বিশেষ প্রতিবেদক : অনিয়ম-দুর্ণিতির আকড়া হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ভূমি অফিস। যে নামটা শুনলেই গ্রাহকদের ভাবনায় চলে আসে ভূমি অফিসের নেতিবাচক কর্মকান্ড। তবে জুলাই আন্দোলনের পর ঘাপটি মেরে বসে থাকা অনেক কর্তা বাবুরা সতর্ক থাকলেও কর্ণপাতই ছিলনা সোনারগাঁ ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) মঞ্জুরুল মোর্শেদের। তাই অবশেষে প্রত্যাহার হলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন অঞ্চলে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দায়িত্বে থাকা বিসিএস ৩৭তম ব্যাচের ১০২ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করেছে সরকার। তাদের সিনিয়র সহকারী কমিশনার বা সহকারী কমিশনার হিসেবে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ন্যস্ত করে বুধবার (৩০ জুলাই) প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সহকারী কমিশনাররা (ভূমি) এসিল্যান্ড হিসেবেই বেশি পরিচিত। এসিল্যান্ডের দায়িত্বে থাকা বিসিএস ৩৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের তুলে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে জন্য ধাপে ধাপে তাদের এসিল্যান্ডের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে। যে প্রত্যাহারের তালিকায় রয়েছেন সোনারগাঁ ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) মঞ্জুরুল মোর্শেদও।
যিনি প্রত্যহার হলেও বেশকিছুদিন সোনারগাঁ ভূমি অফিসের দায়িত্ব পালন করছেন। অনত্রে চলে যাবেন বিধায় তোয়াক্কা করেননি আদালতের নির্দেশনাকেও। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। একর পর এক অভিযোগ উঠলেও এ নিয়ে বিভাগীয় কোনো ব্যবস্থা না হওয়াতে তিনি নিজের খেয়াল খুশি মত কাজ করে জনগনের সেবা নিশ্চিত না করে উল্টো সেবাগ্রহীতাদের ফেলেছেন ভোগান্তিতে।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় বিএনপি-জামাত নেতাকর্মী ও বিভিন্ন সমন্বয়কদের সাথে আতাত করেই টিকে ছিলেন এই কর্মকর্তা। শুধু তাই নয়, নিজ ক্ষমতাবলে লীজের জমি বাতিল করতেও তৈরী করেছে নিজস্ব স্বাক্ষি। গ্রাহককে লীজের জমি প্রদানের প্রলোভনে আবেদনের মূল কাগজের সাথে স্ট্যাম্পের পরার্মশ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে সে কাগজও। পরবর্তিতে ঠুকেছে শর্ত ভঙ্গের মিথ্যা অভিযোগ। এছাড়া নামজারি থেকে শুরু করে সকল কাজেই সে অফিসের স্টাফদের ঘুষ লেনদেন ছিল সহজ বিষয়। এমন বেশ কিছু তথ্য ও প্রমান সহ প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে। এ কর্মকর্তা গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যুক্ত হওয়ার পর হাট, ঘাট, ভূমি বিষয়ে সেবা দিয়ে সাধারণ মানুষের হয়ে উঠতে পারেন নি। যা উনার দপ্তরের কার্য্যক্রম পর্যালোচনা করলেই উর্ধতন কর্মকর্তারা পেয়ে যাবেন।
এছাড়াও এবার নতুন করে তথ্য পাওয়া গেলো সদ্য প্রত্যাহার হওয়া সোনারগাঁ ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার মঞ্জুরুল মোর্শেদের। যিনি লালচর মৌজার একটি লিজের জমি প্রতি শতাংশ বাবদ চেয়েছেন সাত হাজার টাকা। আর এজন্য সখ্যতা ছিল মদনপুরের একটি রেস্টুরেন্টের মালিকের সাথে। যার আলাপচারিতার কল রেকর্ডও সংরক্ষিত রয়েছে। এবং সেই রেস্টুরেন্ট থেকে বিভিন্নসময়ই উপজেলা দপ্তরে খাবার আদান-প্রদানের মাধ্যমেই নাকি এমন সখ্যতা গড়ে উঠেছিল বলে সূত্র জানিয়েছে।
সম্প্রতি সেই রেস্টুরেন্ট মালিক মালেয়েশিয়া ও সিংগাপুর ঘুরে নিয়ে এসেছেন নানা প্রসাধনী সামগ্রী! তার নামে লীজের জমি অনুমোদন হবে যে কারনে অফিসের কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজনের সাথেই রয়েছে তার রীতিমত যোগাযোগ। কেউ সোনারগাঁ ভূমি অফিসে আবেদন জমা দিলেই কিংবা লালচর এলাকার সেই লীজের বিষয়ে কথা বললেও সেই খবর চলে যেতো রেস্টুরেন্ট মালিকের কাছে। এজন্য ভূমি অফিসের কিছু কর্মচারীর কারণে একরকম তাবেদারী প্রথায় সেবা গ্রহীতারা যেন জিম্মি হয়ে পড়েছিল। একজন কর্মকর্তা হয়ে সাধারণ মানুষের প্রতি অমানবিক কাজ করতে একটুও দিধাবোধ করেননি তিনি। এমনকি লীজের জমিটি বাতিল করতে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা দ্বারা মনগড়া প্রতিবেদনও প্রস্তুত করেছে। লিজের জমিটি যেন তার পছন্দের ব্যাক্তিকে দেয়া যায়। সেজন্য চালিয়েছে সস্তা প্রচারণা। তা হলো লীজদারকে কোন দালিলকি তথ্য প্রমান ছাড়াই দোসর ও ফ্যাসিস্ট বলেও বিভিন্নস্থানে উপস্থাপন করেছেন।
এদিকে লীজদারী ভুক্তভোগীদের কাছে জানা যায়, দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে সরকারকে লীজ ফি বাবদ রাজস্ব দিয়ে যাওয়া লীজদারের নবায়ন আবেদন জমা থাকলেও তার আবেদন মঞ্জুর করা হয় নি। পুর্বের লীজদারদের আবেদন জমা পড়ে থাকতো পেশকারের টেবিলে। আর জানতে চাইলে বলা হতো এসিল্যান্ড স্যার বিষয়টা জানেন। এটার সমাধান উনিই করতে পারবেন! উনার সাথে কথা বলুন। এরপর থেকে অফিসে দীর্ঘসময় ঘুরলেও নিজ অফিসে পাওয়া যেতনা ওই কর্মকর্তাকে। দুপুর পর্যন্ত ভূমি অফিসের কাজ করলেও এরপর চলে যেত নানা অজুহাতে। কখনও ডিসি আসছে তো কখনও শরীর অসুস্থ্যতার কারনে ভুক্তভোগীরা দেখা না পেয়ে ফিরে আসতো। এতো কিছুর পর নিজ ক্ষমতাকে পুজি করে পুর্বের লীজদারদের কোনরূপ চিঠি কিংবা সুনানী করারও প্রয়োজনবোধ করেননি, সম্প্রতি প্রত্যাহার হওয়া সোনারগাঁ ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার মঞ্জুরুল মোর্শেদ। পরিশেষে লীজের শর্ত ভঙ্গ বলে এমন ঠুনকো অভিযোগে অন্যদের লীজ প্রদানের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সেই কর্মকর্তা।
তবে আর কালক্ষেপন না করে বিষয়টি ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞাকে জানালে তিনি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। বর্তমানে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হলে ৩রা আগষ্ট রবিবার অলিপুরা ভূমি অফিসের কর্মকর্তা নায়েব নজরুল ইসলাম লীজের জমিস্থলে যান। সেখানেও তাদের সাথে উপস্থিত ছিলেন সেই রেস্টুরেন্টের মালিক এবং আওয়ামীলীগের সাবেক চেয়ারম্যান জিন্নাহর এক সহযোগী। মূলত তারাই এখন উল্টো লীজদারকে দোসর বানানোর পায়তারা করছে।এখানেই শেষ নয় মিথ্যা প্রতিবেদন তৈরী করতে পরদিন সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এই দুজন ব্যক্তি ভূমি অফিসেই প্রতিবেদন প্রস্তুত করার জন্য যেন ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার ঘারের উপর বসেছিল বলে তথ্য রয়েছে।
ভুক্তভোগীদের দাবী, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম করানো হোক। রেস্টুরেন্টের মালিক ও সাবেক চেয়ারম্যানের সহযোগী নানা প্রলোভনে তদন্ত প্রতিবেদন লীজদারের বিপক্ষে প্রস্তুত করেছে বলে আশংকা করছে। আর দীর্ঘ ৫০ বছর পুর্বের লীজদারদের ভোগ দখলে থাকা ফসলি জমি, খামার ও বসতিঘরে হঠাৎ করেই অন্যদের লীজ প্রদানের মাধ্যমে হস্তক্ষেপ করা হলে নানা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের সূচনাও হতে পারে। তাই আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে পুর্বের লীজদারদের নবায়ন আবেদন মঞ্জুর করার জোর আবেদন করেছেন তারা। অথবা পরিবারের মধ্যেই আবেদন গ্রহন করে লীজ প্রদান করা হলে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকবে বলে মনে করছেন।
এদিকে রবিবার অফিসে উপস্থিত হলেও এ বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি। তবে ভুক্তভোগীেরা গেলে জানিয়ে দেয়া হয় লীজের জমি আপনাদের নবায়ন করতে দেয়া হবে না। কিন্তু প্রতিবেদক পরদিন গেলে অফিসে না পেয়ে অভিযোগগুলোর বিষয়ে জানতে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করছেন না। তাই উল্লেখিত অভিযোগগুলোর বিষয়ে ভূমি কর্মকর্তা মঞ্জুরুল মোর্শেদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।