নারায়নগঞ্জ জেলার বন্দর থানার মদনগঞ্জ এলাকায় আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পথচারীসহ এলাকাবাসী। জনমনে বিরাজ করছে আতংক।
ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কুকুরের কামড়ে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে। এছাড়াও কুকুরের উৎপাতে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল মাঠে ছেড়ে পালন করতে পারছেন না বলে অনেকের অভিযোগ।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন যাবৎ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ও বন্দর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের অবাধ বিচরণ দেখা গেলেও সম্প্রতি তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে স্কুল মাদ্রাসাগামী কোমলমতি শিশুরা স্কুলে মাদ্রাসায় যেতে পারছে না কুকুরের ভয়ে। কোন কোন সময় ছেলেমেয়েরা স্কুলে বা মাদ্রাসায় যাওয়ার সময় তাদের হাতে খাবার থাকলে এসব কুকুর ধেয়ে আক্রমণ করে এবং ভয়ে তাদের খাবার ফেলে পালাতে দেখা যায়। এতে অভিভাবকরাও আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
১৫ জুলাই মঙ্গলবার সকালে মাদ্রাসায় যাওয়ার সময় সিটি কর্পোরেশন ১৯ নং ওয়ার্ড লক্ষ্যারচর সৈয়ালবাড়ী ঘাট এলাকার ওয়াহিদুজ্জামান মতিন এর ছোট ছেলে মিহাদ, বাবুল মিয়ার নাতি আবদুল্লাহ, কলিমউল্লাহ দেওয়ানের মেয়ে ও মিল্লাত মিয়ার ছেলেকে কুকুরে কামড় দেয়।
বিশেষ করে পৌর এলাকার বিভিন্ন রাস্তার কিংবা অলিতে-গলিতে এসব কুকুরের দল বেশি দেখা যায়। রাতে লোকজনের চলাচল একটু ফাঁকা হলেই কুকুরগুলো জড়ো হয় এবং পথচারীদের ওপর চিৎকার দিয়ে আক্রমণ করতে দেখা যায়। এরমধ্যে রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলেতো কথাই নেই, কোন সময় কোন কুকুরের উপর পা পরে যায় তা বলা মুসকিল।
সৈয়ালবাড়ী ঘাট এলাকার শাহজালাল বলেন, প্রতিদিন ভোরে উঠে দেখি বাড়ির আশপাশে ১০-১২টি কুকুর দল বেঁধে ঘোরাঘুরি করে। এসব কুকুরগুলো কোত্থেকে আসে জানি না। এদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বেশির ভাগ সময় ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখতে হয়। একই কথা জানান ওই এলাকার একাধিক ভুক্তভোগী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে সিটি কর্পোরেশন ও বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়ানের আলীনগর এলাকায় কুকুরের কামড়ে কয়েকজন আহত হয়েছে।
কুকুরের কারণে মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশা চালকরা অহরহ দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছেন। এছাড়া যেখানে সেখানে কুকুরের মলত্যাগেও পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।
এদিকে কুকুরে কামড়ালে রোগীর জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিটি কর্পোরেশনে সরকারি বরাদ্দের কোন ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে না। এ ভ্যাকসিন ঔষুধের দোকানে পাওয়া গেলেও দোকানিরা ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যদি বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ভ্যাকসিন পাওয়া যেত তাহলে অন্তত পক্ষে বন্দর উপজেলাবাসীর অনেক উপকার হতো। কষ্ট করে নদীর ওপার যেতে হতো না।
এখনই যদি বেওয়ারিশ কুকুরের আক্রমণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া না হয়, তাহলে আরো ক্ষতির আশংকা করেন ভুক্তভোগীর পরিবার ও এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সরকার আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, বেওয়ারিশ কুকুর নিধনে আইনগত বাধা থাকায় দিন দিন এদের বংশবৃদ্ধি পেয়ে ব্যাপক আকার ধারণ করছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় কুকুর নিধন করতে পারছি না। তবে কুকুরের বন্ধ্যাত্বকরণের ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা এ ব্যাপারে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।