ঢাকা , রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আইনজীবী ফোরাম থেকে খোকনকে অব্যাহতি

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম’ থেকে বিএনপি’র যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ফোরামের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদে দায়িত্ব গ্রহণ করায় তার বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়।
এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে গত শনিবার ফোরাম থেকে ব্যারিস্টার খোকনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। মাহবুবউদ্দিন খোকন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। পেশাজীবী সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ এই নেতাকে অব্যাহতি দেয়ায় গতকাল রোববার সুপ্রিম কোর্ট বারে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। খোকন সমর্থক আইনজীবীদের বক্তব্য হচ্ছে, তাকে যদি ফোরাম থেকে অব্যাহতিই দেয়া হবে তাহলে তাকে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে সভাপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছিলো কেন ? জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে কোন্ যুক্তিতে সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনে অংশ নিলো বিএনপি। তাদের মতে, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, দলীয় সমর্থন নিয়েই প্রার্থী হয়েছিলেন। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার আমলেই সুপ্রিম কোর্ট বার থেকে অন্তত: ৭ বার সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন, সেহেতু তার একটি জনপ্রিয়তা বিরোধী শিবিরের (আওয়ামীলীগ সমর্থক) আইনজীবীদের মধ্যেও রয়েছে। মাহবুবউদ্দিন খোকন নির্বাচিত হয়েছেন সাধারণ আইনজীবীদের ভোটে। তবে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের সমালোচকরা তুলে ধরছেন উল্টো দিক। তাদের মতে, সুপ্রিম কোর্ট বারের পুরো নির্বাচনটি ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ। ভোট গণনার আগে এটির ফলাফল ঘোষণা হয়ে যায়। ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনকে ‘জয়ী’ দেখানো হবে এটি ছিলো আওয়ামীলীগ প্যানেলের পূর্ব পরিকল্পনা। তাছাড়া যে ফোরাম তাকে মনোনয়ন দিয়েছিলো সেই ফোরামই তাকে দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বলেছে। ফোরামের নির্দেশনা অগ্রাহ্য করে ব্যারিস্টার খোকন সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তাই তাকে অব্যাহতি দেয়া ছাড়া ফোরামের সামনে কোনো পথ খোলা ছিলো না।

প্রসঙ্গত: সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নিবাচনে এবার ১৪টি পদের বিপরীতে সভাপতিসহ চারটি পদে বিজয়ী হয়েছিল বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল। অন্যদিকে সম্পাদকসহ ১০টি পদে বিজয়ী হয়েছে সরকার সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। গত ৬ ও ৭ মার্চ নির্বাচন শেষে ৯ মার্চ রাতে ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র অ্যাডভোকেট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল হিসেবে পরিচিত) বিজয়ীরা হচ্ছেন- সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন (খোকন) এবং সদস্য পদে সৈয়দ ফজলে এলাহী, ফাতিমা আক্তার ও মো: শফিকুল ইসলাম শফিক।

বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা প্যানেল হিসেবে পরিচিত) বিজয়ীরা হলেন, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মো: আবু ওবাঈদ হোসেন সেতু কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নূরুল হুদা আনসারী, সহ-সম্পাদক পদে মো: হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ন কবির। সদস্য পদে মো: বেলাল হোসেন শাহীন, খালেদ মোশাররফ রিপন, মো: রায়হান রনি ও রাশেদুল হক খোকন।
পরে বিএনপি সমর্থিত বিজয়ী সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ ৪ জনকে দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে গত ২৭ মার্চ চিঠি দেয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এ চিঠি উপেক্ষা করে গত ৪ এপ্রিল দায়িত্ব গ্রহণ করেন মাহবুবউদ্দিন খোকন। তবে নির্বাচিত অন্য ৩ জন এখনো দায়িত্ব গ্রহণ করেন নি।

মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চারজনকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বিগত দুই বছরের মতো এবারের নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনরা নজিরবিহীনভাবে ভোট জালিয়াতি, কারচুপি ও মনগড়া ফলাফল ঘোষণা করেছে। এমনকি সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগ দলীয় দুজন প্রার্থী, প্রথমে নাহিদ সুলতানা যুথী ও পরে শাহ মঞ্জুরুল হককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা নির্বাচনের অব্যবহিত পরে সমিতির অডিটোরিয়ামে হামলা চালিয়ে আইনজীবীদেরকে মারধর ও ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ওই ঘটনা আওয়ামী লীগের দুজন সম্পাদক প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত হলেও সরকারের একজন সরকারি বেতনভুক্ত আইন কর্মকর্তা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ও আরও তিনজন আইনজীবী ফোরামের নেতাকে আসামি করে শাহবাগ থানায় একটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

কামাল হোসাইন

হ্যালো আমি কামাল হোসাইন, আমি গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছি। ২০১৭ সাল থেকে এই পত্রিকার সাথে কাজ করছি। এভাবে এখানে আপনার প্রতিনিধিদের সম্পর্কে কিছু লিখতে পারবেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

আইনজীবী ফোরাম থেকে খোকনকে অব্যাহতি

আপডেট সময় ০৯:১৩:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম’ থেকে বিএনপি’র যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ফোরামের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির পদে দায়িত্ব গ্রহণ করায় তার বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়।
এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে গত শনিবার ফোরাম থেকে ব্যারিস্টার খোকনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। মাহবুবউদ্দিন খোকন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলেন। পেশাজীবী সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ এই নেতাকে অব্যাহতি দেয়ায় গতকাল রোববার সুপ্রিম কোর্ট বারে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। খোকন সমর্থক আইনজীবীদের বক্তব্য হচ্ছে, তাকে যদি ফোরাম থেকে অব্যাহতিই দেয়া হবে তাহলে তাকে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল থেকে সভাপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছিলো কেন ? জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে কোন্ যুক্তিতে সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচনে অংশ নিলো বিএনপি। তাদের মতে, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, দলীয় সমর্থন নিয়েই প্রার্থী হয়েছিলেন। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার আমলেই সুপ্রিম কোর্ট বার থেকে অন্তত: ৭ বার সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন, সেহেতু তার একটি জনপ্রিয়তা বিরোধী শিবিরের (আওয়ামীলীগ সমর্থক) আইনজীবীদের মধ্যেও রয়েছে। মাহবুবউদ্দিন খোকন নির্বাচিত হয়েছেন সাধারণ আইনজীবীদের ভোটে। তবে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের সমালোচকরা তুলে ধরছেন উল্টো দিক। তাদের মতে, সুপ্রিম কোর্ট বারের পুরো নির্বাচনটি ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ। ভোট গণনার আগে এটির ফলাফল ঘোষণা হয়ে যায়। ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনকে ‘জয়ী’ দেখানো হবে এটি ছিলো আওয়ামীলীগ প্যানেলের পূর্ব পরিকল্পনা। তাছাড়া যে ফোরাম তাকে মনোনয়ন দিয়েছিলো সেই ফোরামই তাকে দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে বলেছে। ফোরামের নির্দেশনা অগ্রাহ্য করে ব্যারিস্টার খোকন সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তাই তাকে অব্যাহতি দেয়া ছাড়া ফোরামের সামনে কোনো পথ খোলা ছিলো না।

প্রসঙ্গত: সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নিবাচনে এবার ১৪টি পদের বিপরীতে সভাপতিসহ চারটি পদে বিজয়ী হয়েছিল বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল। অন্যদিকে সম্পাদকসহ ১০টি পদে বিজয়ী হয়েছে সরকার সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। গত ৬ ও ৭ মার্চ নির্বাচন শেষে ৯ মার্চ রাতে ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক সিনিয়র অ্যাডভোকেট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল হিসেবে পরিচিত) বিজয়ীরা হচ্ছেন- সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন (খোকন) এবং সদস্য পদে সৈয়দ ফজলে এলাহী, ফাতিমা আক্তার ও মো: শফিকুল ইসলাম শফিক।

বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা প্যানেল হিসেবে পরিচিত) বিজয়ীরা হলেন, সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মো: আবু ওবাঈদ হোসেন সেতু কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নূরুল হুদা আনসারী, সহ-সম্পাদক পদে মো: হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ন কবির। সদস্য পদে মো: বেলাল হোসেন শাহীন, খালেদ মোশাররফ রিপন, মো: রায়হান রনি ও রাশেদুল হক খোকন।
পরে বিএনপি সমর্থিত বিজয়ী সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ ৪ জনকে দায়িত্ব গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে গত ২৭ মার্চ চিঠি দেয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এ চিঠি উপেক্ষা করে গত ৪ এপ্রিল দায়িত্ব গ্রহণ করেন মাহবুবউদ্দিন খোকন। তবে নির্বাচিত অন্য ৩ জন এখনো দায়িত্ব গ্রহণ করেন নি।

মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ চারজনকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বিগত দুই বছরের মতো এবারের নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনরা নজিরবিহীনভাবে ভোট জালিয়াতি, কারচুপি ও মনগড়া ফলাফল ঘোষণা করেছে। এমনকি সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগ দলীয় দুজন প্রার্থী, প্রথমে নাহিদ সুলতানা যুথী ও পরে শাহ মঞ্জুরুল হককে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা নির্বাচনের অব্যবহিত পরে সমিতির অডিটোরিয়ামে হামলা চালিয়ে আইনজীবীদেরকে মারধর ও ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ওই ঘটনা আওয়ামী লীগের দুজন সম্পাদক প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত হলেও সরকারের একজন সরকারি বেতনভুক্ত আইন কর্মকর্তা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ও আরও তিনজন আইনজীবী ফোরামের নেতাকে আসামি করে শাহবাগ থানায় একটি মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন।