শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নির্মাণকাজ ৯৮.৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। শিগগিরই সব কাজ শেষ করে টার্মিনালটি যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এমন সময় নির্মাণকাজের ব্যয় হিসেবে আরও ৩ হাজার কোটি টাকা দাবি করেছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। অতিরিক্ত কাজ করা হয়েছে উল্লেখ করে এই টাকা দাবি করে বেবিচককে চিঠি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই দাবির প্রেক্ষিতে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি বেশি কাজ করেছে কি না বা করে থাকলেও কী কাজ করেছে তা খতিয়ে দেখতে নিরীক্ষা কমিটি গঠন করেছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত ৮ অক্টোবর বিষয়টি নিরীক্ষা করার জন্য আট সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলীকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। এ ছাড়া সদস্য হিসেবে রয়েছেন প্রকল্পের চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদারের দুজন সদস্য, প্রকল্পে নিয়োজিত কনসালটেন্টের দুজন প্রতিনিধি, বুয়েটের দুজন প্রতিনিধি এবং থার্ড টার্মিনালের প্রকল্প পরিচালককে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এই কমিটির কাজ হচ্ছে, ভেরিয়েশন অর্ডার, ভ্যালু ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অন্যান্য দাবি পর্যালোচনা করে কমিয়ে নিয়ে আসা।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ ও তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের অক্টোবরে অনুমোদিত হয়। এটি বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে ২১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের টার্মিনালটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে জাপানের মিৎসুবিশি ও ফুজিতা করপোরেশন এবং কোরিয়ার স্যামসাংয়ের জয়েন্ট ভেঞ্চার ‘অ্যাভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম’। আগামী বছরের শেষ দিকে টার্মিনালটি চালুর করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বেবিচক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঠিকাদারের আবেদনটি জাস্টিফাই করা হচ্ছে। নিরীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ প্রফেসররা রয়েছেন। যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নকশার মধ্যে থাকা কাজই করেছে। প্রয়োজনে কিছু কাজ পরিবর্তন হয়েছে। তারা ওয়ার্ক অর্ডারের ভেতরেই কাজ পরিবর্তন করে অন্য কাজ করেছে, সেটির জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে। সেই কাজের মূল্য নির্ধারণ করবে এই কমিটি। এ ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ আগে দেখা হবে। ঠিকাদারের দাবি যুক্তিসঙ্গত না হলে তা প্রত্যাহার করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেবিচকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময়ের আলোকে বলেন, ঠিকাদার কাজের জন্য অতিরিক্ত ৩ হাজার কোটি টাকা দাবি করেছে। তারা কিছু কাজ করেছে। আসলে কতটুকু কাজ করেছে বা করেছে কি না সেটি খতিয়ে দেখতে মন্ত্রণালয় থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে বুয়েটের শিক্ষদের রাখা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে কমিটি দুটি সভা করবে। আমরা দেখব দেশের স্বার্থরক্ষা করে টাকা কতটুকু কমানো যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেবিচকের চিফ ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল আফরোজ বেবিচক চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
বেবিচকের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন টার্মিনালটি পুরোপুরি চালুর পর হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়বে আড়াইগুণ। এ বিমানবন্দরে বর্তমানে যে দুটি টার্মিনাল রয়েছে, তার যাত্রী ধারণক্ষমতা বছরে প্রায় ৭০ লাখ। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটির কাছাকাছি। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ রাখার অ্যাপ্রোন (উড়োজাহাজ পার্ক করার জায়গা) নির্মাণ করা হচ্ছে। ২ লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটারের টার্মিনাল ভবনের ভেতরে রয়েছে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া। টার্মিনালের ভেতরের ভবনটির নকশা তৈরি করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন।