালী নমরুদের আনুগত্য— এসবই ছিল তাদের জীবনের প্রাত্যহিক রুটিন বা সূচি। তাদের চিন্তা ভাবনার দিগন্ত যেন এখানেই তালাবদ্ধ হয়ে ছিল। এর বাইরে কোনো জীবন ছিল না তাদের।

চিন্তার দৈন্যতার সেই যুগে আজর নামে একজনের ঘরে জন্ম নিলেন ইবরাহিম নামের এক শিশু। নিজের বেড়ে ওঠার সমাজ, পরিবেশ, দুর্বলদের ওপর প্রভাবশালী নমরুদের জুলুম নিযার্তন দেখে তার মনে জন্ম নিল শত-সহস্র প্রশ্ন।

এই আসমান-জমিনের ‍স্রষ্টা কে? চন্দ্র-সূর্য কোথাও যায়? মানুষ কীভাবে নিজের হাতে বানানো মূর্তির পূজা করে!— এইসব প্রশ্ন একদিন তাঁর চিন্তার বদ্ধদ্বার খুলে দিল, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে নির্বাচন করলেন জাতির হেদায়েতের বাহক হিসেবে। নবুয়তের মাধ্যমে সম্মানিত করলেন। তিনি পেলেন খলিলুল্লাহ উপাধী। হলেন মুসলিম জাতির পিতা।

মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম আ. নিজেও তার বংশধরদের মাঝে জ্ঞানী ও মেধাবী শ্রেণী কামনা করতেন। এজন্য তিনি আল্লাহর কাছে মনের আকুতি জানাতে গিয়ে বললেন—

رَبَّنَا وَ ابۡعَثۡ فِیۡهِمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡهُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِكَ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡكِتٰبَ وَ الۡحِكۡمَۃَ وَ یُزَكِّیۡهِمۡ ؕ اِنَّكَ اَنۡتَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَكِیۡمُ

হে আমাদের রব! তাদেরই মধ্য থেকে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন যিনি তাদেরকে আপনার নিদর্শনাবলী পাঠ করে শুনাবেন এবং তাদেরকে গ্রন্থ ও বিজ্ঞান শিক্ষা দান করবেন ও তাদেরকে পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রান্ত, বিজ্ঞানময়। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১২৯)

ইমাম রাগেব বলেন, আলোচ্য আয়াতে হেকমত বা জ্ঞানের মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে, পৃথিবীতে প্রত্যেক যুগে বসবাসরত জাতির বিদ্যমান বস্তুসমূহ বা বিশুদ্ধ জ্ঞান, সৎকর্ম, ন্যায়, সুবিচার, সত্য কথা ইত্যাদি। অর্থাৎ, নবী-রাসূলেরা মানুষকে ন্যায় ও সত্য শিক্ষা দান করবেন।

আল্লাহ তায়ালা হিসেবে মেধাবীদের বাছাইয়ের আরেকটি প্রমাণ মেলে সূরা আম্বিয়ার ২১ নম্বর আয়াতে। যেখানে বর্ণিত হয়েছে—

فَفَهَّمۡنٰهَا سُلَیۡمٰنَ ۚ وَ كُلًّا اٰتَیۡنَا حُكۡمًا وَّ عِلۡمًا ۫ َ

আমি সুলায়মানকে এ বিষয়ের (সঠিক) বুঝ দিয়েছিলাম আর (তাদের) প্রত্যেককে আমি দিয়েছিলাম বিচারশক্তি ও জ্ঞান। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ২১)

পৃথিবীর সূচনা থেকে আল্লাহ তায়ালা সময়ে সময়ে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন, তবে নবীদের আগমনের এই ধারা বন্ধ হয়েছে হজরত মুহাম্মদ সা.-এর মাধ্যমে। নবীদের আগমনের ধারা বন্ধ হলেও তাদের অনুসারী জ্ঞানী ও মেধাবীরা পৃথিবীতে এখনো আছেন। সভ্য ও সুশৃঙ্খল পৃথিবী গড়তে মেধাবীদের হাতেই থাকতে হবে। অন্যথায় বিশৃঙ্খলা, অশান্তিতে ভয়ে উঠবে পৃথিবী। কারণ, মেধাবী ও মেধাহীন কখনো এক হতে পারে না— আল্লাহ তায়ালা নিজেই পবিত্র কোরআনে এই ঘোষণা দিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছে—

قُلۡ هَلۡ یَسۡتَوِی الَّذِیۡنَ یَعۡلَمُوۡنَ وَ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ؕ اِنَّمَا یَتَذَكَّرُ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ

যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান? বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। (সূরা যুমার, আয়াত : ৯)

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

মেধাবীদের সম্পর্কে কোরআনে যা বলা হয়েছে

আপডেট সময় ০৪:১৭:১০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৪

জ্ঞান-মেধা, জ্ঞানী-মেধাবীদের কদর সব জায়গাতেই। আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক যুগের মানুষদের হিদায়েতের জন্য নবী হিসেবে নির্বাচন করেছেন তাদের জ্ঞানী-মেধাবী শ্রেণীকে। নবী-রাসূলগণ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান ও মেধার মাধ্যমে মানুষকে ভালো-মন্দ বুঝিয়েছেন, সফলতা ও ব্যর্থতার বাণী শুনিয়েছেন।

নবী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা যে সেই যুগের মেধাবী শ্রেণীকে প্রাধান্য দিয়ে বাছাই করেছেন তা সহজেই বুঝা যায় হজরত ইবরাহিম আ.-এর জীবনীর প্রতি খেয়াল করলেই।

ইবরাহিম আ.-এর যুগের সব মানুষ গৎবাধা জীবনের অভ্যস্ত ছিল। মূর্তি নিমার্ণ, মূর্তির পূজা, সূর্যের সামনে ঝুঁকে সিজদা দেওয়া, প্রভাবশালী নমরুদের আনুগত্য— এসবই ছিল তাদের জীবনের প্রাত্যহিক রুটিন বা সূচি। তাদের চিন্তা ভাবনার দিগন্ত যেন এখানেই তালাবদ্ধ হয়ে ছিল। এর বাইরে কোনো জীবন ছিল না তাদের।

চিন্তার দৈন্যতার সেই যুগে আজর নামে একজনের ঘরে জন্ম নিলেন ইবরাহিম নামের এক শিশু। নিজের বেড়ে ওঠার সমাজ, পরিবেশ, দুর্বলদের ওপর প্রভাবশালী নমরুদের জুলুম নিযার্তন দেখে তার মনে জন্ম নিল শত-সহস্র প্রশ্ন।

এই আসমান-জমিনের ‍স্রষ্টা কে? চন্দ্র-সূর্য কোথাও যায়? মানুষ কীভাবে নিজের হাতে বানানো মূর্তির পূজা করে!— এইসব প্রশ্ন একদিন তাঁর চিন্তার বদ্ধদ্বার খুলে দিল, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে নির্বাচন করলেন জাতির হেদায়েতের বাহক হিসেবে। নবুয়তের মাধ্যমে সম্মানিত করলেন। তিনি পেলেন খলিলুল্লাহ উপাধী। হলেন মুসলিম জাতির পিতা।

মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম আ. নিজেও তার বংশধরদের মাঝে জ্ঞানী ও মেধাবী শ্রেণী কামনা করতেন। এজন্য তিনি আল্লাহর কাছে মনের আকুতি জানাতে গিয়ে বললেন—

رَبَّنَا وَ ابۡعَثۡ فِیۡهِمۡ رَسُوۡلًا مِّنۡهُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِكَ وَ یُعَلِّمُهُمُ الۡكِتٰبَ وَ الۡحِكۡمَۃَ وَ یُزَكِّیۡهِمۡ ؕ اِنَّكَ اَنۡتَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَكِیۡمُ

হে আমাদের রব! তাদেরই মধ্য থেকে এমন একজন রাসূল প্রেরণ করুন যিনি তাদেরকে আপনার নিদর্শনাবলী পাঠ করে শুনাবেন এবং তাদেরকে গ্রন্থ ও বিজ্ঞান শিক্ষা দান করবেন ও তাদেরকে পবিত্র করবেন। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রান্ত, বিজ্ঞানময়। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১২৯)

ইমাম রাগেব বলেন, আলোচ্য আয়াতে হেকমত বা জ্ঞানের মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে, পৃথিবীতে প্রত্যেক যুগে বসবাসরত জাতির বিদ্যমান বস্তুসমূহ বা বিশুদ্ধ জ্ঞান, সৎকর্ম, ন্যায়, সুবিচার, সত্য কথা ইত্যাদি। অর্থাৎ, নবী-রাসূলেরা মানুষকে ন্যায় ও সত্য শিক্ষা দান করবেন।

আল্লাহ তায়ালা হিসেবে মেধাবীদের বাছাইয়ের আরেকটি প্রমাণ মেলে সূরা আম্বিয়ার ২১ নম্বর আয়াতে। যেখানে বর্ণিত হয়েছে—

فَفَهَّمۡنٰهَا سُلَیۡمٰنَ ۚ وَ كُلًّا اٰتَیۡنَا حُكۡمًا وَّ عِلۡمًا ۫ َ

আমি সুলায়মানকে এ বিষয়ের (সঠিক) বুঝ দিয়েছিলাম আর (তাদের) প্রত্যেককে আমি দিয়েছিলাম বিচারশক্তি ও জ্ঞান। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ২১)

পৃথিবীর সূচনা থেকে আল্লাহ তায়ালা সময়ে সময়ে নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন, তবে নবীদের আগমনের এই ধারা বন্ধ হয়েছে হজরত মুহাম্মদ সা.-এর মাধ্যমে। নবীদের আগমনের ধারা বন্ধ হলেও তাদের অনুসারী জ্ঞানী ও মেধাবীরা পৃথিবীতে এখনো আছেন। সভ্য ও সুশৃঙ্খল পৃথিবী গড়তে মেধাবীদের হাতেই থাকতে হবে। অন্যথায় বিশৃঙ্খলা, অশান্তিতে ভয়ে উঠবে পৃথিবী। কারণ, মেধাবী ও মেধাহীন কখনো এক হতে পারে না— আল্লাহ তায়ালা নিজেই পবিত্র কোরআনে এই ঘোষণা দিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছে—

قُلۡ هَلۡ یَسۡتَوِی الَّذِیۡنَ یَعۡلَمُوۡنَ وَ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ؕ اِنَّمَا یَتَذَكَّرُ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ

যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান? বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। (সূরা যুমার, আয়াত : ৯)