ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্প পুনর্বিবেচনা করা হবে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্প পুনর্বিবেচনা করা হবে। এখন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বেশি নজর দিতে হবে। দায়িত্ব গ্রহণের পর বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) প্রথম সভায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন তিনি।

বুধবার প্রথমবারের মতো রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে বেলা ৩টায় শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। রীতি অনুযায়ী সবসময় একনেক সভা পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হলেও এবার তা পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।

সরকারপ্রধান বলেন, এখন থেকে প্রকল্পের সব তথ্য ওপেন থাকবে। মেগা প্রকল্প না নিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রকল্প নেওয়ার বিষয়ে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যরা এক হয়েছেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্পে চিন্তা দরকার। মেগা প্রকল্পও বাদ দিতে হবে। নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রকল্পের সবকিছু ওপেন থাকবে। শুধু পিডি জানবে তা নয়, সবাই জানবে। সামনে বড় প্রকল্প নয়, জনগুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রকল্প নেওয়া হবে।

পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দাতাগোষ্ঠী হাত খুলে টাকা দিতে চাচ্ছে। ইউএসএইড বলছে, তোমরা প্রকল্প তৈরি করো আমরা টাকা দেব। যেসব প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল কিন্তু টাকা নেওয়া হয়নি এসব টাকা বাজেট সহায়তা দিতে চায় বিশ্বব্যাংক। সব দাতাগোষ্ঠী আমাদের নতুন চাহিদা জানতে চেয়েছে। কিছু প্রকল্পে ত্বরান্বিত হবে যা বৈদেশিক সাহায্যের প্রকল্প। অনেক প্রকল্প হিমাগারে আছে, মৃত প্রকল্পে ছাড় করে দেবে বিশ্বব্যাংক। বৈদেশিক সাহায্যের প্রকল্প বেশি পাস করা হবে। পাইপলাইনে থাকা ডলার কাজে লাগাতে হবে।

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত থাকবে উল্লেখ করে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, এটি এক ধরনের রাজনৈতিক দলিল। রাজনৈতিক সরকার তাদের মতো করে পরিকল্পনা করবে, নীতিনির্ধারণ করবে। এতে রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা থাকে। আমরা বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেব না। তারা ক্ষমতায় এসে সিদ্ধান্ত নেবে। সে জন্য অর্থনীতির জন্য দিকনির্দেশনা ও অর্থায়ন নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। আপাতত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত থাকবে। কারণ, বিগত সরকার কখনোই এই পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করেনি। কাজেই পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এই মুহূর্তে দরকার নেই। চলমান প্রকল্পগুলো কোন পর্যায়ে রয়েছে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কাজেই আগের মতো একনেক সভা মানেই যেখানে অর্থ ব্যয়ের কর্মযজ্ঞ ছিল, এখন সে পরিধি কমে আসবে। নতুন করে রাজনৈতিক সরকার এলে তারা নতুন করে পরিকল্পনা করবে বলে জানান তিনি।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা ও অর্থায়নের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এই টাস্কফোর্স প্রতিবেদন দেবে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, বিদেশি অর্থায়ন পাওয়া যাবে এমন প্রকল্প গ্রহণে গুরুত্ব দেবে সরকার। বহু বছর আগের অনেক প্রকল্প পড়ে আছে। এগুলোতে বিদেশি সহযোগীদের নজরদারি বেশি থাকে। অনিয়ম করা যায় না। তাই ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ কম থাকে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে মিলে এমন কিছু নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, নিজেদের জন্য গ্যাসকূপ খনন না করে কেন বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির ব্যয়বহুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা বোধগম্য না। যেসব কূপ উন্নয়ন বা খননের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাও দেওয়া হয়েছে বিদেশি কোম্পানিকে। এসব ক্ষেত্রে কতটা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। নিজেদের গ্যাসের সম্ভাবনা থাকতে এলএনজি আমদানি ভ্রান্ত নীতি। এতদিন যে অর্থনীতি চালিয়ে এসেছি এলডিসি উত্তরণের পর দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করতে হবে। শিক্ষা প্রযুক্তিতে আরও প্রকল্প নিতে হবে। মানবসম্পদে অনেক পিছিয়ে আছি আমরা।

তিনি আরও বলেন, বড় প্রকল্পগুলোতে সময় কেন বাড়ানো হলো এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হলো সেগুলো যাচাই করা হবে। বর্তমান সরকার আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে চায়। একনেক সভায় সব মিলিয়ে চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে খরচ হবে ১ হাজার ২২২ কোটি টাকা।

ট্যাগস
জনপ্রিয় সংবাদ

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্প পুনর্বিবেচনা করা হবে

আপডেট সময় ০৮:০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্প পুনর্বিবেচনা করা হবে। এখন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বেশি নজর দিতে হবে। দায়িত্ব গ্রহণের পর বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) প্রথম সভায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন তিনি।

বুধবার প্রথমবারের মতো রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে বেলা ৩টায় শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। রীতি অনুযায়ী সবসময় একনেক সভা পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হলেও এবার তা পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।

সরকারপ্রধান বলেন, এখন থেকে প্রকল্পের সব তথ্য ওপেন থাকবে। মেগা প্রকল্প না নিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রকল্প নেওয়ার বিষয়ে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যরা এক হয়েছেন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্পে চিন্তা দরকার। মেগা প্রকল্পও বাদ দিতে হবে। নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রকল্পের সবকিছু ওপেন থাকবে। শুধু পিডি জানবে তা নয়, সবাই জানবে। সামনে বড় প্রকল্প নয়, জনগুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রকল্প নেওয়া হবে।

পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, দাতাগোষ্ঠী হাত খুলে টাকা দিতে চাচ্ছে। ইউএসএইড বলছে, তোমরা প্রকল্প তৈরি করো আমরা টাকা দেব। যেসব প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল কিন্তু টাকা নেওয়া হয়নি এসব টাকা বাজেট সহায়তা দিতে চায় বিশ্বব্যাংক। সব দাতাগোষ্ঠী আমাদের নতুন চাহিদা জানতে চেয়েছে। কিছু প্রকল্পে ত্বরান্বিত হবে যা বৈদেশিক সাহায্যের প্রকল্প। অনেক প্রকল্প হিমাগারে আছে, মৃত প্রকল্পে ছাড় করে দেবে বিশ্বব্যাংক। বৈদেশিক সাহায্যের প্রকল্প বেশি পাস করা হবে। পাইপলাইনে থাকা ডলার কাজে লাগাতে হবে।

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত থাকবে উল্লেখ করে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, এটি এক ধরনের রাজনৈতিক দলিল। রাজনৈতিক সরকার তাদের মতো করে পরিকল্পনা করবে, নীতিনির্ধারণ করবে। এতে রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা থাকে। আমরা বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেব না। তারা ক্ষমতায় এসে সিদ্ধান্ত নেবে। সে জন্য অর্থনীতির জন্য দিকনির্দেশনা ও অর্থায়ন নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। আপাতত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত থাকবে। কারণ, বিগত সরকার কখনোই এই পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করেনি। কাজেই পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এই মুহূর্তে দরকার নেই। চলমান প্রকল্পগুলো কোন পর্যায়ে রয়েছে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কাজেই আগের মতো একনেক সভা মানেই যেখানে অর্থ ব্যয়ের কর্মযজ্ঞ ছিল, এখন সে পরিধি কমে আসবে। নতুন করে রাজনৈতিক সরকার এলে তারা নতুন করে পরিকল্পনা করবে বলে জানান তিনি।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, অর্থনৈতিক দিকনির্দেশনা ও অর্থায়নের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এই টাস্কফোর্স প্রতিবেদন দেবে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, বিদেশি অর্থায়ন পাওয়া যাবে এমন প্রকল্প গ্রহণে গুরুত্ব দেবে সরকার। বহু বছর আগের অনেক প্রকল্প পড়ে আছে। এগুলোতে বিদেশি সহযোগীদের নজরদারি বেশি থাকে। অনিয়ম করা যায় না। তাই ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ কম থাকে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে মিলে এমন কিছু নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, নিজেদের জন্য গ্যাসকূপ খনন না করে কেন বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির ব্যয়বহুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা বোধগম্য না। যেসব কূপ উন্নয়ন বা খননের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাও দেওয়া হয়েছে বিদেশি কোম্পানিকে। এসব ক্ষেত্রে কতটা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। নিজেদের গ্যাসের সম্ভাবনা থাকতে এলএনজি আমদানি ভ্রান্ত নীতি। এতদিন যে অর্থনীতি চালিয়ে এসেছি এলডিসি উত্তরণের পর দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করতে হবে। শিক্ষা প্রযুক্তিতে আরও প্রকল্প নিতে হবে। মানবসম্পদে অনেক পিছিয়ে আছি আমরা।

তিনি আরও বলেন, বড় প্রকল্পগুলোতে সময় কেন বাড়ানো হলো এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হলো সেগুলো যাচাই করা হবে। বর্তমান সরকার আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে চায়। একনেক সভায় সব মিলিয়ে চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে খরচ হবে ১ হাজার ২২২ কোটি টাকা।