নিজস্ব প্রতিবেদক : মুন্নার বিরুদ্ধে মিথ্যে যৌতুক ও নারী নির্যাতন মামলা করেও আদালত প্রাঙ্গণে অপর এক আইনজীবীর সহকারীকে মারধর করেছে আয়শা আক্তার হাসি ও তার বর্তমান কথিত প্রেমিক সোহেল সহ অন্যান্য সহকারীরা।
ঘটনাটি ঘটেছে ২০ জানুয়ারী(সোমবার) সকাল ১০টায় নারায়ণগঞ্জ জজ কোর্ট গেটের সামনে। এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী মরিয়ম আক্তার তন্বি।
অভিযোগে জানা গেছে, ফতুল্লা থানার কুতুবপুর দেলপাড়ার বাসিন্দা মরিয়ম আক্তার তন্বি এডভোকেট মো. হাসান এর সহকারী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জজ কোর্টে কাজ করে আসছেন। তবে সম্প্রতি এলাকার মিজানুর রহমানের ছেলে মুন্না রহমান(৩৫) এর বিরুদ্ধে তার স্ত্রী অভিযুক্ত আয়শা আক্তার হাসি(৩০) একটি যৌতুক ও নারী নির্যাতন মামলা দায়ের করেন অপর এক আইনজীবীর মাধ্যমে। বর্তমানে যৌতুক মামলাটি চার্জে রয়েছে, এবং নারী নির্যাতন মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। এরই মধ্যে ভুক্তভোগী মুন্নার বোন সাদিয়া রহমান ভাইয়ের মামলার বিষয়ে আদালতে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। আসামী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে এড. শাহীন খান মামলাটি পরিচালনা করে আসছেন।
এদিকে শুধুমাত্র অভিযুক্ত মুন্নার বোনের সাথে বন্ধুত্ব থাকায় অপর আইনজীবী এড. হাসানের সহকারী মরিয়ম আক্তার তন্বির উপর ২০ জানুয়ারী আদালত প্রাঙ্গণেই অতর্কিত হামলা চালায় হাসি ও তার কথিত প্রেমিক সোনারগাঁও আমিনপুরের আইয়ুব মিয়ার ছেলে সোহেল (২৭)। যদিও আইয়ুব মিয়া হাসিকে তার ছেলে সোহেলের স্ত্রী দাবি করেছেন।
এসময় তারা তন্বিকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, চড়, থাপ্পর দেয় এবং তার ব্যাগ থেকে নগদ ৫০০০ টাকা ও স্বর্ণের আংটি ছিনিয়ে নেয়।
এ ঘটনায় ওইদিনই ২ পক্ষ আলাদা আলাদাভাবে বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় ২টি অভিযোগ দায়ের করেন।
এর আগে মুন্না সহ তন্বি ও তার স্বামী নিরবকে আসামী করে যে অভিযোগ দায়ের করা হয়, সেটি সম্পূর্ণ সাজানো প্রমানিত হওয়ায় ফতুল্লা থানার ওসি শরিফুল ইসলাম দায়িত্বরত এসআইকে রবিউলকে সঠিক প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিলেও এসআই রবিউল তার নির্দেশনা অমান্য করে প্রতিবেদনে মুন্না ও অপর অভিযুক্তদের দোষি উল্লেখ করেন।
এদিকে ভুক্তভোগী তন্বীর অভিযোগ, আয়শা আক্তার হাসি ও তার কথিত প্রেমিক সোহেল আমাকে পারিবারিক আদালতের সামনে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে এই মামলা থেকে সরে যেতে বলে। কিন্তু এই মামলাতো আমার কাছে বা আমার আইনজীবীর কাছে না- এটি বলার পরেও তারা আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। পরে আমি খানপুর ৩শ’ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে পরে ফতুল্লা মডেল থানায় গিয়ে অভিযোগ করি।
এদিকে ফতুল্লা থানার এসআই দেলোয়ার খবর পেয়ে আদালতে এসে ২ পক্ষকে মিটমাট করে দিয়ে যাওয়ার পরেও হাসি ও সোহেল উল্টো থানায় গিয়ে তন্বি ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। খবর পেয়ে একইদিন বিকেলে ভুক্তভোগী তন্বি আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মরিয়ম আক্তার তন্বি বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে আইনজীবীর সহকারীর উপর যারা এভাবে হামলা করতে পারে, তারা আরও বড় ধরনের অপরাধ করতে পারে। তাই এদের মত অপরাধীর যথাযথ শাস্তি কামনা করছি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত এসআই দেলোয়ার বলেন- আমরা প্রথমে ৯৯৯ এ কল পেয়ে আদালতে যাই। পরে উপস্থিত আইনজীবীরা বিষয়টি সুরাহা করে দেয়। এরপরও কেনো ২ পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করতে হলো সে বিষয়ে তিনি সঠিক জবাব দিতে পারেন নি।
উল্লেখ্য, থাইগ্লাস মিস্ত্রী মুন্নাকে ২০২৩ সালে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে কদমতলী ৫৮ নং ওয়ার্ড তাঁতীলীগ এর কার্যালয়ে আটক করে নগদ ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে রাসেল নামে এক নেতা। চাঁদার টাকা ন পেয়ে মুন্নাকে জোড়পূর্বক কুতুবপুর দেলপারা এলাকার মোশারফ হোসেনের মেয়ে আয়শা আক্তার হাসির সাথে ১০ লাখ টাকা কাবিনে বিয়ের নাটক সাজায় এবং অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কয়েকটি সাদা স্ট্যাম্পে মুন্নার স্বাক্ষর নিয়ে নেয়। যে ঘটনার ১০ দিন পরেই মুন্না একটি অপহরণ মামলা দায়ের করে ঢাকা জজ কোর্ট আদালতে। পরবর্তীতে হাসি মুন্নার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জজ কোর্টে যৌতুক, নারী-শিশু নির্যাতন ও দেনমোহরের একাধিক মামলা দায়ের করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- এর আগে আরও ৩টি বিয়ে করে এই আয়শা আক্তার হাসি। প্রতিবারই বিয়ের কিছুদিন পর স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কাবিনের লাখ লাখ টাকা আদায় করাই তার উদ্দেশ্য। এছাড়া সোহেল ও হাসি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে বলেও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। মূলত বিয়ে বা কাবিন বাণিজ্য ও মাদক ব্যবসা করেই হাসি ও সোহেল চলে। সেই সাথে আইয়ুব মিয়া আয়শা আক্তার হাসিকে তার ছেলে সোহেলের স্ত্রী বলে দাবি করেন জনসম্মুখে। যদিও সোহেল এবং হাসি বিষয়টি অস্বীকার করেন। ভুক্তভোগীরা এই কাবিন ব্যবসায়ী আয়শা আক্তার হাসি ও তার সহযোগিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।