ঢাকা , সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রমজানে ক্রয়মূল্যে পণ্য বিক্রি করছেন ওমর ফারুক

রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে কৃষক, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের কষ্টে দিনযাপন করতে হয়। এসব মানুষের কথা চিন্তা করে রমজানে প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী লাভ ছাড়াই ক্রয়মূল্যে বিক্রি করছেন ওমর ফারুক নামের এক মুদি ব্যবসায়ী।

এদিকে তুলনামূলক কম দামে পণ্য কিনতে পেরে হাসি ফুটছে কৃষক, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের মুখে। মানবিক এমন উদ্যোগের কারণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধরা তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

শুক্রবার (২২ মার্চ) শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার জয়নগর বাজারে ওমর ফারুক খানের মালিকানাধীন আবদুল্লাহ ভ্যারাইটিজ স্টোরে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

আব্দুল্লাহ ভ্যারাইটিজ স্টোর ও ক্রেতাদের কাছ থেকে জানা যায়, পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে কৃষক, শ্রমিকসহ গরিব মানুষের কথা চিন্তা করে ওমর ফারুক খান তার দোকানের ১২টি পণ্য বিক্রি করছেন বিনা লাভে। বাজারের অন্য সব দোকানের তুলনায় মূল্য কম হওয়ায় ক্রেতারাও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। তার দোকানে রোজা উপলক্ষ্যে প্রতি কেজি ছোলা ১০১ টাকা, চিড়া ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, চিনি ১৩৬ টাকা, আখের গুড় ১১১ টাকা, বেসন ৮৫ টাকা, মুড়ি ৭০ টাকা, সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা, লাচ্ছা সেমাই ১২০ টাকা, খোলা সেমাই ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কনডেন্স মিল্ক ও খেজুরও বিক্রি করছেন লাভ ছাড়াই। এসব পণ্যের মূল্যতালিকা তিনি তার দোকানে সাঁটিয়ে দিয়েছেন। মূল্যতালিকা দেখে কৃষক, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ হাসিমুখে পণ্য ক্রয় করছেন।

শহীদুল ইসলাম ফুটপাতে ফুচকাসহ মুখরোচক খাবার বিক্রি করেন। তিনি এসেছেন আব্দুল্লাহ ভ্যারাইটিজ স্টোরে রমজানের জিনিসপত্র ক্রয় করতে। জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজান এলেই এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। এতে আমাদের মতো গরিব মানুষের অনেক কষ্ট হয়। সেখানে ওমর ফারুক ভাই রমজানের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাজারের অন্য দোকানের তুলনায় ৫ থেকে ২০ টাকা কম মূল্যে বিক্রি করছেন। তার দোকান থেকে আজ চিনি, ছোলা, তেল কিনেছি। রোজা রেখে ওমর ফারুক ভাইয়ের জন্য দোয়া করি, তার মতো যদি অন্য ব্যবসায়ীরাও চিন্তা করতেন, তাহলে আমরা সুখ-শান্তিতে বাঁচতে পারতাম।

রতন নামের আরেক ক্রেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফেসবুকে দেখেছি ওমর ফারুকের দোকানে কম দামে রোজার পণ্য বিক্রি চলছে। এরপর আমি তার দোকান থেকে রমজানের মালামাল কিনেছি। মধ্যপ্রাচ্যের মতো বাংলাদেশেও কম দামে পণ্য বিক্রির উদাহরণ সৃষ্টি করেছে ওমর ফারুক।

দোকান মালিক ওমর ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজান এলেই বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরি করে পণ্যসামগ্রী মূল্য বৃদ্ধি করে দেয়। অন্যদিকে অন্যান্য দেশে এই সময় পণ্যের দাম কমে যায়। জয়নগর এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির। এসব মানুষের কথা চিন্তা করেই ক্রয়মূল্যে রমজানের পণ্যসামগ্রী বিক্রি করছি। যে দামে আমার কেনা, সেই দামেই বিক্রি করছি। কম দামে পণ্য কিনতে পেরে মানুষ যখন হাসি দেয়, তখন আমার বুকটা আনন্দে নেচে ওঠে।

তিনি আরও বলেন, ফেসবুকে একজন পোস্ট দিয়েছিল, এরপর থেকেই আমার দোকানে ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। দোয়া করবেন, আমি যেন পুরো রমজান মাস রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ক্রয়মূল্যে বিক্রি করতে পেরে মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারি।

জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. এস্কান্দার খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওমর ফারুক সম্পর্কে আমার ভাতিজা হয়। রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ক্রয়মূল্যেই বিক্রি করছে সে। ক্রয়মূল্যে বিক্রি করায় বাজারের অন্য দোকানের তুলনায় তার দোকানের পণ্যের মূল্য অনেকটাই কম। এতে এলাকার সাধারণ ক্রেতারা আনন্দ সহকারে রমজানের পণ্যসামগ্রী কিনতে পারছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ওমর ফারুককে আমি সাধুবাদ জানাই।

জাতীয় ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর শরীয়তপুরের সহকারী পরিচালক সুজন কাজী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওমর ফারুক নামে জয়নগর বাজারের এক ব্যবসায়ী ক্রয়মূল্যে রমজানের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি করছে। আমরা তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। অন্য ব্যবসায়ীরা যদি সরকার নির্ধারিত মূল্যেও পণ্য বিক্রি করে তাহলে সাধারণ মানুষ ঠিকভাবে পণ্য ক্রয় করতে পারবে।

ওমর ফারুক খানকে ধন্যবাদসহ সাধুবাদ জানিয়েছেন শরীয়তপুর-১ (পালং-জাজিরা) আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশ ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ। এ দেশে সকল ধর্মের মানুষ মিলেমিশে সম্প্রতির সঙ্গে বসবাস করছে। রমজান মুসলমানদের পবিত্র একটি মাস। এই মাসে সকল ব্যবসায়ীদের ওমর ফারুকের মতো হওয়া উচিত। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করায় আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ওমর ফারুককে ধন্যবাদসহ সাধুবাদ জানাই।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

রমজানে ক্রয়মূল্যে পণ্য বিক্রি করছেন ওমর ফারুক

আপডেট সময় ০৩:২৭:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪

রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে কৃষক, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের কষ্টে দিনযাপন করতে হয়। এসব মানুষের কথা চিন্তা করে রমজানে প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী লাভ ছাড়াই ক্রয়মূল্যে বিক্রি করছেন ওমর ফারুক নামের এক মুদি ব্যবসায়ী।

এদিকে তুলনামূলক কম দামে পণ্য কিনতে পেরে হাসি ফুটছে কৃষক, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের মুখে। মানবিক এমন উদ্যোগের কারণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধরা তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

শুক্রবার (২২ মার্চ) শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার জয়নগর বাজারে ওমর ফারুক খানের মালিকানাধীন আবদুল্লাহ ভ্যারাইটিজ স্টোরে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

আব্দুল্লাহ ভ্যারাইটিজ স্টোর ও ক্রেতাদের কাছ থেকে জানা যায়, পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে কৃষক, শ্রমিকসহ গরিব মানুষের কথা চিন্তা করে ওমর ফারুক খান তার দোকানের ১২টি পণ্য বিক্রি করছেন বিনা লাভে। বাজারের অন্য সব দোকানের তুলনায় মূল্য কম হওয়ায় ক্রেতারাও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। তার দোকানে রোজা উপলক্ষ্যে প্রতি কেজি ছোলা ১০১ টাকা, চিড়া ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, চিনি ১৩৬ টাকা, আখের গুড় ১১১ টাকা, বেসন ৮৫ টাকা, মুড়ি ৭০ টাকা, সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা, লাচ্ছা সেমাই ১২০ টাকা, খোলা সেমাই ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কনডেন্স মিল্ক ও খেজুরও বিক্রি করছেন লাভ ছাড়াই। এসব পণ্যের মূল্যতালিকা তিনি তার দোকানে সাঁটিয়ে দিয়েছেন। মূল্যতালিকা দেখে কৃষক, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ হাসিমুখে পণ্য ক্রয় করছেন।

শহীদুল ইসলাম ফুটপাতে ফুচকাসহ মুখরোচক খাবার বিক্রি করেন। তিনি এসেছেন আব্দুল্লাহ ভ্যারাইটিজ স্টোরে রমজানের জিনিসপত্র ক্রয় করতে। জানতে চাইলে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজান এলেই এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরি করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। এতে আমাদের মতো গরিব মানুষের অনেক কষ্ট হয়। সেখানে ওমর ফারুক ভাই রমজানের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাজারের অন্য দোকানের তুলনায় ৫ থেকে ২০ টাকা কম মূল্যে বিক্রি করছেন। তার দোকান থেকে আজ চিনি, ছোলা, তেল কিনেছি। রোজা রেখে ওমর ফারুক ভাইয়ের জন্য দোয়া করি, তার মতো যদি অন্য ব্যবসায়ীরাও চিন্তা করতেন, তাহলে আমরা সুখ-শান্তিতে বাঁচতে পারতাম।

রতন নামের আরেক ক্রেতা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফেসবুকে দেখেছি ওমর ফারুকের দোকানে কম দামে রোজার পণ্য বিক্রি চলছে। এরপর আমি তার দোকান থেকে রমজানের মালামাল কিনেছি। মধ্যপ্রাচ্যের মতো বাংলাদেশেও কম দামে পণ্য বিক্রির উদাহরণ সৃষ্টি করেছে ওমর ফারুক।

দোকান মালিক ওমর ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজান এলেই বাংলাদেশের অনেক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরি করে পণ্যসামগ্রী মূল্য বৃদ্ধি করে দেয়। অন্যদিকে অন্যান্য দেশে এই সময় পণ্যের দাম কমে যায়। জয়নগর এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির। এসব মানুষের কথা চিন্তা করেই ক্রয়মূল্যে রমজানের পণ্যসামগ্রী বিক্রি করছি। যে দামে আমার কেনা, সেই দামেই বিক্রি করছি। কম দামে পণ্য কিনতে পেরে মানুষ যখন হাসি দেয়, তখন আমার বুকটা আনন্দে নেচে ওঠে।

তিনি আরও বলেন, ফেসবুকে একজন পোস্ট দিয়েছিল, এরপর থেকেই আমার দোকানে ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। দোয়া করবেন, আমি যেন পুরো রমজান মাস রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ক্রয়মূল্যে বিক্রি করতে পেরে মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারি।

জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. এস্কান্দার খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওমর ফারুক সম্পর্কে আমার ভাতিজা হয়। রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ক্রয়মূল্যেই বিক্রি করছে সে। ক্রয়মূল্যে বিক্রি করায় বাজারের অন্য দোকানের তুলনায় তার দোকানের পণ্যের মূল্য অনেকটাই কম। এতে এলাকার সাধারণ ক্রেতারা আনন্দ সহকারে রমজানের পণ্যসামগ্রী কিনতে পারছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ওমর ফারুককে আমি সাধুবাদ জানাই।

জাতীয় ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর শরীয়তপুরের সহকারী পরিচালক সুজন কাজী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওমর ফারুক নামে জয়নগর বাজারের এক ব্যবসায়ী ক্রয়মূল্যে রমজানের প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি করছে। আমরা তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। অন্য ব্যবসায়ীরা যদি সরকার নির্ধারিত মূল্যেও পণ্য বিক্রি করে তাহলে সাধারণ মানুষ ঠিকভাবে পণ্য ক্রয় করতে পারবে।

ওমর ফারুক খানকে ধন্যবাদসহ সাধুবাদ জানিয়েছেন শরীয়তপুর-১ (পালং-জাজিরা) আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশ ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ। এ দেশে সকল ধর্মের মানুষ মিলেমিশে সম্প্রতির সঙ্গে বসবাস করছে। রমজান মুসলমানদের পবিত্র একটি মাস। এই মাসে সকল ব্যবসায়ীদের ওমর ফারুকের মতো হওয়া উচিত। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করায় আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ওমর ফারুককে ধন্যবাদসহ সাধুবাদ জানাই।