ঢাকা , রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কানায় কানায় পূর্ণ ইজতেমা ময়দান, আল্লাহকে খুশি করাই সবার চাওয়া

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামীকাল শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বাদ ফজর থেকে শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দানে জড়ো হয়েছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কয়েক লাখ মুসল্লি। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে পুরো ইজতেমা ময়দান। ময়দানে জায়গা না পেয়ে অনেকে আশপাশের সড়ক, ফুটপাত ও শৌচাগার ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ইজতেমা ময়দান ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। মুসল্লিরা বলছেন, কষ্ট মেনেই আল্লাহকে রাজি-খুশি করানোর জন্য তারা ইজতেমায় এসেছেন।

জায়গা না পেয়ে ময়দানের উত্তর পাশের ১০ নম্বর শৌচাগার ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়েছেন বগুড়া থেকে ইজতেমায় আসা মুসল্লি দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বুধবার ইজতেমা ময়দানে এসে জেলা খিত্তায় জায়গা না পেয়ে এই ভবনের ছাদে পলিথিন ও ত্রিপল টানিয়ে অবস্থান করছি।

একই কথা জানালেন নাটোরের চলনবিল থেকে আসা আরেক মুসল্লি জহির উদ্দিন। তিনি ২৮ জন মুসল্লি নিয়ে ইজতেমা ময়দানে এসেছেন। কিন্তু ইজতেমা ময়দানের মূল মাঠে সামিয়ানার নিচে স্থান না পেয়ে তিনিও ১০ নম্বর শৌচাগার ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়েছেন। একই এলাকার মুকুল হোসেন ২২ জন মুসল্লি নিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। তারা সবাই গতকাল বুধবার দুপুরে ময়দানে এসেছেন।

সুনামগঞ্জ থেকে ২১ জন সাথী নিয়ে ইজতেমায় এসেছেন আফির উদ্দিন। তিনি বলেন, জেলা খিত্তায় জায়গা না পেয়ে কামারপাড়া-স্টেশনরোড সড়কের ফুটপাতে বসেছি। সেখান থেকে ময়দানের মুরব্বিদের বয়ান শুনছি। বৃষ্টিতে কষ্ট হলেও আল্লাহকে রাজি খুশি করানোর জন্য কষ্ট মেনে নিয়েছেন বলে তিনি জানান।

 

এদিকে দিনভর আকাশ মেঘলা থাকলেও সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত সেভাবে বৃষ্টি হয়নি। কয়েক দফায় সামান্য গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছিল। তবে মাগরিবের নামাজের পর থেকে বৃষ্টি নামা শুরু হয়েছে। এতে বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন মুসল্লিরা।

ইজতেমায় আসা মুসল্লি আকরাম হোসেন বলেন, আমরা বিকেল থেকে রান্নার আয়োজন করছিলাম। মাগরিবের নামাজের পর রান্না চুলায় বসানোর পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টিতে আটকে গেলাম। এখন বৃষ্টি থামা ছাড়া রান্না করা যাবে না।

টঙ্গীর দত্তপাড়া থেকে ইজতেমায় আসা আক্কাস শেখ বলেন, বৃষ্টির মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বাসার দিকে চলে যাচ্ছি। ইজতেমা ময়দান থেকে বাসা কাছে হওয়ায় মালামাল রেখেই চলে যাচ্ছি। বৃষ্টি কমলে আবার চলে আসব।

 

বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে ইজতেমা ময়দানে দেশি-বিদেশি মুরব্বিরা বয়ান করছেন। মূল ময়দানে কোথাও বসার স্থান নেই। মুসল্লিরা যে যেখানে স্থান পেয়েছেন সেখানে বসেই মনোযোগ দিয়ে ঈমান ও আমলের বয়ান শুনছেন।

শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হচ্ছে। শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ। রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব। এ পর্বে অংশ নিচ্ছেন মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা।

এরপর চার দিন বিরতি দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার শুরু হবে ইজতেমা। ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২য় পর্ব। ওই পর্বে অংশ নেবেন মাওলানা সাদ-এর অনুসারীরা।

আগে বিশ্ব ইজতেমা হতো একবারই, ৩ দিন। মুসল্লিদের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় এবং ময়দানে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় সারা দেশের জেলাগুলোকে ২ ভাগে ভাগ করে ইজতেমা ২ পর্বে করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কয়েকবার সেই নিয়মে ইজতেমা ২ পর্বে হয়েছিল।

তবে তাবলিগ জামাতের অনুসারীদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে ওই পদ্ধতি আর টেকেনি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘সরকারি মীমাংসা’ মেনে নিয়ে দুই মুরুব্বির অনুসারীরা ২ পর্বে ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

কানায় কানায় পূর্ণ ইজতেমা ময়দান, আল্লাহকে খুশি করাই সবার চাওয়া

আপডেট সময় ০৪:১৫:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামীকাল শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বাদ ফজর থেকে শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দানে জড়ো হয়েছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কয়েক লাখ মুসল্লি। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে পুরো ইজতেমা ময়দান। ময়দানে জায়গা না পেয়ে অনেকে আশপাশের সড়ক, ফুটপাত ও শৌচাগার ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ইজতেমা ময়দান ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে। মুসল্লিরা বলছেন, কষ্ট মেনেই আল্লাহকে রাজি-খুশি করানোর জন্য তারা ইজতেমায় এসেছেন।

জায়গা না পেয়ে ময়দানের উত্তর পাশের ১০ নম্বর শৌচাগার ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়েছেন বগুড়া থেকে ইজতেমায় আসা মুসল্লি দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বুধবার ইজতেমা ময়দানে এসে জেলা খিত্তায় জায়গা না পেয়ে এই ভবনের ছাদে পলিথিন ও ত্রিপল টানিয়ে অবস্থান করছি।

একই কথা জানালেন নাটোরের চলনবিল থেকে আসা আরেক মুসল্লি জহির উদ্দিন। তিনি ২৮ জন মুসল্লি নিয়ে ইজতেমা ময়দানে এসেছেন। কিন্তু ইজতেমা ময়দানের মূল মাঠে সামিয়ানার নিচে স্থান না পেয়ে তিনিও ১০ নম্বর শৌচাগার ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়েছেন। একই এলাকার মুকুল হোসেন ২২ জন মুসল্লি নিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। তারা সবাই গতকাল বুধবার দুপুরে ময়দানে এসেছেন।

সুনামগঞ্জ থেকে ২১ জন সাথী নিয়ে ইজতেমায় এসেছেন আফির উদ্দিন। তিনি বলেন, জেলা খিত্তায় জায়গা না পেয়ে কামারপাড়া-স্টেশনরোড সড়কের ফুটপাতে বসেছি। সেখান থেকে ময়দানের মুরব্বিদের বয়ান শুনছি। বৃষ্টিতে কষ্ট হলেও আল্লাহকে রাজি খুশি করানোর জন্য কষ্ট মেনে নিয়েছেন বলে তিনি জানান।

 

এদিকে দিনভর আকাশ মেঘলা থাকলেও সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত সেভাবে বৃষ্টি হয়নি। কয়েক দফায় সামান্য গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছিল। তবে মাগরিবের নামাজের পর থেকে বৃষ্টি নামা শুরু হয়েছে। এতে বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন মুসল্লিরা।

ইজতেমায় আসা মুসল্লি আকরাম হোসেন বলেন, আমরা বিকেল থেকে রান্নার আয়োজন করছিলাম। মাগরিবের নামাজের পর রান্না চুলায় বসানোর পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টিতে আটকে গেলাম। এখন বৃষ্টি থামা ছাড়া রান্না করা যাবে না।

টঙ্গীর দত্তপাড়া থেকে ইজতেমায় আসা আক্কাস শেখ বলেন, বৃষ্টির মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বাসার দিকে চলে যাচ্ছি। ইজতেমা ময়দান থেকে বাসা কাছে হওয়ায় মালামাল রেখেই চলে যাচ্ছি। বৃষ্টি কমলে আবার চলে আসব।

 

বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে ইজতেমা ময়দানে দেশি-বিদেশি মুরব্বিরা বয়ান করছেন। মূল ময়দানে কোথাও বসার স্থান নেই। মুসল্লিরা যে যেখানে স্থান পেয়েছেন সেখানে বসেই মনোযোগ দিয়ে ঈমান ও আমলের বয়ান শুনছেন।

শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হচ্ছে। শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে দেশের বৃহত্তম জুমার নামাজ। রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব। এ পর্বে অংশ নিচ্ছেন মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা।

এরপর চার দিন বিরতি দিয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে আবার শুরু হবে ইজতেমা। ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২য় পর্ব। ওই পর্বে অংশ নেবেন মাওলানা সাদ-এর অনুসারীরা।

আগে বিশ্ব ইজতেমা হতো একবারই, ৩ দিন। মুসল্লিদের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় এবং ময়দানে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় সারা দেশের জেলাগুলোকে ২ ভাগে ভাগ করে ইজতেমা ২ পর্বে করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কয়েকবার সেই নিয়মে ইজতেমা ২ পর্বে হয়েছিল।

তবে তাবলিগ জামাতের অনুসারীদের নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে ওই পদ্ধতি আর টেকেনি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘সরকারি মীমাংসা’ মেনে নিয়ে দুই মুরুব্বির অনুসারীরা ২ পর্বে ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন।