ঢাকা , সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
Logo নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খোকন, সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর Logo দীপিকাই শাহরুখের প্রাক্তন, সুহানা তাদেরই মেয়ে! Logo শ্বাসরুদ্ধকর এল-ক্লাসিকো, ৫ গোল–৩ লাল কার্ডের দিনে শিরোপা বার্সার Logo এপ্রিলেই দেশে ফিরছেন খালেদা জিয়া, সঙ্গে থাকবেন দুই পুত্রবধূ Logo ভারত কি সত্যিই পাকিস্তানে নদীর পানি প্রবাহ আটকাতে পারবে? Logo সিদ্ধিরগঞ্জ হাউজিংয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নের কয়েক ঘন্টা পর পূনরায় সংযোগ Logo কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী আইন বাস্তবায়ন করতে দিবোনা – আব্দুল হামীদ মধুপুরি Logo ইয়ার্ন মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন প্রার্থীরা Logo খানপুর হাসপাতাল পরিদর্শন করে সেবা বৃদ্ধির আশ্বাস দিলেন ডিসি জাহিদুল ইসলাম Logo নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁয়ে ডাকাত এক ব্যাবসায়ীকে কুপিয়ে আহত করেছে

ভারত কি সত্যিই পাকিস্তানে নদীর পানি প্রবাহ আটকাতে পারবে?

ভারতশাসিত কাশ্মিরে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ঐতিহাসিক সিন্ধু পানি বন্টন চুক্তি বাতিল করেছে ভারত। সিন্ধু অববাহিকার ছয়টি নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত ওই আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তের কারণে এখন প্রশ্ন উঠছে, ভারত কি আসলেই সিন্ধু নদী ও এর আরও দুটো শাখা নদীর পানির প্রবাহ পাকিস্তানের জন্য বন্ধ করে দিতে পারবে?

 

এই চুক্তির অধীনে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের ছয়টি যৌথ নদীর পানি ন্যায্যতার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিশ্বে এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। গত কয়েক দশকে ভারত-পাকিস্তানের মাঝে দুটো যুদ্ধ হয়েছে, কিন্তু চুক্তি বাতিল হয়নি।

 

ওই হামলার ঘটনার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এই চুক্তি সেগুলোর মাঝে অন্যতম। ভারত দাবি করছে, সীমান্তে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে পাকিস্তানের মদদ আছে।

 

যদিও পাকিস্তান তা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে। দেশটি বরং পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, পানি আটকে দেওয়ার যে কোনও পদক্ষেপ “যুদ্ধের ঘোষণা হিসেবে গণ্য হবে”। চুক্তি অনুযায়ী— সিন্ধু অববাহিকার রাভি (ইরাবতী), বিয়াস (বিপাশা) ও সুতলেজ (শতদ্রু) নদীর পানি ভারতের জন্য বরাদ্দ। আর সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব নদীর ৮০ শতাংশ পানি পায় পাকিস্তান।

 

তবে এই নদীগুলোর পানি বণ্টন নিয়ে আগেও দুই দেশের মাঝে বিরোধ হয়েছে। এসব নদীতে বাঁধ দিয়ে ভারত কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ও অবকাঠামো প্রকল্প করতে চাইলে তাতে বাধ সাধে পাকিস্তান। তাদের যুক্তি, এতে নদীর প্রবাহ হ্রাস এবং এটি চুক্তির লঙ্ঘন।

যদিও পাকিস্তানের কৃষিকাজের প্রায় ৮০ শতাংশ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের তিন ভাগের প্রায় এক ভাগ সিন্ধু অববাহিকার ওই তিন নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল।

 

এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোর আলোকে সেচ ও সুপেয় পানি থেকে শুরু করে জলবিদ্যুতের চাহিদাকে বিবেচনায় নিয়ে এই চুক্তিটি পর্যালোচনা ও সংশোধন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চাপ দিচ্ছে ভারত।

 

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার এই চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিল বিশ্বব্যাংক, তারাও ছিল চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী আর একটি পক্ষ। তবে গত কয়েক দশক ধরে দুই দেশই এই চুক্তি নিয়ে আইনি লড়াই করেছে। কিন্তু এবারই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও পক্ষ চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিলো, আর এটি করলো ভারত। কারণ উজানের দেশ হিসেবে তারা ভৌগোলিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।

 

ভারত সত্যিই কি পানি আটকে দিতে পারবে?

এখন এই চুক্তি স্থগিত বা বাতিল বলতে আসলে কী বোঝায়? ভারত কি সিন্ধু অববাহিকার পানি আটকে দিতে পারবে? এটি কি আদৌ ভারতের পক্ষে করা সম্ভব?

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীতে যখন অনেক বেশি পানির প্রবাহ থাকবে, তখন ওই শত শত কোটি ঘনমিটার পানি আটকানো ভারতের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। কারণ ওই বিপুল পরিমাণ পানি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার মতো সংরক্ষণাগার বা খাল, কোনোটাই ভারতের নেই।

 

“ভারতের পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো মূলত ‘রান-অব-দ্য-রিভার’ বা বাঁধভিত্তিক। এগুলোর জন্য বিশাল জলাধারের প্রয়োজন হয় না,” বলেছেন ‘সাউথ এশিয়া নেটওয়ার্ক অন ড্যামস, রিভার্স অ্যান্ড পিপল’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের আঞ্চলিক পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ হিমাংশু ঠাক্কার।

 

যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে শুধু প্রবাহমান পানির গতি ব্যবহার করে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়, ওগুলোতে বিপুল পরিমাণ পানি জমিয়ে রাখার কোনো দরকার পড়ে না।

 

ভারতের বিশ্লেষকরা বলছেন, ওই চুক্তির অধীনে সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব নদীর ২০ শতাংশ পানি ভারতের জন্য বরাদ্দ করা থাকলেও যথাযথ অবকাঠামো না থাকার কারণে ভারত তার অনেকটাই ব্যবহার করতে পারেনি। এ কারণেই ভারত জলাধার নির্মাণ করতে চায়।

 

কিন্তু পাকিস্তান মনে করে, ওই তিন নদীতে অবকাঠামো নির্মাণের অর্থ চুক্তি লঙ্ঘন। তবে এখন চুক্তি স্থগিত হওয়ায় ভারত ওই নদীগুলোতে নতুন করে বাঁধ দিতে পারবে বা পুরোনো অবকাঠামোকে পরিবর্তন করতে পারবে বা পাকিস্তানকে না জানিয়ে পানিও সরাতে পারবে।

 

“আগে যেকোনও প্রকল্পের নথিপত্র পাকিস্তানের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে হতো। এখন থেকে আর সেটা লাগবে না” বলে জানিয়েছেন হিমাংশু ঠাক্কার।

 

যদিও চুক্তি থেকে সরে এলেও ভারত রাতারাতি ওই তিন নদীতে কোনও প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারবে না। কারণ পাহাড়ি ভূপ্রকৃতি ও ভারতের অভ্যন্তরেই ওই এলাকায় স্থানীয়দের প্রতিবাদের কারণে আগে শুরু করা অনেক প্রকল্পের কাজই শেষ হয়নি, বরং থেমে আছে।

 

২০১৬ সালে ভারত-শাসিত কাশ্মিরে আরেকবার “সন্ত্রাসী হামলা” হয়েছিলো। তখন ভারতের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বলেছিল, তারা দ্রুত সিন্ধু অববাহিকায় বেশ কয়েকটি বাঁধ নির্মাণ করবে এবং পানি সংরক্ষণ প্রকল্পের নির্মাণকাজ দ্রুততর সময়ের মাঝে করবে।

 

যদিও ওই প্রকল্পগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্বন্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। বিবিসি তার নিজস্ব সূত্রে জানতে পেরেছে, বাস্তবে অগ্রগতি খুবই কম।

 

আটকে দিলে পাকিস্তানের ওপর যে প্রভাব পড়বে

ভারত পানিপ্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ করতে না পারলেও বা রাতারাতি নতুন কোনো অবকাঠামো স্থাপন না করলেও যেসব অবকাঠামো ইতোমধ্যে ভারতের কাছে আছে, ওগুলো দিয়ে ভারত যদি পাকিস্তানে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে, তাহলে শুষ্ক মৌসুমে পাকিস্তানে তার প্রভাব পড়বে।

 

কারণ তখন দেশটিতে এমনিতেই তীব্র পানির সংকট থাকে— বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

টাফট্‌স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নীতি ও পরিবেশ গবেষণা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাসান এফ খান পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় লিখেছেন, “শুষ্ক মৌসুমে সিন্ধু অববাহিকায় পানির প্রবাহ এমনিতেই কমে যায়। তখন পানি ধরে রাখার বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।”

 

ওই শুষ্ক মৌসুমে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে, এখন তা বেশ উদ্বেগের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তখন এই চুক্তির অনুপস্থিতি বেশি করে টের পাওয়া যাবে।”

 

চুক্তি অনুযায়ী, ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে পানি প্রবাহসংক্রান্ত তথ্য ভাগাভাগি করতে হয় বা জানাতে হয়। ওগুলো বন্যা পূর্বাভাস, সেচের পরিকল্পনা, পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প ও সুপেয় পানির জন্য খুবই জরুরি। কিন্তু “সিন্ধু পানি চুক্তি” বিষয়ক ভারতের সাবেক কমিশনার প্রদীপ কুমার সাক্সেনা বার্তাসংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ভারত পাকিস্তানকে আর বন্যার তথ্য দিতে বাধ্য না।

 

পাকিস্তানের ওই অঞ্চলটি জুনের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যার কবলে পড়ে। তবে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভারত এমনিতেই খুব সীমিত তথ্য শেয়ার করে।

 

“সিন্ধু পানি চুক্তি” বিষয়ক পাকিস্তানের সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার শিরাজ মেমন বিবিসি উর্দুকে বলেছেন, “চুক্তি স্থগিতের আগেও ভারত কেবল ৪০ শতাংশ তথ্য পাকিস্তানকে জানাতো।”

আপলোডকারীর তথ্য

Rudra Kantho24

জনপ্রিয় সংবাদ

নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খোকন, সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর

ভারত কি সত্যিই পাকিস্তানে নদীর পানি প্রবাহ আটকাতে পারবে?

আপডেট সময় ১০:১২:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

ভারতশাসিত কাশ্মিরে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ঐতিহাসিক সিন্ধু পানি বন্টন চুক্তি বাতিল করেছে ভারত। সিন্ধু অববাহিকার ছয়টি নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত ওই আন্তর্জাতিক চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তের কারণে এখন প্রশ্ন উঠছে, ভারত কি আসলেই সিন্ধু নদী ও এর আরও দুটো শাখা নদীর পানির প্রবাহ পাকিস্তানের জন্য বন্ধ করে দিতে পারবে?

 

এই চুক্তির অধীনে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের ছয়টি যৌথ নদীর পানি ন্যায্যতার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বিশ্বে এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। গত কয়েক দশকে ভারত-পাকিস্তানের মাঝে দুটো যুদ্ধ হয়েছে, কিন্তু চুক্তি বাতিল হয়নি।

 

ওই হামলার ঘটনার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এই চুক্তি সেগুলোর মাঝে অন্যতম। ভারত দাবি করছে, সীমান্তে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে পাকিস্তানের মদদ আছে।

 

যদিও পাকিস্তান তা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে। দেশটি বরং পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, পানি আটকে দেওয়ার যে কোনও পদক্ষেপ “যুদ্ধের ঘোষণা হিসেবে গণ্য হবে”। চুক্তি অনুযায়ী— সিন্ধু অববাহিকার রাভি (ইরাবতী), বিয়াস (বিপাশা) ও সুতলেজ (শতদ্রু) নদীর পানি ভারতের জন্য বরাদ্দ। আর সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব নদীর ৮০ শতাংশ পানি পায় পাকিস্তান।

 

তবে এই নদীগুলোর পানি বণ্টন নিয়ে আগেও দুই দেশের মাঝে বিরোধ হয়েছে। এসব নদীতে বাঁধ দিয়ে ভারত কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ও অবকাঠামো প্রকল্প করতে চাইলে তাতে বাধ সাধে পাকিস্তান। তাদের যুক্তি, এতে নদীর প্রবাহ হ্রাস এবং এটি চুক্তির লঙ্ঘন।

যদিও পাকিস্তানের কৃষিকাজের প্রায় ৮০ শতাংশ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের তিন ভাগের প্রায় এক ভাগ সিন্ধু অববাহিকার ওই তিন নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল।

 

এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলোর আলোকে সেচ ও সুপেয় পানি থেকে শুরু করে জলবিদ্যুতের চাহিদাকে বিবেচনায় নিয়ে এই চুক্তিটি পর্যালোচনা ও সংশোধন করার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চাপ দিচ্ছে ভারত।

 

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার এই চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিল বিশ্বব্যাংক, তারাও ছিল চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী আর একটি পক্ষ। তবে গত কয়েক দশক ধরে দুই দেশই এই চুক্তি নিয়ে আইনি লড়াই করেছে। কিন্তু এবারই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও পক্ষ চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিলো, আর এটি করলো ভারত। কারণ উজানের দেশ হিসেবে তারা ভৌগোলিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে।

 

ভারত সত্যিই কি পানি আটকে দিতে পারবে?

এখন এই চুক্তি স্থগিত বা বাতিল বলতে আসলে কী বোঝায়? ভারত কি সিন্ধু অববাহিকার পানি আটকে দিতে পারবে? এটি কি আদৌ ভারতের পক্ষে করা সম্ভব?

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নদীতে যখন অনেক বেশি পানির প্রবাহ থাকবে, তখন ওই শত শত কোটি ঘনমিটার পানি আটকানো ভারতের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। কারণ ওই বিপুল পরিমাণ পানি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার মতো সংরক্ষণাগার বা খাল, কোনোটাই ভারতের নেই।

 

“ভারতের পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো মূলত ‘রান-অব-দ্য-রিভার’ বা বাঁধভিত্তিক। এগুলোর জন্য বিশাল জলাধারের প্রয়োজন হয় না,” বলেছেন ‘সাউথ এশিয়া নেটওয়ার্ক অন ড্যামস, রিভার্স অ্যান্ড পিপল’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের আঞ্চলিক পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ হিমাংশু ঠাক্কার।

 

যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে শুধু প্রবাহমান পানির গতি ব্যবহার করে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়, ওগুলোতে বিপুল পরিমাণ পানি জমিয়ে রাখার কোনো দরকার পড়ে না।

 

ভারতের বিশ্লেষকরা বলছেন, ওই চুক্তির অধীনে সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব নদীর ২০ শতাংশ পানি ভারতের জন্য বরাদ্দ করা থাকলেও যথাযথ অবকাঠামো না থাকার কারণে ভারত তার অনেকটাই ব্যবহার করতে পারেনি। এ কারণেই ভারত জলাধার নির্মাণ করতে চায়।

 

কিন্তু পাকিস্তান মনে করে, ওই তিন নদীতে অবকাঠামো নির্মাণের অর্থ চুক্তি লঙ্ঘন। তবে এখন চুক্তি স্থগিত হওয়ায় ভারত ওই নদীগুলোতে নতুন করে বাঁধ দিতে পারবে বা পুরোনো অবকাঠামোকে পরিবর্তন করতে পারবে বা পাকিস্তানকে না জানিয়ে পানিও সরাতে পারবে।

 

“আগে যেকোনও প্রকল্পের নথিপত্র পাকিস্তানের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে হতো। এখন থেকে আর সেটা লাগবে না” বলে জানিয়েছেন হিমাংশু ঠাক্কার।

 

যদিও চুক্তি থেকে সরে এলেও ভারত রাতারাতি ওই তিন নদীতে কোনও প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারবে না। কারণ পাহাড়ি ভূপ্রকৃতি ও ভারতের অভ্যন্তরেই ওই এলাকায় স্থানীয়দের প্রতিবাদের কারণে আগে শুরু করা অনেক প্রকল্পের কাজই শেষ হয়নি, বরং থেমে আছে।

 

২০১৬ সালে ভারত-শাসিত কাশ্মিরে আরেকবার “সন্ত্রাসী হামলা” হয়েছিলো। তখন ভারতের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বলেছিল, তারা দ্রুত সিন্ধু অববাহিকায় বেশ কয়েকটি বাঁধ নির্মাণ করবে এবং পানি সংরক্ষণ প্রকল্পের নির্মাণকাজ দ্রুততর সময়ের মাঝে করবে।

 

যদিও ওই প্রকল্পগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্বন্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। বিবিসি তার নিজস্ব সূত্রে জানতে পেরেছে, বাস্তবে অগ্রগতি খুবই কম।

 

আটকে দিলে পাকিস্তানের ওপর যে প্রভাব পড়বে

ভারত পানিপ্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ করতে না পারলেও বা রাতারাতি নতুন কোনো অবকাঠামো স্থাপন না করলেও যেসব অবকাঠামো ইতোমধ্যে ভারতের কাছে আছে, ওগুলো দিয়ে ভারত যদি পাকিস্তানে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে, তাহলে শুষ্ক মৌসুমে পাকিস্তানে তার প্রভাব পড়বে।

 

কারণ তখন দেশটিতে এমনিতেই তীব্র পানির সংকট থাকে— বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

টাফট্‌স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নীতি ও পরিবেশ গবেষণা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হাসান এফ খান পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় লিখেছেন, “শুষ্ক মৌসুমে সিন্ধু অববাহিকায় পানির প্রবাহ এমনিতেই কমে যায়। তখন পানি ধরে রাখার বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।”

 

ওই শুষ্ক মৌসুমে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে, এখন তা বেশ উদ্বেগের বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তখন এই চুক্তির অনুপস্থিতি বেশি করে টের পাওয়া যাবে।”

 

চুক্তি অনুযায়ী, ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে পানি প্রবাহসংক্রান্ত তথ্য ভাগাভাগি করতে হয় বা জানাতে হয়। ওগুলো বন্যা পূর্বাভাস, সেচের পরিকল্পনা, পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প ও সুপেয় পানির জন্য খুবই জরুরি। কিন্তু “সিন্ধু পানি চুক্তি” বিষয়ক ভারতের সাবেক কমিশনার প্রদীপ কুমার সাক্সেনা বার্তাসংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ভারত পাকিস্তানকে আর বন্যার তথ্য দিতে বাধ্য না।

 

পাকিস্তানের ওই অঞ্চলটি জুনের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যার কবলে পড়ে। তবে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভারত এমনিতেই খুব সীমিত তথ্য শেয়ার করে।

 

“সিন্ধু পানি চুক্তি” বিষয়ক পাকিস্তানের সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার শিরাজ মেমন বিবিসি উর্দুকে বলেছেন, “চুক্তি স্থগিতের আগেও ভারত কেবল ৪০ শতাংশ তথ্য পাকিস্তানকে জানাতো।”