ঢাকা , শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কারসাজিতে মুনাফা ১৬ কোটি টাকা!

এই সময়ে পেঁয়াজের দাম কোনোভাবেই প্রতি কেজি ৪৫ টাকার বেশি হওয়া উচিৎ নয়, কয়েকদিন আগে এমন মন্তব্য করেছিলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। কৃষিমন্ত্রীর এই মন্তব্যের কয়েক দিনের মধ্যেই গত ৪ জুন কারসাজি করে হঠাৎ করেই মাত্র একদিনের ব্যবধানে খুঁচরা বাজারে ২৫ টাকা বেড়ে সেঞ্চুরি হাকায় পেঁয়াজের দাম। ওই এক দিনেই সিন্ডিকেট করে গ্রাহকের পকেট থেকে ১৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নেন ব্যবসায়ীরা।

সূত্র মতে, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন। এক মাসের চাহিদা ২ লাখ টন। আর এক দিনের চাহিদা ৬ হাজার ৬৬৬ টন বা ৬৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৬ কেজি। কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চলতি বছরের ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজের আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) অর্থাৎ আমদানি অনুমতি বন্ধ করে দেয় সরকার। ফলে পর দিন ১৬ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে থাকে এই পণ্যটির। গত ৪ জুন হঠাৎ করেই মাত্র একদিনের ব্যবধানে খুঁচরা বাজারে ২৫ টাকা বেড়ে সেঞ্চুরি হাকায় পেঁয়াজের দাম। এর ফলে সিন্ডিকেট করে গ্রাহকের পকেট থেকে একদিনেই ১৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নেন ব্যবসায়ীরা। এরপরেই টনক নড়ে সরকারের। আমদানি ঘোষণার পর গত দুই দিনে পণ্যটির দাম পাইকারি ও খুচরা বাজারে ম্যাজিকের মতো কমে যায়। গত সোমবার কৃষি মন্ত্রণালয় ২১০টি আমদানির অনুমতি বা আইপি অনুমোদন করেছে, যার মাধ্যমে ৪ লাখ ৩৩ হাজার টন পেঁয়াজ আসার কথা রয়েছে। এরপর থেকেই বেনাপোল, হিলি ও ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে ট্রাকে ট্রাকে পেঁয়াজ ঢোকাও শুরু হয়েছে।

কৃষি বিভাগের দাবি, দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত থাকায় এবং কৃষকদের কথা ভেবে গত ১৫ মার্চ থেকে সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দেয়। ফলে পর দিন ১৬ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এই সুযোগকে কাজে লাগায় মজুতকারী সিন্ডিকেট। হু হু করে বাড়তে বাড়তে মসলাজাতীয় পণ্যটির দাম ভোক্তাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। সরকার পেঁয়াজের বাজার মনিটরিং করেও তা রুখতে পারেনি। এরপর গত ৪ জুন হঠাৎ করেই সেঞ্চুরি হাকায় পেঁয়াজ। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলে এতদিন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি কৃষি মন্ত্রণালয় না দিলেও পরিস্থিতি দেখে গত রবিবার সায় দেয়। গত সোমবার কৃষি মন্ত্রণালয় ২১০টি আমদানির অনুমতি বা আইপি অনুমোদন করেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত দুই ২ দিনে ৪ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ১ হাজার ২৮৮ মেট্রিক টন আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে এসেছে।

জানা গেছে, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির প্রথম দিন গত সোমবার দেশের তিনটি স্থলবন্দর দিয়ে ১ হাজার ৪০৭ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এসব পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে গড়ে প্রায় সাড়ে ১৫ টাকায়। নয়জন ব্যবসায়ী প্রথম দিন এসব পেঁয়াজ আমদানি করেছেন। মঙ্গলবারও স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির খবর পাওয়া গেছে। প্রথম দিন তিনটি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হয়। এই তিনটি বন্দর হলো দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর। তিন স্থলবন্দরের কাস্টমস স্টেশনের তথ্যে দেখা যায়, প্রতি চালানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১৩ থেকে ১৬ সেন্টে। ডলারের বিনিময়মূল্য ১০৮ টাকা ১৭ পয়সা ধরে মানভেদে আমদানিমূল্য দাঁড়ায় ১৪ থেকে ১৭ টাকা ৩০ পয়সা। গড়ে দাম পড়ে কেজি প্রতি প্রায় সাড়ে ১৫ টাকা। প্রতি কেজিতে করভার গড়ে সাড়ে ৩ টাকা। এ হিসাবে শুল্ক-করসহ পেঁয়াজ আমদানিতে খরচ পড়ে প্রায় ১৯ টাকা। জানতে চাইলে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি ও খান ট্রেডার্সের কর্ণধার হারুন-উর রশীদ বলেন, গরমের কারণে পেঁয়াজ নষ্ট হচ্ছে বেশি। সবকিছু ধরেও প্রতি কেজি ২৫-৩০ টাকার কাছাকাছি খরচ পড়তে পারে। ভোক্তা পর্যায়ে এই পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। আমদানি করা পেঁয়াজ এখনো খুচরা বাজারে সেভাবে বাজারজাত হয়নি। পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি প্রাপ্তির দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার বিকাল ৪ টা পর্যন্ত সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ২৭ টি ট্রাকে ৯২০ টন ভারতীয় পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, প্রতি টন পেঁয়াজ ২২০ মার্কিন ডলার থেকে ২৫০ মার্কিন ডলারে আমদানি করা হচ্ছে। এভাবে কয়েক চালান পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করলে খোলা বাজারে পেঁয়াজের মুল্য ৩০-৩৫ টাকার ভিতর থাকবে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

রাজধানীর পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আবদুল মাজেদ বলেন, মঙ্গলবার পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০ টাকা করে কমে গেছে। প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ। দেশের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার সকালে খাতুনগঞ্জে ঘুরে মানভেদে পেয়াঁজ কেজিতে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইদ্রিসবলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ এখনো খাতুনগঞ্জে বাজারজাত শুরু হয়নি। তবে আমদানির প্রভাবে দেশীয় পেঁয়াজের দাম ৮০-৮৫ থেকে কমে এখন ৫০-৬০ টাকায় নেমে এসেছে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচা বাজারে মঙ্গলবার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল প্রতি কেজি ৯০ টাকা দরে। বিক্রেতা বিসমিল্লাহ স্টোরের সুমন বলেন, গত সোমবার পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়। সেগুনবাগিচা থেকে রামপুরা ও খিলগাঁও বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও ৫ টাকা কমে বিক্রি হতে দেখা গেছে। সেখানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। রামপুরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রেতা এনামুল হক বলেন, আগে কেনা পেঁয়াজ এখনো বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ পেঁয়াজগুলো শনিবারে ৯২ টাকায় কেনা। কিন্তু এখন পাইকারি বাজারে দাম কম। সে কারণে বাধ্য হয়ে লোকসান দিতে হচ্ছে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার মসলাজাতীয় পণ্যের পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র শ্যামবাজারের সোমবার একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিপ্রতি ২৫ টাকা। সেখানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়, যা রোববার ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। তবে মঙ্গলবার আর দাম খুব একটা কমেনি। তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পেঁয়াজ আমদানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে প্রচুর পেঁয়াজ আসছে। কাল-পরশুর মধ্যে এ পেঁয়াজগুলো পাইকারি বাজারে এসে পৌঁছাবে। তখন দাম আরেক দফা কমবে। শ্যামবাজারের বিক্রমপুর হাউসের খোকন ইসলাম বলেন, একদিনে পেঁয়াজের দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় নেমে এসেছে। মঙ্গলবার আর কমেনি। তবে ভারতের পেঁয়াজ বাজারে ডুকলে আরও দাম কমতে পারে।

এদিকে শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শুধু পাইকারি বাজারে নয়, আমদানির খবরে দেশের গ্রামাঞ্চলের মোকামও পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। শ্যামবাজারে পেঁয়াজের দামে সাধারণত দ্রুত ওঠানামা হয়। অন্য পাইকারি বাজারে প্রভাব পড়ে একটু দেরিতে। খুচরা বাজারে এর প্রভাবে থাকে দীর্ঘসূত্রতা। বিক্রেতারা বেশি দামে কেনা পণ্য পাইকারিতে কমলেও দাম কমাতে চান না। যদিও কোনো পণ্যের দাম বাড়ার খবরের সঙ্গে সঙ্গে তারা দাম বাড়িয়ে দেন।

কারওয়ান বাজারের আড়তে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দেখা যায়, কোনো কোনো দোকানে পাঁচ কেজি কেনার ক্ষেত্রে কেজিপ্রতি দর ৮০ টাকা, কোথাও ৭৮ টাকা। আবার সেই পেঁয়াজ কারওয়ান বাজারের পাশে মুদি দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। জানতে চাইলে হাতিরপুল এলাকার মুদি দোকানি সোহাগ মিয়া বলেন, পেঁয়াজের দাম কমেছে জানি, কিন্তু এগুলো আরও বেশি দামে কেনা ছিল। তারপরও কিছুটা লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। দামের এত হেরফের কেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজার যখন অস্থির হয়, তখন এ অবস্থা হয়। আরও দাম বাড়বে এ শঙ্কায় অনেক বেশি দাম দিয়ে পেঁয়াজ নিয়ে এসেছে খুচরা বিক্রেতারা। আর পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ আসবে বলে কেউ কেউ কম দামে ছেড়ে দিচ্ছেন। তারা প্রতিদিন ক্রয়-বিক্রয় করেন। তারা দিনের দাম দিনে নির্ধারণ করতে পারেন। কিন্তু আমাদের কয়েকদিনের পেঁয়াজ একসঙ্গে কেনা। হুট করে দাম কমালে লোকসান হয়।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

কারসাজিতে মুনাফা ১৬ কোটি টাকা!

আপডেট সময় ০৩:৪৭:৫১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ জুন ২০২৩

এই সময়ে পেঁয়াজের দাম কোনোভাবেই প্রতি কেজি ৪৫ টাকার বেশি হওয়া উচিৎ নয়, কয়েকদিন আগে এমন মন্তব্য করেছিলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। কৃষিমন্ত্রীর এই মন্তব্যের কয়েক দিনের মধ্যেই গত ৪ জুন কারসাজি করে হঠাৎ করেই মাত্র একদিনের ব্যবধানে খুঁচরা বাজারে ২৫ টাকা বেড়ে সেঞ্চুরি হাকায় পেঁয়াজের দাম। ওই এক দিনেই সিন্ডিকেট করে গ্রাহকের পকেট থেকে ১৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নেন ব্যবসায়ীরা।

সূত্র মতে, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ লাখ টন। এক মাসের চাহিদা ২ লাখ টন। আর এক দিনের চাহিদা ৬ হাজার ৬৬৬ টন বা ৬৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৬ কেজি। কৃষকের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চলতি বছরের ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজের আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) অর্থাৎ আমদানি অনুমতি বন্ধ করে দেয় সরকার। ফলে পর দিন ১৬ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে থাকে এই পণ্যটির। গত ৪ জুন হঠাৎ করেই মাত্র একদিনের ব্যবধানে খুঁচরা বাজারে ২৫ টাকা বেড়ে সেঞ্চুরি হাকায় পেঁয়াজের দাম। এর ফলে সিন্ডিকেট করে গ্রাহকের পকেট থেকে একদিনেই ১৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নেন ব্যবসায়ীরা। এরপরেই টনক নড়ে সরকারের। আমদানি ঘোষণার পর গত দুই দিনে পণ্যটির দাম পাইকারি ও খুচরা বাজারে ম্যাজিকের মতো কমে যায়। গত সোমবার কৃষি মন্ত্রণালয় ২১০টি আমদানির অনুমতি বা আইপি অনুমোদন করেছে, যার মাধ্যমে ৪ লাখ ৩৩ হাজার টন পেঁয়াজ আসার কথা রয়েছে। এরপর থেকেই বেনাপোল, হিলি ও ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে ট্রাকে ট্রাকে পেঁয়াজ ঢোকাও শুরু হয়েছে।

কৃষি বিভাগের দাবি, দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত থাকায় এবং কৃষকদের কথা ভেবে গত ১৫ মার্চ থেকে সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দেয়। ফলে পর দিন ১৬ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এই সুযোগকে কাজে লাগায় মজুতকারী সিন্ডিকেট। হু হু করে বাড়তে বাড়তে মসলাজাতীয় পণ্যটির দাম ভোক্তাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। সরকার পেঁয়াজের বাজার মনিটরিং করেও তা রুখতে পারেনি। এরপর গত ৪ জুন হঠাৎ করেই সেঞ্চুরি হাকায় পেঁয়াজ। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলে এতদিন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি কৃষি মন্ত্রণালয় না দিলেও পরিস্থিতি দেখে গত রবিবার সায় দেয়। গত সোমবার কৃষি মন্ত্রণালয় ২১০টি আমদানির অনুমতি বা আইপি অনুমোদন করেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত দুই ২ দিনে ৪ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ১ হাজার ২৮৮ মেট্রিক টন আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে এসেছে।

জানা গেছে, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির প্রথম দিন গত সোমবার দেশের তিনটি স্থলবন্দর দিয়ে ১ হাজার ৪০৭ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এসব পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে গড়ে প্রায় সাড়ে ১৫ টাকায়। নয়জন ব্যবসায়ী প্রথম দিন এসব পেঁয়াজ আমদানি করেছেন। মঙ্গলবারও স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানির খবর পাওয়া গেছে। প্রথম দিন তিনটি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হয়। এই তিনটি বন্দর হলো দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর। তিন স্থলবন্দরের কাস্টমস স্টেশনের তথ্যে দেখা যায়, প্রতি চালানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১৩ থেকে ১৬ সেন্টে। ডলারের বিনিময়মূল্য ১০৮ টাকা ১৭ পয়সা ধরে মানভেদে আমদানিমূল্য দাঁড়ায় ১৪ থেকে ১৭ টাকা ৩০ পয়সা। গড়ে দাম পড়ে কেজি প্রতি প্রায় সাড়ে ১৫ টাকা। প্রতি কেজিতে করভার গড়ে সাড়ে ৩ টাকা। এ হিসাবে শুল্ক-করসহ পেঁয়াজ আমদানিতে খরচ পড়ে প্রায় ১৯ টাকা। জানতে চাইলে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি ও খান ট্রেডার্সের কর্ণধার হারুন-উর রশীদ বলেন, গরমের কারণে পেঁয়াজ নষ্ট হচ্ছে বেশি। সবকিছু ধরেও প্রতি কেজি ২৫-৩০ টাকার কাছাকাছি খরচ পড়তে পারে। ভোক্তা পর্যায়ে এই পেঁয়াজের দাম ৪০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। আমদানি করা পেঁয়াজ এখনো খুচরা বাজারে সেভাবে বাজারজাত হয়নি। পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি প্রাপ্তির দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার বিকাল ৪ টা পর্যন্ত সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ২৭ টি ট্রাকে ৯২০ টন ভারতীয় পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, প্রতি টন পেঁয়াজ ২২০ মার্কিন ডলার থেকে ২৫০ মার্কিন ডলারে আমদানি করা হচ্ছে। এভাবে কয়েক চালান পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করলে খোলা বাজারে পেঁয়াজের মুল্য ৩০-৩৫ টাকার ভিতর থাকবে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

রাজধানীর পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আবদুল মাজেদ বলেন, মঙ্গলবার পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০ টাকা করে কমে গেছে। প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ। দেশের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার সকালে খাতুনগঞ্জে ঘুরে মানভেদে পেয়াঁজ কেজিতে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইদ্রিসবলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ এখনো খাতুনগঞ্জে বাজারজাত শুরু হয়নি। তবে আমদানির প্রভাবে দেশীয় পেঁয়াজের দাম ৮০-৮৫ থেকে কমে এখন ৫০-৬০ টাকায় নেমে এসেছে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচা বাজারে মঙ্গলবার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল প্রতি কেজি ৯০ টাকা দরে। বিক্রেতা বিসমিল্লাহ স্টোরের সুমন বলেন, গত সোমবার পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়। সেগুনবাগিচা থেকে রামপুরা ও খিলগাঁও বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও ৫ টাকা কমে বিক্রি হতে দেখা গেছে। সেখানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। রামপুরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রেতা এনামুল হক বলেন, আগে কেনা পেঁয়াজ এখনো বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ পেঁয়াজগুলো শনিবারে ৯২ টাকায় কেনা। কিন্তু এখন পাইকারি বাজারে দাম কম। সে কারণে বাধ্য হয়ে লোকসান দিতে হচ্ছে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার মসলাজাতীয় পণ্যের পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র শ্যামবাজারের সোমবার একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিপ্রতি ২৫ টাকা। সেখানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়, যা রোববার ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। তবে মঙ্গলবার আর দাম খুব একটা কমেনি। তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পেঁয়াজ আমদানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে প্রচুর পেঁয়াজ আসছে। কাল-পরশুর মধ্যে এ পেঁয়াজগুলো পাইকারি বাজারে এসে পৌঁছাবে। তখন দাম আরেক দফা কমবে। শ্যামবাজারের বিক্রমপুর হাউসের খোকন ইসলাম বলেন, একদিনে পেঁয়াজের দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় নেমে এসেছে। মঙ্গলবার আর কমেনি। তবে ভারতের পেঁয়াজ বাজারে ডুকলে আরও দাম কমতে পারে।

এদিকে শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শুধু পাইকারি বাজারে নয়, আমদানির খবরে দেশের গ্রামাঞ্চলের মোকামও পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। শ্যামবাজারে পেঁয়াজের দামে সাধারণত দ্রুত ওঠানামা হয়। অন্য পাইকারি বাজারে প্রভাব পড়ে একটু দেরিতে। খুচরা বাজারে এর প্রভাবে থাকে দীর্ঘসূত্রতা। বিক্রেতারা বেশি দামে কেনা পণ্য পাইকারিতে কমলেও দাম কমাতে চান না। যদিও কোনো পণ্যের দাম বাড়ার খবরের সঙ্গে সঙ্গে তারা দাম বাড়িয়ে দেন।

কারওয়ান বাজারের আড়তে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দেখা যায়, কোনো কোনো দোকানে পাঁচ কেজি কেনার ক্ষেত্রে কেজিপ্রতি দর ৮০ টাকা, কোথাও ৭৮ টাকা। আবার সেই পেঁয়াজ কারওয়ান বাজারের পাশে মুদি দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। জানতে চাইলে হাতিরপুল এলাকার মুদি দোকানি সোহাগ মিয়া বলেন, পেঁয়াজের দাম কমেছে জানি, কিন্তু এগুলো আরও বেশি দামে কেনা ছিল। তারপরও কিছুটা লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। দামের এত হেরফের কেন তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজার যখন অস্থির হয়, তখন এ অবস্থা হয়। আরও দাম বাড়বে এ শঙ্কায় অনেক বেশি দাম দিয়ে পেঁয়াজ নিয়ে এসেছে খুচরা বিক্রেতারা। আর পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ আসবে বলে কেউ কেউ কম দামে ছেড়ে দিচ্ছেন। তারা প্রতিদিন ক্রয়-বিক্রয় করেন। তারা দিনের দাম দিনে নির্ধারণ করতে পারেন। কিন্তু আমাদের কয়েকদিনের পেঁয়াজ একসঙ্গে কেনা। হুট করে দাম কমালে লোকসান হয়।