ঢাকা , রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গুনে গুনে কেনা হচ্ছে পেঁয়াজ!

মাছ-মাংস, শাক-সবজিসহ প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ ক্রেতারা এমনিতেই নাকাল। নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের তো ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ অবস্থা। তার ওপর গত কয়েকদিন ধরে অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। গত শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে যে পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, সন্ধ্যা পার হতেই সে দাম ২০০ ছাড়ায়। ‘পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে ভারত’- এমন খবরে দেশের বাজারজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ‘প্যানিক’। ক্রেতারা জানান, আগে কেজি করে নিলেও এখন গুনে গুনে নিচ্ছেন অনেকেই। কারণ, দাম অতিরিক্ত হওয়ার কারণে বেশি নেওয়ার সাহস পাচ্ছেন না তারা।

রাজধানীর ভিন্ন ভিন্ন বাজারে যেমন রয়েছে পেঁয়াজের দামের তারতম্য, তেমনি একই বাজারের মধ্যেও রয়েছে দামের হেরফের। কারণ জানাতে গিয়ে এক ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘সংবাদকর্মী দেখলে অনেক দোকানি কম দামে ছেড়ে দেয়’।

ভারতীয় পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরে চলতি সপ্তাহের শুরুর দিন থেকেই অস্থিতিশীল পেঁয়াজের বাজার। এ নিয়ে ভোক্তাদের নানা অভিযোগ। পাল্টা যুক্তি রয়েছে ব্যবসায়ীদেরও। গত দুই দিনের তুলনায় মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) কিছুটা কমলেও, নিয়ন্ত্রণে আসেনি দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে কমে যাবে দাম।

মিরপুরের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, পুরনো দেশি পেঁয়াজ কিছুটা কমে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় মিলছে। এ ছাড়া, গত ১১ ডিসেম্বর বাজারে ঢুকেছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। তুলনামূলক কম দামে ১৪০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে নতুন পেঁয়াজ। তবে এ পেঁয়াজের মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন!

জানতে চাইলে আবুল কালাম নামে এক বিক্রেতা বলেন, ‘২০০ টাকা কেজি কিনে কয়েক জায়গায় খরচ দিয়ে নিয়ে এসে ২১০ বিক্রি করি। আর নতুন পেঁয়াজ একেবারে কাঁচা, অনেকে নিতে চায় না। তবে নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যাবে’।

বাজার ঘুরে ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া সবখানে একইরকম- হতাশ, ক্ষুব্ধ আর অসহায়। অন্যদিকে, বিক্রেতাদের মধ্যে দেখা গেল মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় আড়তদারদের দুষছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এক ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে পেঁয়াজ নেই, কারণ তারা (আড়তদাররা) দেবে না। দোকানের সামনে স্যাম্পল রেখেছে দুয়েক বস্তা, বাকি সব সরানো হয়েছে। এজন্য বাড়তি দামে আমাদের কিনতে হচ্ছে। কাস্টমারের থেকে এক কেজি পেঁয়াজের দাম ২১০ বা ২২০ টাকা চাইতে তো আমারই বিবেকে লাগে।

বিক্রেতারা জানান, বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজের কলি ও পাতা পাওয়া যাচ্ছে। অল্প কিছু দেশি পেঁয়াজ ঢুকেছে। তবে মূল মৌসুম শুরু হতে হতে আরও প্রায় একমাস লেগে যেতে পারে। আড়তদাররা যদি পেঁয়াজ গুদামজাত না করে দাম কমায়, তাহলে তারাও কম দামে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন।

ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ-ক্যাবের সহ সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করেছে, সঙ্গে সঙ্গে এটা দ্বিগুণ হয়ে যাবে; যেখানে পেঁয়াজ আগে থেকেই আছে, আমরা মনে করি এটা সুশাসনের ঘাটতি। ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি দাম নির্ধারণ করছে, সরকারের কোন বিধি-বিধানের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। আর সরকারের বিভিন্ন বিভাগ যারা যুক্ত, তাদের নীরবতাও প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা বারবার বলেছি সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটা বার্ষিক পরিকল্পনা থাকতে হবে। কখন আমদানি করবে আর কখন দেশীয় উৎপাদন দিয়ে চাহিদা পূরণ হবে, এ রকম কোনও উদ্যোগ দেখিনি। কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকা সংযুক্ত অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

গুনে গুনে কেনা হচ্ছে পেঁয়াজ!

আপডেট সময় ১০:০৩:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩

মাছ-মাংস, শাক-সবজিসহ প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ ক্রেতারা এমনিতেই নাকাল। নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের তো ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ অবস্থা। তার ওপর গত কয়েকদিন ধরে অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। গত শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে যে পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, সন্ধ্যা পার হতেই সে দাম ২০০ ছাড়ায়। ‘পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে ভারত’- এমন খবরে দেশের বাজারজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে ‘প্যানিক’। ক্রেতারা জানান, আগে কেজি করে নিলেও এখন গুনে গুনে নিচ্ছেন অনেকেই। কারণ, দাম অতিরিক্ত হওয়ার কারণে বেশি নেওয়ার সাহস পাচ্ছেন না তারা।

রাজধানীর ভিন্ন ভিন্ন বাজারে যেমন রয়েছে পেঁয়াজের দামের তারতম্য, তেমনি একই বাজারের মধ্যেও রয়েছে দামের হেরফের। কারণ জানাতে গিয়ে এক ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘সংবাদকর্মী দেখলে অনেক দোকানি কম দামে ছেড়ে দেয়’।

ভারতীয় পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের খবরে চলতি সপ্তাহের শুরুর দিন থেকেই অস্থিতিশীল পেঁয়াজের বাজার। এ নিয়ে ভোক্তাদের নানা অভিযোগ। পাল্টা যুক্তি রয়েছে ব্যবসায়ীদেরও। গত দুই দিনের তুলনায় মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) কিছুটা কমলেও, নিয়ন্ত্রণে আসেনি দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে কমে যাবে দাম।

মিরপুরের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, পুরনো দেশি পেঁয়াজ কিছুটা কমে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। আর ভারতীয় পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় মিলছে। এ ছাড়া, গত ১১ ডিসেম্বর বাজারে ঢুকেছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। তুলনামূলক কম দামে ১৪০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে নতুন পেঁয়াজ। তবে এ পেঁয়াজের মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন!

জানতে চাইলে আবুল কালাম নামে এক বিক্রেতা বলেন, ‘২০০ টাকা কেজি কিনে কয়েক জায়গায় খরচ দিয়ে নিয়ে এসে ২১০ বিক্রি করি। আর নতুন পেঁয়াজ একেবারে কাঁচা, অনেকে নিতে চায় না। তবে নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যাবে’।

বাজার ঘুরে ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া সবখানে একইরকম- হতাশ, ক্ষুব্ধ আর অসহায়। অন্যদিকে, বিক্রেতাদের মধ্যে দেখা গেল মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় আড়তদারদের দুষছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এক ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে পেঁয়াজ নেই, কারণ তারা (আড়তদাররা) দেবে না। দোকানের সামনে স্যাম্পল রেখেছে দুয়েক বস্তা, বাকি সব সরানো হয়েছে। এজন্য বাড়তি দামে আমাদের কিনতে হচ্ছে। কাস্টমারের থেকে এক কেজি পেঁয়াজের দাম ২১০ বা ২২০ টাকা চাইতে তো আমারই বিবেকে লাগে।

বিক্রেতারা জানান, বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজের কলি ও পাতা পাওয়া যাচ্ছে। অল্প কিছু দেশি পেঁয়াজ ঢুকেছে। তবে মূল মৌসুম শুরু হতে হতে আরও প্রায় একমাস লেগে যেতে পারে। আড়তদাররা যদি পেঁয়াজ গুদামজাত না করে দাম কমায়, তাহলে তারাও কম দামে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন।

ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ-ক্যাবের সহ সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ভারত রপ্তানি বন্ধ করেছে, সঙ্গে সঙ্গে এটা দ্বিগুণ হয়ে যাবে; যেখানে পেঁয়াজ আগে থেকেই আছে, আমরা মনে করি এটা সুশাসনের ঘাটতি। ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি দাম নির্ধারণ করছে, সরকারের কোন বিধি-বিধানের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। আর সরকারের বিভিন্ন বিভাগ যারা যুক্ত, তাদের নীরবতাও প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা বারবার বলেছি সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের একটা বার্ষিক পরিকল্পনা থাকতে হবে। কখন আমদানি করবে আর কখন দেশীয় উৎপাদন দিয়ে চাহিদা পূরণ হবে, এ রকম কোনও উদ্যোগ দেখিনি। কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকা সংযুক্ত অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়িয়ে দিচ্ছে।