ঢাকা , রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

বিক্রিত সাংবাদিক ও সত্যের সংকট

মোঃ মামুন হোসেন : সাংবাদিকতা একটি মহৎ পেশা। এর মূল লক্ষ্য হলো সত্যকে উন্মোচিত করা, মানুষের কথা তুলে ধরা এবং সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বর্তমান সমাজে এমন কিছু সাংবাদিক আছেন যারা পেশার নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে বিক্রি হয়ে গেছেন। তারা সত্যের বদলে মিথ্যা লিখে যায়, কলমকে জনগণের কণ্ঠস্বর না বানিয়ে ক্ষমতাবানদের দালালে রূপান্তরিত করে। ফলে সাংবাদিকতা তার পবিত্রতা হারায় এবং সমাজ অন্ধকারের দিকে ধাবিত হয়। প্রথমেই বুঝতে হবে, সাংবাদিকতা কেবল খবর প্রকাশের মাধ্যম নয়, বরং এটি জনগণের অধিকার রক্ষার একটি হাতিয়ার। ইতিহাস সাক্ষী, সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকরা দেশ ও জাতিকে অন্যায়ের হাত থেকে রক্ষা করেছে। কিন্তু বিক্রিত সাংবাদিকরা সত্য আড়াল করে মিথ্যার প্রচারণা চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে। তারা অন্যায়ের পক্ষে সাফাই গেয়ে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায়। এমনকি তারা দুর্নীতি, অন্যায়, স্বৈরাচার ও দমননীতিকে প্রশ্রয় দেয়।বিক্রিত সাংবাদিকদের মূল লক্ষ্য থাকে ব্যক্তিগত লাভ। কখনো ক্ষমতাসীনদের স্তুতি করে পদ, টাকা বা প্রভাব অর্জন করা, কখনো কর্পোরেট শক্তির স্বার্থ রক্ষা করা। তাদের কাছে নৈতিকতা, মানবতা বা জনগণের আস্থা কোনো মূল্য রাখে না। এই কারণে সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে সংবাদমাধ্যমের ওপর আস্থা হারাচ্ছে। যেখানে জনগণ আশা করে সঠিক তথ্য, সেখানে তারা পাচ্ছে বিভ্রান্তিকর গল্প, সাজানো সংবাদ ও মিথ্যার পাহাড়। একজন সত্যিকারের সাংবাদিকের দায়িত্ব হলো শাসক বা ক্ষমতাবানদের মুখোশ উন্মোচন করা। কিন্তু বিক্রিত সাংবাদিকরা উল্টো তাদের মুখ ঢেকে রাখে। তারা যাদের অন্যায়ের জন্য জবাবদিহি করা উচিত, তাদেরকেই নায়ক হিসেবে তুলে ধরে। সমাজে যখন সাধারণ মানুষ কণ্ঠহীন হয়ে পড়ে, তখন সাংবাদিকের কলম হওয়া উচিত তাদের কণ্ঠস্বর। কিন্তু বিক্রিত সাংবাদিকরা সেই কলমকে ক্ষমতার দাস বানিয়ে ফেলে। ফলে সাংবাদিকতা তার আসল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়।এতে শুধু জনগণের ক্ষতি হয় না, গণতন্ত্রও দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ গণমাধ্যমকে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। যদি এই স্তম্ভ ভেঙে পড়ে, তাহলে ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। জনগণ আর সত্য জানার সুযোগ পায় না। মিথ্যার বন্যায় সত্য চাপা পড়ে যায়। একটি রাষ্ট্রে যখন সত্য বিক্রি হয়ে যায়, তখন অন্যায়, দুর্নীতি, দমননীতি ও অবিচার আরও বেশি প্রসার লাভ করে।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ক্ষতির শিকার হয় তরুণ প্রজন্ম। তারা যখন সংবাদপত্র, টেলিভিশন বা অনলাইন মাধ্যমে অসত্য ও বিকৃত তথ্য দেখে, তখন বিভ্রান্ত হয়। তাদের মনে প্রশ্ন জাগে—কার ওপর ভরসা করবে? এভাবে সমাজে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য ঘোলাটে হয়ে যায়, নৈতিকতা ভেঙে পড়ে, এবং মানুষ ধীরে ধীরে উদাসীন হয়ে পড়ে।তবে সব সাংবাদিক বিক্রিত নয়। এখনও অসংখ্য সাহসী সাংবাদিক আছেন যারা সত্য প্রকাশের জন্য প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছেন। তারা কারাগারে গিয়েছেন, হুমকি সহ্য করেছেন, তবুও সত্যকে আড়াল করেননি। তাদের কারণে এখনও সাংবাদিকতার প্রতি আস্থা টিকে আছে। কিন্তু বিক্রিত সাংবাদিকরা সংখ্যায় বেশি হলে সমাজে অন্ধকার ঘনিয়ে আসে।এই পরিস্থিতি বদলাতে হলে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।প্রথমত, সাংবাদিকদের নৈতিক শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। তারা যেন মনে রাখে, সাংবাদিকতা শুধু পেশা নয়, এটি মানুষের অধিকার রক্ষার লড়াই।দ্বিতীয়ত, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সাংবাদিকরা চাপমুক্তভাবে কাজ করতে পারে।তৃতীয়ত, বিক্রিত সাংবাদিকদের চিহ্নিত করে সামাজিকভাবে বর্জন করতে হবে। জনগণকে সচেতন হতে হবে, যাতে তারা মিথ্যা সংবাদকে প্রত্যাখ্যান করতে শেখে।
চতুর্থত, প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে প্রত্যেক পাঠক বা দর্শককেও সমালোচনামূলক দৃষ্টিতে সংবাদ গ্রহণ করতে হবে।, বিক্রিত সাংবাদিকরা সমাজের জন্য অভিশাপ। তারা সত্য আড়াল করে মিথ্যার বাজার গরম করে। তারা কলমের মর্যাদা নষ্ট করে ক্ষমতার দালালে পরিণত হয়। অথচ সাংবাদিকতার প্রকৃত শক্তি হলো সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা, মানুষের কণ্ঠস্বরকে উচ্চারণ করা। তাই আমাদের প্রয়োজন সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা, যেখানে বিক্রি নয়, বরং সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে সর্বাগ্রে। সাংবাদিকদের মনে রাখতে হবে—কলম কখনো বিক্রির বস্তু নয়, এটি জনগণের আস্থা ও গণতন্ত্রের প্রতীক।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

শহীদ মিনারে ফরিদা পারভীনকে অন্তিম শ্রদ্ধা, কুষ্টিয়ায় দাফন

বিক্রিত সাংবাদিক ও সত্যের সংকট

আপডেট সময় ০৭:০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মোঃ মামুন হোসেন : সাংবাদিকতা একটি মহৎ পেশা। এর মূল লক্ষ্য হলো সত্যকে উন্মোচিত করা, মানুষের কথা তুলে ধরা এবং সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, বর্তমান সমাজে এমন কিছু সাংবাদিক আছেন যারা পেশার নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে বিক্রি হয়ে গেছেন। তারা সত্যের বদলে মিথ্যা লিখে যায়, কলমকে জনগণের কণ্ঠস্বর না বানিয়ে ক্ষমতাবানদের দালালে রূপান্তরিত করে। ফলে সাংবাদিকতা তার পবিত্রতা হারায় এবং সমাজ অন্ধকারের দিকে ধাবিত হয়। প্রথমেই বুঝতে হবে, সাংবাদিকতা কেবল খবর প্রকাশের মাধ্যম নয়, বরং এটি জনগণের অধিকার রক্ষার একটি হাতিয়ার। ইতিহাস সাক্ষী, সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকরা দেশ ও জাতিকে অন্যায়ের হাত থেকে রক্ষা করেছে। কিন্তু বিক্রিত সাংবাদিকরা সত্য আড়াল করে মিথ্যার প্রচারণা চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে। তারা অন্যায়ের পক্ষে সাফাই গেয়ে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায়। এমনকি তারা দুর্নীতি, অন্যায়, স্বৈরাচার ও দমননীতিকে প্রশ্রয় দেয়।বিক্রিত সাংবাদিকদের মূল লক্ষ্য থাকে ব্যক্তিগত লাভ। কখনো ক্ষমতাসীনদের স্তুতি করে পদ, টাকা বা প্রভাব অর্জন করা, কখনো কর্পোরেট শক্তির স্বার্থ রক্ষা করা। তাদের কাছে নৈতিকতা, মানবতা বা জনগণের আস্থা কোনো মূল্য রাখে না। এই কারণে সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে সংবাদমাধ্যমের ওপর আস্থা হারাচ্ছে। যেখানে জনগণ আশা করে সঠিক তথ্য, সেখানে তারা পাচ্ছে বিভ্রান্তিকর গল্প, সাজানো সংবাদ ও মিথ্যার পাহাড়। একজন সত্যিকারের সাংবাদিকের দায়িত্ব হলো শাসক বা ক্ষমতাবানদের মুখোশ উন্মোচন করা। কিন্তু বিক্রিত সাংবাদিকরা উল্টো তাদের মুখ ঢেকে রাখে। তারা যাদের অন্যায়ের জন্য জবাবদিহি করা উচিত, তাদেরকেই নায়ক হিসেবে তুলে ধরে। সমাজে যখন সাধারণ মানুষ কণ্ঠহীন হয়ে পড়ে, তখন সাংবাদিকের কলম হওয়া উচিত তাদের কণ্ঠস্বর। কিন্তু বিক্রিত সাংবাদিকরা সেই কলমকে ক্ষমতার দাস বানিয়ে ফেলে। ফলে সাংবাদিকতা তার আসল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়।এতে শুধু জনগণের ক্ষতি হয় না, গণতন্ত্রও দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ গণমাধ্যমকে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়। যদি এই স্তম্ভ ভেঙে পড়ে, তাহলে ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। জনগণ আর সত্য জানার সুযোগ পায় না। মিথ্যার বন্যায় সত্য চাপা পড়ে যায়। একটি রাষ্ট্রে যখন সত্য বিক্রি হয়ে যায়, তখন অন্যায়, দুর্নীতি, দমননীতি ও অবিচার আরও বেশি প্রসার লাভ করে।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ক্ষতির শিকার হয় তরুণ প্রজন্ম। তারা যখন সংবাদপত্র, টেলিভিশন বা অনলাইন মাধ্যমে অসত্য ও বিকৃত তথ্য দেখে, তখন বিভ্রান্ত হয়। তাদের মনে প্রশ্ন জাগে—কার ওপর ভরসা করবে? এভাবে সমাজে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য ঘোলাটে হয়ে যায়, নৈতিকতা ভেঙে পড়ে, এবং মানুষ ধীরে ধীরে উদাসীন হয়ে পড়ে।তবে সব সাংবাদিক বিক্রিত নয়। এখনও অসংখ্য সাহসী সাংবাদিক আছেন যারা সত্য প্রকাশের জন্য প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছেন। তারা কারাগারে গিয়েছেন, হুমকি সহ্য করেছেন, তবুও সত্যকে আড়াল করেননি। তাদের কারণে এখনও সাংবাদিকতার প্রতি আস্থা টিকে আছে। কিন্তু বিক্রিত সাংবাদিকরা সংখ্যায় বেশি হলে সমাজে অন্ধকার ঘনিয়ে আসে।এই পরিস্থিতি বদলাতে হলে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।প্রথমত, সাংবাদিকদের নৈতিক শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। তারা যেন মনে রাখে, সাংবাদিকতা শুধু পেশা নয়, এটি মানুষের অধিকার রক্ষার লড়াই।দ্বিতীয়ত, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সাংবাদিকরা চাপমুক্তভাবে কাজ করতে পারে।তৃতীয়ত, বিক্রিত সাংবাদিকদের চিহ্নিত করে সামাজিকভাবে বর্জন করতে হবে। জনগণকে সচেতন হতে হবে, যাতে তারা মিথ্যা সংবাদকে প্রত্যাখ্যান করতে শেখে।
চতুর্থত, প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে প্রত্যেক পাঠক বা দর্শককেও সমালোচনামূলক দৃষ্টিতে সংবাদ গ্রহণ করতে হবে।, বিক্রিত সাংবাদিকরা সমাজের জন্য অভিশাপ। তারা সত্য আড়াল করে মিথ্যার বাজার গরম করে। তারা কলমের মর্যাদা নষ্ট করে ক্ষমতার দালালে পরিণত হয়। অথচ সাংবাদিকতার প্রকৃত শক্তি হলো সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা, মানুষের কণ্ঠস্বরকে উচ্চারণ করা। তাই আমাদের প্রয়োজন সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা, যেখানে বিক্রি নয়, বরং সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে সর্বাগ্রে। সাংবাদিকদের মনে রাখতে হবে—কলম কখনো বিক্রির বস্তু নয়, এটি জনগণের আস্থা ও গণতন্ত্রের প্রতীক।