আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেশে থাকার কথা অন্তর্বর্তী সরকার জানত না বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘দেশে লুকিয়ে আছে জানলে, আমরা অবশ্যই তাকে (কাদের) ধরে ফেলতাম।’
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সেগুনবাগিচায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বিভাগীয় আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
এক সাংবাদিক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জানতে চেয়েছেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তিন মাস বাংলাদেশে লুকিয়ে থেকে কীভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘উনি কীভাবে জানলেন, তিন মাস লুকিয়ে ছিলেন। আমরা তো জানি না। আমরা যদি জানতাম ধরে ফেলতাম। ওই খবর যদি আমাদের দিতেন লুকিয়ে আছে, অবশ্যই ধরে ফেলতাম। আপনারা একটা উদাহরণ দেন যে কেউ লুকিয়ে আছে আমরা জেনেও তাকে ধরিনি। আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির জন্য নেওয়া উদ্যোগের অগ্রগতি জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ইন্টারপোলকে আমরা আবার রিমাইন্ডার দিয়েছি। আমরা সময়-সময় অবহিত করছি, তাড়াতাড়ি প্রকাশের জন্য।’
সারা দেশে ‘গায়েবি মামলা’ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে আশ্বস্ত করতে চাই, যারা দোষী নয়, তাদের কিছুই হবে না। ইতিমধ্যে বিজ্ঞপ্তি আকারে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনেকবার আলোচনা হয়েছে। নির্দোষ কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। হবেও না। তবে অন্য সন্দেহ থাকলে ভিন্ন কথা। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো আছে। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস নিয়ে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল। এই হবে, ওই হবে বলেছিল। কিন্তু দুটি দিবস ভালোভাবে শেষ হয়েছে। ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন ও ৩১ ডিসেম্বর থার্টি ফার্স্ট নাইটও ভালোভাবে শেষ হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশের মনোবলে আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাদের মনোবল বেড়েছে। একটা বড় ঘটনা ঘটার পর দুই দিনে পরিবর্তন আসবে না। একটা ঝড় হয়ে গেলে ঘরবাড়ি সংস্কারে সময় লাগে। আমাদের সময় দিতে হবে। আপনারা (গণমাধ্যমকর্মী) অধৈর্য হয়ে যাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।
অনেক পুলিশ কাজে যোগ দিয়েও মামলার আসামি হওয়ার কারণে পালিয়ে গেছেন, সাংবাদিকের এমন বক্তব্যের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘কাজে যোগ দেওয়ার পর পুলিশ পালিয়ে গেছে, এমন সংবাদ নেই। তারা কাজেই যোগ দেয়নি। আগের সরকারের প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়স্বজন ১৬ জন সংসদ সদস্য ছিল। সবাইকে তিনি আগে ভাগিয়ে দিয়েছেন। এখানেও এমন কিছু ঘটেছে। যেসব পুলিশ সদস্য পালিয়ে আছে, তারা অপরাধী। তাদের যেখানেই পাওয়া যাবে, ধরা হবে। কেউ খবর দিতে পারলে অপরাধীদের ধরা হবে।’
গাজীপুরে টঙ্গীর তুরাগ তীরে শুরু হতে যাওয়া আসন্ন বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে আজকের আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে দীর্ঘ সময় আলোচনা হয়েছে। ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাস্তায় চাঁদাবাজি প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ সভায়।