ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি গণহত্যায় অনবরত মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে এমন শত শত প্রতিবেদন সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে বাইডেন প্রশাসন। এমনকি ইসরাইলকে অস্ত্র দিতে মার্কিন নীতিরও তোয়াক্কা করেনি বাইডেন সরকার।
মার্কিন গণমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরাইলি সেনারা গাজায় গণহত্যা চালানোর সময় বেসামরিকদের ‘অপ্রয়োজনীয় ক্ষতি’ সাধন করে এমন হামলায় মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করেছে। এর প্রমাণ-সংবলিত ৫০০ প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। এগুলো নিয়ে জরুরি তদন্ত প্রয়োজন, তারপরও শত শত মামলা উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে ওয়াশিংটন পোস্টকে জানিয়েছেন সাবেক ও বর্তমান প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
গত বছরের আগস্টে বাইডেন প্রশাসন মার্কিন অস্ত্রে বেসামরিক মানুষজন হত্যা ঠেকাতে একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে চেয়েছিল। সিভিলিয়ান হার্ম ইন্সিডেন্ট রেসপন্স গাইডেন্স নামে এক পদ্ধতির মাধ্যমে বেসামরিক কাউকে হত্যায় মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করা হলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের প্রক্রিয়ায়ও যেতে চেয়েছিলেন বাইডেন। মানবাধিকার প্রশ্নে তখন বেশ প্রশংসিতও হয়েছিলেন সে জন্য।
সম্প্রতি স্টেট ডিপার্টমেন্টের হাতে আসা প্রতিবেদনগুলোর বেশ কিছু এসেছে খোদ বাইডেন প্রশাসনের ভেতর থেকেই। বাকিগুলো এসেছে গাজায় কর্মরত বিভিন্ন মানবিক সহায়তাকারী, গণমাধ্যমের খবর এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে। গণমাধ্যমের খবরে যেমন ইসরাইলের নৃশংস গণহত্যার প্রমাণ রয়েছে তেমনি অনেকগুলো প্রতিবেদনের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া ছবিতে হামলাস্থলে মার্কিন অস্ত্রের টুকরোও দেখা গেছে। গাজা, পশ্চিম তীর, লেবানসহ বিভিন্ন স্থানে ইসরাইলি গণহত্যার পুরোটা সময়জুড়ে যুক্তরাষ্ট্র বারংবার তেল আবিবকে অস্ত্র সহায়তা দিয়ে গেছে এবং তা করতে গিয়ে মার্কিন কর্মকর্তারা মাসের পর মাস ধরে নিজস্ব বিধিবিধানকেই উপেক্ষা করেছে। আর এভাবে বাইডেন সরকার ইসরাইলি গণহত্যায় প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মদদ দিয়ে গেছে।
সিভিলিয়ান হার্ম ইন্সিডেন্ট রেসপন্স গাইডেন্স পদ্ধতি অনুযায়ী, বেসামরিক হত্যায় মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ পেলে তার তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু দুই-তৃতীয়াংশ মামলাই অমীমাংসিত রয়ে গেছে। ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, ইসরাইল সরকার এমন বহু প্রশ্নের জবাব বা প্রতিক্রিয়া জানায়নি যেসব মামলার প্রত্যেকটির পরিস্থিতি যাচাইয়ের নির্দেশনা রয়েছে স্টেট ডিপার্টমেন্টের। কিন্তু সময় থাকা সত্ত্বেও মার্কিন কর্তৃপক্ষ কোনো মামলাই চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে পারেনি। অথচ সেখানে পদক্ষেপ (অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ) নেওয়ার দরকার ছিল।
ইসরাইলি সেনাদের হাতে হিন্দ রজব নামে ৬ বছরের এক আহত শিশু ও তাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে যাওয়া এক প্যারামেডিক হত্যার ঘটনায় জনরোষের সৃষ্টি হলেও ইসরাইলের ওপরই ভরসা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া গত জুলাইয়ে গাজার আল-মাওয়াসিতে ঘোষিত নিরাপদ অঞ্চলের বেসামরিক এলকায় ইসরাইলের দুই হালি ২ হাজার পাউন্ডের বোমাবর্ষণে ৯০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পরও টনক নড়েনি বাইডেন সরকারের।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো, গাজার কর্মকর্তারা এবং অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা (স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজনসহ) বারবার বলে আসছে যে, গাজায় গণহত্যা চালাতে ইসরাইলি বাহিনী ব্যাপকভাবে মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করছে। এমনকি বিশেষজ্ঞরা এও বলছেন যে, মার্কিন অস্ত্র এবং সহাংতা ছাড়া ইসরাইলের পক্ষে এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালানোই সম্ভব হতো না।
ওয়াশিংটন পোস্টের এই প্রতিবেদনই প্রমাণ দেয় যে, বাইডেন প্রশাসন উদ্দেশ্যমূলকভাবেই কেবল ইসরাইলকে সহায়তা করার জন্য দেশীয় আইনকে পাশ কাটিয়ে গেছে। গত মাসেও প্রোপাবলিকা এক তদন্তে জানতে পারে যে, ইসরাইলের মানবিক সহায়তার ওপর অবরোধ ও আক্রমণ ঠেকাতে দুই মার্কিন সংস্থা বাইডেন সরকারকে ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ ও সহায়তা বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু স্টেট সেক্রেটারি অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এ নিয়ে কংগ্রেসে মিথ্যাচার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, রাফায় হামলা চালানোর সময় ইসরাইল যে ধরনের স্বল্পমাত্রার অবরোধ আরোপ করেছিল এবারও তাই করছে তারা। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেখানকার বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তার সে মিথ্যাকে উন্মোচিত করেছে। মানবিক সহায়তায় ইসরাইলি অবরোধের কারণে গাজা ধুঁকছে রোগ আর অপুষ্টিতে।