বিশেষ প্রতিবেদক : দীর্ঘ মাস থেকে বছর জুড়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের দুপাশের অংশ অবৈধ দখলে নিয়ে ব্যবসা করছিল অসাধু বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এমনকি তাদের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ইট, বালু ও পাথর দিয়ে ঢেকে ফেলেছিল নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় কবরস্থান সংলগ্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ৭১ এর প্রতিরোধ স্তম্ভের সামনের অংশ।
এ নিয়ে বিভিন্নসময় গণমাধ্যমকর্মীদের তৎপরতায় অবশেষে অভিযান পরিচালনা করেছেন জেলা প্রশাসন। এছাড়াও এ সংত্রান্তে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সেখানে থাকা অসাধু ব্যবসায়ীদের দ্বারা হামলায় আহত হয় দুই সাংবাদিক। এরপর থেকে বিষয়টি নিয়ে শহর জুড়ে প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সর্বসাধারণের পক্ষে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় উঠে।
আর তাই নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার নির্দেশে “গ্রীন এন্ড ক্লিন” কর্মসূচীতে অবশেষে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত প্রতিরোধ স্তম্ভের সামনে থেকে সরানো হয়েছে অবৈধ দখলে রাখা ইট, পাথর ও বালু। এছাড়াও সড়কের সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে ইট বালু ব্যবসা করার অভিযোগে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করেছেন জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. মোনাববর হোসেন।
মঙ্গলবার দুপুরে এ অভিযানে দুটি প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা করে মোট ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়াও সালাউদ্দিন এন্ড সন্স, আব্দুল মোতালেব আয়রন ষ্টোর ও আশা সিমেন্ট নামের দোকানে অবৈধভাবে রাখা নির্মাণসামগ্রী জব্দ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর আওতায় সরকারি অনুমতি ছাড়াই জায়গা দখল করে ইট, বালু ও পাথর রাখার দায়ে প্রতিষ্ঠান দুটিকে এ জরিমানা করা হয়। একইসঙ্গে বিকালের মধ্যে দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আর সেসময় উপস্থিত হন, মোস্তফা নামে একজন ঠিকাদার। যিনি মূলত, সড়কের পাশে পাথর রেখেছেন বলে কর্মকর্তার সামনে স্বীকারোক্তি দেন। এরপরই জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা অবৈধভাবে রাখার বিষয় ওই ঠিকাদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি একরকম তর্কে জড়িয়ে পড়ে। উল্টো প্রশ্ন ছুড়েন, আপনি কি ডিসি অফিসের? আমি যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি’র পিতা। তখন কর্মকর্তা জানতে চান উনি কে? জবাবে বলেন, যুবদলের সদস্য সচিব। এরকম নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করলেও অভিযান পরিচালনায় অব্যাহত ছিলেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা মোনাববর হোসেন।
আর এমন ঘটনায় রাজনৈতিক প্রভাবকে উপেক্ষিত করে অভিযান অব্যাহত রাখায় স্থানীয়দের মাঝে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন সেই কর্মকর্তা। তাছাড়া উচ্ছেদ অভিযানে ফিরেছে স্বাভাবিক রূপ। সেই স্থান দিয়ে এখন পথচারীরাও নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারছে। তাই এমন উচ্ছেদ অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে সাধারণ মানুষ এমন অভিযানকে চলমান রাখার দাবি জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরকারি সম্পত্তি রক্ষা ও অবৈধ দখল প্রতিরোধে এ ধরনের অভিযান নিয়মিত চলবে। আজকের অভিযান প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের স্পষ্ট বার্তা বহন করে বলেও জানানো হয়। অভিযানকালে মালিকবিহীন অবস্থায় পাওয়া ইট ও বালু জব্দ করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।