ঢাকা , শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন পড়লে লজ্জিত হই

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সম্পর্কে যে মূল্যায়ন প্রকাশ করা হয়েছে তা অত্যন্ত লজ্জার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, এটা পড়লে এত লজ্জিত হই যে, কী দেশ হল আমার! রিপোর্টে এসেছে যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্র এখানে নেই, মানবাধিকারের লেশমাত্র এখানে নেই। বর্তমান সরকার সচেতনভাবে বাংলাদেশকে গণতন্ত্র থেকে সরিয়ে নিয়েছে। তিনি আরো বলেন, বন্দুকযুদ্ধে মানুষ মেরে ফেলা হচ্ছে, গুম হচ্ছে, বিনা বিচারে মানুষ মরছে। মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের সত্য বলার স্বাধীনতা নেই। এখানে একজনকে গ্রেপ্তার করতে না পেলে তার আত্মীয়-স্বজনকে অত্যাচার করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে। বিদেশে কেউ এই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে তার আত্মীয়-স্বজনকে এখানে নির্যাতন করা হচ্ছে, এই ধরনের ভয়াবহ চিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে এসেছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির সাবেক মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমানের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্র ‘২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে গত সোমবার প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বিষয়ক অংশের শিরোনাম, ‘২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস: বাংলাদেশ’। এতে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতন, কারাগারের পরিস্থিতি, ধরপাকড়, আটক বা গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া ও কারাবন্দীদের সঙ্গে আচরণ, বিচারব্যবস্থা, মানবাধিকারকর্মী-নাগরিক সমাজ ও সরকার সমালোচকদের প্রতি হুমকি-হয়রানি-নির্যাতন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ ও সংগঠন করার অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, ‘শরণার্থীদের’ সুরক্ষা, মৌলিক সেবাপ্রাপ্তির সুবিধা, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের স্বাধীনতা, দুর্নীতি, সরকারি কাজকর্মে স্বচ্ছতার ঘাটতি, বৈষম্য ও সামাজিক নির্যাতন, মানব পাচার, শ্রমিকদের অধিকারসহ নানা বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে সংসদীয় গণতন্ত্রের সরকার গঠন হয়, যেখানে বেশিরভাগ ক্ষমতা ন্যস্ত প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কাছে। একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যালটে নিয়ম বহির্ভূত সিলমারা এবং বিরোধী এজেন্ট ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ অনিয়ম এমন সব অভিযোগের কারণে ওই নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের কাছে অবাধ ও স্বচ্ছ হিসাবে বিবেচিত হয়নি।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই রিপোর্ট বের হওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতারা বলা শুরু করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজের দিকে তাকায় না। যুক্তরাষ্ট্র নিজের দিকে তাকায় বলেই এই ধরনের প্রতিবেদন তৈরি করে। সে দেশ গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। গণতন্ত্রের নেতা হিসেবে তারা কাজ করছে। আর আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সচেতনভাবে একনায়কতন্ত্র, কর্তৃত্ববাদ, ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে।

আওয়ামী লীগ সচেতনভাবে একদলীয় শাসন কায়েম করতে চায় অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে দিয়েছে এবং মানুষের যে ন্যূনতম অধিকার, সেগুলো সব কেড়ে নিয়েছে। এরা কথায় কথায় গণতন্ত্রের কথা বলে, এরা কথায় কথায় সংবিধানের কথা বলে। এমনভাবে বলে যে, তারাই একমাত্র এদেশের মালিক।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো রাখতে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকার হটাতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ নির্মাণে যেসব মানুষ অবদান রাখছে তাদেরকে স্মরণ করা হয় না। তাদের নামগুলো পরিকল্পিতভাবে ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে সরকরর। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তাদের হীনমন্যতার কারণে শুধুমাত্র একজনকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

বিএনপির সাবেক মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমানের স্বরণ করে তিনি বলেন, আজ আমরা যেসব কথা বলছি বাংলাদেশ স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, দেশের গণতন্ত্র, ন্যায় নীতি, অর্থনীতির বৈষম্য দূর করে যথাসাধ্য সাম্য প্রতিষ্ঠা করা, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ছিল কেএম ওবায়দুর রহমানের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন আজ ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে। যে দেশে গণতন্ত্র নেই সে দেশে মানবাধিকার থাকতে পারে না। দেশের মানবাধিকার নেই সেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। যে দেশে জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত হয় না, সেই দেশে জনগণের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা থাকে না।

জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, আওয়ামী লীগ ভোটে বিশ্বাস করে না, নির্বাচনে বিশ্বাস করে না, গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে না, ভোটাধিকারে বিশ্বাস করে না। তারা ভোট চুরি করে ব্যালট ডাকাতি করে নির্বাচিত হয়। নিজেরা ব্যালট বাক্সে ব্যালট ঢুকিয়ে দিয়ে বলে যে, জনগণ আমাদেরকে ভোট দিয়েছে।

তিনি বলেন, এটা পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি নয়, এখন চলছে পার্লামেন্টারি ডিক্টেটরশিপ, এক নায়কতন্ত্র চলছে। সংবিধানের সর্বময় ক্ষমতা একজন। দেশের মালিকানায় জনগণ নেই। এই সরকার হটাতে হবে, গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জনগণকে বাদ দিয়ে অব্যহতভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখার রাজনীতি সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ। সংবিধানকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে তারা। জনগণকে বাইরে রেখে সংবিধানের কথা বলা আওয়ামী লীগের মুখে শোভা পায় না। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা ভোগ করছে তারা।

তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের কাছে জনগণ বলে কোন শব্দ নেই, দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চলছে। আর এজন্য সংবিধাননের দোহাই দিয়ে জনগণকে বাইরে রেখে ক্ষমতা দখল করেছে। কোনও আলাপ আলোচনার সুযোগ নেই, রাস্তা দখল করে ফয়সালা হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ জনগণ ছাড়বে না।

সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমানের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভার আয়োজন করে বিএনপি। কেএম ওবায়দুর রহমান স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মিয়া সম্রাটের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, শাহজাদা মিয়া, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নাজিম উদ্দিন আলম, কামাল উদ্দিন চৌধুরী, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, জাগপার আসাদুর রহমান খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, যুবদলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন, উলামা দলের মাওলানা শাহ মুহাম্মদ নেছারুল হক, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সাইফুল ইসলাম, মাদারীপুর জেলা বিএনপির জাহান্দার আলী জাহান এবং মরহুম কেএম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ প্রমুখ।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

নিতাইগঞ্জে দুই প্রতিষ্ঠানকে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন পড়লে লজ্জিত হই

আপডেট সময় ০৪:০৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ ২০২৩

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সম্পর্কে যে মূল্যায়ন প্রকাশ করা হয়েছে তা অত্যন্ত লজ্জার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, এটা পড়লে এত লজ্জিত হই যে, কী দেশ হল আমার! রিপোর্টে এসেছে যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের লেশমাত্র এখানে নেই, মানবাধিকারের লেশমাত্র এখানে নেই। বর্তমান সরকার সচেতনভাবে বাংলাদেশকে গণতন্ত্র থেকে সরিয়ে নিয়েছে। তিনি আরো বলেন, বন্দুকযুদ্ধে মানুষ মেরে ফেলা হচ্ছে, গুম হচ্ছে, বিনা বিচারে মানুষ মরছে। মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের সত্য বলার স্বাধীনতা নেই। এখানে একজনকে গ্রেপ্তার করতে না পেলে তার আত্মীয়-স্বজনকে অত্যাচার করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে। বিদেশে কেউ এই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে তার আত্মীয়-স্বজনকে এখানে নির্যাতন করা হচ্ছে, এই ধরনের ভয়াবহ চিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে এসেছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির সাবেক মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমানের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্র ‘২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে গত সোমবার প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বিষয়ক অংশের শিরোনাম, ‘২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস: বাংলাদেশ’। এতে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, নির্যাতন, কারাগারের পরিস্থিতি, ধরপাকড়, আটক বা গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া ও কারাবন্দীদের সঙ্গে আচরণ, বিচারব্যবস্থা, মানবাধিকারকর্মী-নাগরিক সমাজ ও সরকার সমালোচকদের প্রতি হুমকি-হয়রানি-নির্যাতন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ ও সংগঠন করার অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, ‘শরণার্থীদের’ সুরক্ষা, মৌলিক সেবাপ্রাপ্তির সুবিধা, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের স্বাধীনতা, দুর্নীতি, সরকারি কাজকর্মে স্বচ্ছতার ঘাটতি, বৈষম্য ও সামাজিক নির্যাতন, মানব পাচার, শ্রমিকদের অধিকারসহ নানা বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে সংসদীয় গণতন্ত্রের সরকার গঠন হয়, যেখানে বেশিরভাগ ক্ষমতা ন্যস্ত প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কাছে। একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যালটে নিয়ম বহির্ভূত সিলমারা এবং বিরোধী এজেন্ট ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ অনিয়ম এমন সব অভিযোগের কারণে ওই নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের কাছে অবাধ ও স্বচ্ছ হিসাবে বিবেচিত হয়নি।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই রিপোর্ট বের হওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতারা বলা শুরু করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র নিজের দিকে তাকায় না। যুক্তরাষ্ট্র নিজের দিকে তাকায় বলেই এই ধরনের প্রতিবেদন তৈরি করে। সে দেশ গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। গণতন্ত্রের নেতা হিসেবে তারা কাজ করছে। আর আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সচেতনভাবে একনায়কতন্ত্র, কর্তৃত্ববাদ, ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে।

আওয়ামী লীগ সচেতনভাবে একদলীয় শাসন কায়েম করতে চায় অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে দিয়েছে এবং মানুষের যে ন্যূনতম অধিকার, সেগুলো সব কেড়ে নিয়েছে। এরা কথায় কথায় গণতন্ত্রের কথা বলে, এরা কথায় কথায় সংবিধানের কথা বলে। এমনভাবে বলে যে, তারাই একমাত্র এদেশের মালিক।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো রাখতে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকার হটাতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ নির্মাণে যেসব মানুষ অবদান রাখছে তাদেরকে স্মরণ করা হয় না। তাদের নামগুলো পরিকল্পিতভাবে ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে সরকরর। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তাদের হীনমন্যতার কারণে শুধুমাত্র একজনকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

বিএনপির সাবেক মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমানের স্বরণ করে তিনি বলেন, আজ আমরা যেসব কথা বলছি বাংলাদেশ স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, দেশের গণতন্ত্র, ন্যায় নীতি, অর্থনীতির বৈষম্য দূর করে যথাসাধ্য সাম্য প্রতিষ্ঠা করা, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ছিল কেএম ওবায়দুর রহমানের স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন আজ ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে। যে দেশে গণতন্ত্র নেই সে দেশে মানবাধিকার থাকতে পারে না। দেশের মানবাধিকার নেই সেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। যে দেশে জনগণের ভোটে সরকার নির্বাচিত হয় না, সেই দেশে জনগণের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা থাকে না।

জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, আওয়ামী লীগ ভোটে বিশ্বাস করে না, নির্বাচনে বিশ্বাস করে না, গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে না, ভোটাধিকারে বিশ্বাস করে না। তারা ভোট চুরি করে ব্যালট ডাকাতি করে নির্বাচিত হয়। নিজেরা ব্যালট বাক্সে ব্যালট ঢুকিয়ে দিয়ে বলে যে, জনগণ আমাদেরকে ভোট দিয়েছে।

তিনি বলেন, এটা পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি নয়, এখন চলছে পার্লামেন্টারি ডিক্টেটরশিপ, এক নায়কতন্ত্র চলছে। সংবিধানের সর্বময় ক্ষমতা একজন। দেশের মালিকানায় জনগণ নেই। এই সরকার হটাতে হবে, গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জনগণকে বাদ দিয়ে অব্যহতভাবে ক্ষমতা দখল করে রাখার রাজনীতি সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ। সংবিধানকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছে তারা। জনগণকে বাইরে রেখে সংবিধানের কথা বলা আওয়ামী লীগের মুখে শোভা পায় না। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা ভোগ করছে তারা।

তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের কাছে জনগণ বলে কোন শব্দ নেই, দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চলছে। আর এজন্য সংবিধাননের দোহাই দিয়ে জনগণকে বাইরে রেখে ক্ষমতা দখল করেছে। কোনও আলাপ আলোচনার সুযোগ নেই, রাস্তা দখল করে ফয়সালা হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ জনগণ ছাড়বে না।

সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমানের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভার আয়োজন করে বিএনপি। কেএম ওবায়দুর রহমান স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মিয়া সম্রাটের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, শাহজাদা মিয়া, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নাজিম উদ্দিন আলম, কামাল উদ্দিন চৌধুরী, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, জাগপার আসাদুর রহমান খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, যুবদলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন, উলামা দলের মাওলানা শাহ মুহাম্মদ নেছারুল হক, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের সাইফুল ইসলাম, মাদারীপুর জেলা বিএনপির জাহান্দার আলী জাহান এবং মরহুম কেএম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ প্রমুখ।