ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শূন্য কার্বনভিত্তিক জীবনধারা গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

পৃথিবীকে জলবায়ু বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য ‘শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন’-এর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন জীবনধারা গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, বেঁচে থাকার জন্য, আমাদের আরেকটি সংস্কৃতি গঠন করতে হবে। একটি ভিন্ন জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে আরেকটি পাল্টা সংস্কৃতি গড়তে হবে। এটি হবে শূন্য বর্জ্যরে ওপর ভিত্তি করে। এ সংস্কৃতি নিত্যপণ্যের ব্যবহারকে সীমিত করবে, কোনো বর্জ্য অবশিষ্ট রাখবে না। এতে একটি নতুন পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে তিনটি শূন্যভিত্তিক তার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন উপস্থাপন করে।

একইসঙ্গে নেপাল ও ভুটানের উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ শেয়ার করার জন্য একটি দক্ষিণ এশিয়া গ্রিড স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এবং পৃথিবী ও মানুষের জন্য কাজ করে এমন একটি নতুন সভ্যতা তৈরি করার প্রচেষ্টায় বিশ্বের একটি নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো দরকার বলে মনে করেন নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ।

আর বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও ওষুধ কোম্পানিগুলোকে নতুনভাবে সাজানোর তাগিদ দেন তিনি। এ ছাড়া জীবিকার অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঋণ পাওয়া নিশ্চিত করার গুরুত্ব আরোপ করেছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯-এর ‘ওয়ার্ল্ড লিডারস ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিট’-এর উদ্বোধন অধিবেশনসহ জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও অন্যান্য বিশ্বনেতার সঙ্গে সাইড আলোচনায় এসব বিষয়ে আলোকপাত করে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এ জীবনযাত্রাও হবে শূন্য কার্বনের ওপর ভিত্তি করে যেখানে কোনো জীবাশ্ম জ্বালানি থাকবে না, শুধু পুনর্নবায়নযোগ্য শক্তি থাকবে। এতে এমন একটি অর্থনীতি হবে যা প্রাথমিকভাবে সামাজিক ব্যবসার মতো ব্যক্তিগত পর্যায়ে শূন্য মুনাফার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে।
সামাজিক ব্যবসাকে সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নন-ডিভিডেন্ড ব্যবসা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, সামাজিক ব্যবসার একটি বিশাল অংশ পরিবেশ ও মানবজাতির সুরক্ষায় মনোযোগ দেবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের জীবন কেবল সুরক্ষিতই হবে না, গুণগতভাবে উন্নত হবে। এটি তরুণদের জন্য উদ্যোক্তা হওয়ার পথ সহজতর করবে। উদ্যোক্তা হওয়ার নতুন শিক্ষার মাধ্যমে তরুণরা প্রস্তুত হবে। চাকরিপ্রার্থী তৈরির শিক্ষা উদ্যোক্তাকেন্দ্রিক শিক্ষা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে।’

পরিবেশের সুরক্ষার জন্য একটি নতুন জীবনধারার প্রয়োজন উল্লেখ করে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, নতুন জীবনধারা চাপিয়ে দেওয়া হবে না, এটি পছন্দমতো বেছে নিতে হবে।’

তিনি বলেন, তরুণরা সেই জীবনধারাকে পছন্দ হিসেবে বেছে নেবে। প্রতিটি তরুণ তিন শূন্যভিত্তিক ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠবে। এগুলো হচ্ছে-শূন্য নেট কার্বন নির্গমন, শুধু সামাজিক ব্যবসা গড়ে তোলার মাধ্যমে শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে পরিণত করার মাধ্যমে শূন্য বেকারত্ব।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষ তিন শূন্যভিত্তিক ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠবে এবং সারাজীবন তিন শূন্যভিত্তিক ব্যক্তি হিসেবে থাকবে। এটি নতুন সভ্যতা গড়ে তুলবে। এর জন্য আমাদের যা করতে হবে তা হলো এ গ্রহের নিরাপত্তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি নতুন জীবনধারা গ্রহণ করা যেখানে সবাই বসবাস করে। আজকের তরুণ প্রজন্ম বাকিটা করবে। তারা তাদের গ্রহকে ভালোবাসে।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমি আশা করি আপনারা এই স্বপ্ন দেখায় আমার সঙ্গে যোগ দেবেন। আমরা যদি একসঙ্গে স্বপ্ন দেখি তবে তা সম্ভব হবে।’

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু সংকট তীব্রতর হচ্ছে এবং সে কারণে মানবসভ্যতা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মানুষ আত্ম-বিধ্বংসী মূল্যবোধের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আত্মরক্ষাত্মক ও আত্মশক্তিবর্ধক একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনের জন্য আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক, আর্থিক ও যুব শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা, এই গ্রহের মানব বাসিন্দারা এই গ্রহের ধ্বংসের কারণ।

তিনি বলেন, মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে এটি করছে এবং তারা এমন একটি জীবনধারা বেছে নিয়েছে যা পরিবেশের বিরুদ্ধে কাজ করে। তারা এটিকে একটি অর্থনৈতিক কাঠামো দিয়ে ন্যায্যতা দেয়, যা এ গ্রহব্যবস্থার মতো প্রাকৃতিক হিসেবে বিবেচিত হয়। এই অর্থনৈতিক কাঠামো সীমাহীন খরচের ওপর ভিত্তি করে চলছে। আপনি যত বেশি ব্যবহার করবেন তত বেশি প্রবৃদ্ধি পাবেন। যত বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবেন, তত বেশি অর্থ উপার্জন করবেন। সর্বাধিক মুনাফা অর্জনকে সিস্টেমের সবকিছুকে আমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ভূমিকা পালনের শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

নেপালের জলবিদ্যুৎ ভাগ করার জন্য দক্ষিণ এশিয়া গ্রিডের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার নেপাল ও ভুটানের উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ শেয়ার করার জন্য একটি দক্ষিণ এশিয়া গ্রিড স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বাকুতে জলবায়ু সম্মেলনের সাইডলাইনে সোশ্যাল বিজনেস গ্রুপের সঙ্গে এক বৈঠকে এ আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সংযোগকারী বিদ্যুতের গ্রিডের অভাবে হিমালয় অঞ্চলের দেশগুলোর বেশিরভাগ জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনা এখনও অব্যবহৃত রয়ে গেছে।

নেপালের কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশটির ৪০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, যা ভারত ও বাংলাদেশের মতো বড় দেশগুলোর জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানকে দক্ষিণ এশিয়া গ্রিড তৈরির কথা ভাবতে হবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ সহজেই নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আনতে পারে। কেননা এটি বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৪০ মাইল দূরে। নেপালের জলবিদ্যুৎ দামেও সুলভ হবে।’

আজারবাইজানের রাজধানীতে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ বন্যা রোধ এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পানির সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পানি ব্যবস্থাপনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘পানি আমাদের প্রধান পরিবেশগত সমস্যা। আমাদের এমনভাবে পানি ব্যবস্থাপনা করতে হবে যাতে এটি প্রকৃতির জন্য সহায়ক হয়।’

তিনি সামাজিক ব্যবসায়িক সভায় বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যুব উন্নয়ন ও দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের ওপরও জোর দিয়েছে। আর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আয়োজিত বার্ষিক টি-টোয়েন্টি বিপিএল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালীন জানুয়ারিতে তরুণদের জন্য একটি উৎসবের আয়োজন করবে সরকার। ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো ও আইওসি প্রেসিডেন্ট টমাস বাখ উৎসবে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। নারী ফুটবলের জন্য একটি টুর্নামেন্টেরও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা দেশের সব জায়গায় উৎসব করার চেষ্টা করছি।

অধ্যাপক ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ এবং শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের নৃশংস স্বৈরশাসনের অবসান ঘটানো জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কেও কথা বলেন। তিনি কপ-২৯-এর মূল বিষয় এবং কার্বন ক্রেডিট নিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান আলোচনার বিষয়েও কথা বলেন। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় নতুন অর্থনৈতিক কাঠামোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এবং পৃথিবী ও মানুষের জন্য কাজ করে এমন একটি নতুন সভ্যতা তৈরি করার প্রচেষ্টায় বিশ্বের একটি নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো দরকার। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে এলডিসি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯-এর সাইডলাইনে এ বৈঠক হয়।

পাঁচটি প্রধান জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ স্বল্পোন্নত দেশ-নেপাল, মালাউই, গাম্বিয়া, লাইবেরিয়া এবং বাংলাদেশের নেতারা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যোগ দেন।

আমাদের একটি নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো দরকার যা জনগণের সেবা করবে উল্লেখ করে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বের তরুণদের জন্য একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করতে ভবিষ্যতের জন্য জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষক সম্মেলনে সমর্থন করি। আমরা একটি অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করেছি এবং এটি শুধু বর্জ্য এবং বর্জ্য তৈরি করে। আমাদের শূন্য বর্জ্যরে বিশ্ব তৈরি করতে হবে। প্রতি বছর কপ জলবায়ু সম্মেলন করা উচিত নয়।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিশ্বের কী প্রয়োজন তা আমরা জানি এবং এর জন্য আমাদের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা উচিত। এটি দেশ অনুযায়ী হওয়া উচিত এবং আমাদের দীর্ঘমেয়াদি প্রশমনের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। আমাদের প্রতি বছর এখানে দেখা করার দরকার নেই। প্রতি বছর আলোচনার জন্য মিটিং করা সময়সাপেক্ষ, অপচয়মূলক এবং অপমানজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বর্তমান পদ্ধতিটি বিশ্বের বেশিরভাগ চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা জলবায়ু আলোচনার জন্য একটি নতুন পদ্ধতির আহ্বান জানান।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলো সবচেয়ে বড় অবিচারের সম্মুখীন হয়েছে। আমরা আপনাদের বলতে চাই যে আমরা আপনাদের বিষয়ে গুরুত্ব দিই।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমনের জন্য একটি বৃহত্তর তহবিল সুরক্ষিত করার জন্য এলডিসিগুলোকে কঠোর আলোচনা এবং ‘গুরুতর প্রক্রিয়া’ তৈরি করতে হবে।

বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর আহ্বান ড. ইউনূসের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও ওষুধ কোম্পানিগুলোকে নতুনভাবে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত এক সাইডলাইন অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে এ আহ্বান জানান তিনি।

আগের দিন প্রফেসর ইউনূস কপ-২৯-এ ওয়ার্ল্ড লিডারস ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটের উদ্বোধন অধিবেশনে ভাষণ দেন। এ ছাড়া বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে সোশ্যাল বিজনেস গ্রুপের সঙ্গে এক বৈঠকে একথা বলেন তিনি।

ঋণ পাওয়া নিশ্চিত না করে জীবিকার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না : প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ঋণ একটি মানবাধিকার। কারণ এটি মানুষের জীবিকার সঙ্গে সম্পর্কিত। তিনি বলেন, ঋণ পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত না করে আপনি জীবিকার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না।

মঙ্গলবার আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯-এর এক সাইড ইভেন্টে বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন তিনি। সম্মেলনের বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস যৌথভাবে ‘এ গ্লোবাল কনভারসেশন : অ্যাকসেস টু ফাইন্যান্স ফর স্মল স্কেল ফার্মার্স’ শিরোনামের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়াজ হামিদুল্লাহ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন, যেখানে নেদারল্যান্ডসের জলবায়ু দূত বোরবন-পারমার ডাচ প্রিন্স জেইম বার্নার্ডো উপস্থিত ছিলেন। ডাচ রাজপুত্র হাইলাইট করেছেন, কীভাবে ক্রেডিট, বীমা, বিনিয়োগ, গবেষণা এবং অর্থ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে এবং জোর দিয়েছিল যে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ কৃষকের এখন এই সহায়তা প্রয়োজন। ইভেন্টে বক্তৃতা দিতে গিয়ে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ইভন পিন্টো বলেন, কৃষকরা ঋণ পাওয়ার পর থেকে বিশ্বব্যাপী ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ডাচ উদ্যোক্তা উন্নয়ন ব্যাংক এফএমও-এর একজন পরিচালক জোরিম শ্রেভেন ঋণ অধিকারের বিষয়ে প্রসারিত নৈতিক সমর্থনের জন্য অধ্যাপক ইউনূসকে স্বাগত জানিয়েছেন, এটি জনগণের জানার অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত। ইন্টার প্রেস সার্ভিসের (আইপিএস) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারহানা হক রহমান বলেন, বর্তমানে ৫৫০ মিলিয়ন ক্ষুদ্র পরিবারের কৃষক সারা বিশ্বে দুই বিলিয়ন মানুষকে খাওয়াচ্ছে। একই কথা বলেন আইপিএসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর নোরাম।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, একজন কৃষককে ঋণ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হলে তিনি উদ্যোক্তা হতে পারেন।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ব্যবসার জন্য অর্থ এবং বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়, আর একজন কৃষক শুধু ফসল ফলান না, বাজারে বিক্রিও করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যদি তাকে ঋণের সুযোগ দেওয়া হয়, তবে তিনি অন্য কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কিনতে এবং তার জীবনকে উন্নত করার জন্য বিক্রি করতে পারবেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশগুলোকে গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল অনুসরণ করে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে নতুন করে সাজানো উচিত যাতে কৃষকদের জন্য ঋণ সহজলভ্য করা যায়, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী।

প্রতিটি দেশে একটি সামাজিক ব্যবসা ব্যাংকিং আইন থাকা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, বর্তমানে সারা বিশ্বের অন্তত ১১০টি বিশ্ববিদ্যালয় একটি কোর্স হিসেবে সামাজিক ব্যবসা শেখাচ্ছে।

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

শূন্য কার্বনভিত্তিক জীবনধারা গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

আপডেট সময় ০৯:৪৬:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

পৃথিবীকে জলবায়ু বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য ‘শূন্য বর্জ্য ও শূন্য কার্বন’-এর ওপর ভিত্তি করে একটি নতুন জীবনধারা গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, বেঁচে থাকার জন্য, আমাদের আরেকটি সংস্কৃতি গঠন করতে হবে। একটি ভিন্ন জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে আরেকটি পাল্টা সংস্কৃতি গড়তে হবে। এটি হবে শূন্য বর্জ্যরে ওপর ভিত্তি করে। এ সংস্কৃতি নিত্যপণ্যের ব্যবহারকে সীমিত করবে, কোনো বর্জ্য অবশিষ্ট রাখবে না। এতে একটি নতুন পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে তিনটি শূন্যভিত্তিক তার দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন উপস্থাপন করে।

একইসঙ্গে নেপাল ও ভুটানের উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ শেয়ার করার জন্য একটি দক্ষিণ এশিয়া গ্রিড স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এবং পৃথিবী ও মানুষের জন্য কাজ করে এমন একটি নতুন সভ্যতা তৈরি করার প্রচেষ্টায় বিশ্বের একটি নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো দরকার বলে মনে করেন নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ।

আর বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও ওষুধ কোম্পানিগুলোকে নতুনভাবে সাজানোর তাগিদ দেন তিনি। এ ছাড়া জীবিকার অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঋণ পাওয়া নিশ্চিত করার গুরুত্ব আরোপ করেছেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯-এর ‘ওয়ার্ল্ড লিডারস ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিট’-এর উদ্বোধন অধিবেশনসহ জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও অন্যান্য বিশ্বনেতার সঙ্গে সাইড আলোচনায় এসব বিষয়ে আলোকপাত করে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এ জীবনযাত্রাও হবে শূন্য কার্বনের ওপর ভিত্তি করে যেখানে কোনো জীবাশ্ম জ্বালানি থাকবে না, শুধু পুনর্নবায়নযোগ্য শক্তি থাকবে। এতে এমন একটি অর্থনীতি হবে যা প্রাথমিকভাবে সামাজিক ব্যবসার মতো ব্যক্তিগত পর্যায়ে শূন্য মুনাফার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হবে।
সামাজিক ব্যবসাকে সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নন-ডিভিডেন্ড ব্যবসা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, সামাজিক ব্যবসার একটি বিশাল অংশ পরিবেশ ও মানবজাতির সুরক্ষায় মনোযোগ দেবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের জীবন কেবল সুরক্ষিতই হবে না, গুণগতভাবে উন্নত হবে। এটি তরুণদের জন্য উদ্যোক্তা হওয়ার পথ সহজতর করবে। উদ্যোক্তা হওয়ার নতুন শিক্ষার মাধ্যমে তরুণরা প্রস্তুত হবে। চাকরিপ্রার্থী তৈরির শিক্ষা উদ্যোক্তাকেন্দ্রিক শিক্ষা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে।’

পরিবেশের সুরক্ষার জন্য একটি নতুন জীবনধারার প্রয়োজন উল্লেখ করে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. ইউনূস বলেন, নতুন জীবনধারা চাপিয়ে দেওয়া হবে না, এটি পছন্দমতো বেছে নিতে হবে।’

তিনি বলেন, তরুণরা সেই জীবনধারাকে পছন্দ হিসেবে বেছে নেবে। প্রতিটি তরুণ তিন শূন্যভিত্তিক ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠবে। এগুলো হচ্ছে-শূন্য নেট কার্বন নির্গমন, শুধু সামাজিক ব্যবসা গড়ে তোলার মাধ্যমে শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে পরিণত করার মাধ্যমে শূন্য বেকারত্ব।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষ তিন শূন্যভিত্তিক ব্যক্তি হিসেবে বেড়ে উঠবে এবং সারাজীবন তিন শূন্যভিত্তিক ব্যক্তি হিসেবে থাকবে। এটি নতুন সভ্যতা গড়ে তুলবে। এর জন্য আমাদের যা করতে হবে তা হলো এ গ্রহের নিরাপত্তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি নতুন জীবনধারা গ্রহণ করা যেখানে সবাই বসবাস করে। আজকের তরুণ প্রজন্ম বাকিটা করবে। তারা তাদের গ্রহকে ভালোবাসে।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমি আশা করি আপনারা এই স্বপ্ন দেখায় আমার সঙ্গে যোগ দেবেন। আমরা যদি একসঙ্গে স্বপ্ন দেখি তবে তা সম্ভব হবে।’

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু সংকট তীব্রতর হচ্ছে এবং সে কারণে মানবসভ্যতা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মানুষ আত্ম-বিধ্বংসী মূল্যবোধের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আত্মরক্ষাত্মক ও আত্মশক্তিবর্ধক একটি নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনের জন্য আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক, আর্থিক ও যুব শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা, এই গ্রহের মানব বাসিন্দারা এই গ্রহের ধ্বংসের কারণ।

তিনি বলেন, মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে এটি করছে এবং তারা এমন একটি জীবনধারা বেছে নিয়েছে যা পরিবেশের বিরুদ্ধে কাজ করে। তারা এটিকে একটি অর্থনৈতিক কাঠামো দিয়ে ন্যায্যতা দেয়, যা এ গ্রহব্যবস্থার মতো প্রাকৃতিক হিসেবে বিবেচিত হয়। এই অর্থনৈতিক কাঠামো সীমাহীন খরচের ওপর ভিত্তি করে চলছে। আপনি যত বেশি ব্যবহার করবেন তত বেশি প্রবৃদ্ধি পাবেন। যত বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবেন, তত বেশি অর্থ উপার্জন করবেন। সর্বাধিক মুনাফা অর্জনকে সিস্টেমের সবকিছুকে আমাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ভূমিকা পালনের শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

নেপালের জলবিদ্যুৎ ভাগ করার জন্য দক্ষিণ এশিয়া গ্রিডের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার নেপাল ও ভুটানের উৎপাদিত জলবিদ্যুৎ শেয়ার করার জন্য একটি দক্ষিণ এশিয়া গ্রিড স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বাকুতে জলবায়ু সম্মেলনের সাইডলাইনে সোশ্যাল বিজনেস গ্রুপের সঙ্গে এক বৈঠকে এ আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সংযোগকারী বিদ্যুতের গ্রিডের অভাবে হিমালয় অঞ্চলের দেশগুলোর বেশিরভাগ জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনা এখনও অব্যবহৃত রয়ে গেছে।

নেপালের কর্মকর্তারা বলেছেন, দেশটির ৪০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, যা ভারত ও বাংলাদেশের মতো বড় দেশগুলোর জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানকে দক্ষিণ এশিয়া গ্রিড তৈরির কথা ভাবতে হবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ সহজেই নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আনতে পারে। কেননা এটি বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৪০ মাইল দূরে। নেপালের জলবিদ্যুৎ দামেও সুলভ হবে।’

আজারবাইজানের রাজধানীতে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ বন্যা রোধ এবং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পানির সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পানি ব্যবস্থাপনাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘পানি আমাদের প্রধান পরিবেশগত সমস্যা। আমাদের এমনভাবে পানি ব্যবস্থাপনা করতে হবে যাতে এটি প্রকৃতির জন্য সহায়ক হয়।’

তিনি সামাজিক ব্যবসায়িক সভায় বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যুব উন্নয়ন ও দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের ওপরও জোর দিয়েছে। আর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আয়োজিত বার্ষিক টি-টোয়েন্টি বিপিএল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালীন জানুয়ারিতে তরুণদের জন্য একটি উৎসবের আয়োজন করবে সরকার। ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো ও আইওসি প্রেসিডেন্ট টমাস বাখ উৎসবে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। নারী ফুটবলের জন্য একটি টুর্নামেন্টেরও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা দেশের সব জায়গায় উৎসব করার চেষ্টা করছি।

অধ্যাপক ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ এবং শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের নৃশংস স্বৈরশাসনের অবসান ঘটানো জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কেও কথা বলেন। তিনি কপ-২৯-এর মূল বিষয় এবং কার্বন ক্রেডিট নিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান আলোচনার বিষয়েও কথা বলেন। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় নতুন অর্থনৈতিক কাঠামোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এবং পৃথিবী ও মানুষের জন্য কাজ করে এমন একটি নতুন সভ্যতা তৈরি করার প্রচেষ্টায় বিশ্বের একটি নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো দরকার। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে এলডিসি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯-এর সাইডলাইনে এ বৈঠক হয়।

পাঁচটি প্রধান জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ স্বল্পোন্নত দেশ-নেপাল, মালাউই, গাম্বিয়া, লাইবেরিয়া এবং বাংলাদেশের নেতারা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে যোগ দেন।

আমাদের একটি নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো দরকার যা জনগণের সেবা করবে উল্লেখ করে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বের তরুণদের জন্য একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করতে ভবিষ্যতের জন্য জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষক সম্মেলনে সমর্থন করি। আমরা একটি অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করেছি এবং এটি শুধু বর্জ্য এবং বর্জ্য তৈরি করে। আমাদের শূন্য বর্জ্যরে বিশ্ব তৈরি করতে হবে। প্রতি বছর কপ জলবায়ু সম্মেলন করা উচিত নয়।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিশ্বের কী প্রয়োজন তা আমরা জানি এবং এর জন্য আমাদের একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা উচিত। এটি দেশ অনুযায়ী হওয়া উচিত এবং আমাদের দীর্ঘমেয়াদি প্রশমনের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। আমাদের প্রতি বছর এখানে দেখা করার দরকার নেই। প্রতি বছর আলোচনার জন্য মিটিং করা সময়সাপেক্ষ, অপচয়মূলক এবং অপমানজনক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বর্তমান পদ্ধতিটি বিশ্বের বেশিরভাগ চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা জলবায়ু আলোচনার জন্য একটি নতুন পদ্ধতির আহ্বান জানান।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলো সবচেয়ে বড় অবিচারের সম্মুখীন হয়েছে। আমরা আপনাদের বলতে চাই যে আমরা আপনাদের বিষয়ে গুরুত্ব দিই।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমনের জন্য একটি বৃহত্তর তহবিল সুরক্ষিত করার জন্য এলডিসিগুলোকে কঠোর আলোচনা এবং ‘গুরুতর প্রক্রিয়া’ তৈরি করতে হবে।

বৈশ্বিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর আহ্বান ড. ইউনূসের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও ওষুধ কোম্পানিগুলোকে নতুনভাবে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত এক সাইডলাইন অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে এ আহ্বান জানান তিনি।

আগের দিন প্রফেসর ইউনূস কপ-২৯-এ ওয়ার্ল্ড লিডারস ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিটের উদ্বোধন অধিবেশনে ভাষণ দেন। এ ছাড়া বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের ফাঁকে সোশ্যাল বিজনেস গ্রুপের সঙ্গে এক বৈঠকে একথা বলেন তিনি।

ঋণ পাওয়া নিশ্চিত না করে জীবিকার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না : প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ঋণ একটি মানবাধিকার। কারণ এটি মানুষের জীবিকার সঙ্গে সম্পর্কিত। তিনি বলেন, ঋণ পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত না করে আপনি জীবিকার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না।

মঙ্গলবার আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে কপ-২৯-এর এক সাইড ইভেন্টে বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন তিনি। সম্মেলনের বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস যৌথভাবে ‘এ গ্লোবাল কনভারসেশন : অ্যাকসেস টু ফাইন্যান্স ফর স্মল স্কেল ফার্মার্স’ শিরোনামের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়াজ হামিদুল্লাহ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন, যেখানে নেদারল্যান্ডসের জলবায়ু দূত বোরবন-পারমার ডাচ প্রিন্স জেইম বার্নার্ডো উপস্থিত ছিলেন। ডাচ রাজপুত্র হাইলাইট করেছেন, কীভাবে ক্রেডিট, বীমা, বিনিয়োগ, গবেষণা এবং অর্থ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে এবং জোর দিয়েছিল যে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ কৃষকের এখন এই সহায়তা প্রয়োজন। ইভেন্টে বক্তৃতা দিতে গিয়ে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ইভন পিন্টো বলেন, কৃষকরা ঋণ পাওয়ার পর থেকে বিশ্বব্যাপী ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ডাচ উদ্যোক্তা উন্নয়ন ব্যাংক এফএমও-এর একজন পরিচালক জোরিম শ্রেভেন ঋণ অধিকারের বিষয়ে প্রসারিত নৈতিক সমর্থনের জন্য অধ্যাপক ইউনূসকে স্বাগত জানিয়েছেন, এটি জনগণের জানার অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত। ইন্টার প্রেস সার্ভিসের (আইপিএস) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারহানা হক রহমান বলেন, বর্তমানে ৫৫০ মিলিয়ন ক্ষুদ্র পরিবারের কৃষক সারা বিশ্বে দুই বিলিয়ন মানুষকে খাওয়াচ্ছে। একই কথা বলেন আইপিএসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর নোরাম।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, একজন কৃষককে ঋণ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হলে তিনি উদ্যোক্তা হতে পারেন।

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ব্যবসার জন্য অর্থ এবং বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়, আর একজন কৃষক শুধু ফসল ফলান না, বাজারে বিক্রিও করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যদি তাকে ঋণের সুযোগ দেওয়া হয়, তবে তিনি অন্য কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কিনতে এবং তার জীবনকে উন্নত করার জন্য বিক্রি করতে পারবেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশগুলোকে গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল অনুসরণ করে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে নতুন করে সাজানো উচিত যাতে কৃষকদের জন্য ঋণ সহজলভ্য করা যায়, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী।

প্রতিটি দেশে একটি সামাজিক ব্যবসা ব্যাংকিং আইন থাকা উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, বর্তমানে সারা বিশ্বের অন্তত ১১০টি বিশ্ববিদ্যালয় একটি কোর্স হিসেবে সামাজিক ব্যবসা শেখাচ্ছে।