ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুলনায় ২৮৯ কোটি টাকার মাছ ও ফসলের ক্ষতি

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে জলোচ্ছ্বাস এবং জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ফসলের জমি ও মাছের ঘেরসহ লোকালয়। বাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে মাছের ঘের। ফসলের মাঠ নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৭৯৬ জন কৃষক। ক্ষতি হয়েছে ৪২ কোটি ৯৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯০ টাকার ফসলের। লোনা পানিতে প্লাবিত হয়ে ভেসে গেছে ৩ হাজার ৬০০ পুকুর এবং ৯ হাজার ১১৫টি ঘেরের মাছ, চিংড়ি, কাকড়া, পোনা। এতে ক্ষতি হয়েছে ২৪৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদের।

খুলনা জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, রিমালের আঘাতে খুলনার নয়টি উপজেলার মধ্যে কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া ও রূপসা এই ছয়টির ৩৮টি ইউনিয়নের মৎস্যসম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবে ছয়টি উপজেলার ৩৫৫ দশমিক ৩০ হেক্টর জমির ৩ হাজার ৬০০টি পুকুর এবং ১০ হাজার ২২৩ দশমিক ৭৫ হেক্টর জমির ৯ হাজার ১১৫টি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেইসঙ্গে এক হাজার ৫৯০ হেক্টর জমির এক হাজার ৩৫৬টি কাকড়া/কুচিয়া খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবারের ঝড়ে মোট ক্ষতি হয়েছে ২৪৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার মৎস্যসম্পদ। যার মধ্যে ৬৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা মূল্যের ৩ হাজার ৭৮ মেট্রিক টন মাছ, ১১৪ কোটি ৬৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ২ হাজার ৫৬৪ মেট্রিক টন চিংড়ি, ২০ কোটি ৫৭ হাজার টাকা মূল্যের ৬৩৬ মেট্রিক টন পোনা, ১৮ কোটি ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ১০২ দশমিক ২০ মেট্রিক টন কাকড়া ও কুচিয়া, ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ২৭০ মেট্রিক টন পিএল, ২০ লাখ টাকা মূল্যের ২০টি নৌকা-ট্রলার-জলযান এবং ১৬ কোটি ১১ লাখ টাকার অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, ‘রিমালের প্রভাবে খুলনায় মৎস্যচাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২৪৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার সাদা মাছ, চিংড়ি, পোনা, কাকড়া ও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে।’

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঝড়ে খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলের ১৩ হাজার ৭৯৬ জন কৃষকের ১৭ হাজার ৭৯৬ দশমিক ৫০ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক হাজার ৬৮ দশমিক ৪০ হেক্টর জমির ১৫ হাজার ৩৭৮ দশমিক ২০ মেট্রিক টন ফসল। যার মূল্য ৪২ কোটি ৯৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯০ টাকা। এর মধ্যে ৭৭ জন কৃষকের আউশ ধানের বীজতলার ৫৪ দশমিক ৫০ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়ে ক্ষতি হয়েছে ৭৮ হাজার ৮০০ টাকার, ৩৯ জন কৃষকের এক হাজার ৭৫২ দশমিক ৫০ হেক্টর জমির আউশের আবাদে ক্ষতি হয়েছে ১১ লাখ ৬৩ হাজার ৪০০ টাকার, ১৩৫ জন কৃষকের এক হাজার ৪৪৭ হেক্টর জমির পাটের ক্ষতি হয়েছে ২৪ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা, ৫ হাজার ৮৪৪ জন কৃষকের ৫ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমির সবজিতে ক্ষতি ২৩ কোটি ৮৯ লাখ ২০ হাজার টাকা, ৩৫ জন কৃষকের ২১ হেক্টর জমির টমেটোর ক্ষতি ১২ লাখ টাকা, ৭৯১ জন কৃষকের ৪৮৫ হেক্টর জমির তিলে ক্ষতি ৫৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা, ৪৫১ জন কৃষকের আক্রান্ত ২৭০ হেক্টর জমির মুগ ডালে ক্ষতি ২২ লাখ ৩৬ হাজার ৬৪০ টাকা, ২৮৫ জন কৃষকের ১৭৫ হেক্টর জমির মরিচে ক্ষতি ৮৫ লাখ ৭৩ হাজার ৪০০ টাকা। তবে ৩৩ হেক্টর জমির আদা, ২০৩ হেক্টর জমির হলুদ, ১১৮ হেক্টর জমির তরমুজ, ৭২ হেক্টরের আখ, ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমির বোনা আমন এবং ৩০ হেক্টর জমির চিনাবাদাম আক্রান্ত হলেও আর্থিক ক্ষতি দেখানো হয়নি।

এ ছাড়া ২ জন কৃষকের আক্রান্ত ১ দশমিক ৫০ হেক্টর জমির ভুট্টায় ক্ষতি ৬৩ হাজার ৭৫০ টাকা, ৩ হাজার ৮৬৫ জন কৃষকের এক হাজার ৭০৫ হেক্টর জমির আমের ক্ষতি ১০ কোটি ২৭ লাখ ৫ হাজার ৬০০ টাকা, ৬০ জন কৃষকের ৭৭ হেক্টর জমির লিচুতে ক্ষতি ৪০ লাখ টাকা, ৭৬৭ জন কৃষকের ৩১০ হেক্টর জমির পেঁপের ক্ষতি এক কোটি ২৭ লাখ ৫ হাজার টাকা, এক হাজার ২৩৯ জন কৃষকের ৫৪৫ হেক্টর জমির কলার ক্ষতি ২ কোটি ৭২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, ৮১ জন কৃষকের ৮৭৭ হেক্টর পানের ক্ষতি এক কোটি ৬৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪০০ টাকা এবং ১২৫ জন কৃষকের ১১৫ হেক্টর জমির অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৬৩ লাখ টাকার।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ফসলের জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে।’

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

খুলনায় ২৮৯ কোটি টাকার মাছ ও ফসলের ক্ষতি

আপডেট সময় ০৮:৫৯:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ জুন ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে জলোচ্ছ্বাস এবং জোয়ারের পানিতে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ফসলের জমি ও মাছের ঘেরসহ লোকালয়। বাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে মাছের ঘের। ফসলের মাঠ নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৭৯৬ জন কৃষক। ক্ষতি হয়েছে ৪২ কোটি ৯৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯০ টাকার ফসলের। লোনা পানিতে প্লাবিত হয়ে ভেসে গেছে ৩ হাজার ৬০০ পুকুর এবং ৯ হাজার ১১৫টি ঘেরের মাছ, চিংড়ি, কাকড়া, পোনা। এতে ক্ষতি হয়েছে ২৪৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদের।

খুলনা জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, রিমালের আঘাতে খুলনার নয়টি উপজেলার মধ্যে কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া ও রূপসা এই ছয়টির ৩৮টি ইউনিয়নের মৎস্যসম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবে ছয়টি উপজেলার ৩৫৫ দশমিক ৩০ হেক্টর জমির ৩ হাজার ৬০০টি পুকুর এবং ১০ হাজার ২২৩ দশমিক ৭৫ হেক্টর জমির ৯ হাজার ১১৫টি ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেইসঙ্গে এক হাজার ৫৯০ হেক্টর জমির এক হাজার ৩৫৬টি কাকড়া/কুচিয়া খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবারের ঝড়ে মোট ক্ষতি হয়েছে ২৪৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার মৎস্যসম্পদ। যার মধ্যে ৬৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা মূল্যের ৩ হাজার ৭৮ মেট্রিক টন মাছ, ১১৪ কোটি ৬৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ২ হাজার ৫৬৪ মেট্রিক টন চিংড়ি, ২০ কোটি ৫৭ হাজার টাকা মূল্যের ৬৩৬ মেট্রিক টন পোনা, ১৮ কোটি ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ১০২ দশমিক ২০ মেট্রিক টন কাকড়া ও কুচিয়া, ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ২৭০ মেট্রিক টন পিএল, ২০ লাখ টাকা মূল্যের ২০টি নৌকা-ট্রলার-জলযান এবং ১৬ কোটি ১১ লাখ টাকার অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, ‘রিমালের প্রভাবে খুলনায় মৎস্যচাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২৪৫ কোটি ৯৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার সাদা মাছ, চিংড়ি, পোনা, কাকড়া ও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে।’

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঝড়ে খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলের ১৩ হাজার ৭৯৬ জন কৃষকের ১৭ হাজার ৭৯৬ দশমিক ৫০ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক হাজার ৬৮ দশমিক ৪০ হেক্টর জমির ১৫ হাজার ৩৭৮ দশমিক ২০ মেট্রিক টন ফসল। যার মূল্য ৪২ কোটি ৯৮ লাখ ৮৭ হাজার ২৯০ টাকা। এর মধ্যে ৭৭ জন কৃষকের আউশ ধানের বীজতলার ৫৪ দশমিক ৫০ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়ে ক্ষতি হয়েছে ৭৮ হাজার ৮০০ টাকার, ৩৯ জন কৃষকের এক হাজার ৭৫২ দশমিক ৫০ হেক্টর জমির আউশের আবাদে ক্ষতি হয়েছে ১১ লাখ ৬৩ হাজার ৪০০ টাকার, ১৩৫ জন কৃষকের এক হাজার ৪৪৭ হেক্টর জমির পাটের ক্ষতি হয়েছে ২৪ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা, ৫ হাজার ৮৪৪ জন কৃষকের ৫ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমির সবজিতে ক্ষতি ২৩ কোটি ৮৯ লাখ ২০ হাজার টাকা, ৩৫ জন কৃষকের ২১ হেক্টর জমির টমেটোর ক্ষতি ১২ লাখ টাকা, ৭৯১ জন কৃষকের ৪৮৫ হেক্টর জমির তিলে ক্ষতি ৫৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা, ৪৫১ জন কৃষকের আক্রান্ত ২৭০ হেক্টর জমির মুগ ডালে ক্ষতি ২২ লাখ ৩৬ হাজার ৬৪০ টাকা, ২৮৫ জন কৃষকের ১৭৫ হেক্টর জমির মরিচে ক্ষতি ৮৫ লাখ ৭৩ হাজার ৪০০ টাকা। তবে ৩৩ হেক্টর জমির আদা, ২০৩ হেক্টর জমির হলুদ, ১১৮ হেক্টর জমির তরমুজ, ৭২ হেক্টরের আখ, ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমির বোনা আমন এবং ৩০ হেক্টর জমির চিনাবাদাম আক্রান্ত হলেও আর্থিক ক্ষতি দেখানো হয়নি।

এ ছাড়া ২ জন কৃষকের আক্রান্ত ১ দশমিক ৫০ হেক্টর জমির ভুট্টায় ক্ষতি ৬৩ হাজার ৭৫০ টাকা, ৩ হাজার ৮৬৫ জন কৃষকের এক হাজার ৭০৫ হেক্টর জমির আমের ক্ষতি ১০ কোটি ২৭ লাখ ৫ হাজার ৬০০ টাকা, ৬০ জন কৃষকের ৭৭ হেক্টর জমির লিচুতে ক্ষতি ৪০ লাখ টাকা, ৭৬৭ জন কৃষকের ৩১০ হেক্টর জমির পেঁপের ক্ষতি এক কোটি ২৭ লাখ ৫ হাজার টাকা, এক হাজার ২৩৯ জন কৃষকের ৫৪৫ হেক্টর জমির কলার ক্ষতি ২ কোটি ৭২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, ৮১ জন কৃষকের ৮৭৭ হেক্টর পানের ক্ষতি এক কোটি ৬৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪০০ টাকা এবং ১২৫ জন কৃষকের ১১৫ হেক্টর জমির অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে ৬৩ লাখ টাকার।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ফসলের জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে।’