ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

২ বছরে টাকার মান কমেছে ৩০ শতাংশ!

আশানুরূপ পণ্য রপ্তানি না হওয়া, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া এবং বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ—সবমিলিয়ে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে মার্কিন ডলারের দাম। বিপরীতে কমছে দেশীয় মুদ্রা টাকার মান।

গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ১৬ শতাংশের বেশি। দুই বছরে তা প্রায় ৩০ শতাংশ। এক বছর আগে ১ ডলার কিনতে খরচ হয়েছে ৯৫-১০০ টাকা, ২ বছর আগে ৮৪-৮৬ টাকা। আর এখন ১ ডলার কিনতে হচ্ছে ১১০-১১৬ টাকা দিয়ে। ২ বছর আগে ১০০ ডলার কিনতে খরচ করতে হয়েছিল ৮৫০০ টাকার মতো। এখন ১০০ ডলার কিনতে খরচ হচ্ছে খোলা বাজারে প্রায় ১১৬০০ টাকা। এই হিসাবে ২ বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মানে প্রায় ৩০ শতাংশ পতন হয়েছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিজার্ভ একটা সময়ে ব্যাপকভাবে বেড়েছিল। তখন আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগেছি। সঠিক ব্যবহার করিনি। কৃত্রিমভাবে ডলারের দাম ধরে রেখেছিলাম। যা এখন আমাদের ভোগাচ্ছে। ডলারের বাড়তি মূল্য আমাদের মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দিয়েছে। টাকার মান ধারাবাহিকভাবে কমছে। অর্থনীতিতে এগুলো এখন ‘ঘা’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যা সারাতে না পারলে নিকট ভবিষ্যতে বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে।

ডলারের দাম ও রিজার্ভ পরিস্থিতি
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, মহামারি করোনার আগের বছরগুলোতে বিশ্ববাজারে ঋণের সুদহার অনেক কম ছিল। ওই সময়ে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ প্রবাহও বেশ ভালো ছিল। একই সময় রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। এসব কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়। এ নিয়ে বড় ধরনের আত্মতুষ্টিতে ভোগে সরকার। রিজার্ভ থেকে শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া হয় ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ। মালদ্বীপকেও ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া, রিজার্ভ থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঋণ নেওয়া হয় এবং উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়।

২০২১ সালের শেষ দিকে অর্থনীতিতে বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। তখন আমদানির চাহিদা বাড়ে। অন্যদিকে, রেমিট্যান্স কমে যায়। এর প্রভাব পড়ে রিজার্ভে। এর মধ্যে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এতে অর্থনীতিতে নতুন সংকট তৈরি হয়। সংকট কাটাতে কঠিন শর্তে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়েছে সরকারকে।

এছাড়া ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানিতে নানা শর্ত আরোপসহ বিভিন্নরকম উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে অল্প অল্প করে ডলার ছাড়া হচ্ছে নিয়মিত। কিন্তু কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না।

 

এদিকে ডলারের দর দীর্ঘদিন কৃত্রিম উপায়ে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকার মধ্যে ধরে রেখেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে এটি বেড়ে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দুই বছর আগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছিল। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুতে ডলারের দাম দাঁড়ায় ৯৫ টাকায়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দাম গিয়ে ঠেকেছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায়। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মার্কিন ডলারের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা ৫০ পয়সা বা ১৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর দুই বছরে বেড়েছে ২৫ টাকা বা ২৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এখন প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৪ টাকা আর খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১৬ থেকে ১১৮ টাকা।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

২ বছরে টাকার মান কমেছে ৩০ শতাংশ!

আপডেট সময় ০৭:৩২:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ অক্টোবর ২০২৩

আশানুরূপ পণ্য রপ্তানি না হওয়া, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া এবং বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ—সবমিলিয়ে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে মার্কিন ডলারের দাম। বিপরীতে কমছে দেশীয় মুদ্রা টাকার মান।

গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ১৬ শতাংশের বেশি। দুই বছরে তা প্রায় ৩০ শতাংশ। এক বছর আগে ১ ডলার কিনতে খরচ হয়েছে ৯৫-১০০ টাকা, ২ বছর আগে ৮৪-৮৬ টাকা। আর এখন ১ ডলার কিনতে হচ্ছে ১১০-১১৬ টাকা দিয়ে। ২ বছর আগে ১০০ ডলার কিনতে খরচ করতে হয়েছিল ৮৫০০ টাকার মতো। এখন ১০০ ডলার কিনতে খরচ হচ্ছে খোলা বাজারে প্রায় ১১৬০০ টাকা। এই হিসাবে ২ বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মানে প্রায় ৩০ শতাংশ পতন হয়েছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিজার্ভ একটা সময়ে ব্যাপকভাবে বেড়েছিল। তখন আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগেছি। সঠিক ব্যবহার করিনি। কৃত্রিমভাবে ডলারের দাম ধরে রেখেছিলাম। যা এখন আমাদের ভোগাচ্ছে। ডলারের বাড়তি মূল্য আমাদের মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দিয়েছে। টাকার মান ধারাবাহিকভাবে কমছে। অর্থনীতিতে এগুলো এখন ‘ঘা’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যা সারাতে না পারলে নিকট ভবিষ্যতে বড় চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে।

ডলারের দাম ও রিজার্ভ পরিস্থিতি
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, মহামারি করোনার আগের বছরগুলোতে বিশ্ববাজারে ঋণের সুদহার অনেক কম ছিল। ওই সময়ে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ প্রবাহও বেশ ভালো ছিল। একই সময় রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল। এসব কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়। এ নিয়ে বড় ধরনের আত্মতুষ্টিতে ভোগে সরকার। রিজার্ভ থেকে শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া হয় ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ। মালদ্বীপকেও ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া, রিজার্ভ থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঋণ নেওয়া হয় এবং উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়।

২০২১ সালের শেষ দিকে অর্থনীতিতে বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। তখন আমদানির চাহিদা বাড়ে। অন্যদিকে, রেমিট্যান্স কমে যায়। এর প্রভাব পড়ে রিজার্ভে। এর মধ্যে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এতে অর্থনীতিতে নতুন সংকট তৈরি হয়। সংকট কাটাতে কঠিন শর্তে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিতে হয়েছে সরকারকে।

এছাড়া ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমদানিতে নানা শর্ত আরোপসহ বিভিন্নরকম উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে অল্প অল্প করে ডলার ছাড়া হচ্ছে নিয়মিত। কিন্তু কোনো পদক্ষেপই কাজে আসছে না।

 

এদিকে ডলারের দর দীর্ঘদিন কৃত্রিম উপায়ে ৮৪ থেকে ৮৬ টাকার মধ্যে ধরে রেখেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে এটি বেড়ে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, দুই বছর আগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ৮৫ টাকা ৫০ পয়সায় উঠেছিল। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুতে ডলারের দাম দাঁড়ায় ৯৫ টাকায়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দাম গিয়ে ঠেকেছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সায়। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মার্কিন ডলারের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা ৫০ পয়সা বা ১৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর দুই বছরে বেড়েছে ২৫ টাকা বা ২৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এখন প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৪ টাকা আর খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১৬ থেকে ১১৮ টাকা।