ঢাকা , সোমবার, ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo নগদের গ্রাহকদের অর্থ ঝুঁকিতে: বাংলাদেশ ব্যাংক Logo নাঃগঞ্জ মহানগর জিসাস ও জেলা জিসাস এর উদ্যোগে জিয়াউর রহমান শাহাদাত বার্ষিকীতে দোয়া অনুষ্ঠান ও খাবার বিতরন Logo শহীদ জিয়া’র ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল ১৫নং ওয়ার্ড নায়ণগঞ্জ মহানগর ও এলাকাবাসী উদ্যোগে মিলাদ, দোয়া Logo আনন্দমুখর সাহিত্য পত্রিকা ও পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠিত হলো কলকাতা বঙ্গ সন্মাননা -২০২৫ Logo রূপগঞ্জ ৪ দিনের টানা বর্ষণে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি Logo হাসিনার বিচারকাজ সরাসরি সম্প্রচার আজ Logo জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে আপিল বিভাগের নির্দেশ Logo গাজায় আরও ৬০ মরদেহ উদ্ধার, নিহত বেড়ে প্রায় ৫৪ হাজার ৪০০ Logo ইতিহাস গড়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতল পিএসজি Logo সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য শিক্ষার্থীকে খয়রাতি মার্ক দেয়া হবে না : শিক্ষা উপদেষ্টা

নিশ্চিত হোক মানবিক বাংলাদেশ

মোঃ মামুন হোসেন: বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র, যেখানে মানবিকতা, ন্যায়বিচার, সাম্য ও সহমর্মিতার চেতনা প্রতিষ্ঠিত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জাতীয় স্লোগানগুলোর মধ্যে “নিশ্চিত হোক মানবিক বাংলাদেশ” কেবলমাত্র একটি বাক্য নয়, এটি একটি আদর্শ, একটি স্বপ্ন, যা সমাজের প্রতিটি স্তরে বাস্তবায়নের প্রয়োজন রয়েছে। একটি সত্যিকারের মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে আমাদের মূল্যবোধ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, দারিদ্র্য বিমোচন, ন্যায়বিচার এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য, দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো বিভিন্ন সমস্যা এখনো বিদ্যমান। এসব সমস্যার সমাধান করতে হলে একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। মানবিকতার অভাবে সমাজে বৈষম্য তৈরি হয়, যা শ্রেণিবৈষম্য, সহিংসতা ও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ হয়। সুতরাং, একটি ন্যায়সঙ্গত, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের জন্য মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা জরুরি।
শিক্ষা একটি জাতির মূল চালিকা শক্তি। তবে শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়, মানবিক শিক্ষা নিশ্চিত করাও জরুরি। শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিকতা, সহমর্মিতা, সামাজিক দায়িত্ববোধ ও মূল্যবোধের প্রসার ঘটাতে হবে। বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানবিকতা ও সামাজিক কল্যাণের গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। শিক্ষার্থীদের শুধু পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করানো নয়, তাদের সঠিক ও মানবিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
একটি মানবিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হলো সকল নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা। দারিদ্র্য, বেকারত্ব, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান ও নিরাপত্তার অভাব মানুষের মানবিক জীবনযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই, বাংলাদেশকে একটি সত্যিকারের মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হলে দরিদ্র, অসহায় ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। নারী, শিশু, প্রবীণ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
মানবিক উন্নয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো উন্নত স্বাস্থ্যসেবা। বাংলাদেশে এখনও চিকিৎসা সুবিধার অভাব রয়েছে, বিশেষ করে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা ও উন্নত মানের ওষুধ সরবরাহ করা হলে একটি মানবিক সমাজ গঠন সম্ভব হবে। সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে যেন প্রতিটি মানুষ মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পায়।
দারিদ্র্য একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠনের অন্যতম প্রধান বাধা। সমাজে যখন ধনী-গরিবের মধ্যে বিশাল বৈষম্য থাকে, তখন মানবিকতা লোপ পেতে থাকে। তাই অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে প্রতিটি মানুষ ন্যূনতম জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে পারে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, ন্যায্য মজুরি, সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য ভাতা প্রদান এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য কমাতে হবে।
নারীদের প্রতি সহিংসতা, বৈষম্য ও নিপীড়ন রোধ করতে হলে নারী অধিকার ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নারীদের সমান সুযোগ প্রদান, বাল্যবিবাহ রোধ এবং নারীদের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। নারীরা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই তাদের অবদানকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।
একটি মানবিক সমাজ গড়তে হলে ন্যায়বিচার ও সুশাসনের বিকল্প নেই। দুর্নীতি, অন্যায় ও ক্ষমতার অপব্যবহার সমাজকে পঙ্গু করে দেয়। তাই আইনের শাসন নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি সমাজের প্রতিটি স্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায়, তবে একটি মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
একটি সত্যিকারের মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পরিবর্তন আনতে হবে। মানবিক মূল্যবোধ চর্চার মাধ্যমে আমরা একটি সমৃদ্ধ, ন্যায়ভিত্তিক ও সহমর্মিতামূলক সমাজ গঠন করতে পারব। এই লক্ষ্যে সরকার, নাগরিক সমাজ এবং প্রতিটি ব্যক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানবিক বাংলাদেশ গঠনের জন্য আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে একটি উন্নত, শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ নিশ্চিত করা যায়।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

নগদের গ্রাহকদের অর্থ ঝুঁকিতে: বাংলাদেশ ব্যাংক

নিশ্চিত হোক মানবিক বাংলাদেশ

আপডেট সময় ১১:২৩:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ মার্চ ২০২৫

মোঃ মামুন হোসেন: বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র, যেখানে মানবিকতা, ন্যায়বিচার, সাম্য ও সহমর্মিতার চেতনা প্রতিষ্ঠিত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জাতীয় স্লোগানগুলোর মধ্যে “নিশ্চিত হোক মানবিক বাংলাদেশ” কেবলমাত্র একটি বাক্য নয়, এটি একটি আদর্শ, একটি স্বপ্ন, যা সমাজের প্রতিটি স্তরে বাস্তবায়নের প্রয়োজন রয়েছে। একটি সত্যিকারের মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে আমাদের মূল্যবোধ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, দারিদ্র্য বিমোচন, ন্যায়বিচার এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক বৈষম্য, দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো বিভিন্ন সমস্যা এখনো বিদ্যমান। এসব সমস্যার সমাধান করতে হলে একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। মানবিকতার অভাবে সমাজে বৈষম্য তৈরি হয়, যা শ্রেণিবৈষম্য, সহিংসতা ও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ হয়। সুতরাং, একটি ন্যায়সঙ্গত, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের জন্য মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা জরুরি।
শিক্ষা একটি জাতির মূল চালিকা শক্তি। তবে শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়, মানবিক শিক্ষা নিশ্চিত করাও জরুরি। শিক্ষা ব্যবস্থায় নৈতিকতা, সহমর্মিতা, সামাজিক দায়িত্ববোধ ও মূল্যবোধের প্রসার ঘটাতে হবে। বিদ্যালয়, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানবিকতা ও সামাজিক কল্যাণের গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। শিক্ষার্থীদের শুধু পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করানো নয়, তাদের সঠিক ও মানবিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
একটি মানবিক রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হলো সকল নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করা। দারিদ্র্য, বেকারত্ব, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান ও নিরাপত্তার অভাব মানুষের মানবিক জীবনযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই, বাংলাদেশকে একটি সত্যিকারের মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হলে দরিদ্র, অসহায় ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। নারী, শিশু, প্রবীণ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
মানবিক উন্নয়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো উন্নত স্বাস্থ্যসেবা। বাংলাদেশে এখনও চিকিৎসা সুবিধার অভাব রয়েছে, বিশেষ করে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা ও উন্নত মানের ওষুধ সরবরাহ করা হলে একটি মানবিক সমাজ গঠন সম্ভব হবে। সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে যেন প্রতিটি মানুষ মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পায়।
দারিদ্র্য একটি মানবিক রাষ্ট্র গঠনের অন্যতম প্রধান বাধা। সমাজে যখন ধনী-গরিবের মধ্যে বিশাল বৈষম্য থাকে, তখন মানবিকতা লোপ পেতে থাকে। তাই অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে প্রতিটি মানুষ ন্যূনতম জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে পারে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, ন্যায্য মজুরি, সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য ভাতা প্রদান এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য কমাতে হবে।
নারীদের প্রতি সহিংসতা, বৈষম্য ও নিপীড়ন রোধ করতে হলে নারী অধিকার ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নারীদের সমান সুযোগ প্রদান, বাল্যবিবাহ রোধ এবং নারীদের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। নারীরা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই তাদের অবদানকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।
একটি মানবিক সমাজ গড়তে হলে ন্যায়বিচার ও সুশাসনের বিকল্প নেই। দুর্নীতি, অন্যায় ও ক্ষমতার অপব্যবহার সমাজকে পঙ্গু করে দেয়। তাই আইনের শাসন নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি সমাজের প্রতিটি স্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা যায়, তবে একটি মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
একটি সত্যিকারের মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পরিবর্তন আনতে হবে। মানবিক মূল্যবোধ চর্চার মাধ্যমে আমরা একটি সমৃদ্ধ, ন্যায়ভিত্তিক ও সহমর্মিতামূলক সমাজ গঠন করতে পারব। এই লক্ষ্যে সরকার, নাগরিক সমাজ এবং প্রতিটি ব্যক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানবিক বাংলাদেশ গঠনের জন্য আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে একটি উন্নত, শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ নিশ্চিত করা যায়।