রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) নারায়ণগঞ্জকে বলা হয়ে থাকে প্রাচ্যের ড্যান্ডি। হাজারো শিল্পকারখানা সমৃদ্ধ এ জেলায় লাখো তরুণ-তরুণী বেকার থাকছে। পরিবারের বোঝা হয়ে হতাশায় অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। আর এ সমস্যাকে সমাধানে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের বিএনপির সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী মুস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু। বেকারদের কর্মসংস্থান ও চাকরি প্রদানের ঘোষণা দিয়ে তিনি রীতিমত আলোচনায় আছেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতিও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ভিডিও প্রচারের পর বিষয়টি নিয়ে বেকারদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আশা আর স্বপ্ন।
শিক্ষানুরাগী, শিক্ষার্থী ও শ্রমিক নেতারা বলছেন, এখনই এ উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। নতুবা বেকারত্ব যেমন বাড়বে তেমনি ক্রমশ বিষয়টি নিয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ঘটতে পারে। বাড়বে মাদকাসক্তের সংখ্যা। জেলার তরুণদের বেকারত্ব নিয়ে কাজ করেন দিপু ভূঁইয়া। অবশেষে গত ২২ আগস্ট রূপগঞ্জের তারাব বিএনপি ও এর সহযোগি সংগঠনের এক উঠান বৈঠকে দিপু ভূইয়া বলেন, ‘দীর্ঘ বছর রূপগঞ্জের মানুষ এখানকার নেতৃত্ব দেয় না বিধায় এখানকার মানুষের দুঃখ বুঝে নাই। রূপগঞ্জের অনেক কারখানা মালিক হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিয়ে যাবেন কিন্তু রূপগঞ্জের মানুষ চাকরি পাবে না এটা হতে পারে না। রূপগঞ্জের মানুষকে চাকরি দিবেন না, কর্মসংস্থান করবেন না এটা মানা হবে না। আমি নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সকে সাথে নিয়ে চেষ্টা করবো যেন রূপগঞ্জের মানুষ আগে চাকরি পায়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ২০০৮ সাল হতেই রূপগঞ্জে এমপি ছিলেন আওয়ামী লীগের গোলাম দস্তগীর গাজী। তাঁর আদি নিবাস মুর্শিদাবাদে। পরে তিনি ঢাকাতে স্থানান্তর হন। ১৯৭৭ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচনে তার নির্বাচনী এলাকা কাকরাইল, সিদ্ধেশ্বরী, মালিবাগ, ইস্কাটন এবং মগবাজার থেকে কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালে রূপগঞ্জে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল সফিউল্লাহর সাথে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূইয়ার দূরত্ব সৃষ্টি হলে গাজীর উত্থান ঘটে। রূপগঞ্জের রূপসীতে একটি তৈরি বাড়ি কিনে সেখানকার নিবাসী হন। এরপর থেকেই শুরু করেন আওয়ামীলীগের রাজনীতি। ২০০৮ হতে ২০২৪ পর্যন্ত টানা এমপি হয়ে এলাকার সবকিছু নিয়ন্ত্রন নেন। পিএস হন সিরাজগঞ্জের এমদাদুল হক। গড়ে তোলেন শিল্পকারখানা। কিন্তু আদৌ ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি স্থানীয়দের। কারণ রূপগঞ্জে গাজীর ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার হলেও পারিবারিক কিংবা কোন ধরনের শিকড় ছিল না।
নারায়ণগঞ্জ সরকারী তোলারাম কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তাসরিক হোসাইন। তিনি বলেন, রূপগঞ্জের সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার কারখানা। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরেও রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ অনেক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখানকার মানুষ সহজেই চাকরি পায় না বিভিন্ন কোম্পানীতে। এ কারণে আমাদের মধ্যেও কিছুটা হতাশা রয়েছে। পড়াশোনা শেষ করে নিজের এলাকাতে চাকরি করতে পারলে ভালো হতো। তরুণ মাহফুজ আহম্মেদ অনিক। ¯œাতক পড়ছেন। তিনি বলেন, ওনাকে কথনো দেখিনি। তবে শুনেছি ভাল মানুষ। ওনার দ্বারা মানুষের উপকার হয়। ওনি চেষ্টা করলে আমাদের মতো বেকার যুবকদের জন্য কিছু করতে পারবেন। সে-ই চেষ্টাও নাকি করতেছেন। যেটা বিগত সময়ে রূপগঞ্জের কোন মন্ত্রী, এমপি কিংবা কোন নেতা করেননি। নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, সারাদেশের মধ্যে রূপগঞ্জ এখন একটি শিল্পজোন এলাকা। এখানে প্রচুর কল-কারখানা ও দেশের বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কিন্তু অনেক মালিক এখানকার স্থানীয়দের নানা অজুহাতে চাকরি দিতে চায় না বিধায় অনেকেই রূপগঞ্জ ছেড়ে অন্যত্র ছোটাছুটি করেন। বিপরীতে এখানকার প্রতিষ্ঠানে নিয়মিতই চাকরির বিজ্ঞাপন দেয়। উদ্যোগ নিয়ে এখানকার বেকারদের কর্মসংস্থান করা গেলে রূপগঞ্জে বেকারত্ব কমবে। মাদকাসক্তের সংখ্যা কমে আসবে।
রূপগঞ্জে দাউদপুর পুটিনা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিনিধি কমিটির সভাপতি মশিউর রহমান বলেন, ‘আগে এখানে এমপি ছিলেন গোলাম দস্তগীর গাজী। তিনি এলাকার স্থানীয় না। এ কারণে তিনিও স্থানীয়দের চাকরির ব্যবস্থায় উদ্যোগী ছিলেন না। ফলে এখানকার মানুষ বঞ্চিত হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আমরা চেষ্টা করবো এখানকার বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য।’ প্রবীণ বিএনপি নেতা নগরপাড়া এলাকার বখতিয়ার উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, গত ১৭ বছর গাজী লুটপাট করেছে। অথচ রূপগঞ্জের সন্তানদের জন্য কিছুই করেনি। দিপু ভূঁইয়ারা তৎকালীন সময় থেকেই ছিলেন জমিদার। তার দাদা গোলবক্স ভূঁইয়া ছিলেন তিন নম্বর শীর্ষ ধনী। তার পিতা মুজিবুর রহমান ভূইয়া ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান। তার চাচা সুলতানউদ্দিন ভূইয়া ছিলেন সংসদ সদস্য। কালীগঞ্জের মসলিন কটন মিল, মুড়াপাড়া জুট মিল ছিলো তাদের। দেশের বৃহৎ কাপড়ের মার্কেট গাউসিয়া মার্কেটের কারণে হাজার হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে পারছেন। এ পরিবার যুগ যুগ ধরে রূপগঞ্জের মানুষদের জন্য কাজ করে আসছেন। দিপু ভূইয়া রূপগঞ্জের তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টির জন্য অলরেডি বিভিন্ন শিল্পকারখানার মালিকদের সাথে কথা বলছেন। তার নিজের কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। তিনি রূপগঞ্জের মানুষের জন্য কাঁদেন। কারণ তার শেকড়টা রূপগঞ্জে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা গার্মেন্টস ও সুয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি এম এ শাহীন বলেন, শুধু রূপগঞ্জ না পুরো জেলাতেই স্থানীয়দের চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে মালিকদের একটা অনীহা দেখা দেয়। কারণ তাদের ধারণা থাকে যে স্থানীয়রা কারখানায় থাকলে বিশৃঙ্খলা করবে। কিন্তু এটা সত্য না। বরং স্থানীয়রা থাকলে বহিরাগতরা ঝামেলা করতে পারে না। স্থানীয়দের চাকরি না দিয়ে সামাজিকভাবে একটি বিশৃঙ্খলা ঘটতে পারে।
তরুণ প্রজন্মের আইকন মুস্তাফিজুর রহমান দিপু বলেন, আমি জেলার সব শিল্প মালিকদের সাথে পর্যায়ক্রমে কথা বলবো। যেহেতু রূপগঞ্জ আমার মা। রূপগঞ্জ আমার শেকড়। সেহেতু রূপগঞ্জ নিয়ে বেশি ভাবছি। আমার রূপগঞ্জের প্রত্যেকটা শিক্ষিত ছেলেমেয়ের যেনো কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয় সে ব্যবস্থা করবো। খুব শীঘ্রই এই কার্যক্রম শুরু করবো।