ঢাকা , বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo ইউক্রেনে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাচ্ছেন ট্রাম্প, পুতিনকে নিয়ে অসন্তোষ Logo বেনারসি, ভারী গহনায় চমকে দিলেন পরীমণি Logo সিরিজ জয়ে চোখ বাংলাদেশের Logo বই পড়ার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় : ডিসি Logo সোনারগাঁয়ে ৩ টি অবৈধ চুনা কারখানা গুড়িয়ে দিয়ে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন Logo নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের সামনে সড়কের বেহাল দশা, দুর্ভোগ চরমে Logo পানিতে তলিয়ে আছে সিদ্ধিরগঞ্জের ইকবাল গ্রুপ, কোটি কোটি টাকার ক্ষতি, ব্যবস্থা নেওয়া হবে সিইও Logo রূপগঞ্জ মধুখালি তিনরাস্তার মোড়ে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের উৎপাত; প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন Logo রূপগঞ্জে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে মশাল মিছিল নিহত সোহাগসহ সব হত্যার বিচার দাবি Logo এবার কি অন্যের ঘরভাঙার কারণ হচ্ছেন সামান্থা?

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযোগ

জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) অভিযোগ দায়ের করেছেন ‘থ্রি বোল্ট কোর্ট চেম্বার্স’র ব্যারিস্টার মো. আশরাফুল আরেফিন।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন মামলার বাদী। আইসিসির রোম স্ট্যাটিউটের ১৫ অনুচ্ছেদের অধীনে মামলাটি দাখিল করেছেন তিনি।

মামলায় বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী এবং সরকারের অন্যান্য প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই এবং আগস্ট মাসে, বাংলাদেশ ইতিহাসের এক পৈশাচিক নৃশংসতার সাক্ষী হয়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনে আশরাফুল আরেফিন আরও বলেন, চলতি বছরের জুলাই মাসে, বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন ছাত্র আন্দোলনের সূচনা ঘটে, যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করে। শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার অযৌক্তিক হারে পুনর্বহাল এবং সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ পদ নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষণের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। তাদের দাবি ছিল, এই কোটা ব্যবস্থা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে অযাচিত অগ্রাধিকার প্রদান করে, যা দেশের মেধাবী এবং যোগ্য প্রার্থীদের জন্য চাকরির পথ রুদ্ধ করে দেয়। আন্দোলনের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল কোটা সংস্কার, তবে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যুর মতো ঘটনার পর এটি দ্রুত বৃহত্তর আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। শিক্ষার্থীরা তখন কেবল কোটা সংস্কার নয়, বরং প্রশাসনিক দুর্নীতি, অর্থনৈতিক সংকট এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনে যুক্ত হন।

এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখোমুখি হওয়ার পর সরকার এর জবাব দেয় অমানবিক সহিংসতার মাধ্যমে উল্লেখ করে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করতে সরকার পুলিশ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), এবং আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের মতো বাহিনী মোতায়েন করে। এই বাহিনী নির্বিচারে গুলি, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র- যেমন বার্ডশট প্লেট এবং তাজা গুলি- ব্যবহার করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা চালায়। ইতিহাসের এই বর্বরতম নৃশংসতায় ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। বাংলাদেশ সরকারের এই কঠোর ব্যবস্থার ফলে দেশে গণহত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং অসংখ্য বিক্ষোভকারী নিখোঁজ হয়েছেন। এই নিষ্ঠুরতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের উদাহরণ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এই গুরুতর অপরাধের নিরপেক্ষ তদন্ত করতে সক্ষম হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে উল্লেখ করে আরও বলা হয়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তাই পূর্ববর্তী সরকার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত, যা নিরপেক্ষ তদন্তের পথে বড় বাধা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার কারণে, নিরপেক্ষ বিচার বা বিচার ব্যবস্থার প্রভাবশালী সিদ্ধান্ত প্রাপ্তিতে রাজনৈতিক স্বার্থ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, যা ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর জন্য প্রতারণামূলক হবে। অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত থেকে রাজনৈতিক সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনার কারণে স্থানীয় আদালতে ঘোষিত কোনো দণ্ড কার্যকর হওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে ভারত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতায় বাধ্য হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রোম স্ট্যাটিউটের ১৫ অনুচ্ছেদের অধীনে মামলাটি দাখিল করা হয়েছে।

এই মামলার অগ্রগতি নিয়মিত জানানো হবে উল্লেখ করে বলা হয়, এই মামলার মাধ্যমে শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিসভা এবং সরকারের অন্যান্য প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে। আবেদনে উল্লিখিত বিভিন্ন অপরাধের মধ্যে রয়েছে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, গোপন বন্দিশালায় নির্যাতন, চলাচল ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং গণহত্যার মতো গুরুতর অপরাধ।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

ইউক্রেনে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাচ্ছেন ট্রাম্প, পুতিনকে নিয়ে অসন্তোষ

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অভিযোগ

আপডেট সময় ১০:৩৮:৩১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪

জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) অভিযোগ দায়ের করেছেন ‘থ্রি বোল্ট কোর্ট চেম্বার্স’র ব্যারিস্টার মো. আশরাফুল আরেফিন।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) লন্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন মামলার বাদী। আইসিসির রোম স্ট্যাটিউটের ১৫ অনুচ্ছেদের অধীনে মামলাটি দাখিল করেছেন তিনি।

মামলায় বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী এবং সরকারের অন্যান্য প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই এবং আগস্ট মাসে, বাংলাদেশ ইতিহাসের এক পৈশাচিক নৃশংসতার সাক্ষী হয়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনে আশরাফুল আরেফিন আরও বলেন, চলতি বছরের জুলাই মাসে, বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন ছাত্র আন্দোলনের সূচনা ঘটে, যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করে। শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার অযৌক্তিক হারে পুনর্বহাল এবং সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ পদ নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষণের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। তাদের দাবি ছিল, এই কোটা ব্যবস্থা নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে অযাচিত অগ্রাধিকার প্রদান করে, যা দেশের মেধাবী এবং যোগ্য প্রার্থীদের জন্য চাকরির পথ রুদ্ধ করে দেয়। আন্দোলনের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল কোটা সংস্কার, তবে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যুর মতো ঘটনার পর এটি দ্রুত বৃহত্তর আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। শিক্ষার্থীরা তখন কেবল কোটা সংস্কার নয়, বরং প্রশাসনিক দুর্নীতি, অর্থনৈতিক সংকট এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনে যুক্ত হন।

এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখোমুখি হওয়ার পর সরকার এর জবাব দেয় অমানবিক সহিংসতার মাধ্যমে উল্লেখ করে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমন করতে সরকার পুলিশ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), এবং আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের মতো বাহিনী মোতায়েন করে। এই বাহিনী নির্বিচারে গুলি, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র- যেমন বার্ডশট প্লেট এবং তাজা গুলি- ব্যবহার করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের ওপর হামলা চালায়। ইতিহাসের এই বর্বরতম নৃশংসতায় ১৪০০ জনেরও বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। বাংলাদেশ সরকারের এই কঠোর ব্যবস্থার ফলে দেশে গণহত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং অসংখ্য বিক্ষোভকারী নিখোঁজ হয়েছেন। এই নিষ্ঠুরতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের উদাহরণ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এই গুরুতর অপরাধের নিরপেক্ষ তদন্ত করতে সক্ষম হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে উল্লেখ করে আরও বলা হয়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তাই পূর্ববর্তী সরকার আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত, যা নিরপেক্ষ তদন্তের পথে বড় বাধা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার কারণে, নিরপেক্ষ বিচার বা বিচার ব্যবস্থার প্রভাবশালী সিদ্ধান্ত প্রাপ্তিতে রাজনৈতিক স্বার্থ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, যা ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর জন্য প্রতারণামূলক হবে। অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত থেকে রাজনৈতিক সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনার কারণে স্থানীয় আদালতে ঘোষিত কোনো দণ্ড কার্যকর হওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে ভারত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতায় বাধ্য হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রোম স্ট্যাটিউটের ১৫ অনুচ্ছেদের অধীনে মামলাটি দাখিল করা হয়েছে।

এই মামলার অগ্রগতি নিয়মিত জানানো হবে উল্লেখ করে বলা হয়, এই মামলার মাধ্যমে শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিসভা এবং সরকারের অন্যান্য প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে। আবেদনে উল্লিখিত বিভিন্ন অপরাধের মধ্যে রয়েছে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, গোপন বন্দিশালায় নির্যাতন, চলাচল ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং গণহত্যার মতো গুরুতর অপরাধ।