ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫ Logo চুলের রহস্য ফাঁস করলেন ক্যাটরিনা Logo গুমের ঘটনায় ভারতের সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে কমিশন Logo ১২ ম্যাচে নবম হার ম্যানসিটির, আর্সেনালের বড় জয় Logo নারায়নগঞ্জ ক্লাবের নির্বাচনে সভাপতি পদে জয়ী হলেন- মোঃ সোলায়মান Logo ডোপ টেস্টে চালকসহ দুইজনের মদপানের সত্যতা মিলেছে Logo জিয়াউর রহমানকে ‘খুনি-রাজাকার’ বলায় যুবলীগ নেতার বাড়িতে হামলা Logo ৩০ ডিসেম্বর চুনকা পাঠাগারে আন্তর্জাতিক লেখক দিবস উদযাপন করবে বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব নারায়ণগঞ্জ Logo মদনগঞ্জ দারুস সালাম মাদরাসা’র বার্ষিক ফলাফল প্রকাশ, পুরস্কার বিতরণ ও দোয়ার অনুষ্ঠান Logo উত্তর ভারতের প্রেক্ষাগৃহ থেকে নামানো হচ্ছে ‘পুষ্পা-২’

আজকালের মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা হবে: হাসনাত

রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের অপসারণের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র-জনতা। পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলে শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৫ জন আহন হয়েছেন। বিক্ষোভ চলাকালে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বঙ্গভবনের সামনে হাজির হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বুধবার ও বৃহস্পতিবারের আমরা মোঃ সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ করাবো। রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শের ভিত্তিতে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মঙ্গলবার রাত সোয়া ১২টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছিল।

রাত ১১টা ২০ মিনিটে বঙ্গভবনের সামনে আসেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। এ সময় হাসনাত বলেন, আমরা যদি পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবে তা নির্ধারণ না করে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করি তাহলে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাবে। শুধু তাই নয়, আমাদের দেশে রাষ্ট্রপতি নেই এটা নিয়ে তারা যেকোন সময় আমাদের উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে। তাই ১৫ বছর ধরে নির্যাতিত রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শের ভিত্তিতে আমরা রাষ্ট্রপতি নির্ধারণ করবো।

১১টা ৪৫ মিনিটে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা চলে যান। পরে আস্তে আস্তে বঙ্গভবনের সামনের অবস্থানকারী আন্দোলনকারীদের সংখ্যা কমতে থাকে।

এর আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ব্যারিকেড ভেঙে বঙ্গভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে বিক্ষোভকারীদের৷ পুলিশ লাঠিপেটা ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের বিরুদ্ধে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকে তারা৷ এক পর্যায়ে পুলিশের জলকামান লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাতে যায় কিছু বিক্ষোভকারী। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশ জলকামান নিয়ে বঙ্গভবন এলাকা ত্যাগ করে। ক্রমেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। বিক্ষুব্ধরা সড়কের এক পাশ আটকে দেয়। টায়ার জ্বালিয়ে দেয়৷ পুলিশ বড় ধরনের বল প্রয়োগে যায়নি৷ পরে তারা বেষ্টনীর ভেতরে চলে যায়৷ এরপর উত্তেজনা কিছু প্রশমিত হয়।

টিয়ারশেলের আঘাতে দুই শিক্ষার্থীসহ ৫ জন আহত হন। ঢাকা মেডিকেলে তারা চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতরা হলেন, শ্যামপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বিশাল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আরিফ খান এবং ফুটপাতের দোকানি শফিকুল ইসলাম সেলিম।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, আঘাত গুরুতর নয়। তাদেরকে জরুরি বিভাগে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে।

বিকেল থেকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় বঙ্গভবনের সামনে জড়ো ছাত্রজনতা মোঃ শাহাবুদ্দিনের অপসারণের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। খণ্ড খণ্ড মিছিল-স্লোগান নিয়ে ছাত্র-জনতা জড়ো হতে থাকে৷ সন্ধ্যার পর জমায়েত বাড়ে৷ তারা শেখ হাসিনার মতো একই পরিনতি চায় মোঃ শাহাবুদ্দিনের৷
আন্দোলনকারীরা বলেন, সাবেক পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রকৃত সহযোদ্ধা ছিলেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার কথামতো তিনি কাজ করেছেন৷ জুলাই আগস্টের গণ আন্দোলনে ছাত্র-জনতার পক্ষে একটি বাক্যও বলেননি। তিনি চুপচাপ নীরব ফ্যাসিস্টের ভূমিকায় ছিলেন। এখন আবারও শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার পায়তারা করছেন। পদত্যাগপত্র নিয়ে নানা হাস্যকর কাহিনী ছড়াচ্ছেন। এ কারণেই রাষ্ট্রপতির অপসারণ জরুরি।

সরেজমিনে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সামনে দেখা যায়, সেনাবাহিনী পুলিশ ও র‍্যাবের তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়া হয় বঙ্গভবনের প্রবেশমুখে। বেষ্টনীর পাশেই দাঁড়িয়ে স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা। তারা বেশিরভাগ বয়সে তরুণ। ঢাকার স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তারা ইনকিলাব মঞ্চ, ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র-জনতা মঞ্চ, গণ অধিকার পরিষদসহ (ফারুক) বেশ কয়েকটি ব্যানারে জমায়েত হয়। এই বিক্ষোভে প্রথম দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্র সমন্বয়কদের কাউকে দেখা যায়নি৷

রাত ৮টার দিকে পুলিশ একটি সাউণ্ড গ্রেনেড ছুড়লে উত্তেজিত হয়ে পড়ে বিক্ষোভকারীরা৷ তাদের কয়েকজন আহত হয়। তাদের আঘাত গুরুতর ছিল না।

রামপুরার ইমপেরিয়াল কলেজের চার শিক্ষার্থী একসঙ্গে যোগ দেন এই বিক্ষোভে। রাষ্ট্রপতির ওপর সমালোচনা করে তারা বলেন, পদত্যাগের ইস্যুটি উনি হঠাৎ কেন সামনে আনলেন? এখানে নিশ্চয়ই ভিন্ন মতলব আছে। দেশকে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ঠেলে দেওয়ার চক্রান্ত করছেন তিনি। আমরা তাকে এই পদে আর চাই না। আমরা তার অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব৷

জুলাই আগস্টের আন্দোলনে আহত কয়েকজন শিক্ষার্থী যোগ দেয় এই বিক্ষোভে৷ তারা সড়কে বসে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে৷ তীব্র ক্ষোভ ঝেড়ে তারা বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতি আমাদেরকে একটিবারের জন্যও হাসপাতালে দেখতে যাননি। আমাদের কত ভাইবোন শহীদ হয়েছে৷ কতজনের রক্ত ঝরেছে। উনি একবারও সহমর্মিতা প্রকাশ করেননি৷ উলটো এখন পতিত সরকারের পক্ষে সাফাই গাইছেন৷ শেখ হাসিনার পক্ষে বলা মানে ভারতের দালালি করা। ভারতের প্রেসক্রিপশনে তিনি কথা বলছেন।

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে কয়েক শত বিক্ষোভকারীর কণ্ঠে নানা স্লোগান শোনা গেছে। আওয়ামী লীগের গুন্ডারা হুশিয়ার সাবধান, ভারতের দালালেরা হুশিয়ার সাবধান, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, চুপ্পু কেন গদিতে? আপোষ না সংগ্রাম, দিল্লি না ঢাকা….

ডিএমপির মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার হুসাইন মুহাম্মদ ফারাবী বলেন, বিক্ষোভকারীরা বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে বিপুল পরিমাণ পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, আমরা ৫ আগস্টে স্বাধীনতা অর্জন করেছি; এই স্বাধীনতা রক্ষা করতে আমরা এখনও রাজপথে আছি। স্বৈরাচার আমাদের এই স্বাধীনতাকে বিভিন্নভাবে কলুষিত করার জন্য পাঁয়তারা করে আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিব্রত করছে। এসবের মূল ইন্ধনদাতা খুনি হাসিনার অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত বর্তমান রাষ্ট্রপতি; যে কি না আমাদের রক্তের উপর বসে এখনো হোলি খেলছে। আমরা এটা আর হতে দিতে পারি না। তারা বলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ছাড়া কোনো সমাধান নেই৷ তাকেও কারাগারে যেতে হবে নইলে দেশ ছাড়তে হবে৷ তিনি ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন।

মানবজমিন পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’ এর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ‘উনি তো কিছুই বলে গেলেন না…’ পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর লেখা প্রকাশিত হয় ১৯ অক্টোবর।

সেখানে মানবজমিন সম্পাদক লিখেছেন, “প্রশ্ন উঠেছে প্রধানমন্ত্রী যদি পদত্যাগ করে থাকেন তাহলে সেটা গেল কোথায়? কারও কাছে এই প্রশ্নের জবাব নেই। ‘তিন সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান চালিয়েছি। খোঁজ নিয়েছি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও। যেখানটায় প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র থাকার কথা। কোথাও নেই।

শেষপর্যন্ত বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির মুখোমুখি হন মতিউর রহমান চৌধুরী। তিনি প্রশ্ন রাখেন, “আপনার কাছে কি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্রটা আছে?”

রাষ্ট্রপতি তাকে বলেন, “আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।”

গত ৫ অগাস্ট তুমুল গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন।

সেই রাতে তিন বাহিনীর প্রধানকে পেছনে দাঁড় করিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতিও বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। তিনি সেই পদত্যাগপত্র পেয়েছেন।

এর তিনদিন পর মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয় রাষ্ট্রপতির কাছেই।

এর আড়াই মাস পর শেখ হাসিনার পদত্যাগ বিষয়ে নতুন বিতর্ক উঠেছে, যদিও বঙ্গভবন থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে একে ‘মীমাংসিত ঘটনা’ উল্লেখ করে বিতর্ক না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তার বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি ‘অসত্য’ বক্তব্য দিয়ে শপথ ভঙ্গ করেছেন। তাকে অপসারণ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন।

মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সংবাদ সম্মেলনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছে, আইন উপদেষ্টার বক্তব্য সমর্থন করে সরকার। তবে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫

আজকালের মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা হবে: হাসনাত

আপডেট সময় ০৯:৪০:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের অপসারণের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র-জনতা। পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলে শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৫ জন আহন হয়েছেন। বিক্ষোভ চলাকালে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বঙ্গভবনের সামনে হাজির হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বুধবার ও বৃহস্পতিবারের আমরা মোঃ সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ করাবো। রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শের ভিত্তিতে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মঙ্গলবার রাত সোয়া ১২টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছিল।

রাত ১১টা ২০ মিনিটে বঙ্গভবনের সামনে আসেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। এ সময় হাসনাত বলেন, আমরা যদি পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হবে তা নির্ধারণ না করে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করি তাহলে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাবে। শুধু তাই নয়, আমাদের দেশে রাষ্ট্রপতি নেই এটা নিয়ে তারা যেকোন সময় আমাদের উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে। তাই ১৫ বছর ধরে নির্যাতিত রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শের ভিত্তিতে আমরা রাষ্ট্রপতি নির্ধারণ করবো।

১১টা ৪৫ মিনিটে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা চলে যান। পরে আস্তে আস্তে বঙ্গভবনের সামনের অবস্থানকারী আন্দোলনকারীদের সংখ্যা কমতে থাকে।

এর আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ব্যারিকেড ভেঙে বঙ্গভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে বিক্ষোভকারীদের৷ পুলিশ লাঠিপেটা ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশের বিরুদ্ধে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিতে থাকে তারা৷ এক পর্যায়ে পুলিশের জলকামান লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাতে যায় কিছু বিক্ষোভকারী। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশ জলকামান নিয়ে বঙ্গভবন এলাকা ত্যাগ করে। ক্রমেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। বিক্ষুব্ধরা সড়কের এক পাশ আটকে দেয়। টায়ার জ্বালিয়ে দেয়৷ পুলিশ বড় ধরনের বল প্রয়োগে যায়নি৷ পরে তারা বেষ্টনীর ভেতরে চলে যায়৷ এরপর উত্তেজনা কিছু প্রশমিত হয়।

টিয়ারশেলের আঘাতে দুই শিক্ষার্থীসহ ৫ জন আহত হন। ঢাকা মেডিকেলে তারা চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতরা হলেন, শ্যামপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বিশাল, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী আরিফ খান এবং ফুটপাতের দোকানি শফিকুল ইসলাম সেলিম।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, আঘাত গুরুতর নয়। তাদেরকে জরুরি বিভাগে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে।

বিকেল থেকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয় বঙ্গভবনের সামনে জড়ো ছাত্রজনতা মোঃ শাহাবুদ্দিনের অপসারণের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। খণ্ড খণ্ড মিছিল-স্লোগান নিয়ে ছাত্র-জনতা জড়ো হতে থাকে৷ সন্ধ্যার পর জমায়েত বাড়ে৷ তারা শেখ হাসিনার মতো একই পরিনতি চায় মোঃ শাহাবুদ্দিনের৷
আন্দোলনকারীরা বলেন, সাবেক পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রকৃত সহযোদ্ধা ছিলেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার কথামতো তিনি কাজ করেছেন৷ জুলাই আগস্টের গণ আন্দোলনে ছাত্র-জনতার পক্ষে একটি বাক্যও বলেননি। তিনি চুপচাপ নীরব ফ্যাসিস্টের ভূমিকায় ছিলেন। এখন আবারও শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার পায়তারা করছেন। পদত্যাগপত্র নিয়ে নানা হাস্যকর কাহিনী ছড়াচ্ছেন। এ কারণেই রাষ্ট্রপতির অপসারণ জরুরি।

সরেজমিনে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সামনে দেখা যায়, সেনাবাহিনী পুলিশ ও র‍্যাবের তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়া হয় বঙ্গভবনের প্রবেশমুখে। বেষ্টনীর পাশেই দাঁড়িয়ে স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা। তারা বেশিরভাগ বয়সে তরুণ। ঢাকার স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তারা ইনকিলাব মঞ্চ, ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র-জনতা মঞ্চ, গণ অধিকার পরিষদসহ (ফারুক) বেশ কয়েকটি ব্যানারে জমায়েত হয়। এই বিক্ষোভে প্রথম দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্র সমন্বয়কদের কাউকে দেখা যায়নি৷

রাত ৮টার দিকে পুলিশ একটি সাউণ্ড গ্রেনেড ছুড়লে উত্তেজিত হয়ে পড়ে বিক্ষোভকারীরা৷ তাদের কয়েকজন আহত হয়। তাদের আঘাত গুরুতর ছিল না।

রামপুরার ইমপেরিয়াল কলেজের চার শিক্ষার্থী একসঙ্গে যোগ দেন এই বিক্ষোভে। রাষ্ট্রপতির ওপর সমালোচনা করে তারা বলেন, পদত্যাগের ইস্যুটি উনি হঠাৎ কেন সামনে আনলেন? এখানে নিশ্চয়ই ভিন্ন মতলব আছে। দেশকে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ঠেলে দেওয়ার চক্রান্ত করছেন তিনি। আমরা তাকে এই পদে আর চাই না। আমরা তার অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব৷

জুলাই আগস্টের আন্দোলনে আহত কয়েকজন শিক্ষার্থী যোগ দেয় এই বিক্ষোভে৷ তারা সড়কে বসে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে৷ তীব্র ক্ষোভ ঝেড়ে তারা বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতি আমাদেরকে একটিবারের জন্যও হাসপাতালে দেখতে যাননি। আমাদের কত ভাইবোন শহীদ হয়েছে৷ কতজনের রক্ত ঝরেছে। উনি একবারও সহমর্মিতা প্রকাশ করেননি৷ উলটো এখন পতিত সরকারের পক্ষে সাফাই গাইছেন৷ শেখ হাসিনার পক্ষে বলা মানে ভারতের দালালি করা। ভারতের প্রেসক্রিপশনে তিনি কথা বলছেন।

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে কয়েক শত বিক্ষোভকারীর কণ্ঠে নানা স্লোগান শোনা গেছে। আওয়ামী লীগের গুন্ডারা হুশিয়ার সাবধান, ভারতের দালালেরা হুশিয়ার সাবধান, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, চুপ্পু কেন গদিতে? আপোষ না সংগ্রাম, দিল্লি না ঢাকা….

ডিএমপির মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার হুসাইন মুহাম্মদ ফারাবী বলেন, বিক্ষোভকারীরা বঙ্গভবনের সামনে অবস্থান করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে বিপুল পরিমাণ পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, আমরা ৫ আগস্টে স্বাধীনতা অর্জন করেছি; এই স্বাধীনতা রক্ষা করতে আমরা এখনও রাজপথে আছি। স্বৈরাচার আমাদের এই স্বাধীনতাকে বিভিন্নভাবে কলুষিত করার জন্য পাঁয়তারা করে আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিব্রত করছে। এসবের মূল ইন্ধনদাতা খুনি হাসিনার অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত বর্তমান রাষ্ট্রপতি; যে কি না আমাদের রক্তের উপর বসে এখনো হোলি খেলছে। আমরা এটা আর হতে দিতে পারি না। তারা বলেন, রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ছাড়া কোনো সমাধান নেই৷ তাকেও কারাগারে যেতে হবে নইলে দেশ ছাড়তে হবে৷ তিনি ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন।

মানবজমিন পত্রিকার রাজনৈতিক ম্যাগাজিন ‘জনতার চোখ’ এর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ‘উনি তো কিছুই বলে গেলেন না…’ পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর লেখা প্রকাশিত হয় ১৯ অক্টোবর।

সেখানে মানবজমিন সম্পাদক লিখেছেন, “প্রশ্ন উঠেছে প্রধানমন্ত্রী যদি পদত্যাগ করে থাকেন তাহলে সেটা গেল কোথায়? কারও কাছে এই প্রশ্নের জবাব নেই। ‘তিন সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান চালিয়েছি। খোঁজ নিয়েছি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেও। যেখানটায় প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র থাকার কথা। কোথাও নেই।

শেষপর্যন্ত বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির মুখোমুখি হন মতিউর রহমান চৌধুরী। তিনি প্রশ্ন রাখেন, “আপনার কাছে কি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্রটা আছে?”

রাষ্ট্রপতি তাকে বলেন, “আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।”

গত ৫ অগাস্ট তুমুল গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন।

সেই রাতে তিন বাহিনীর প্রধানকে পেছনে দাঁড় করিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণে রাষ্ট্রপতিও বলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। তিনি সেই পদত্যাগপত্র পেয়েছেন।

এর তিনদিন পর মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয় রাষ্ট্রপতির কাছেই।

এর আড়াই মাস পর শেখ হাসিনার পদত্যাগ বিষয়ে নতুন বিতর্ক উঠেছে, যদিও বঙ্গভবন থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে একে ‘মীমাংসিত ঘটনা’ উল্লেখ করে বিতর্ক না করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তার বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি ‘অসত্য’ বক্তব্য দিয়ে শপথ ভঙ্গ করেছেন। তাকে অপসারণ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন।

মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সংবাদ সম্মেলনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছে, আইন উপদেষ্টার বক্তব্য সমর্থন করে সরকার। তবে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।